তাফসীরুল কুরআন এর অগ্রহণযোগ্য উৎস

তাফসীরুল কুরআন এর অগ্রহণযোগ্য উৎস
মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলামতাফসীরুল কুরআন এর অগ্রহণযোগ্য উৎস

তাফসীরুল কুরআন এর অগ্রহণযোগ্য উৎস তাফসীরুল কুরআনের গ্রহণযোগ্য উৎসসমূহ জানার পর আমাদের জন্য অপরিহায্য হল তাফসীরুল কুরআনের অগ্রহণযোগ্য ও পরিত্যায্য উৎসসমূহ চিহ্নিত করা এবং সেগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অজর্ণ করা। যেসব বিষয়কে কেউ কেউ তাফসীরুল কুরআনের উৎস ধারণা করে মারাত্নক ভুলের শিকার হয়েছেন। এমনকি কখনো চরম বিভ্রান্তিতেও পতিত হয়েছেন। নিম্নে তাফসীরুল কুরআনের পরিত্যায্য উৎসসমূহের ধারাবাহিক

তাফসীরুল কুরআন এর অগ্রহণযোগ্য উৎস

তাফসীরুল কুরআনের গ্রহণযোগ্য উৎসসমূহ জানার পর আমাদের জন্য অপরিহায্য হল তাফসীরুল কুরআনের অগ্রহণযোগ্য ও পরিত্যায্য উৎসসমূহ চিহ্নিত করা এবং সেগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অজর্ণ করা। যেসব বিষয়কে কেউ কেউ তাফসীরুল কুরআনের উৎস ধারণা করে মারাত্নক ভুলের শিকার হয়েছেন। এমনকি কখনো চরম বিভ্রান্তিতেও পতিত হয়েছেন। নিম্নে তাফসীরুল কুরআনের পরিত্যায্য উৎসসমূহের ধারাবাহিক সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করা হল:

১. ইসরাঈলী রিওয়ায়াত:

অর্থাৎ ইয়াহুদী-খৃষ্টান কর্তৃক বর্ণিত রিওয়ায়াতসমূহ যা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। এসব রিওয়ায়াত বর্ণনার উৎসের প্রতি লক্ষ্য করে দু’ধরণের হয়ে থাকে।

(১) ইয়াহুদী- খৃষ্টানদের জ্ঞানের উৎস তথা বাইবেল, তালমূদ, (ইয়াহুদী আইনের সংগ্রহ) ও মিশনা (ইয়াহুদীদের ফিক্বহ শাস্ত্র) হতে গৃহীত।

(২) আহলে কিতাবদের মৌখিক বর্ণনা, যা লোকমুখে পরিচালিত হয়ে আসছে এবং সেগুলো মুসলমানদের মাঝেও সংক্রমিত হয়েছে।

ইসরাঈলী রিওয়ায়াতের হুকুম:

ইসরাঈলী রিওয়ায়াতের হুকুম বর্ণনা করতে গিয়ে হাফেজ ইবনে কাছীর রহ. (মৃত:৭৭৪) বলেন যে, ইসরাঈলী রিওয়ায়াতসমূহ হুকুমের দিকে লক্ষ্য করে তিন প্রকার এবং প্রত্যেক প্রকারের হুকুমও ভিন্ন ভিন্ন।

১. কুরআন হাদীস সমর্থিত ইসরাঈলী রিওয়ায়াত:

যেমন ফিরআউনের নিমজ্জিত হওয়া, হযরত মুসা আ. এর জাদুকরদের সাথে মুকাবিলা করা, হযরত মুসা আ. এর তুর পর্বতে গমন ইত্যাদি। এ জাতীয় বর্ণনা কুরআন কারীম বা সহীহ হাদীস সমর্থিত ও স্বীকৃত হওয়ার কারনে গ্রহণযোগ্য।

২. ভিত্তিহীন তথা কুরআন হাদীস অসমর্থিত ইসরাঈলী রিওয়ায়াত:

