কুরআনের আলোকে হযরত আদম আ.: সৃষ্টি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

কুরআনের আলোকে হযরত আদম আ.: সৃষ্টি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
উর্দূ ভাষায় সংকলিত  তরজমাতুল কুরআন ও তাফসীর গ্রন্থহাফেজ মাওলানা জাহিদুল ইসলাম

কুরআনের আলোকে হযরত আদম আ.: সৃষ্টি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ মানব জাতির জন্য প্রেরীত হয়েছে মহান আসমানী গ্রন্থ আল কুরআন। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য এটাই হচ্ছে একমাত্র জীবন বিধান। এতে বর্ণিত হয়েছে আকায়িদ, আহকাম, মু‘আমালাত, মুআশারাত, আখলাক তথা পার্থিব জীবনের যাবতীয় বিধিবিধান। এসবের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে আম্বিয়ায়ে কিরাম আ.ও পূর্ববর্তী উম্মতগণের ঘটনাবলীর বিবরণ। তবে

কুরআনের আলোকে হযরত আদম আ.: সৃষ্টি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

মানব জাতির জন্য প্রেরীত হয়েছে মহান আসমানী গ্রন্থ আল কুরআন। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য এটাই হচ্ছে একমাত্র জীবন বিধান। এতে বর্ণিত হয়েছে আকায়িদ, আহকাম, মু‘আমালাত, মুআশারাত, আখলাক তথা পার্থিব জীবনের যাবতীয় বিধিবিধান। এসবের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে আম্বিয়ায়ে কিরাম আ.ও পূর্ববর্তী উম্মতগণের ঘটনাবলীর বিবরণ। তবে স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, পবিত্র কুরআনে এসব ঘটনার বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করা নিছক ঘটনা বর্ণনার উদ্দেশ্যে নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে বিভিন্ন হিকমাত ও তাৎপর্য। হিদায়াতের আলো বঞ্চিত লোকদেরকে উপদেশ ও হিদায়াত লাভের উপকরণ প্রদান, বিপদ-আপদ ও কাফের-মুশরিকদের নির্যাতনে মুমিনদেরকে সান্ত¡না দান, তাদের ঈমানী চেতনা উজ্জীবিত করা ও অন্তরকে সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে কালামুল্লাহ শরীফে এরূপ ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। আর সেজন্যই অন্যান্য ঘটনা বর্ণনার ন্যায় কুরআনী ঘটনায় আগাগোড়া ধারাবাহিকতা রক্ষা করে কোন ঘটনার বিবরণ প্রদান করা হয়নি; বরং উপরোক্ত উদ্দেশ্য পূরণের জন্য মহান রাব্বুল আলামীন যেখানে যে ঘটনার যতটুকু অংশ বর্ণনা করা সমীচীন মনে করেছেন, কেবলমাত্র ততটুকু বর্ণনা করেছেন। তেমনিভাবে বিভিন্ন সূরায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করণ, কোথাও সংক্ষিপ্ত বিবরণ, আবার কোথাও বিস্তারিত বিবরণ এসব কিছু সংঘটিত হয়েছে সেই মূল উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে। অর্থাৎ বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে যতটুকু বর্ণনা করা মহান রাব্বুল আলামীন যথার্থ ও উপযোগী মনে করেছেন, সেখানে ততটুকুই বর্ণনা করেছেন। পবিত্র কুরআনে ঘটনা বর্ণনার ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম স্থান পেয়েছে হযরত আদম আ.এর ঘটনা। এছাড়া হযরত আদম আ. হচ্ছেন প্রথম মানব। এজন্য সর্বপ্রথম সেই ঘটনাটির বিবরণ পেশ করা হল।

হযরত আদম আ. এর ঘটনা পবিত্র কুরআনের ৭ টি সূরার ৭৩ টি আয়াতে বিক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে যথাক্রমে-

১.সূরা বাকারা:৩০-৩৮, ২.সূরা আ‘রাফ: ১১-২৫, ৩. সূরা হিজর:২৬-৪৪, ৪. সূরা ইসরা: ৬১-৬৫, ৫. সূরা কাহ্ফ: ৫০, ৬. সূরা ত্বহা: ১১৫-১২৩, ৭.সূরা সাদ:৭১-৮৫।

হযরত আদম আ. এর ঘটনা বর্ণনায় পবিত্র কুরআনে কেবল তাঁর সৃষ্টি ও এর পরবর্তী সময়ে সংঘটিত বিষয়াদির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা হচ্ছেন মহান  স্রষ্টা । আর অন্য সবকিছু তাঁর সৃষ্টি। আসমান, যমীন, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্রসহ সবকিছু একমাত্র তিনিই সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিকর্মের এ ধারাবাহিকতায় কোনটি কখন ও কিভাবে সৃষ্টি করেছেন এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছে যতটুকু বর্ণনা রয়েছে, এর বাইরে আমাদের পক্ষে কিছু জানা সম্ভব নয়। সৃষ্টিকুলের মাঝে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হচ্ছে মানুষ। মানুষ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন হযরত আদম আ. কে। হযরত আদম আ.কে সৃষ্টি করেছেন তিনি মাটি দ্বারা। এ মর্মে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

اِنَّ مَثَلَ عِيسى عِنْدَ اللّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَه مِنْ تُرَابٍ

‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার নিকট হযরত ঈসা আ.এর উপমা (পিতাবিহীন সৃষ্টির দিক দিয়ে) হযরত আদম আ.এর মত, যাকে (যার দেহকে) তিনি সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা।’ (সূরা আলে ইমরান:৫৯)

উক্ত আয়াত ছাড়া শাব্দিক পার্থক্যভেদে পবিত্র কুরআনের আরো ১৫ টি স্থানে মাটি দ্বারা হযরত আদম আ. এর (দেহ) সৃষ্টির আলোচনা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে যথাক্রমে-১.সূরা আন‘আম-২, ২.সূরা আ‘রাফ-১২, ৩.সূরা হিজর:২৮, ৪.সূরা ইসরা-৬১, ৫.সূরা কাহ্ফ-৩৭, ৬.সূরা হজ্জ-৫, ৭.সূরা মু‘মিনূন-১২, ৮.সূরা রূম-২০, ৯.সূরা সাজ্দা-৭, ১০.সূরা ফাতির-১১, ১১.সূরা সফ্ফাত-১১, ১২.সূরা সাদ-৭১, ১৩.সূরা সাদ-৭৬, ১৪.সূরা মু‘মিন-৬৭, ১৫.সূরা আর-রাহমান:১৪।

আরো জানা যায় যে, সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ হতে সংগৃহীত এক মুষ্ঠি মাটি দ্বারা হযরত আদম আ. কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ মর্মে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে:

عَنْ أَبِي مُوسى الأشعرى عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ خَلَقَ آدَمَ مِنْ قَبْضَةٍ قَبَضَهَا مِنْ جَمِيعِ الْأَرْضِ

