ঈদে মীলাদুন নবী কি প্রমাণিত? إن الحمد لله والصلوة والسلام على رسول الله . أما بعد فقد قال الله تعالى: يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى ٱلصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ، قُلْ بِفَضْلِ ٱللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ. এ প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো কুরআন কারীমের সূরা ইউনুসের ৫৭
ঈদে মীলাদুন নবী কি প্রমাণিত?
إن الحمد لله والصلوة والسلام على رسول الله . أما بعد فقد قال الله تعالى: يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى ٱلصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ، قُلْ بِفَضْلِ ٱللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ.
এ প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো কুরআন কারীমের সূরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যার আলোকে সমাজে প্রচলিত ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ প্রমানিত কি না?
খুতবায় উল্লিখিত আয়াত দু’টি সূরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াত। এর পূর্বের আয়াতসমূহে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমের অলৌকিকত্ব বর্ণনা করেছেন। আর এ আয়াতদ্বয়ে কুরআন কারীমের বৈশিষ্ট্য, মর্যাদা ও উপকারিতা বর্ণনা করেছেন।
প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে সম্বোধন করে কুরআন কারীমের চারটি বৈশিষ্টের বর্ণনা দিয়েছেন।
প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- কুরআন আল্লাাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের জন্য উপদেশবাণী।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: : يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ قَدْ جَآءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ
“হে লোক সকল নিশ্চয় তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট উপদেশবাণী এসেছে।”
এ আয়াতাংশে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমের প্রথম বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, ‘ مَّوْعِظَةٌ ’ (কুরআন উপদেশ) সুতরাং আমাদের জানা উচিত উপদেশ কাকে বলে।
উপদেশের পরিচয়: (مَّوْعِظَةٌ) উপদেশ হলো: এমন জিনিসের বর্ণনা প্রদান করা, যে বর্ণনা শ্রবন করে মানুষের দিল নরম হয়। আল্লাহ তা‘আলার দিকে মন ধাবিত হয়। দুনিয়ার গাফলতের পর্দা ছিন্ন হয়ে অন্তরে পরকালের ফিকির তৈরী হয়।
আল্লাহ তা‘আলা مَّوْعِظَةٌ এর সাথে مِّن رَّبِّكُمْ (তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে) বৃদ্ধি করে বুঝিয়েছেন, কুরআন কারীম যে নসীহত এটা সাধারণ কোন নসীহতবাণী না; বরং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চমানের নসীহতবাণী।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য: وَشِفَآءٌ لِّمَا فِى ٱلصُّدُورِ (কুরআন) অন্তরের (ব্যধির) প্রতিষেধক অর্থাৎ কুরআন মানুষকে অন্তরের ব্যধি থেকে মুক্তি দেয়। মানুষের অন্তরে দ্বীন সম্পর্কে যে সন্দেহ হয় এবং কুফুরী মুনাফেক্বীসহ সকল মন্দ চরিত্র থেকে দিলকে মুক্ত করে দেয়। বিভ্রান্তির অন্ধকার থেকে মনকে হেদায়েতের আলোর দিকে নিয়ে পথ দেখায়।