যেমন হযরত সুলাইমান আ. এর শেষ বয়সে (নাউযুবিল্লাহ) মূর্তি পূজারী হওয়া সংক্রান্ত বর্ণনা, হযরত দাউদ আ. এর (নাউযুবিল্লাহ) নিজ সেনাপতির স্ত্রীর প্রতি আসক্ত হওয়া সংক্রান্ত বর্ণনা। এ জাতীয় আরো যত বর্ণনা রয়েছে কুরআন-হাদীসের সুস্পষ্ট বর্ণনার বিপরীত হওয়ার কারণে পরিত্যাজ্য।

৩. এমন ইসরাঈলী রিওয়ায়াত যার সত্যতা বা অসারতা কুরআন হাদীসের আলোকে প্রমাণিত নয়।

যেমন: তাওরাতের বিধানসমূহ। এ প্রকারের ইসরাঈলী রিওয়ায়াতের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: لَاتُصَدِّقُوْهَا وَلَاتُكَذِّبُوْهَا “তোমরা উহাকে স্বীকার করনা ও অস্বীকারও করনা।” (হাওলা:?) উল্লিখিত বর্ণনার আলোকে তৃতীয় প্রকারের ইসরাঈলী রিওয়ায়াত বর্ণনা করা জায়েয। তবে এ জাতীয় রিওয়ায়াতের উপর দ্বীনী মাসআলার ভিত্তি স্থাপন করা এবং এগুলোকে সত্য বা মিথ্যা সাব্যস্ত করা বৈধ নয়। কারণ এগুলো বর্ণনার দ্বারা কোন লাভ নেই।

হাফেজ ইবনে কাছীর রহ. বলেন: কুরআন কারীমেও এ জাতীয় ইসরাঈলী রিওয়ায়াতের ব্যাপারে কী করণীয় তা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। যেমন. সূরা কাহফের ২২ নং আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে:
سيقولون ثلثة رابعهم كلبهم …..ولاتستفت فيهم منهم احدا . كهف- ٢٢
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আসহাবে কাহফের সংখ্যার ব্যাপারে আহলে কিতাবদের থেকে বর্ণিত বিভিন্ন ইসরাঈলী রিওয়ায়াত এর সার কথার উল্লেখ করেছেন। যা নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি ইঈিত বহন করে।
১. ইসরাঈলী রিওয়ায়াত বর্ণনা করা জায়েয, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন।
২. যে রিওয়ায়াগুলো ভুল প্রমাণিত সেগুলোর ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া উচিত। আল্লাহ তা‘আলার কালাম رجما بالغيب সেদিকে ইঈিত বহন করে।
৩. যে রিওয়ায়াতগুলোর ভুল হওয়ার ব্যাপারে কোন দলীল নেই সেগুলোর ব্যাপারে চুপ থাকা উচিত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তৃতীয় অভিমত (ويقولون سبعة وثامنهم كلبهم ) এর ক্ষেত্রে গ্রহণ করেছেন।
৪. ইসরাঈলী রিওয়ায়াতের সত্য- মিথ্যার ব্যাপারে এ বিশ্বাস রাখা যে, এর প্রকৃত ইলম আল্লাহ তা‘আলার নিকটই রয়েছে।
৫. উক্ত রিওয়ায়াতগুলোর ব্যাপারে অতিরিক্ত বাহাস-মুবাহাসা ও বাক-বিতন্ডাহতে বিরত থাকা উচিত।
৬. এ জাতীয় রিওয়ায়াত (ইসরাঈলীয়্যাতের তৃতীয় প্রকার) যাচাই-বাছাইএ লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। কারণ এগুলোর সাথে দুনিয়া ও আখিরাতের উল্লেখযোগ্য কোন ফায়েদা সম্পৃক্ত নয়।

২. সুফিয়ায়ে কিরামের তাফসীর সমূহ:

হযরত সুফিয়ায়ে কিরাম থেকে কুরআন কারীমের আয়াতের আওতায় এমন কিছু কথা বর্ণিত হয়, যা বাহ্যিকভাবে আয়াতের তাফসীর মনে হয়; কিন্তু বাস্তবে সেগুলো মূল বক্তব্যের বিপরীত থাকে। যেমন:قاتلوا الذين يلونكم من الكفار “তোমরা সেসকল কাফেরদের সাথে যুদ্ধ কর, যারা তোমাদের নিকটবর্তী।” (সূরা তাওবা: )
উল্লিখিত আয়াতের আওতায় কোন কোন সূফী বলেন: قاتلوا النفس فانها تلى الانسان অর্থাৎ তোমরা নফসের সাথে জীহাদ কর। কেননা নফস মানুষের বেশী নিকটবর্তী। এ জাতীয় উক্তিকে কেউ কেউ কুরআন কারীমের তাফসীর মনে করেছে। অথচ এগুলো তাফসীর নয় এবং সুফিয়াদেরও কখনো এমনটি উদ্দেশ্য নয় যে, কুরআন কারীমের আসল উদ্দেশ্য এটাই। এছাড়া সেগুলো যে কুরআন কারীমের শব্দাবলী হতে বুঝে আসে তাও নয়। বরং সুফিয়ায়ে কিরাম কুরআন কারীমের শব্দাবলী হতে সরাসরি যা বুঝে আসে সেগুলোর প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধাপোষণ করেন এবং সেগুলোর প্রতি যথাযথ বিশ্বাস রাখেন। তেমনিভাবে তারা সরাসরি স্বীকারও করেন যে কুরআন কারীমের মূল তাফসীর এটাই। তবে কুরআনের মূল তাফসীরের পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াতকালে তাদের অন্তরে উদয় হওয়া তাত্ত্বিক বিষয়াদীও উল্লেখ করে থাকেন।

যেমন নিকটতম অতীতের প্রসিদ্ধতম মুফাসসির আল্লামা মাহমূদ আলূসী রহ. এর কৃত তাফসীর “তাফসীরে রূহুল মা‘আনী” এর মাঝে এ জাতীয় অন্তরে উদয় হওয়া, তাত্ত্বিক বিষয়াদীও অধিকহারে পাওয়া যায়।

তিনি সুফিয়ায়ে কিরামের উদ্দেশ্যের বিশ্লেষণ করে লিখেছেন, সুফিয়ায়ে কিরাম হতে কুরআন কারীমের যে ব্যাখ্যা বর্ণিত আছে, সেগুলো প্রকৃত পক্ষে সেই সুক্ষè বিষয়ের প্রতি ইশারা করে যা আহলে সূলুকের নিকট প্রকাশ পায়।

আর সেই ইঙ্গিতবহ বিষয় ও কুরআন কারীমের মূল অর্থের মাঝে সমন্বয় সাধন করা সম্ভব। কেননা সুফিয়ায়ে কিরাম কুরআন কারীমের আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে যেসব উক্তি করেন, সেগুলো দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য এই নয় যে, আয়াতের বাহ্যিক অর্থ বাদ দিয়ে তাত্ত্বিক অর্থই উদ্দেশ্য।

কারণ এটা হচ্ছে বাতেনী মুলহিদ তথা কাফের বা নাস্তিকদের বিশ্বাস। তারা এ পন্থাকে পরিপূর্ণভাবে শরীয়ত অস্বীকার করার মাধ্যম বানিয়েছে।

এই বিশ্বাসের সাথে সুফিয়ায়ে কিরামের কোন সম্পর্ক নেই। আর তা কিভাবেই বা থাকতে পারে? যখন তাদের থেকে গুরুত্বের সাথে এ উক্তি বর্ণিত হয়েছে যে, “সর্ব প্রথম কুরআন কারীমের বাহ্যিক বা আসল তাফসীর গ্রহণ করতে হবে।” তবে সুফিয়ায়ে কিরামের পক্ষ হতে কুরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াত কেন্দ্রিক উক্তিসমূহের ব্যাপারে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী।

