তাফসীরে ইবনে আব্বাস পরিচিতি ও পর্যালোচনা সাহাবায়ে কিরামের মধ্য হতে হজরত ইবনে আব্বাস রা. হতেই সর্বাধিক তাফসীরী রিওয়ায়াত বর্ণিত রয়েছে। এ কারণেই তিনি “তরজুমানুল কুরআন”, “রঈসুল মুফাস্সিরীন” উপাধিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. সম্পর্কে বলা হয় যে, তাঁর একটি তাফসীর গ্রন্থ ছিল, যা তিনি অন্যের মাধ্যমে সংকলন করিয়েছিলেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল
তাফসীরে ইবনে আব্বাস
পরিচিতি ও পর্যালোচনা
সাহাবায়ে কিরামের মধ্য হতে হজরত ইবনে আব্বাস রা. হতেই সর্বাধিক তাফসীরী রিওয়ায়াত বর্ণিত রয়েছে। এ কারণেই তিনি “তরজুমানুল কুরআন”, “রঈসুল মুফাস্সিরীন” উপাধিতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. সম্পর্কে বলা হয় যে, তাঁর একটি তাফসীর গ্রন্থ ছিল, যা তিনি অন্যের মাধ্যমে সংকলন করিয়েছিলেন।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল র. উল্লেখ করেছেন যে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর তাফসীরের একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ মিসরেও ছিল। এ কারণেই তিনি বলেছেন, “মিসরে তাফসীরের একটি কিতাব রয়েছে, যদি কেউ কেবল সেটি দেখার উদ্দেশেই সেখানে সফর করে, তবে সেটা বাড়াবাড়ি হবে না।” (আল ইতকান:খ-২,পৃ-১৮৮)
অনেকের মতে ইমাম বুখারী র. উক্ত তাফসীরের উপর নির্ভর করেই বুখারী শরীফে কিতাবুত তাফসীর সংকলন করেছেন।
বাস্তবে হজরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. এর নিজের নিকট তাফসীরের সংকলিত কপি থাকার বিষয়টি নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত নয়।
ঐতিহাসিকগণ এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। আর এ কারণেই হজরত ইমাম বুখারী র. কুরআনের তাফসীর বিষয়ক রিওয়ায়াত গ্রহণের ক্ষেত্রে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর নিজের সংকলিত কপি হিসাবে প্রসিদ্ধ উক্ত কপির উপর নির্ভর করেননি, বরং হজরত আলী ইবনে আবি তালহা (মৃত: ১৪৩ হিজরী) এর সংকলিত সেই তাফসীর গ্রন্থের উপর নির্ভর করেছিলেন, যাতে তিনি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর তাফসীরী রিওয়ায়েতগুলো একত্রিত করেছিলেন।
এ সম্পর্কে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী র. বলেন, উক্ত কিতাবটি আবু সালিহের নিকট ছিল, যা তিনি মু‘আবিয়া বিন সালিহ হতে বর্ণনা করেন, আর তিনি বর্ণনা করেছেন আলী বিন আবি ত্বালহা হতে, আর তিনি হজরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণনা করেছেন। আর তাফসীর সংক্রান্ত হজরত ইবনে আব্বাস রা. এর বর্ণনা গ্রহণের ক্ষেত্রে এই আবু সালিহের সনদের উপরই নির্ভর করে ইমাম বুখারী র. নিজের সংকলিত হাদীছ গ্রন্থ বুখারী শরীফে কিতাবুত তাফসীর সংকলন করেছেন। (ফাতহুল বারী)
সহীফাতু আলী ইবনে আবি তালহা:
হজরত ইবনে আব্বাস রা. হতে রিওয়ায়াত কৃত হজরত আলী ইবন আবি তালহা র. এর সেই সংকলনটি ‘সহীফাতু আলী ইবনে আবি তালহা’ নামে পরবর্তিতে প্রকাশিত হয়েছে।
এটা সর্বপ্রথম কখন প্রকাশিত হয়েছিল তা জানা সম্ভব না হলেও রাশিদ আব্দুল মুনঈমের তাহকীক ও তাখরীজসহ দারুল জেল বৈরুত থেকে ১৯৯৪ সনে তা প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায়। এভাবে পরবর্তিতে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতেও এ গ্রন্থটি ছাপানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেগুলো প্রকাশিতও হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, তাফসীরে ইবনে আব্বাস রা. নামে এ পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রন্থ সংকলিত হয়েছে বলে জানা যায়। সেগুলোর মধ্য হতে দু’টি গ্রন্থ মা‘হাদু উলূমিল কুরআনের সংগ্রহে রয়েছে।
মা‘হাদের সংগৃহীত দু’টি গ্রন্থের একটি হচ্ছে, আবু তাহির মুহাম্মদ বিন ইয়া‘কুব আল-ফিরোজাবাদী আশ্শাফিঈ কর্তৃক সংকলিত ‘তানবীরুল মিকয়াস মিন তাফসীরে ইবনে আব্বাস’। উক্ত গ্রন্থটিকে তানবীরুল মিকবাস নামেও অভিহিত করা হয়।
তাফসীরে ইবনে আব্বাস নামে সংকলিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে এটিই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। অথচ এ গ্রন্থটিতে মুহাম্মদ ইবন মারওয়ান আস-সুদ্দী ‘আন মুহাম্মদ বিন আস্সায়িব আল-কালবী আন আবি সালিহ আন ইবনে আব্বাস রা. এই সনদে হজরত ইবনে আব্বাস রা. এর তাফসীরী রিওয়ায়াতগুলো একত্রিত করা হয়েছে। আর মুহাদ্দিসীনে কিরাম উপরোক্ত সনদকে ‘সিলসিলাতুল কাজিব’ অর্থাৎ মিথ্যা বর্ণনা সূত্র হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং এর উপর নির্ভর করা যায় না এবং হজরত ইবনে আব্বাস রা. এর নামের সাথে সম্পৃক্ত করে উক্ত কিতাবের নামকরণ করাও দুরস্ত নয়। (উলূমুল কুরআন লি-ত্বকী উসমানী:পৃ-৪৫৮)
উল্লেখ্য যে, তাফসীরে ইবনে আব্বাস এর উর্দূ ও বাংলা অনুবাদ হিসেবে বাজারে প্রসিদ্ধ তাফসীরটি উক্ত সনদেই বর্ণিত। সুতরাং বাংলা তাফসীরে ইবনে আব্বাস নামে পরিচিত গ্রন্থটি পরিত্যায্য।
এছাড়া মা‘হাদে সংগৃহীত তাফসীরে ইবনে আব্বাস নামক অপর কিতাবটি হচ্ছে, ড. আহমাদ আল-উমরানী এর তাহকীকসহ দারুস্সালাম কায়রো, মিসর হতে ৩ খন্ডে প্রকাশিত। এ গ্রন্থটিও নির্ভরযোগ্য নয়।
কারণ এতে হজরত ইবনে আব্বাস রা এর থেকে বর্ণিত তাফসীরী রিওয়ায়াতগুলো এমন এমন সনদে বর্ণনা করা হয়েছে যার কোনটি দুর্বল, কোনটি অধিকতর দুর্বল, আবার কোনটি প্রত্যাখ্যাত অথবা অন্য কোন অভিযোগে অভিহিত। সুতরাং এ গ্রন্থটিও নির্ভরযোগ্য নয়।
মতামত দিন
আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।