উর্দূ ভাষায় সংকলিত প্রথম তাফসীর গ্রন্থ : উর্দূ ভাষায় সর্বপ্রথম সমগ্র কুরআন তরজমা করার অনন্য গৌরব অর্জন করেন হজরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছে দেহলভী র. এর সুযোগ্য সন্তান হযরত শাহ আব্দুল কাদির রহ.। তিনি উর্দূ ভাষায় সর্বপ্রথম কুরআন কারীমের ভাবানুবাদ করেন। এরপর শাহ আব্দুল কাদির র. এর বড় ভাই শাহ রফীউদ্দীন র. কুরআন কারীমের শব্দে শব্দে
উর্দূ ভাষায় সংকলিত প্রথম তাফসীর গ্রন্থ :
উর্দূ ভাষায় সর্বপ্রথম সমগ্র কুরআন তরজমা করার অনন্য গৌরব অর্জন করেন হজরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছে দেহলভী র. এর সুযোগ্য সন্তান হযরত শাহ আব্দুল কাদির রহ.। তিনি উর্দূ ভাষায় সর্বপ্রথম কুরআন কারীমের ভাবানুবাদ করেন। এরপর শাহ আব্দুল কাদির র. এর বড় ভাই শাহ রফীউদ্দীন র. কুরআন কারীমের শব্দে শব্দে অনুবাদ করার সৌভাগ্য অর্জন করেন। হযরত শাহ আব্দুল কাদির রহ. কুরআন কারীমের তরজমার ভূমিকায় লেখেন যে, আমার মনে এল যেভাবে আমাদের সম্মানিত পিতা হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ র. ফার্সী ভাষায় সহজ করে কুরআন কারীমের অনুবাদ লিখেছেন। তেমনিভাবে আমিও উর্দূ ভাষায় কুরআন কারীমের তরজমা সহজ করে লিখব। আল্হামদুলিল্লাহ আমার এ আশা ১২০৫ হিজরী মুতাবিক ১৭৯০ খৃস্টাব্দে পূর্ণ হয়েছে। উক্ত দু’টি তরজমার মধ্যে প্রথম কোনটি সম্পাদিত হয়েছে, এ বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
উর্দূ ভাষার কোন ঐতিহাসিক লিখেছেন যে, শাহ রফীউদ্দীন রহ. এর কুরআন কারীমের শব্দে শব্দে তরজমাই হচ্ছে উর্দূ ভাষার প্রথম কুরআন তরজমা।
এরূপ ধারণার সূত্রপাত সম্ভবত এভাবে হয়েছে যে, যেহেতু শাহ রফীউদ্দীন রহ. বয়সে শাহ আব্দুল কাদির র. এর চেয়ে বড় ছিলেন এজন্য কুরআন কারীমের তরজমাও হয়ত তিনি আগে সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু এ ধারণার স্বপক্ষে সমসাময়িক কোন উৎস থেকে এর উদ্ধৃতি পাওয়া যায় না। এছাড়া যদি শাহ রফীউদ্দীন রহ. এর তরজমা আগে সম্পন্ন হত তাহলে মূযিহুল কুরআন এর মুকাদ্দিমায় শাহ আব্দুল কাদির রহ. যেখানে স্বীয় পিতার ফার্সী তরজমার কথা উল্লেখ করেছেন সেখানে বড় ভাই শাহ রফীউদ্দীন রহ. এর তরজমার কথাও অবশ্যই উল্লেখ করতেন।
উর্দূ ভাষার উক্ত দুই তরজমা পরবর্তীতে কুরআন অনুবাদকদের জন্য অনুসরণীয় হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল ইলমী ভাষাসমূহের মাঝে উর্দূ ভাষা নবীন হওয়া সত্ত্বেও এ ভাষায় যতটুকু পরিমাণ কুরআন মাজীদের অনুবাদ হয়েছে অন্য কোন ভাষায় তা হয়নি।
উল্লেখ্য যে, উক্ত দু’টি তরজমার পর পর্যায়ক্রমে উর্দূ ভাষায় পবিত্র কুরআনের আরো তরজমা সম্পন্ন হতে থাকে।
বাদশাহ শাহ আলম এর শাসনামলে (১১৭৩ হিজরী মুতাবিক ১৭৫৯ খৃস্টাব্দÑ১২২১ হিজরী মুতাবিক ১৮০৬খৃস্টাব্দ) কুরআন মাজীদের কয়েকটি তরজমা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়। তৎকালীন যুগে সম্পাদিত তরজমাগুলোর মধ্য হতে অন্যতম একটি হচ্ছে ‘তাফসীরে মুরতাযায়ী’ যা পদ্যাকারে শুধু ত্রিশতম পারার তরজমা ও তাফসীর সম্বলিত। সংকলকের নাম শাহ গোলাম মুরতাযায়ী। সংকলকের নমানুসারে এর নামকরণ করা হয় তাফসীরে মুরতাজায়ী। তিনি ১১৯৪ হিজরী মুতাবিক ১৭৮০ খৃস্টাব্দে এ তাফসীর গ্রন্থটি সংকলন করেন। উক্ত তাফসীর গ্রন্থটি ১২৫৯ হিজরী মুতাবিক ১৮৪৩ খৃস্টাব্দে টাইপের অক্ষরে ছাপা হয়।
উর্দূ ভাষার কুরআন কারীমের প্রাচীন তরজমাগুলোর মধ্যে আযীযুল্লাহ হামরাঙ্গ আওরাঙ্গাবাদী কৃত একটি তরজমার কথা জানা যায়, যা শুধু ত্রিশতম পারার তরজমা। অনুরূপভাবে প্রাচীন তরজমাগুলোর মধ্যে ‘তাওযীহে মাজীদ’ নামে সায়্যিদ আলী মুজতাহিদ লাক্ষ্মৌবী র. কৃত আরো একটি তরজমার সন্ধান পাওয়া যায়, যা তাফসীর সহ শাহী ছাপাখানা লাক্ষেèৗ হতে ১২৫৩ হিজরী মুতাবিক ১৮৩৯ খৃস্টাব্দে শাসক নওয়াব আমজাদ শাহর শাসনামলে ছাপা হয়েছে। এ তরজমাটি শিয়া দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে লেখা হয়েছিল।
কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এসব তরজমার অধিকাংশই এখন আর পাওয়াা যায় না, তাই এগুলোর ভাষা ও বৈশিষ্ট্যাবলী সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা অত্যন্ত দুরূহ একটি কাজ। তবে নি¤েœ উর্দূ ভাষায় সম্পাদিত ও প্রকাশিত কিছুসংখ্যক তরজমা ও তাফসীর গ্রন্থের বিবরণ সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
মতামত দিন
আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।