‘হযরত আবু মূসা আশ‘আরী রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা হযরত আদম আ. কে এমন এক মুষ্ঠি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, যা তিনি সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ হতে সংগ্রহ করেছেন।’ (তিরমিজী-২৯৫৫, আবূদাউদ-৪৬৯৩)

আর হযরত আদম আ.এর দেহ সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছে মেরুদন্ডের নিচের অংশ হতে। এ সম্পর্কে হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত হাদীছে ইরশাদ হয়েছে:

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللّهِ – صلى الله عليه وسلم- قَالَ كُلُّ ابْنِ آدَمَ يَأْكُلُهُ التُّرَابُ اِلاَّ عَجْبَ الذَّنَبِ مِنْهُ خُلِقَ وَفِيهِ يُرَكَّبُ

‘প্রত্যেক বনী আদমকে মাটি গ্রাস করবে, (তার) মেরুদন্ডের নিচের অংশ ব্যতিত। সেই অংশ থেকে সৃষ্টির সূচনা করা হয়েছে। আর সেই অংশের সাথেই অন্যান্য অংশ যুক্ত করা হবে।’ (মুসলিম-২৯৫৫)

দেহ গঠনের কাজ শেষ হলে দেখা গেল এক অতুলনীয় ও অপূর্ব সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে তাঁকে। আল্লাহ তা‘আলা মানবদেহের গঠন প্রকৃতি সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন: لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِي اَحْسَنِ تَقْوِيمٍ

‘নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।’ (সূরা তীন:৪)

এভাবে হযরত আদম আ. এর দেহ গঠনের কাজ পূর্ণতা লাভ করার পর এ অবস্থায় কিছুকাল অতিবাহিত হয়। অর্থাৎ রূহ ব্যতিত খালি দেহ কিছু সময় রেখে দেয়া হয়। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

هَلْ اَتى عَلَى الْاِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ شَيْئًا مَذْكُورًا

‘নিশ্চয় কাল প্রবাহে মানুষের উপর এমন এক সময় এসেছিল, যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না।’ (সূরা দাহ্র:১)

এছাড়া সূরা আলে ইমরানের ৫৯নং আয়াত দ্বারাও একথা প্রমাণিত হয় যে, দেহ অবয়ব গঠনের কাজ সমাপ্তির পর কিছুকাল এভাবেই অতিবাহিত হয়। এরপর উক্ত দেহে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়। যেমন ইরশাদ হয়েছে:

خَلَقَه مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَه كُنْ فَيَكُونُ

‘তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) তাঁকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা। অতঃপর তাঁকে বলেছেন ‘তুমি হয়ে যাও’। সুতরাং তিনি হয়ে গেছেন।’ (সূরা আলে ইমরান:৫৯)

কেননা উক্ত আয়াতে ثُمَّ অব্যয়টি উল্লিখিত আছে। আর ثُمَّ অব্যয়টি একথা বুঝায় যে, পূর্বাপর দু’টি কাজের মধ্যে দ্বিতিয়টি প্রথমটির বেশ সময় পরে সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং হযরত আদম আ. এর দেহে রূহ প্রবেশ করানোর পূর্বে তা যে কিছুকাল সেই অবস্থায় ছিল তা সহজে বুঝা যায়। তেমনিভাবে উক্ত আয়াতে বর্ণিত রয়েছে হযরত আদম আ.এর দেহকে সম্বোধন করে রাব্বুল আলামীন বলেছেন كُنْ অর্থাৎ ‘তুমি হয়ে যাও’। আর কুদরতীভাবেই তাতে রূহ সঞ্চারিত হয়ে যায়। হযরত আদম আ.এর দেহে রূহ সঞ্চার করা সম্পর্কে অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:

فَاِذَا سَوَّيْتُه وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَه سجِدِينَ

‘অতঃপর যখন আমি তাঁকে সুঠাম করব এবং তাঁর মাঝে আমার (পক্ষ থেকে) রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সাজদাবনত হবে।’ (সূরা হিজর-২৯ ও সূরা সাদ: ৭২)

উপরোক্ত আয়াতে উল্লিখিত وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي দ্বারাও সেই كُنْ হুকুমটিই ব্যক্ত করা হয়েছে।

হযরত আদম আ. ও ফেরেশ্তা প্রসঙ্গ

হযরত আদম আ.এর সৃষ্টির পূূর্বেই আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে ফেরেশ্তাগণকে তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। পবিত্র কুরআনে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

ইরশাদ হয়েছে: اِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَاٍ مَسْنُونٍ

‘নিশ্চয় আমি গন্ধযুক্ত কাদার শুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করব।’ (সূরা হিজ্র:২৮)

আরো ইরশাদ হয়েছে: اِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ

‘নিশ্চয় আমি কাদা মাটি দ্বারা মানুষ সৃষ্টি করব।’ (সূরা সাদ-৭১)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে: وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلئِكَةِ اِنِّي جَاعِلٌ فِي الْاَرْضِ خَلِيفَةً

‘স্মরণ করুন, যখন আপনার প্রতিপালক বললেন, নিশ্চয় আমি ভূ-পৃষ্ঠে প্রতিনিধি বানাব।’ (সূরা বাকারা-৩০)

আল্লাহ তা‘আলার নিকট পৃথিবীতে খলীফা বানানোর বিষয় অবগত হয়ে ফেরেশ্তাগণ দরবারে ইলাহীতে যে সবিনয় আরজ পেশ করেছিলেন, কুরআনের ভাষায় তা নিম্ন রূপ:

اَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ

‘আপনি কি পৃথিবীতে এমন শ্রেণীকে সৃষ্টি করবেন যারা ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি সৃষ্টি করবে ও রক্তপাত ঘটাবে! আমরাই তো আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা ও মহিমা ঘোষণা করি।’ (সূরা বাকারা-৩০)

উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে খলীফা বানানোর বিষয়টি ফেরেশ্তাগণকে অবহিত করাকে কেউ কেউ ফেরেশ্তাকুলের সাথে উক্ত বিষয়ে রাব্বুল আলামীনের পরামর্শ করা হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আসলে এটা সঠিক নয়। আর ফেরেশ্তাগণকে এ বিষয়ে অবহিত করার পর তাঁদের আরজও কোন অভিযোগ ছিল না এবং কোনরূপ আপত্তির জন্যও তাঁরা এরূপ বলেননি। তেমনিভাবে রাব্বুল আলামীনের সাথে বিতর্ক কিংবা তাঁর কাজে খুঁত বের করার উদ্দেশ্যেও এরূপ প্রশ্ন তাঁরা করেননি। কারণ, ফেরেশ্তাগণের সেই অধিকার নেই। আর এটা কস্মিনকালেও তাদের দ্বারা সম্ভবও নয়। তবে তাঁরা বিষয়টি অবগত হয়ে তৎক্ষণাত বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। আর মহান পরওয়ারদিগারের এই সিদ্ধান্তের হিকমাত জানার জন্য তাঁর দরবারে সবিনয় আরজ পেশ করেছিলেন, যদি পৃথিবীতে খলীফা বানানোর হিকমাত ও তাৎপর্য এই হয় যে, তারা রাত-দিন আপনার তাস্বীহ-তাহলীল আদায়ে মশগুল থাকবে এবং আপনার পবিত্রতা ও মাহিমা বর্ণনা করবে, তাহলে এর জন্য তো আমরাই সদা প্রস্তুত আছি এবং প্রতিনিয়ত আপনার প্রশংসা ও গুণগান করছি। নির্দ্বিধায় আপনার আদেশ পালন করছি। অপরদিকে এ নতুন সৃষ্টির দেহ যেহেতু মাটি দ্বারা গঠিত হবে, আর মাটি হচ্ছে নি¤œমানের বস্তু। তাই তাদের কাজও নি¤œমানের হওয়ার আশংকা রয়েছে। হয়তবা তারা যমীনে ফেতনা-ফাসাদ করবে ও রক্তপাত ঘটাবে। তবে তাদের এরূপ বিনয়ের আরজও রাব্বুল আলামীনের পসন্দ হয়নি। তাই তিনি ফেরেশ্তাদের উক্তির জবাবে ইরশাদ করলেন-

اِنِّي اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ  ‘নিশ্চয় আমি যা জানি, তোমরা তা জান না।’ (সূরা বাকারা: ৩০)

এর দ্বারা মহান রাব্বুল আলামীন তাদেরকে এ আদব শিক্ষা দিলেন যে, স্রষ্টার কোন কর্ম সম্পর্কে সৃষ্ট জীবের তাড়াতাড়ি কোন মন্তব্য করা উচিত নয়। তেমনিভাবে স্রষ্টার পক্ষ হতে মূল তথ্য প্রকাশের পূর্বেই সে বিষয়ে কোন মাখলূকের সন্দেহ পোষণ করা উচিত নয়। এভাবে তাদের বর্ণনাভঙ্গি ও উদ্দেশ্য ব্যক্ত করার ত্রুটি সম্পর্কে সতর্কীকরণের পর এমন অভিনব পন্থায় আরেকটি উত্তর দেয়া তিনি সমীচীন মনে করেছেন, যাতে হযরত আদম আ.এর শ্রেষ্ঠত্ব ও নিজেদের অক্ষমতা তাদের নিকট স্পষ্টত: প্রকাশ পায়। আর এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা হযরত আদম আ. কে জ্ঞান দান করলেন এবং সকল বস্তুর নাম শিখিয়ে দিলেন। অতঃপর ফেরেশ্তাগণের সম্মুখে সেসব বস্তু পেশ করে সেগুলোর নাম জানতে চাইলেন। এতে তারা অপারগতা প্রকাশ করল। নিম্নের আয়াতে সেই বর্ণনা দিয়ে ইরশাদ হয়েছে:

وَعَلَّمَ آدَمَ الْاَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلئِكَةِ فَقَالَ اَنْبِئُونِي بِاَسْمَاءِ هَؤُلَاءِ اِنْ كُنْتُمْ صدِقِينَ

‘তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) হযরত আদম আ. কে সকল (বস্তুর) নাম শিক্ষা দিলেন। অতঃপর তিনি সেগুলো ফেরেশ্তাদের নিকট পেশ করলেন এবং বললেন, তোমরা আমাকে এগুলোর (বস্তুগুলোর) নাম বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সূরা বাকারা:৩১)

আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে এরূপ প্রশ্ন শুনে তাঁরা সস্পূর্ণ নির্বাক হয়ে গেলেন এবং অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আরজ করলেন। ফেরেশতাদের সেই বিনয়পূর্ণ আরজের বর্ণনা রয়েছে পবিত্র কুরআনে। ইরশাদ হয়েছে:

سُبْحنَكَ لَا عِلْمَ لَنَا اِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا اِنَّكَ اَنْتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ

‘আমরা আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করি। আপনি আমাদেরকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা ব্যতিত আমাদের কোন জ্ঞানই নেই। বস্তুত আপনি জ্ঞানময় ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা বাকারা:৩২)

উক্ত আয়াতের বাহ্যিক বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টতঃ বুঝা যায় যে, বস্তুসমূহের নাম কেবল হযরত আদম আ.কেই শিখানো হয়েছিল। ফেরেশ্তাগণ সেই শিক্ষায় শরীক ছিলেন না। তারপরও তারেদরকে বস্তুসমূহের নাম জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল একথা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যে, হযরত আদম আ. কে যে সৃষ্টি করা হয়েছে এমন মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য, যার যোগ্যতা তাদের মাঝে নেই। আর এক্ষেত্রে এই অবকাশও আছে যে, হযরত আদম আ.কে বস্তুসমূহের নাম শিক্ষা দেয়ার সময় ফেরেশ্তাগণও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সেগুলো উপলব্ধি করা ও স্মরণ রাখার ক্ষমতা তাদের ছিল না বিধায় তারা উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।-আশরাফুত্ তাফাসীর:খ:-১পৃ-৬১

ফেরেশ্তাগণকে বস্তুসমূহের নামের জ্ঞান না দিয়ে তাদেরকে এরূপ প্রশ্ন করায় তারাও বুঝে নিলেন যে, এখানে আসলে পরীক্ষা উদ্দেশ্য নয়; বরং এ বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা উদ্দেশ্য যে, আল্লাহ পাকের খেলাফত পরিচালনা করা কেবল তাসবীহ-তাহলীল ও জিকর-আজকারের আধিক্যের উপর নির্ভরশীল নয়; বরং ইলম ও জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। এভাবে ফেরেশ্তাগণের অক্ষমতা প্রকাশ পাওয়া এবং সেটা তাদের স্বীকার করে নেয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা হযরত আদম আ. কে বস্তুসমূহের নাম বলতে বললে তিনি তৎক্ষণাত সেগুলোর নাম বলতে শুরু করলেন। এভাবেই হযরত আদম আ.এর শ্রেষ্ঠত্ব ও খেলাফতের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা প্রমাণিত হল। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

قَالَ يآدَمُ اَنْبِئْهُمْ بِاَسْمَائِهِمْ فَلَمَّا اَنْبَاَهُمْ بِاَسْمَائِهِمْ قَالَ اَلَمْ اَقُلْ لَكُمْ اِنِّي اَعْلَمُ غَيْبَ السَّموتِ وَالْاَرْضِ وَاَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا كُنْتُمْ تَكْتُمُونَ