উল্লেখ্য যে, কুরআন এর প্রথম বৈশিষ্ট্য তথা নসীহতের সম্পর্ক হচ্ছে বাহ্যিক আমলের সাথে যাকে শরীয়ত বলা হয়। আর দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য তথা অন্তরের ব্যধির নিরাময় এর সম্পর্ক হচ্ছে আভ্যন্তরীন আমলের সাথে যাকে ত্বরীক্বত বা তাসাউউফ বলা হয়।
তৃতীয় এবং চতুর্থ বৈশিষ্ট্য: وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ‘(কুরআন) মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমাত।’
অর্থাৎ কুরআন মুমিনকে বিভ্রান্তির অন্ধকার থেকে হেদায়াতের আলোর দিকে পথ দেখায়। জাহান্নামের পথ থেকে জান্নাতের পথের দিশা দেয়। কুরআন কারীমের শেষ দুই বৈশিষ্ট্যকে মুমিনদের সাথে বিশেষিত করার কারণ হলো- কুরআন কারীমের দ্বারা মুমিনগণই পথের দিশা গ্রহণ করে এবং কুরআন এর বরকত স্বরূপ মুমিনদের উপর রহমত নাযিল হয়।
অতপর আল্লাহ তা‘আলা দ্বিতীয় আয়াতে ইরশাদ করেন-
قُلْ بِفَضْلِ ٱللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
“আপনি বলে দিন, আল্লাহ তা‘আলার ‘ফযল’ ও ‘রহমে’ (দয়া ও অনুগ্রহে) তারা যেন আনন্দিত হয়। তা (ফযল ও রহমাত) তারা (দুনিয়ার) যা পুঞ্জীভুত করে তা থেকে শ্রেষ্ঠতম।
بِفَضْلِ ٱللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِۦ এর সঠিক ব্যাখ্যা:
আয়াতে উল্লিখিত (بِفَضْلِ ٱللَّهِ) ‘আল্লাহ তা‘আলার দয়া’ ও (بِرَحْمَتِهِۦ) ‘তাঁর অনুগ্রহ’ দ্বারা কি উদ্দেশ্য এ ব্যাপারে মুফাসসিরদের থেকে কয়েকটি মত বর্ণিত হয়েছে।
১. হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন بِفَضْلِ ٱللَّهِ দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন কারীম। আর بِرَحْمَتِهِ দ্বারা কুরআন কারীম তিলাওয়াত করা, কুরআন কারীমের বিধানবীর উপর আমল করা উদ্দেশ্য।
২. অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে (بِفَضْلِ ٱللَّهِ) ‘ফাযলুল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুরআন। আর (بِرَحْمَتِهِۦ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইসলাম। অথবা (بِفَضْلِ ٱللَّهِ) ‘ফাযলুল্লাহ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইসলাম। আর (بِرَحْمَتِهِۦ) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুরআন।
৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, بِفَضْلِ ٱللَّهِ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুরআন আর بِرَحْمَتِهِۦ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ‘রাসূল’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
পর্যালোচনা:
যারা ‘রহমত’ দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য নিয়েছেন, তারা এর সমর্থনে وَمَاۤ أَرۡسَلۡنَـٰكَ إِلَّا رَحۡمَة لِّلۡعَـٰلَمِینَ (সূরা আম্বিয়া:১০৭) আয়াত দলীল হিসেবে উপস্থাপন করে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জগতবাসীর জন্য রহমাত হিসেবে আগমন করেছেন। সুতরাং উপরোক্ত আয়াতে ‘রহমাত দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য হবেন।
আর হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত এ মতটি কিছু সংখ্যক মুফাসসির গ্রহণ করেছেন। এছাড়া তাফসীরে সমরকন্দীতে হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে এক রিওয়ায়াতে ‘রহমাত’ দ্বারা ইসলাম উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে, যা অন্য মুফাসসিরদের মতের সমর্থন করে।