১. কুরআন কারীমের আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট সুফিয়ায়ে কিরামের উক্তিসমূহকে কুরআনের আসল তাফসীর মনে না করা; বরং কুরআনের আসল তাফসীর তো সেটাই যা তাফসীরের সঠিক উৎসসমূহের আলোকে করা হয়। তাদের উক্তিসমূহকে শুধু অন্তরে উদয় হওয়া তাত্ত্বিক বিষয়াদীর দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচনা করা। তা না করে এগুলোকে কুরআনের তাফসীর মনে করা গুমরাহী বৈ কিছু নয়।

২. সুফিয়ায়ে কিরামের উক্তিসমূহের মধ্য হতে শুধু সেসকল উক্তিকেই সঠিক মনে করা, যেগুলো কুরআনের সঠিক তাফসীর অথবা শরীয়তের কোন স্বীকৃত মূলনীতির বিপরীত না হয়।

৩. অন্তরে উদয় হওয়া তাত্ত্বিক বিষয়াদী তখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে যখন তা কুরআন কারীমের অর্থ বিকৃতির পর্যায়ে না পৌঁছে।

৪. অতীতে মুলহীদদের “باطنية ” নামের একটি দল এমন ছিল, যারা এ মর্মে দাবী করত যে, কুরআন কারীমের যে বাহ্যিক তাফসীর বোধগম্য হয় তা মূলত আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য নয়; বরং কুরআনের প্রতিটি শব্দ দ্বারা একটি অন্তর্নিহিত তাফসীরের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। সেটিই কুরআনের আসল তাফসীর। উম্মতের ইজমা বা সর্বসম্মত অভিমত অনুসারে তাদের এ আক্বীদা সম্পূর্ণ কুফরী। সুতরাং সুফিয়াদের কোন উক্তির ব্যাপারে এ জাতীয় বিশ্বাস পোষণকারী নি:সন্দেহে “باطنية ” দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। উল্লিখিত চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করে সুফিয়ায়ে কিরামের উক্তিসমূহ মুতালা‘আ করা যেতে পারে। আর নিশ্চিতভাবে বিশেষ অবস্থার অধিকারী লোকদের এ সকল উক্তির দ্বারা উপকারও লাভ হয়। আর এ কারণেই আল্লামা মাহমূদ আলূসী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থ রূহুল মা‘আনীতে বিভিন্ন আয়াতের পূর্ণাঙ্গ তাফসীর লেখার পর “من باب الاشارة فى الايات” নামক ভিন্ন শিরোণামের আওতায় আয়াতের মর্ম সম্পর্কে অন্তরে জাগ্রত হওয়া বিষয়াদী আলোচনা করেছেন।

৩. তাফসীর বিররায়:

তাফসীরুল কুরআনের অগ্রহণযোগ্য ও পরিত্যায্য উৎসসমূহের মাঝে তাফসীর বিররায় বা মনগড়া তাফসীর অন্যতম।

এ প্রকারের তাফসীরের ক্ষতি সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: من تكلم فى القران برأئه فاصاب فقد أخطأ
এ হাদীসের আলোকে কেউ কেউ ‘তাফসীর বিররায়িল মাহমূদ’কেও নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে যুক্তি পেশ করেছে।

হাদীসে উল্লিখিত ‘برأئه’ শব্দ দ্বারা الرأى المذموم উদ্দেশ্য। الرأى المحمود উদ্দেশ্য নয়। কারণ, الرأى المحمود এর আলোকে কুরআন কারীমের তাফসীর করার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা উৎসাহ দিয়েছেন। অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইবতে আব্বাস রা. এর জন্য الرأى المحمود এর মাধ্যমে কুরআন কারীমের তাফসীর করার দু‘আ করেছেন। যেমনটি হাদীসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহে বর্ণিত রয়েছে।