‘তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) বললেন, ‘হে আদম! তাদেরকে (ফেরেশ্তাদেরকে) এসকল বস্তুর নাম বলে দাও।’ এরপর যখন তিনি তাদেরকে এসবের নাম বলে দিলেন তখন তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আকাশম-লী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বস্তু সম্মন্ধে আমি নিশ্চিতভাবে অবহিত এবং তোমরা যা ব্যক্ত কর ও গোপন রাখ আমি তাও জানি’।’ (সূরা বাকারা: ৩৩)

হযরত আদম আ. কে সাজদার হুকুম ও ইবলীসের অস্বীকৃতি:

হযরত আদম আ. এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হওয়ার পর তাঁকে সাজদা করতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফেরেশ্তাকুল ও ইবলীসকে নির্দেশ দিলেন। মহান রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ পালনার্থে ফেরেশ্তাগণ সাজদায় লুটিয়ে পড়লেন। অপরদিকে ইবলীস অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করল। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এ বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে:

وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلئِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا اِلَّا اِبْلِيسَ اَبى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكـــفِرِينَ

‘যখন আমি ফেরেশ্তাদেরকে বললাম, তোমরা আদমকে সাজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতিত সকলেই সাজদা করল; সে অমান্য করল ও অহংকার করল। সুতরাং সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল।’ (সূরা বাকারা:৩৪)

অন্য সূরায় ইরশাদ হয়েছে:

وَلَقَدْ خَلَقْنكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلئِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا اِلَّا اِبْلِيسَ لَمْ يَكُنْ مِنَ السّجِدِينَ

‘নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। এরপর তোমাদের আকৃতি দান করেছি। অতঃপর ফেরেশ্তাদেরকে বলেছি, ‘তোমরা আদমকে সাজদা কর। ইবলীস ব্যতিত সকলেই সাজদা করল। সে (ইবলীস) সাজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল না।’ (সূরা আ‘রাফ:১১) আরো ইরশাদ হয়েছে:

فَاِذَا سَوَّيْتُه وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَه سجِدِينَ، فَسَجَدَ الْمَلئِكَةُ كُلُّهُمْ اَجْمَعُونَ ، اِلَّا اِبْلِيسَ اَبى اَنْ يَكُونَ مَعَ السّجِدِينَ

‘অতঃপর যখন আমি তাঁকে সুঠাম করব এবং তাঁর মাঝে আমার পক্ষ থেকে রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সাজদাবনত হবে। তখন ফেরেশ্তাগণ সকলেই সাজদা করল, ইবলীস ব্যতিত। সে সাজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল।’ (সূরা হিজ্র:২৯-৩১)

আরো ইরশাদ হয়েছে: وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلئِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا اِلَّا اِبْلِيس

‘স্মরণ কর,যখন ফেরেশ্তাদেরকে বললাম, ‘আদমকে সাজদা কর’ তখন ইবলীস ব্যতিত সকলেই সাজদা করল।’ (সূরা ইসরা:৬১)

আরো ইরশাদ হয়েছে:

وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلئِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا اِلَّا اِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ اَمْرِ رَبِّهِ اَفَتَتَّخِذُونَه وَذُرِّيَّتَه اَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ بِئْسَ لِلظّلِمِينَ بَدَلًا

‘স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশ্তাদেরকে বলেছিলাম, ‘আদমের প্রতি সাজদা কর’, তখন তারা সকলেই সাজদা করল ইবলীস ব্যতিত; সে জ্বিনদের একজন ছিল। সুতরাং সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছ? তারাতো তোমাদের শত্রু। জালিমদের বিনিময় কত নিকৃষ্ট!’ (সূরা কাহ্ফ:৫০)

এ বিষয়ে আরো ইরশাদ হয়েছে:    وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلئِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا اِلَّا اِبْلِيسَ اَبى

‘স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশ্তাদেরকে বললাম, ‘আদমকে সাজ্দা কর’, তখন ইবলীস ব্যতিত সকলেই সাজ্দা করল; সে অমান্য করল।’ (সূরা ত্বহা:১১৬)

আরো ইরশাদ হয়েছে:  فَاِذَا سَوَّيْتُه وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَه سجِدِينَ ، فَسَجَدَ الْمَلئِكَةُ كُلُّهُمْ اَجْمَعُونَ ، اِلَّا اِبْلِيسَ اسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكـــفِرِينَ

‘অতঃপর যখন আমি তাঁকে (হযরত আদম আ. কে) সুঠাম করব এবং তাঁর মাঝে (আমার পক্ষ) থেকে রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সাজদাবনত হবে।’ তখন ফেরেশ্তারা সকলেই সাজ্দাবনত হল-কেবল ইবলীস ব্যতিত। সে অহংকার করল এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল।’ (সূরা সাদ:৭২-৭৪)

ইবলীসের অহমিকাপূর্ণ জবাব

হযরত আদম আ. কে সাজদা না করার কারণ সম্পর্কে ইবলীসের নিকট মহান রাব্বুল আলামীন জানতে চাইলে সে অত্যন্ত দম্ভ ও অহমিকার সাথে জবাব দিল। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণনাভঙ্গির সামান্য পার্থক্যভেদে ইবলীসের জবাব সম্পর্কিত যেসব বর্ণনা রয়েছে, তা নি¤œরূপ। ইরশাদ হয়েছে:

قَالَ مَا مَنَعَكَ اَلَّا تَسْجُدَ اِذْ اَمَرْتُكَ قَالَ اَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَه مِنْ طِينٍ

‘তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) বললেন,‘আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কোন জিনিস তোমাকে সাজদা করতে বারণ করল? সে বলল, ‘আমি তাঁর অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ আগুন দ্বারা এবং তাঁকে সৃষ্টি করেছ কাদা মাটি দ্বারা।’ (সূরা আ‘রাফ:১২)

অন্য সূরায় ইরশাদ হয়েছে:  قَالَ ياِبْلِيسُ مَا لَكَ اَلَّا تَكُونَ مَعَ السّجِدِينَ، قَالَ لَمْ اَكُنْ لِاَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَه مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَاٍ مَسْنُونٍ

‘আল্লাহ তা‘আলা বললেন, হে ইবলীস! তোমার কি হল যে, তুমি সাজ্দাকারীদের অর্ন্তভুক্ত হলে না? সে বলল, ‘আপনি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন আমি তাকে সাজ্দা করবার নই।’ (সূরা হিজর:৩২-৩৩)

আরো ইরশাদ হয়েছে:  وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلئِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا اِلَّا اِبْلِيسَ قَالَ ءَاَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا

قَالَ اَرَاَيْتَكَ هذَا الَّذِي كَرَّمْتَ عَلَيَّ لَئِنْ اَخَّرْتَنِ اِلى يَوْمِ الْقِيمَةِ لَاَحْتَنِكَنَّ ذُرِّيَّتَه اِلَّا قَلِيلًا

