তাফসীরে বয়ানুল কুরআন অনারবী ভাষাসমূহের মধ্যে উর্দূ অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি ভাষা। ফারসীর পরেই এর স্থান। তবে ফারসী ভাষার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। সেই তুলনায় উর্দূ ভাষাকে নবীনই বলা চলে। কিন্তু তারপরও উর্দূ ভাষীরা চেষ্টা-সাধনার মাধ্যমে নিজেদের ভাষাকে এতটা সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। রচনা করেছেন তারা ইসলামের একেক বিষয়ের উপর অসংখ্য কিতাব। কেবলমাত্র কুরআনে পাকের তাফসীর সম্পর্কে
তাফসীরে বয়ানুল কুরআন
অনারবী ভাষাসমূহের মধ্যে উর্দূ অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি ভাষা। ফারসীর পরেই এর স্থান। তবে ফারসী ভাষার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। সেই তুলনায় উর্দূ ভাষাকে নবীনই বলা চলে। কিন্তু তারপরও উর্দূ ভাষীরা চেষ্টা-সাধনার মাধ্যমে নিজেদের ভাষাকে এতটা সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। রচনা করেছেন তারা ইসলামের একেক বিষয়ের উপর অসংখ্য কিতাব। কেবলমাত্র কুরআনে পাকের তাফসীর সম্পর্কে এ পর্যন্ত রচিত হয়েছে শতাধিক গ্রন্থ। এসবের মধ্যে বিশটিরও অধিক তাফসীর গ্রন্থ ব্যাপক সমাদৃতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এত সংখ্যক তাফসীর গ্রন্থের মাঝেও আপন বৈশিষ্ট্য মহিমায় সর্বশীর্ষে রয়েছে যে অমূল্য তাফসীর গ্রন্থ, তা হচ্ছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে হাকীমূল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রহ. কৃত ‘তাফসীরে বয়ানুল কুরআন’। উর্দূ ভাষায় সংকলিত তাফসীর গ্রন্থসমূহের মধ্যে বয়ানুল কুরআনের মর্যাদা কেন এত অধিক, এ বিষয়টি এর বৈশিষ্ট্য আলোচনার মধ্য দিয়ে অবশ্যই ফুটে উঠবে। তবে এই অনন্য তাফসীর গ্রন্থটির গুরুত্ব ও মর্যাদার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণার জন্য বয়ানুল কুরআন সম্পর্কে জগদ্বিখ্যাত কয়েকজন আলিমে দ্বীনের ঐতিহাসিক অভিমত নিম্নে উদ্ধৃত করছি:
খাতিমুল ফুক্বাহা ওয়াল মুহাদ্দিসীন আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. এর অভিমত:
আল্লামা কাশ্মীরী রহ. এর কুরআন-হাদীস তথা ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের গভীরতা সম্পর্কে আমরা অকেকেই অবহিত। কিন্তু আরবী ভাষায় তার যে কতটুকু অগাধ পান্ডিত্য ছিল, সে বিষয়ে হয়তবা আমরা ততটা ওয়াকিফ হাল নই। তবে নিম্নোক্ত ঘটনা দ্বারা এ বিষয়ে কিঞ্চিত ধারণা জন্মাবে বলে আশা করি। “দারুল উলূম দেওবন্দ এর মসজিদে ক্বাদীম (পুরাতন মসজিদ) এ বসে তাসবীহ পাঠ করছিলেন ইলমী জগতের উজ্জল নক্ষত্র আল্লামা কাশ্মীরী রহ.। সে সময় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরা দারুল উলূম দেওবন্দ এসেছিল মুসলমানদের সাথে মুনাজারা (বিতর্ক) করতে। মুনাজারার নীতিমালা বিষয়ে আলোচনা চলছিল মসজিদে বসে। মুনাজারা বা বিতর্কের ভাষা কি হবে, এ সংক্রান্ত আলোচনায় কাদীয়ানীরা লল, মুনাজারা ভাষা হবে আরবী। আর মুসলমান উলামায়ে কিরাম বললেন- না, মুনাজারার ভাষা হবে উর্দূ। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যেহেতু এ বিতর্কে সাধারণ মানুষ থাকবে, তাই উর্দূ ভাষায় বিতর্ক হলে তারাও প্রকৃত সত্যটি হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হবে। কিন্তু কাদীয়ানীরা আরবী ব্যতিত অন্য কোন ভাষায় বিতর্কে যেতে সম্মত হচ্ছিল না। উভয় পক্ষের কথাবর্তাই শুনছিলেন আল্লামা কাশ্মীরী রহ.।