মূলত তৃতীয় ব্যাখ্যা আর প্রথম দুই ব্যাখ্যার মাঝে বাহ্যিক বৈপরিত মনে হলেও বাস্তবে কোন বৈপরিত্য নেই। কেননা কুরআন অনুযায়ী আমল করা এবং ইসলামের আহকাম মেনে চলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্যেরই ভিন্ন শিরোণাম। সবগুলোর উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।
هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُون আয়াতাংশের ব্যাখ্যা: আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ “এটা হচ্ছে তার চেয়ে উত্তম যা মানুষ (দুনিয়াতে) পুঞ্জিভুত করে। সুতরাং উপরোক্ত আয়াতাংশ থেকে প্রতিয়মান হলো যে, কুরআন, ইসলাম এবং রাসূলের আনুগত্যে আনন্দ প্রকাশ করা, দুনিয়ায় পুঞ্জিভুত সম্পদ থেকে উত্তম।
আর এ উত্তম হওয়ার দু’টি কারণ।
১.দুনিয়ার সম্পদ অপূর্ণ। কেউ দুনিয়ার সম্পদ অর্জন করে পূর্ণতায় পৌছতে পারে না।
২. দুনিয়ার সম্পদ এক সময় শেষ হয়ে যাবে। এর কোন স্থায়িত্ব নেই।
উপরে আমরা সূরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াতের সংক্ষিপ্ত সঠিক তাফসীর জানলাম। কিন্তু বর্তমান সমাজের সুন্নী নামের কিছু সুন্নাহ পরিপন্থী লোক, সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতের অপব্যাখ্যা করে প্রচলিত জশনে জুলুস ও ঈদে মীলাদুন নবী প্রমান করার অপচেষ্টা করে।
সুন্নীদের ব্যাখ্যা:
সুন্নী নামের সুন্নাহ পরিপন্থী মানুষগুলো বলতে চায় যে, সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে উল্লিখিত ‘রহমাত’ দ্বারা উদ্দেশ্য ‘রাসূল’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর ‘ফযল’ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুরআন কারীম।
আর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন ‘রহমাত’ তথা রাসূলের (আগমনের) কারণে তারা যেন আনন্দিত হয়। আর যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ায় আগমন করেছেন ১২ রবিউল আউয়ালে। সুতরাং ১২ রবিউল আউয়ালে আনন্দ প্রকাশ করা মুস্তাহাব। আর এ আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে তারা জশনে জুলূস করে এবং তারা এ আনন্দ প্রকাশকে ঈদে মীলাদুন নবী নাম দেয়, এমনকী এ ঈদকে তারা সাইঈদুল আইয়াদ, কেউ কেউ সাইঈদু সাইয়্যিদিল আইয়াদ। কেউ বলে সকল ঈদের সেরা ঈদ।
যুক্তি ও শরীয়তের মানদন্ডে ১২ রবিউল আউয়ালে ঈদ পালন করার বিধান:
এপর্যায়ে কুরআন, হাদীস ও যুক্তির নিরিখে আমরা যাচাই করব যে, ঈদে মীলাদুন্নবী নামে কোন ঈদ ইসলামী শরীয়াতে আছে কি না? এবং যুক্তির নিরিখে ১২ রবিউল আউয়াল ঈদ পালন করা যুক্তিসঙ্গত কি না? জশনে জুলূস আনন্দ প্রকাশ করার কোন বৈধ পন্থা কি না?
সুন্নীদের দলীল:
সুন্নী নামের সুন্নাহ পরিপন্থীরা, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর বর্ণনা দ্বারা দলীল দিয়ে থাকে যে ‘রহমত’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর ‘রহমাত’ তথা রাসূলে (আগমনের) কারণে আল্লাহ তা‘আলা আনন্দ প্রকাশ করতে বলেছেন। সুতরাং রাসূল দুনিয়ায় আগমনের দিন খুশি তথা ঈদ পালন করতে হবে। যে ঈদকে তারা ঈদে মীলাদুন নবী আখ্যায়িত করে।
সুন্নীদের দলীল এর জওয়াব-১.