‘স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশ্তাদেরকে বললাম, ‘আদমকে সাজ্দা কর’. তখন ইবলীস ব্যতিত সকলেই সাজ্দা করল। সে বলল, ‘আমি কি তাকে সাজ্দা করব, যাকে আপনি কাদা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন?’ সে বলল, ‘আপনি কি বিবেচনা করেছেন, আপনি আমার উপর এই ব্যক্তিকে মর্যাদা দান করলেন! কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যদি আমাকে অবকাশ দেন তাহলে আমি অল্প কয়েকজন ব্যতিত তাঁর বংশধরকে অবশ্যই কর্তৃত্বাধীন করে ফেলব।’ (সূরা ইসরা:৬১-৬২)

আরো ইরশাদ হয়েছে:  قَالَ ياِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ اَنْ تَسْجُدَ لِمَاخَلَقْتُ بِيَدَيَّ اَسْتَكْبَرْتَ اَمْ كُنْتَ مِنَ الْعَالِينَ ، قَالَ اَنَا خَيْرٌ مِنْهُ خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَه مِنْ طِينٍ

‘তিনি বললেন, হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি, তার প্রতি সাজ্দাবনত হতে তোমাকে কোন্ জিনিস বাধা দিল? তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি উচ্চ মর্যদাসম্পন্ন? সে বলল, আমি তাঁর (হযরত আদম আ.) থেকে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন দ্বারা। আর তাঁকে সৃষ্টি করেছেন কাদা মাটি দ্বারা।’ (সূরা সাদ:৭৫-৭৬)

ইবলীসের বহিস্কারাদেশ ও অভিশপ্ত হওয়া প্রসঙ্গ:

আল্লাহ তা‘আলার মহান হুকুম লঙ্ঘন করে হযরত আদম আ. কে সাজদা করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও দাম্ভিকতাপূর্ণ জবাবের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন এবং সাথে সাথে তার অভিশপ্ত হওয়ার ঘোষণা দিলেন। এরপর নিজ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে বিনয়ের সাথে ক্ষমা প্রথনা করা ছিল বান্দা হিসাবে তার জন্য নিতান্তই অপরিহার্য। অথচ ক্ষমা প্রার্থনার পরিবর্তে জীদের বশবর্তী হয়ে সে আল্লাহ পাকের নিকট কিয়ামত পর্যন্ত দীর্ঘ হায়াত প্রার্থনা করল। এতদসংক্রান্ত পবিত্র কুরআনে বিক্ষিপ্ত যে বর্ণনা রয়েছে, তা নি¤েœ প্রদত্ত হল। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:  قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ اَنْ تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ اِنَّكَ مِنَ الصّغِرِينَ

‘তিনি বললেন, এ স্থান হতে নেমে যাও। এখানে অহংকার করবে এটা হতে পারে না। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও। নিশ্চয় তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা আ‘রাফ:১৩-১৪) অন্য সূরায় ইরশাদ হয়েছে:

قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَاِنَّكَ رَجِيمٌ (৩৪) وَاِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ اِلى يَوْمِ الدِّينِ ، قَالَ رَبِّ فَاَنْظِرْنِي اِلى يَوْمِ يُبْعَثُونَ

‘তিনি বললেন, তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। কারণ তুমি তো বিতাড়িত। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! পুনরুত্থান দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন।’ (সূরা হিজর:৩৪-৩৬) আরো ইরশাদ হয়েছে:

لَئِنْ اَخَّرْتَنِ اِلى يَوْمِ الْقِيمَةِ لَاَحْتَنِكَنَّ ذُرِّيَّتَهُ اِلَّا قَلِيلًا     ‘যদি আপনি আমাকে ক্বিয়ামতের দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন তাহলে আমি অল্প কয়েকজন ব্যতিত তার বংশধরদেরকে অবশ্যই কর্তৃত্বাধীন করে ফেলব।’

(সূরা ইসরা:৬২) আরো ইরশাদ হয়েছে:    قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَاِنَّكَ رَجِيمٌ ، وَاِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِي اِلى يَوْمِ الدِّينِ ، قَالَ رَبِّ فَاَنْظِرْنِي اِلى يَوْمِ يُبْعَثُونَ

‘তিনি বললেন, তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। কারণ নিশ্চয়ই তুমি বিতাড়িত এবং তোমার উপর আমার লা‘নত স্থায়ী হবে কর্মফল দিন পর্যন্ত। সে (ইবলীস) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিন পর্যন্ত।’ (সূরা সাদ:৭৭-৮১)

ইবলীসের এই প্রার্থনা আল্লাহ পাক কবুল করে নিলেন। তার এই প্রার্থনা কবুলের বর্ণনা সম্বলিত আয়াতসমূহ নিম্ন রূপ। ইরশাদ হয়েছে:

فَاِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ ، اِلى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ   ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হলে, নির্ধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’ (সূরা হিজ্র: ৩৭-৩৮ ও সূরা সাদ: ৮০-৮১)

ইবলীসের চ্যালেঞ্জ ঘোষণা

ইবলীসের দাবী আল্লাহ তা‘আলার দরবারে গৃহীত হওয়ার ঘোষণা শ্রবণের পর সে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বনী আদমকে বিভ্রান্ত করার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে। ইবলীসের সেই চ্যালেঞ্জের বর্ণনা পবিত্র কুরআন দিয়েছে নিম্নোক্তভাবে। ইরশাদ হয়েছে:

قَالَ فَبِمَا اَغْوَيْتَنِي لَاَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ ، ثُمَّ لَآتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ اَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ اَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ وَلَا تَجِدُ اَكْثَرَهُمْ شكِرِينَ ،

‘সে (শয়তান) বলল, তুমি আমাকে বিভ্রান্ত করার কারণে আমি তোমার সরল পথে মানুষের জন্য নিশ্চয় ওঁৎ পেতে থাকব। অতঃপর আমি তাদের নিকট আসবই তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ, ডান ও বাম দিক থেকে এবং তুমি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবে না।’ (সূরা আ‘রাফ:১৬-১৭)

অন্য সূরায় ইরশাদ হয়েছে:   قَالَ رَبِّ بِمَا اَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْاَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِينَ ، اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ ،

‘সে (ইবলীস) বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন সেজন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে তুলব এবং আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করব। তবে তাদের মধ্যে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতিত।’ (সূরা হিজর:৩৯-৪০)

আরো ইরশাদ হয়েছে:  فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ اَجْمَعِينَ (৮২) اِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ

‘আপনার ক্ষমতার শপথ! আমি তাদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করব। তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাগণ ব্যতিত।’ (সূরা সাদ:৮২-৮৩)