কাদিয়ানীদের বাড়াবাড়ি দেখে তিনি দারুল উলূম দেওবন্দের একজন শিক্ষককে ডেকে বললেন, আচ্ছা আপনারা আরবী ভাষায় মুনাজারা করতে সম্মত হয়ে যান। তবে শর্ত আরোপ করে দিন যে, তা হবে আরবী কাব্যাকারে অর্থাৎ কবিতার মাধ্যমে। কাদিয়নীরা একথা শ্রবণের পর সম্পূর্ণ নিশ্চুপ হয়ে গেল।”
একদিকে তিনি ছিলেন আরবী ভাষায় গভীর পান্ডিত্যের অধিকারী। অপর দিকে ইসলামী জ্ঞানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ভান্ডার রয়েছে আরবী ভাষায় তাই উর্দূ মাতৃভাষা হলেও ইসলামী জ্ঞান আহরণের জন্য তিনি উর্দূ ভাষায় তেমন কোন কিতাব পাঠ করতেন না। অথচ বয়ানুল কুরআন দেখার পর এ কিতাব সম্পর্কে সেই আল্লামা কাশ্মীরী রহ. এর অভিমত হচ্ছে এরূপ:
“দীর্ঘ দিন যাবত আমার ধারণা ছিল উর্দূ সাহিত্যের ভান্ডার জ্ঞানের গভীরতা শূন্য; কিন্তু আল্লামা থানভী রহ. এর তাফসীরে বয়ানুল কুরআন অধ্যয়নের পর আমার ধারনা পরিবর্তন করতে হল। এখন আমার নতুন ধারণা হচ্ছে এই যে, উর্দূ সাহিত্যে গভীর জ্ঞান-ভান্ডার রয়েছে।”
উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন, শাইখুত তাফসীর, ‘তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন’ এর সম্মানিত লেখক আল্লামা ইদ্রিস কান্ধলভী রহ. তাফসীরে বয়ানুল কুরআন সম্পর্কে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন নিম্নোক্তভাবে:
“সমাদৃতি, গ্রহণযোগ্যতা, অর্থবহতা ও উপকারিতা তথা সার্বিক দিক বিবেচনায় বলা যায়, তাফসীরে বয়ানুল কুরআন সকল তাফসীর গ্রন্থের শীর্ষে আরোহণ করেছে।”
তেমনিভাবে উর্দূ সাহিত্যের অনন্য নক্ষত্র, ইসলামী গবেষক আল্লামা সায়্যিদ সুলাইমান নদভী রহ. বয়ানুল কুরআন সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন,
“বয়ানুল কুরআন উর্দূ সাহিত্যের এমন এক অতুলনীয় তাফসীর, আলেমগণও তা অধ্যয়নের প্রয়োজণীয়তা অনুভব করে।”
তাফসীরে বয়ানুল কুরআনের ভূয়সী প্রসংশায় যুগের পর যুগ ধরে মনীষীগণ, বিদগ্ধ আলেমেকুল ও শিক্ষিত দ্বিনদার শ্রেণী বিভিন্ন ধরনের বাক্য প্রয়োগে যে স্বত:স্ফুর্ত অভিমত ব্যক্ত করেছেন, সেগুলো একত্রিত করলে নিশ্চিত একটি পুস্তকের রূপ পরিগ্রহ করবে। কিন্তু কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় এতটুকুর উপরই ইতি টানছি। তবে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে, কেন বয়ানুল কুরআনের এই অকুণ্ঠ প্রশংসা, কেন এত স্বত:স্ফুর্ত অভিব্যক্তির বাহার? আর কেনইবা তা উর্দূ সাহিত্যের অমূল্য রত্ন হিসাবে স্বীকৃত। এক্ষেত্রে অবশ্যই বলতে হবে যে, আপন বৈশিষ্ট্য মহিমার বদৌলতেই আজ বয়ানুল কুরআনের এই সুনাম, এত সুখ্যাতি। সহজ বোধগম্য ও সরল অনুবাদ, নিভ্যরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত উস্থাপন, জটিলতা নিরসন, আয়াতসমূহের রবত বিশ্লেষণসহ তাফসীরুল কুরআনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি যে নীতি ও ধারা অবলম্বন করেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়। নিম্নে তাফসীর শাস্ত্রের এই অমর গ্রন্থের বৈশিষ্ট্যসমূহ উপস্থাপন করা হল।