‘রহমাত’ দ্বারা মুহাম্মাদ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য। এ মতটি আবুশ শাইখ আল-আস্ফাহানী রহ. (মৃত্যু: ৩৬৯) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর দিকে সম্পৃক্ত করে উল্লেখ করেছেন, কিন্তু আবুশ শাইখ রহ. তাফসীরের উক্ত মতটি বর্ণনা করেছেন جُوَيْبِر عن الضحاك عن ابن عباس এই সূত্রে। আর মুহাদ্দীসীনে কেরাম উক্ত সুত্রটিকে মারাত্মক পর্যায়ের দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন।
কিন্তু কথা হলো সহীহ সূত্র থাকতে এমন মারাত্মক দূর্বল সূত্র উপস্থাপন করার প্রয়োজন কি? সুতরাং এ সনদের উপর নির্ভর করে কোন তাফসীর করা এবং উক্ত তাফসীরকে হজরত ইবনে আব্বাস রা. এর নামের সাথে সম্পৃক্ত করা কোনক্রমেই সমীচীন নয়। এ কারণেই মুফাসসিরদের থেকে খুবই কম সংখ্যক লোক এ তাফসীরের ব্যাপারে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে তাফসীরে সমরকন্দীতে হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকেই একটি বর্ণনা বর্ণিত আছে যে, ‘রহমত’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলাম। আর ‘ফযল’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআন। আর এমতটি অধিকাংশ মুফাসসির গ্রহণ করেছেন। সুতরাং অধিকাংশ মুফাসসিরের রায় বাদ দিয়ে মারাত্মক দূর্বল রিওয়ায়াত যার সত্যাসত্য জানা সম্ভব না, আর এমন সূত্রে বর্ণিত তাফসীর এর উপর নির্ভরশীল কিছু সংখ্যক মুফাসসিরের রায় দ্বারা দলীল পেশ করা যুক্তি সঙ্গত হতে পারে না।
সুন্নীদের দলীল এর জওয়াব-২.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
أخبرنا عبد الرزاق قال: أخبرنا معمر عن ابن طاووس عن أبيه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا تتخذوا شهرا عيدا، ولا تتخذوا يوما عيدا
‘তোমরা কোন মাসকে ও দিনকে ঈদ বানিয়ো না। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমরা শরীয়ত নির্ধারিত দিন ব্যতিত কোন দিনকে নিজেদের পক্ষ থেকে ঈদের দিন মনে করো না। অথচ তারা ১২ রবিউল আউয়ালকে ঈদ বানিয়েছে। এখন কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা অনুযায়ী আমল করব? না বিদআতীদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী আমল করব?
সুন্নীদের দলীল এর জওয়াব-৩.
عن أنس قال: قدم رسول الله صلى الله عليه وسلم المدينة ولهم يومان يلعبون فيهما، فقال: “ما هذان اليومان؟” قالوا: كنا نلعب فيهما في الجاهلية، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : “إن الله قد أبدلكم بهما خيرا منهما: يوم الأضحى، ويوم الفطر”.
সুনানে আবু দাউদে হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আগমন করেছেন এ অবস্থায় যে, মদীনাবাসী দুই দিন ফূর্তি করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন- ما هذان اليومان
এই দুই দিন কি? তারা বলল, এই দুই দিনে আমরা জাহিলি যুগে আনন্দ-ফূর্তি করতাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, إن الله قد أبدلكم بهما خيرا منهما: يوم الأضحى، ويوم الفطر ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য উৎসবের জন্য এ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুই দিনের ব্যাবস্থা কওে দিয়েছেন, অর্থাৎ ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। এই হাদীসে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিমদের ঈদ দু’টি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং এ দুয়ের অতিরিক্ত ঈদের আবিস্কার নিঃসন্দেহে পরিপূর্ণ দ্বীনের মাঝে বৃদ্ধি করার শামিল। যা শুধু নিন্দনীয় নয়; বরং নিষিদ্ধ।
সুন্নীদের দলীল এর জওয়াব-৪.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ১২ রবিউল আউয়াল কেন্দ্রিক কোন ঈদ বা উৎসব প্রমাণিত নেই। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরে ত্রিশ বছর পর্যন্ত খোলাফায়ে রাশেদীন রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, তাদের এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ১২ রবিউল আউয়ালে কোন ঈদ বা উৎসব পালনের প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং তাদের অন্তরে কি পরবর্তীদের তুলনায় নবী প্রেম কম ছিল? অথচ তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য জীবন উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকতেন।
সুন্নীদের দলীল এর জওয়াব-৫.
