তাফসীরুল কুরআন উস্থাপনায় করণীয় সাধারণ মানুষকে সহজে কুরআন বুঝানোর জন্য মসজিদভিত্তিক তাফসীরুল কুরআন মজলিস অত্যন্ত উপযোগী একটি পন্থা। সুতরাং মা‘হাদের শিক্ষা সমাপনকারীদের প্রত্যেকে যেন মসজিদে মসজিদে সাধারণ মানুষের সম্মুখে সহজে পবিত্র কুরআনের তাফসীর উপস্থাপন করতে পারে, সেজন্য মা‘হাদু উলূমিল কুরআনের উস্তাজুত্ তাফসীর, হযরত মাওলানা, মুফতী, ইবরাহীম হাসান সাহেব দাঃবাঃ কর্তৃক লিখিত ও তরজুমানুল কুরআন স্মারক-২০০৯
তাফসীরুল কুরআন উস্থাপনায় করণীয়
সাধারণ মানুষকে সহজে কুরআন বুঝানোর জন্য মসজিদভিত্তিক তাফসীরুল কুরআন মজলিস অত্যন্ত উপযোগী একটি পন্থা। সুতরাং মা‘হাদের শিক্ষা সমাপনকারীদের প্রত্যেকে যেন মসজিদে মসজিদে সাধারণ মানুষের সম্মুখে সহজে পবিত্র কুরআনের তাফসীর উপস্থাপন করতে পারে, সেজন্য মা‘হাদু উলূমিল কুরআনের উস্তাজুত্ তাফসীর, হযরত মাওলানা, মুফতী, ইবরাহীম হাসান সাহেব দাঃবাঃ কর্তৃক লিখিত ও তরজুমানুল কুরআন স্মারক-২০০৯ এ প্রকাশিত ‘তাফসীরুল কুরআন উপস্থাপনায় করণীয়’ শীর্ষক লেখাটি সংক্ষিপ্ত আকারে পেশ করা হল।
তাফসীর উপস্থাপনায় প্রস্তুতির ক্ষেত্রে করণীয়ঃ
সকল প্রকার ভয়-ভীতি, সংকোচ-সংশয় ও হীনমন্যতা দূর করে পরিপূর্ণ মানসিক শক্তি অর্জন করা। মনে রাখা উচিত যে, এরূপ অহেতুক দ্বিধা-সংকোচের ফাঁদে পড়েই অনেক যোগ্য আলেম নিজেদের ইলমী যোগ্যতা প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই কোনরূপ সংকোচ না করে সাধারণের সামনে উপস্থাপনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ও অধিকতর উপযোগী আলোচনা সম্বলিত নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহের (তাফসীরে রূহুল মা‘আনী, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে মুনীর, তাফসীরে বয়ানুল কুরআন, তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন ইত্যাদি) সহযোগিতায় নির্ধারিত আয়াতসমূহের অর্থ ও তাফসীর এবং প্রতিটি আয়াতের আওতায় বর্ণিত সামগ্রিক বিষয়াদি ভালভাবে আয়ত্ত করা। এরপর একেক আয়াতের আলোচ্য বিষয়সমূহ ( যেমন- আকায়িদ, আহকাম, মাসআলা-মাসায়িল,আয়াতের রব্ত বা যোগসূত্র, শানে নুযূল, আয়াত সংশ্লিষ্ট ঘটনা, আয়াতের শিক্ষা ইত্যাদি) নির্ধারণ করা।
* আলোচ্য বিষয়সমূহ সুবিন্যস্ত আকারে লিখে একটি সংক্ষিপ্ত নোট তৈরী করা এবং তাফসীর সংক্রান্ত তথ্যগুলোর সাথে হাওয়ালা উল্লেখ করা। আর তাফসীর উপস্থাপনের নির্ধারিত দিনের অন্তত একদিন পূর্বে এ কাজটি সম্পন্ন করা। এরপর যেভাবে তাফসীর উপস্থাপন করা হবে, তা অনুশীলন করা। এতে নতুনদের মুখের জড়তা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্।
তাফসীর উপস্থাপনার ক্ষেত্রে করণীয়ঃ
* তাফসীর শুরু করার পূর্বে নিজেকে সম্পূর্ণ আল্লাহমুখী করা এবং আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে নিজেকে পুরোপুরি সোপর্দ করা। এরপর শ্রোতাদের জন্য উপকারী ও তাদের হিদায়াতের জন্য অধিকতর উপযোগী কথাগুলো বলতে পারা এবং এক্ষেত্রে সহজবোধ্য ভাষা ও উপযোগী বর্ণনাধারা অবলম্বন করার জন্য আল্লাহ পাকের নিকট আন্তরিকভাবে তাওফীক কামনা করা।
* তাফসীর উপস্থাপনার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম নির্ধারিত আয়াতসমূহ তাজবীদসহ বিশুদ্ধরূপে তিলাওয়াত করা। এরপর সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় তিলাওয়াতকৃত আয়াতসমূহের তরজমা ব্যক্ত করা। তেমনিভাবে তাফসীর পেশ করার সময়ও ভাষার সরলতা ও প্রাঞ্জলতা বজায় রাখা। কোনরূপ কঠিন ও দুর্বোধ্য শব্দ প্রয়োগ না করা। কারণ মানুষের হিদায়াতের জন্য সরল ভাষাই অধিক উপযোগী।