অনুবাদের বৈশিষ্ট্যঃ
আরবী ও অনারবী তাফসীর গ্রন্থসমূহের মাঝে একটি মৌলিক পার্থক্য এইযে, আরবী তাফসীর গ্রন্থে কোন আয়াতের ধারাবাহিক অর্থ বর্নণা করা হয়নি; বরং প্রয়োজনীয় স্থানে প্রতিশব্দ প্রয়োগে অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতা দূর করার প্রয়াস চালানো হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
আর অনারবী ভাষার তাফসীর গ্রন্থসমূহে প্রথমত: পূর্ণ আয়াতের অর্থ বা অনুবাদ করা হয়েছে এরপর প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আর এরূপ হওয়াই স্বাভাবিক। তবে অনুবাদের ক্ষেত্রে অনারবী মুফাসসিরগণ ভাব অনুবাদের আশ্রয় নিয়েছেন, আবার কেউ শাব্দিক অনুবাদের রীতি অবলম্বন করেছেন।
উল্লিখিত দু’টি পন্থার কোন একটি এককভাবে পাঠকদের পরিপূর্ণ তৃপ্তিদানে সক্ষম নয়। কেননা ভাব অনুবাদের মাধ্যমে পূর্ণ আয়াত সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে একটা ধারণা জন্মালেও শাব্দিক অর্থ জানার অতৃপ্তি থেকেই যায়। তেমনিভাবে শাব্দিক অনুবাদের মাধ্যমে প্রত্যেক শব্দের অর্থ পৃথক পৃথকভাবে জানাগেলেও সেই অনুবাদ কেমন যেন রসহীন হয়ে পড়ে। সেই সাথে একপ্রকার দুর্বোধ্যতার সৃষ্টি হয়। সেজন্য আল্লামা থানভী রহ. তাঁর কৃত তাফসীরে অনুবাদের ক্ষেত্রে এক বিশেষ পন্থা অবলম্বন করেছেন। তাঁর অনুসৃত সেই অনুবাদের পন্থাটি নিম্নরূপ:
- বয়ানুল কুরআনে একদিকে যেমন প্রতিটি শব্দের অর্থ তার নীচে লিখে শাব্দিক অনুবাদ করা হয়েছে, পরবর্তিতে আবার আয়াতের উহ্য অংশসমূহের অর্থ উল্লেখ পূর্বক অনুবাদ করা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন আয়াতের অন্তর্গত শব্দগুলোর অর্থ পৃথক পৃথকভাবে উপলদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে, তেমনিভাবে আয়াতের সামগ্রিক অর্থও যথার্থরূপে স্পষ্ট হয়েছে। এরূপ অনুবাদরীতি একমাত্র বয়ানুল কুরআনেই অনুসরণ করা হয়েছে।
- অনুবাদের ক্ষেত্রে সহজবোধ্য শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে সরল অনুবাদ করা হয়েছে
- আঞ্চলিক কথ্য ভাষার শব্দ বা দুর্বোধ্য শব্দ পরিহার করে লেখ্য ভাষার শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
- শাব্দিক অনুবাদের মাধ্যমে একেকটি করে শব্দের অর্থ পৃথকভাবে বর্নণার পরও বিশেষ বিশেষ শব্দের অর্থ নির্ভরযোগ্য গ্রন্থের উদ্ধৃতি সহকারে সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠার শেষে টীকার আওতায় ‘লুগাত’ শিরোণামে বর্ণনা করা হয়েছে। তেমনিভাবে অনেক সময় কোন শব্দ এমন হয় যে, কেবলমাত্র আভিধানিক অর্থ দ্বারা জটিলতা নিরসন হয় না এবং উদ্দেশ্যও পরিপূর্ণভাবে বুঝা যায় না, সে জন্য টীকার আওতায় ‘মুলহাকাতুত্ তরজমা’ শিরোণামে এ জাতীয় শব্দের বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করা হয়েছে।