জশনে জূলূসে ঈদে মীলাদুন্নবীর সূচনা:
১২ রবিউল আউয়ালে বিদআতীরা যে সকল কর্মকান্ড করছে, কুরআন হাদিসে এর কোন ভিত্ত্বি পাওয়া যায় না। এমনকি সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবয়ে তাবেয়ীনদের যামানায়ও এর কোন অস্তিত্ব ছিল না; বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ এর মাধ্যমে আনন্দ উদযাপন এর সূচনা করেন চতুর্থ শতাব্দীর ৩৫২ হিজরীতে খলিফা আল-মুয়িজ্জু লি-দ্বীনিল্লাহ। কিন্তু তখনও এটা উৎসব হিসেবে প্রচারিত হয়নি। পরবর্তীতে সপ্তম শতাব্দীর ৬০৪ হিজরীতে বাদশাহ আবু সাঈদ মুজাফ্ফার/কুকবুরী এবং তার দরবারী আলেম আবু খাত্তাব উমর ইবনে দিহইয়া/আবুল খাত্তাব ইবনে ইয়াহইয়া মিলে ১২ রবিউল আউয়ালকে বিশ্বে ঈদ বা উৎসব হিসেবে পালন করার সূচনা করে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশে যারা ঈদে মীলাদুন নবীর নামে জশনে জুলূস ও মিছিল বের করে তাদের এই জশনে জুলূসের নামে মিছিল, তৈয়ব শাহ ১৯৭৪ সালে আঞ্জুমানে রহমানিয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় সূচনা করে। এই সংক্ষিপ্ত ইতিহাস দ্বারা বুঝা যায় যে ঈদে মীলাদুন নবী কোন প্রমানিত বিষয় নয়; বরং তা বিদআত ও গর্হিত কাজ।
সুন্নীদের দলীল এর জওয়াব-৬.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ নিয়ে ইখতিলাফ থাকলেও জন্ম কি বারে হয়েছিল এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই। আর সে বার হলো সোমবার। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন, আর তারা পালন করে ঈদ। সেটাও বিরোধপূর্ণ তারিখ ১২ রবিউল আউয়ালে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,?? ‘ঈদের দিনে কোন রোযা নেই। কাজেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম দিনে ঈদ পালন যদি সঠিক মেনে নেওয়া হয়, তাহলে বলতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা রেখে ভুল করেছেন। নাউযুবিল্লাহ। আর যদি বলা হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রোযা রাখা সঠিক হয়েছে, তাহলে এদিন ঈদে মীলাদুন নবী হতে পারে না।
সুন্নীদের দলীল এর জওয়াব-৭.
‘রহমাত’ দ্বারা উদ্দেশ্য কিছু সংখ্যক মুফাসসির এর মতানুসারে ‘রাসূল’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর সর্বসম্মত মতানুসারে ‘ফযল’ দ্বারা উদ্দেশ্য ‘কুরআন কারীম’। সুতরাং কিছু সংখ্যক মুফাসসিরের ব্যাখ্যা হিসেবে যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুনিয়ায় আগমনের দিনকে ঈদ পালন করতে হয়, তাহলে মুফাসসিরদের সর্বসম্মত মতানুসারে ‘ফযল’ তথা কুরআন নাযিলের দিন বা রাতকে ঈদের দিন বা রাত ঘোষণা করে ইসলামে আরো একটি ঈদ তথা ঈদে নুযূলে কুরআন বলা উচিত।
সুন্নীদের দলীল এর জওয়াব-৮.
১২ রবিউল আউয়াল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ কি না, এ বিষয়টি বিরোধপূর্ণ হলেও ১২ রবিউল আউয়াল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়া থেকে ইন্তেকাল করেছেন এব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেদিন নিশ্চিত দুনিয়া থেকে চলে গেছেন সেদিনকে ঈদ পালনের পরিবর্তে শোক পালন করা উচিত। সুতরাং শোক পালনের দিন ঈদ পালন করা শুধু কোন মুসলিমের জন্যই না বরং বিবেকবান কোন মানুষের পক্ষেই একটি অশোভনীয় কাজ।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমাদের নিকট দ্বিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হলো যে, ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ নামে শরীয়তে কোন ঈদ নেই। সমাজে প্রচলিত ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ নামে যা হচ্ছে তা সুন্নাহ পরিপন্থি। এসব কর্মকান্ড থেকে বেচে থাকা মুমিন ও মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের কর্তব্য।
মতামত দিন
আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।