ইবলীসের এরূপ দম্ভোক্তি ও চ্যালেঞ্জ ঘোষণার পর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দুরাচার শয়তান ও তার অনুসারীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে ইরশাদ করেন:    قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَدْحُورًا لَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَاَمْلَاَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكُمْ اَجْمَعِينَ

‘আল্লাহ তা‘আলা বললেন, এখান থেকে লাঞ্ছিত ও ধিকৃত হয়ে বের হয়ে যাও। এদের মধ্যে যে ব্যক্তি তোর অনুসরণ করবে, (তারাও তোর সঙ্গী হবে)। আমি অবশ্যই তোদের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করব। (সূরা আ‘রাফ:১৮)

আরো ইরশাদ করেছেন:    قَالَ هذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ ، اِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطـنٌ اِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغـوِينَ ، وَاِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ اَجْمَعِينَ

‘আল্লাহ তা‘আলা বললেন, এটাই আমার নিকট পৌঁছার সরল পথ। বিভ্রান্তদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ব্যতিত আমার বান্দাগণের উপর তোমার কোনই ক্ষমতা থাকবে না; ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সকলের প্রতিশ্রুত স্থান।’ (সূরা হিজর:৪১-৪৩) অন্য সূরায় ইরশাদ করেন:

قَالَ اذْهَبْ فَمَنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ فَاِنَّ جَهَنَّمَ جَزَاؤُكُمْ جَزَاءً مَوْفُورًا ، وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَاَجْلِبْ عَلَيْهِمْ بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِي الْاَمْوَالِ وَالْاَوْلَادِ وَعِدْهُمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطـنُ اِلَّا غُرُورًا ، اِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطـنٌ وَكَفَى بِرَبِّكَ وَكِيلًا

‘আল্লাহ তা‘আলা বললেন ‘যাও, তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয় জাহান্নামই তোমাদের সকলের শাস্তি, পূর্ণ শাস্তি। ‘তোমার আহ্বানে তাদের মধ্যে যাকে পার পদস্খলিত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদেরকে আক্রমণ কর এবং তাদের ধনে ও সন্তান-সন্তুতিতে শরীক হয়ে যাও ও তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও।’ শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনামাত্র। নিশ্চয়ই ‘আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নাই।’ কর্মবিধায়ক হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট। (সূরা ইসরা:৬৩-৬৫)

হযরত আদম আ. এর জান্নাতে অবস্থান:

জান্নাত থেকে ইবলীসের বিতাড়িত হওয়ার পর হযরত আদম আ.জান্নাতে অবস্থান করতে থাকলেন। তবে সেখানে জীবন যাপনে ও সুখ-শান্তিতে যেন তিনি এক প্রকার নির্জনতা ও শূন্যতা অনুভব করছিলেন। তাঁর স্বভাব ও প্রকৃতি যেন একজন জীবনসঙ্গিনী অন্বেষণ করছিল। এরূপ অবস্থায় আল্লাহ তাআলা হযরত হাওয়া আ. কে সৃষ্টি করলেন। হযরত হাওয়া আ.এর সৃষ্টি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

ياَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا    ‘হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি (আদম আ.) হতে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি তাঁর (হযরত আদম আ.) থেকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর জীবনসঙ্গিনীকে।’

এ সম্পর্কে অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:   هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ اِلَيْهَا

‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি হতে। আর তাঁর থেকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর স্ত্রীকে, যেন সে তার নিকট (গিয়ে) প্রশান্তি লাভ করে।’ (সূরা আ‘রাফ:১৮৯)

উপরোক্ত উভয় আয়াতে উল্লিখিত زَوْجَ শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে হযরত হাওয়া আ., যাকে হযরত আদম আ. এর বাম পাঁজরের হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। রাসূলে আকরাম সা. থেকে বর্ণিত হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে হযরত আদম আ.এর পাঁজরের বাঁকা হাড় হতে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنَ النّبِيّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: “مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الاَخِرِ، فَاِذَا شَهِدَ أَمْراً فَلْيَتَكَلّمْ بِخَيْرٍ أَوْ لِيَسْكُتْ، وَاسْتَوْصُوا بِالنّسَاءِ، فَاِنّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ، وَاِنّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضّلَعِ أَعْلاَهُ، اِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَاِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ، اسْتَوْصُوا بِالنّسَاءِ خَيْراً”.

‘হযরত আবু হুরাইরা রা.রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যখন কোন বিষয়ের সম্মুখীন হয় তখন সে যেন উত্তম কথা বলে বা চুপ থাকে। আর তোমরা নারীদেরকে কল্যাণের ওসিয়ত কর। কারণ মহিলাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে বাম পাজড়ের বাঁকা হাড় থেকে। আর পাজড়ের বাঁকা হাড়সমূহের মাঝে সবচেয়ে বাঁকা হল উপরে অবস্থিত হাড়। যদি তুমি তা ঠিক করতে যাও তাহলে ভেঙ্গে যাবে। আর যদি ছেড়ে দাও তাহলে তা আরো বাঁকা হতে থাকবে। তোমরা নারীদেরকে কল্যাণের ওসিয়ত কর।’ (মুসলিম:১৪৬৮)

এদিকে অভিশপ্ত শয়তান আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে বিতাড়িত হয়ে হীনতর হয়ে গেল। অপরদিকে হযরত আদম আ.এর জন্য অনুগ্রহ ও দয়া প্রদর্শিত হল। জান্নাতে বসবাস ও তৃপ্তি সহকারে জান্নাতী নিয়ামত উপভোগের ঘোষণা দেয়া হল। এরই সাথে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হল তাদের প্রতি ইবলীসের চরম বিদ্বেষ ও শত্রুতার কথা। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে:

يآدَمُ اسْكُنْ اَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظّلِمِينَ

‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং জান্নাতের যেথা ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দে আহার কর। কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না; তাহলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা বাকারা:৩৫)

অন্য সূরায় ইরশাদ হয়েছে: وَيآدَمُ اسْكُنْ اَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظّلِمِينَ

‘হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং জান্নাতের যেথা ইচ্ছা আহার কর। কিন্তু এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না; তাহলে তোমরা জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা আ‘রাফ:১৯)

ইবলীস সম্পর্কে তাদের উভয়কে সতর্ক করে আল্লাহ তা‘আলা আরো ইরশাদ করেন:  فَقُلْنَا يآدَمُ اِنَّ هذَا عَدُوٌّ لَكَ وَلِزَوْجِكَ فَلَا يُخْرِجَنَّكُمَا مِنَ الْجَنَّةِ فَتَشْقى (১১৭) اِنَّ لَكَ اَلَّا تَجُوعَ فِيهَا وَلَا تَعْرى (১১৮) وَاَنَّكَ لَا تَظْمَلؤُا فِيهَا وَلَا تَضْحى