- উভয় পন্থায় অনুবাদ করার পরও আয়াতের মর্ম উদঘাটনে কোন প্রকার অস্পষ্টতা বা জটিলতার সম্ভাবনা দেখাদিলে অনুবাদের নীচে (উপকারিতা) এর সংক্ষিপ্ত রূপ চিহ্ন ব্যবহার করে এর আওতায় উক্ত জটিলতা নিরসন করা হয়েছে।
তাফসীরের বৈশিষ্ট্য:
- একেক আয়াতের তাফসীর স্বরূপ বর্ণিত একাধিক বর্ণনার মধ্য হতে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতটি ‘তাফসীরে বয়ানুল কুরআন’-এ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কোন আয়াতের তাফসীর স্বরূপ বর্ণিথ দু’টি বর্ণনা গ্রহনযোগ্যতার দিক দিয়ে সমপর্যায়ের বিবেচিত হলে, সেক্ষেত্রে উভয় বর্ণনাই উল্লেখ করা হয়েছে। মোটকথা, কুরআনের তাফসীর বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য রিওয়াতের মাধ্যমে করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
- অধিকাংশ সূরাহর শুরুতে উক্ত সূরাহ্র আলোচিত বিষয়গুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। ফলে অধ্যয়নকারী কোন সূরাহ্র তাফসীর পাঠের পূর্বে সংশ্লিষ্ট সূরাহ্র বিষয়বস্তু সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা লাভে সক্ষম হয়।
- আয়াতের শুরুতে উক্ত আয়াতের মূল বিষয় কি? তা নির্ধারণ করে উপযোগী একটি শিরোনাম ব্যবাহার করা হয়েছে। তবে যদি একটি বিষয়ের আলোচনা একাধিক আয়াতকে অন্তর্ভূক্ত করে অর্থাৎ কয়েক আয়াতব্যাপী একটি বিষয়ের আলোচনা থাকে, তাহলে এরূপ আয়াতসমূহের ক্ষেত্রে প্রথম আয়াতের শুরুতে উক্ত শিরোনাম ব্যবহার করা হয়েছে।
- সূরাহ্ ও আয়াতসমূহের পারস্পরিক রবত বা যোগসূত্র বর্ণনা তাফসীরে বয়ানুল কুরআন এর একটি অতুলনীয় বৈশিষ্ট্য। কুরআনের একেক সূরাহ্র সাথে রয়েছে অপর সূরাহ্র যোগসূত্র। তেমনিভাবে একেক সূরাহর অন্তর্ভূক্ত আয়াতসমূহও পারস্পরিক সম্পর্কিত। তবে এ যোগসূত্র কোন কোন সময় এমন সূক্ষ্ম হয়ে থাকে যে, তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পরে। বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থে এতদসংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে সত্য, তবে তাফসীরে বয়ানুল কুরআনে এ বিষয়টি যতটুকু গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়েছে, এমনটি অন্যান্য তাফসীর গ্রন্থে পাওয়া যায় না।
- সংশয় নিরসন: কুরআনের আয়াতসমূহে কোনরূপ সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই। তারপরও বাহ্যিকভাবে দেখলে হয়তবা সন্দে সৃষ্টি হতে পারে। তাই তাফসীরে বয়ানুল কুরআনে অত্যন্ত সুন্দরভাবে এরূপ সন্দেহ-সংশয় নিরসন করা হয়েছে। তবে কোন আয়াতের বর্ণনা অন্য কোন আয়াত অথবা কোন সূরাহ হাদীস কিংবা সুস্থ বিবেকের সাথে সাংঘর্ষিক বা বিরোধপূর্ণ মনে হওয়ার দরুণ সৃষ্ট সংশয়গুলো দূর করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
- একই বিষয় বা প্রায় অনুরূপ বিষয়ে বর্ণিত বিভিন্ন আয়াত এক জায়গায় একত্রিত করে তাফসীর বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তিতে যেসব জায়গায় উক্ত আয়াত বর্ণিত হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে কেবল আলোচিত স্থানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