সর্বপরি উলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত অভিমত হল কুরআন-সুন্নাহ ও অন্যান্য শরয়ী দলীলের আলোকে উল্লিখিত হাদীসের উদ্দেশ্য কখনো এটা নয় যে, কুরআনের মাঝে চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করার কোন অবকাশ নেই বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল কুরআন কারীমের তাফসীরের জন্য সর্বজন স্বীকৃত নিয়ম-নীতি ও শর্তাবলী বাদ দিয়ে শুধু নিজ চিন্তা-চেতনার উপর ভিত্তি করে কুরআনের তাফসীর করা নিষিদ্ধ ও গর্হিত। এভাবে তাফসীর করে কেউ যদি ঘটনাক্রমে সঠিক তাফসীরও করে তবুও তা ভুল হিসেবে পরিগণিত হবে। সুতরাং তা নিঃসন্দেহে পরিত্যাজ্য। কারণ সেই ব্যক্তি ভুল ও গর্হিত পথ অবলম্বন করেছে।

তাফসীরুল কুরআনের সর্বজন স্বীকৃত নিয়ম-নীতি ও শর্তাবলী বাদ দেয়ার কিছু নমুনা:

১. তাফসীরুল কুরআনের অযোগ্য ব্যক্তিদের শুধু নিজ চিন্তা-চেতনার আলোকে কুরআনের তাফসীর শুরু করা।

২. কোন আয়াতের তাফসীর সরাসরি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবী ও তাবেঈন থেকে প্রমাণিত হওয়ার পর তা গ্রহণ না করে, নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কোন উদ্দেশ্য বর্ণনা করা।

৩. যে আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে সাহাবী অথবা তাবেয়ী থেকে সুস্পষ্ট কোন তাফসীর বর্ণিত নেই সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভাষার শতসিদ্ধ ও প্রাচীন কাল হতে চলে আসা কোন ব্যাখ্যা প্রদান রীতি লঙ্ঘন করে কোন ব্যাখ্যা প্রদান করা।

৪. কুরআন-সুন্নাহ থেকে সরাসরি আহকাম বের করতে ইজতিহাদের যোগ্যতা অর্জন ব্যতিত ইজতিহাদ করা।

৫. কুরআন কারীমের মুতাশাবিহ আয়াত, যেগুলোর ব্যাপারে কুরআনই ফায়সালা দিয়েছে যে, এর শতভাগ সঠিক তাফসীর একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন সেগুলোর ব্যাপারে নিশ্চিত কোন তাফসীর বয়ান করা এবং এর উপর দৃঢ় থাকা।

৬. কুরআন কারীমের এমন তাফসীর বয়ান করা যার দ্বারা ইসলামের সর্বজন স্বীকৃত আক্বীদা-বিশ্বাস ও আহকাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।

৭. তাফসীরের ব্যাপারে যেখানে আকল ও চিন্তা-ফিকির কাজে লাগানোর অবকাশ রয়েছে সেখানে অকাট্ট দলীল ব্যাতিত নিজের রায়কেই সঠিক মনে করা এবং অন্য মুজতাহিদদের মতামতকে নিশ্চিতভাবে ভুল সাব্যস্ত করা।

تفسير بالرأى এর উল্লিখিত সুরতগুলোর কারণেই পূর্বোক্ত হাদীসে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া অন্য এক হাদীস দ্বারাও পূর্বোক্ত সূরতগুলোর নিষিদ্ধতা বুঝা যায়। যেমন من قال فى القران بغيرعلم فليتبوأ مقعده من النار তবে তাফসীর শাস্ত্রের মূলনীতি ও ইসলামের স্বত:সিদ্ব নিয়ম-নীতির অনুসরন করে কেউ যদি কুরআনের তাফসীরের ব্যাপারে এমন মত প্রকাশ করে যা কুরআন-সুন্নাহর সাথে বিরোধপূর্ণ না হয়, তাহলে সে উক্ত হাদীসে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার আওতায়ভু পরে না। অবশ্য এ জাতীয় মত প্রকাশের জন্যও যথার্থ যোগ্যতার প্রয়োজন, যা আমরা ইতিপূর্বে “তাফসীরুল কুরআনের শর্তাবলী” শিরোণামে জানতে পেরেছি।

(উলূমুল কুরআন-ত্বক্বী উসমানী দা.)

 

চলমান পোষ্ট

মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।

সর্বশেষ পোস্ট

শীর্ষ লেখক

সর্বাধিক মন্তব্য

বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভিডিও

ক্যাটাগরি