* আয়াতসমূহের পারস্পরিক রব্ত বা যোগসূত্র গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করা।
* আয়াত সংশ্লিষ্ট শানে নুযূল বর্ণনা করা। কারণ, শানে নুযূল জানার উপর আয়াতের মর্ম অনুধাবন করা নির্ভর করে। তবে এক্ষেত্রে কেবল সহীহ্ শানে নুযূল বর্ণনার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান থাকা।
* আয়াতের অন্তর্ভুক্ত শব্দগুলোর আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ উল্লেখ করার পর কেবলমাত্র সেই তাফসীরগুলো বর্ণনা করা, যা কুরআনের অন্য আয়াতে রয়েছে অথবা রাসূলে আকরাম সা. এর হাদীছে, সাহাবায়ে কিরামের আছারে বা তাবিয়ীগণের আকওয়ালে সহীহ্ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে কিংবা নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরগণের উক্তি হিসাবে উল্লিখিত আছে।
* মাসআলা-মাসায়িলের আলোচনা সম্বলিত আয়াতের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সর্বসাধারণের জন্য উযোগী অংশটুকু নির্ভরযোগ্য কিতাবের উদ্ধৃতি সহকারে বর্ণনা করা। আর মতবিরোধপূর্ণ মাসআলা বর্ণনা করা যদি একান্ত আবশ্যকই হয়, তাহলে অধিকাংশ ইমামের মাযহাব বর্ণনার মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখা।
* ভ্রান্ত আকীদা, ভ্রান্ত মতবাদ , বিদ‘আত-কুসংস্কার ও রসম-রিওয়াজের অসারতা প্রমাণ ও তা বর্জনের তাকিদ কুরআন-হাদীসের আলোকে পেশ করা। তবে সংশ্লিষ্ট দল বা মতের অনুসারীদের নাম উল্লেখ না করা।
* পরিশেষে শিক্ষণীয় আলোচিত বিষয়গুলো এক এক করে গণনা করিয়ে দেওয়া।
লক্ষণীয় অন্যান্য বিষয়ঃ
* আলোচ্য বিষয়ের প্রতি পূর্ণ আস্থাসহ গবেষণামূলক আলোচনা করা। অনুমানের ভিত্তিতে কোন কথা না বলা।
* জাল হাদীছ বা ভিত্তিহীন কোন ঘটনা বর্ণনা না করা। তবে কেবলমাত্র সেগুলোর অসারতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে বলা যেতে পারে।
* কুরআনে বর্ণিত সুক্ষ্ম ও তত্ত্বপূর্ণ বিষয়ের আলোচনা সাধারণ মানুষের তাফসীর মজলিসে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকা।
* তাফসীরী আলোচনা চলাকালীন কোন প্রশ্নোত্তরের নিয়ম না রাখা; বরং আলোচনা শেষে লিখিত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা।
মৌখিক প্রশ্নোত্তরের কোন রীতি চালু না করা।
* তাফসীর চলাকালীন কারো কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করা এবং কারো সাথে বাক-বিতন্ডা বা বিতর্কে লিপ্ত না হওয়া।
* তাফসীর উপস্থাপনায় কোন ভুল উক্তি করা হলে অথবা তথ্যগত কোন ভুল হলে পরবর্তিতে সে বিষয়টি ভালভাবে জানার পর নির্দ্বিধায় পূর্বের কথা প্রত্যাহার করে সঠিক
বিষয়টি শ্রোতাদেরকে জানিয়ে দেওয়া। এতে শ্রোতাদের কোনরূপ মন্তব্যের প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করা।
উপরোক্ত নীতিমালা অনুসরণ করে কুরআন পাকের তাফসীর উপস্থাপন করলে যে কোন তাফসীরকারক অতি সহজেই শ্রোতাদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হবে। তার তাফসীর শ্রবণ
করে মানুষ তৃপ্ত হবে এবং তা মানুষের জন্য তা কল্যাণকর ও হিদায়াতের ওয়াসিলা হবে ইনশাআল্লাহ্।
মতামত দিন
আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।