‘অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আদম! নিশ্চয়ই এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে না দেয়। তাহলে তোমরা দু:খ-কষ্ট পাবে। নিশ্চয় তোমার জন্য থাকল (এ নিয়ম) যে তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্ত ও বিবস্ত্র হবে না এবং পিপাসার্ত ও রোদে ক্লিষ্টও হবে না।’ (সূরা ত্বহা:১১-১১৯)

ইবলীসের প্ররোচনা

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ প্রাপ্তির পর ইবলীস ঔদ্ধত্যভরে মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করা এবং তাদেরকে ভ্রষ্ট করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত আদম আ. ও হাওয়া আ. কে জান্নাতে বসবাস করার ও সেখানের নিয়ামত ভোগ করার হুকুম দেয়ার সাথে সাথে একটি বিশেষ বৃক্ষের ফল ভক্ষণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। আর তখনই, সে তাঁদেরকে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণ করানোর ফন্দি আঁটতে শুরু করে। হযরত আদম আ.ও হযরত হাওয়া আ.জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামতরাজি ভোগ করতে থাকেন এবং তারা সেখানের মনোরম পরিবেশে বিচরণ করতে থাকেন। এ অবস্থা যেন ইবলীসের নিকট ছিল একেবারেই অসহ্য। যার কারণে তার এ করুণ পরিণতি, তিনি জান্নাতে পরম আনন্দে দিনাতিপাত করবেন, আর সে অভিশপ্ত হয়ে নিশ্চুপ বসে থাকবে, তা হতে পারে না। আর সেজন্যই প্রতিশোধ স্পৃহায় উম্মত্ত হয়ে সে হযরত আদম আ. কে জান্নাত থেকে বের করার মিশন শুরু করল। যে বৃক্ষের ফল ভক্ষণের প্রতি নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটির প্রতি তাদেরকে প্রলুব্ধ করতে সে অহেতুক মিথ্যা আশা দিতে থাকল। মানবজাতির প্রতি ইবলীসের চরম বিদ্বেষ, শত্রুতা এবং আল্লাহ পাকের নিষেধাজ্ঞা উভয়টি হযরত আদম আ.এর পুরোপুরি স্মরণ থাকায় তিনি ইবলীসেরে কথায় বিন্দুমাত্র ভ্রƒক্ষেপ করেননি। কিন্তু বার বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও ইবলীস নিরাশ হয়নি। চেষ্টা অব্যাহত রাখে বিরামহীনভাবে। ইবলীস হযরত আদম আ. ও হযরত হাওয়া আ. কে ধোঁকার ফাঁদে জড়ানোর জন্য তাদের কল্যাণকামী সেজে যেসব কপটতাপূর্ণ বাক্য প্রয়োগ করেছিল পবিত্র কুরআনে সেই বর্ণনা দিয়ে ইরশাদ হয়েছে:

فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطـنُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا ورِيَ عَنْهُمَا مِنْ سَوْآتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهـكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هذِهِ الشَّجَرَةِ اِلَّا اَنْ تَكُونَا مَلَكَيْنِ اَوْ تَكُونَا مِنَ الْخلِدِينَ (২০) وَقَاسَمَهُمَا اِنِّي لَكُمَا لَمِنَ النّصِحِينَ

‘অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের থেকে গোপন রাখা হয়েছিল তা তাদের নিকট প্রকাশ করার জন্য শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল এবং বলল, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে (কোন কারণেই) নিষেধ করেননি। তবে এ কারণে যে, তোমরা ফেরেশ্তা হয়ে যাবে বা চিরস্থায়ী হয়ে যাবে। সে তাদের উভয়ের নিকট শপথ করে বলল, আমি তো তোমাদের হিতাকাঙ্খীদের একজন।’  (সূরা আ‘রাফ:২০-২১)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:   فَوَسْوَسَ اِلَيْهِ الشَّيْطـنُ قَالَ يآدَمُ هَلْ اَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَا يَبْلى

‘অতঃপর শয়তান তাঁকে কুমন্ত্রণা দিল; সে বলল, ‘হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্ত জীবনের বৃক্ষের কথা ও অক্ষয় রাজ্যের কথা।’ (সূরা ত্বহা:১২০)

এভাবে মিথ্যা কসম করে ও কল্যাণকামী সেজে কথাবার্তা বলতে থাকায় একসময় হযরত আদম আ.আল্লাহ তা‘আলার হুকুম ও তাঁর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভুলে গেলেন। আর তাই ইবলীস শেষ পর্যন্ত তাঁকে ধোঁকা দিতে সক্ষম হল।

এই বিষয়টির অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:  وَلَقَدْ عَهِدْنَا اِلى آدَمَ مِنْ قَبْلُ فَنَسِيَ وَلَمْ نَجِدْ لَه عَزْمًا

‘নিশ্চয় আমি তো ইতিপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল; আমি তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাইনি।’ (সূরা ত্বহা:১১৫)

আরো ইরশাদ হয়েছ: وَعَصى آدَمُ رَبَّهُ فَغَوى     ‘হযরত আদম আ.তাঁর প্রতিপালকের হুকুম বিস্মৃত হলেন, ফলে তিনি ভ্রমে পতিত হলেন।’ (সূরা ত্বহা:১২১)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে: فَدَلّهُمَا بِغُرُورٍ       ‘অতঃপর সে (ইবলীস) তাদেরকে প্রবঞ্চনার দ্বারা অধঃপতিত করল।’ (সূরা আ‘রাফ:২২)

নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের প্রতিক্রিয়া:

ইবলীসের প্ররোচনায় নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণের প্রতিক্রিয়ায় তারা দু’জনেই বস্ত্রহীন হয়ে গেলেন এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে জান্নাতের বৃক্ষের পাতা দ্বারা নিজেদের লজ্জাস্থান ঢাকতে লাগলেন। এ অবস্থার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন:

فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفنِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ

‘অতঃপর যখন তারা সেই বৃক্ষ ফলের স্বাদ আস্বাদন করল, তখন তাদের নিকট নিজেদের লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল।’ (সূরা আ‘রাফ:২২) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:

فَاَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفنِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ

‘অতঃপর তারা (হযরত আদম ও হাউয়া আ.) তা (নিষিদ্ধ বৃক্ষ) হতে ভক্ষণ করল; তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ল এবং তারা জান্নাতের বৃক্ষপত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগল।’ (সূরা ত্বহা: ১২১)

নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণের পর তাঁদের এই করুণ অবস্থায়ই আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে এল তিরস্কার বাণী। এতে তারা আরো চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়লেন। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:      وَنَادهُمَا رَبُّهُمَا اَلَمْ اَنْهَكُمَا عَنْ تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ وَاَقُلْ لَكُمَا اِنَّ الشَّيْطنَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُبِينٌ

‘আর তাদের পালনকর্তা তাদেরকে ডেকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এই বৃক্ষ হতে নিষেধ করিনি এবং আমি তোমাদেরকে বলিনি যে, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?’ (সূরা আ‘রাফ:২২)

কেবলমাত্র এই তিরস্কার বাণীতেই ক্ষান্ত করা হল না; বরং এর কারণে তাঁদেরকে জান্নাতের নিয়ামতরাজি ত্যাগ করে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে পৃথিবীতে আসতে হল। জান্নাত থেকে তাঁদের পৃথিবীতে আসার হুকুম সম্পর্কে কয়েকটি সূরায় বর্ণনা রয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে:   قَالَ اهْبِطَا مِنْهَا جَمِيعًا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ فَاِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقى

‘তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) বললেন, তোমরা উভয়ে জান্নাত থেকে নেমে যাও। তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু। পরে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সৎপথের নির্দেশ এলে যে আমার পথ অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না ও দু:খ-কষ্ট পাবে না।’ (সূরা ত্বহা:১২৩)

আরো ইরশাদ হয়েছে:   قَالَ اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِي الْاَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌاِلى حِينٍ (২৪) قَالَ فِيهَا تَحْيَوْنَ وَفِيهَا تَمُوتُونَ وَمِنْهَا تُخْرَجُونَ

‘তিনি (আল্লাহ তা‘আলা) বললেন, তোমরা একে অপরের শত্রু হয়ে নেমে যাও। আর তোমাদের জন্য পৃথিবীতে থাকবে কিছুকাল পর্যন্ত বসবাস ও জীবিকা। তিনি (আরো) বললেন, সেখানেই (পৃথিবীতে) তোমরা জীবন যাপন করবে। সেখানেই তোমাদের মৃত্যু হবে এবং সেখান থেকেই তোমাদেরকে বের করে আনা হবে।’   (সূরা আ‘রাফ:২৫)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে:   وَقُلْنَا اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ وَلَكُمْ فِي الْاَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ اِلى حِينٍ

‘তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে নেমে যাও, পৃথিবীতে তোমাদের জন্য কিছুকালের জন্য থাকবে বসবাস ও জীবিকা।’ (সূরা বাকারা:৩৬) আরো ইরশাদ হয়েছে:

قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا فَاِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

‘আমি বললাম, তোমরা সকলেই এ স্থান হতে নেমে যাও। পরে যদি আমার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসে তখন যারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় ও চিন্তা থাকবে না।’ (সূরা বাকারা: ৩৮)

আল্লাহ তা‘আলার হুকুম মুতাবেক তাঁরা জান্নাত থেকে এসে হাজির হলেন পৃথিবীর অজানা- অচেনা এক নতুন পরিবেশে। আর বিতাড়িত শয়তানের প্ররোচনার কারণেই এ অনাকাঙ্খিত ঘটনার সূত্রপাত হল। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে:

فَاَزَلَّهُمَا الشَّيْطـنُ عَنْهَا فَاَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ

‘কিন্তু শয়তান তা (জান্নাত) থেকে তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদেরকে বহিস্কৃত করল।’ (সূরা বাকারা: ৩৬)

হযরত আদম আ. ও হযরত হাওয়া আ. এর দ্বারা আল্লাহ পাকের ইচ্ছা পরিপন্থী কাজ সংঘটিত হওয়ার পর থেকেই তারা যার পর নাই পেরেশান ছিলেন। ক্ষমা প্রাপ্তির চিন্তায় বিভোর ছিলেন। প্রতিনিয়ত কেবলমাত্র একই চিন্তা ছিল যে, কিভাবে এ অন্যায়ের প্রতিকার করা যায়। মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দাদের এ অবস্থা লক্ষ্য করে করুণা পরবশ হলেন। ফলে হযরত আদম আ. পৃথিবীতে আগমনের সময়ই তাওবার ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মহা মূল্যবান কয়েকটি কালিমা লাভ করলেন। পবিত্র কুরআনে এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:

فَتَلَقَّى آدَمُ مِنْ رَبِّه كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ اِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ    ‘অতঃপর হযরত আদম আ. তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে কিছু বাক্য প্রাপ্ত হলেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি অনুগ্রহ করলেন। নিশ্চয় তিনি তাওবা কবূলকারী ও অনুগ্রহকারী।’ (সূরা বাকারা:৩৭)

আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত সেই কালিমাগুলো কি ছিল, এ বিষয়ে মুফাসসিরীনে কিরামের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। এসবের মধ্য হতে রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. কর্তৃক বর্ণিত অভিমতটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেছেন উপরোক্ত আয়াতে উল্লিখিত كَلِمَاتٍ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তা-ই যা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত রয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে:   رَبَّنَا ظَلَمْنَا اَنْفُسَنَا وَاِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخسِرِينَ

‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না কর এবং দয়া না কর, তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সূরা আ‘রাফ: ২৩)

এভাবে ক্রন্দন করে পরম করুণাময়ের নিকট ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া অব্যাহত রাখায় শেষ পর্যন্ত তিনি তাদের প্রতি দয়ার দৃষ্টি প্রদান করলেন এবং তাদের অন্যায় ক্ষমা করে দিলেন।

পবিত্র কুরআনে হযরত আদম আ.এর তাওবা কবুল হওয়া সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে:     فَتَابَ عَلَيْهِ اِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

‘অতঃপর তিনি তাঁর এর প্রতি অনুগ্রহ করলেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সূরা বাকারা:৩৭)

অন্যত্র এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে:    ثُمَّ اجْتَبهُ رَبُّهُ فَتَابَ عَلَيْهِ وَهَدى

‘এর পর তাঁর প্রতিপালক তাঁকে মনোনীত করলেন। অতঃপর তারঁ প্রতি অনুগ্রহ করলেন ও তাকে পথ নির্দেশ করলেন।’ (সূরা ত্বহা:১২২)

হযরত আদম আ.এর ঘটনা কুরআনে যতটুকু উল্লিখিত আছে, তা ধারাবাহিক বর্ণনার স্বার্থে এই ঘটনা সম্পর্কে সৃষ্ট বিভিন্ন সন্দেহ ও সংশয় নিরসন, এ সম্পর্কিত আয়াতগুলোর প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও এই ঘটনায় বিভিন্ন ইসরাঈলী রিওয়ায়েত ও অতিরঞ্জিত করে সংযোজিত বিভিন্ন কল্পকাহিনী চিহ্নিত করা ইত্যাদি বিষয় পরিহার করা হয়েছে।

চলমান পোষ্ট

মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।

সর্বশেষ পোস্ট

শীর্ষ লেখক

সর্বাধিক মন্তব্য

বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভিডিও

ক্যাটাগরি