- আক্বায়িদ ও ফিক্বহী মাসায়িল সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু সংশ্লিষ্ট আয়াতের তাফসীর বুঝার জন্য প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই করা হয়েছে।
- বিরোধপূর্ণ ফিক্বহী মাসায়িলের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মাযহাব বর্ণনা করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়ে অন্যান্য ইমামগণের অভিমত টীকায় উল্লেখ করা হয়েছে।
- আয়াতের মর্ম অনুধাবনে শানে নুযূল বা আয়াতের প্রেক্ষাপট জানা অনেক ক্ষেত্রে অপরিহার্য। তাই সহীহ্ সনদসূত্রে প্রাপ্ত শানে নুযূলের বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে।
- তেমনিভাবে যেসব আয়াতের সাথে কোন ঘটনার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, সেসব ঘটনার যে অংশটুকু সহীহ সনদ সূত্রে প্রাপ্ত, কেবলমাত্র এতটুকুই বর্ণনা করা হয়েছে।
- আমরা যে ক্বিরাআত (পঠন রীতি) অনুসারে কুরআন তিলাওয়াত করি এতদ্ব্যতীত কুরআন পাঠের অন্যান্য ক্বিরাআতও রয়েছে, বয়ানুল কুরআনে প্রয়োজনানুপাতে সে বিষয়টির আলোচনা করা হয়েছে।
- অনেক সময় শব্দের রূপান্তর প্রক্রিয়া সম্মন্ধে অবগত না হওয়ায় শব্দটির সঠিক অর্থ নির্ণয় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অনুরূপভাবে বাক্যের সঠিক অর্থ করতেও সমস্যর সম্মুখীন হতে হয়। তাই এরূপ কঠিন শব্দ ও বাক্যের বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করা হয়েছে।
- অলংকারিত্ব পূর্ণ বাক্য প্রয়োগ কুরআনের একটি মু‘জিযা। কুরআনী আয়াতে বালাগাত তথা অলংকার শাস্ত্রের প্রয়োগ প্রয়োগের রীতি-নীতি সম্পর্কে জানা জরুরী। কেননা, এর অভাবে অনেক ক্ষেত্রে আয়াতের মর্ম যথাযথরূপে হৃদয়ঙ্গম করা যায় না। তাই প্রয়োজন অনুসারে বালাগাত তথা অলংকার শাস্ত্রের আলোচনা করা হয়েছে।
- সর্বোপরি এ অনন্য তাফসীর গ্রন্থটি সংকলনে সলফেসালিহীনের পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়েছে। (আল্লামা থানভী রহ. বয়ানুল কুরআন সংকলনে যেসব তাফসীর গ্রন্থের সহযোগিতা গ্রহণ করেছেন সেগুলোর একটি তালিকা নিম্নে প্রদান করা হলঃ
তাফসীরে বয়ানুল কুরআন এর উৎসঃ
তাফসীরে বাইজাবী, তাফসীরে জালালাইন, তাফসীরে রূহুল মা’আনী, মা’আলিমুত্তানযীল, মাদারিকুত্তানযীল, তাফসীরে খাযিন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে কাশ্শাফ, তাফসীরে মাওয়ারদী, তাফসীরে দুররে মানসূর, তাফসীরে ফাতহুল মান্নান, তাফসীরে রাহমানী, ইত্যাদী।
মোট কথা, কুরআনের সহীহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ যথার্থরূপে বুঝার জন্য যা যা প্রয়োজন, এমন সকল বিষয়ই বয়ানুল কুরআনে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। তাই এ তাফসীর গ্রন্থটি পাঠ করার পর বিদগ্ধজন স্বতঃস্ফুর্ত মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছেন যে, সত্যি ‘তাফসীরে বয়ানুল কুরআন’ উর্দূ ভাষার অমূল্য সম্পদ।
আমাদের সৌভাগ্য যে এ অমূল্য তাফসীর গ্রন্থটি অর্ধশত বৎসর পূর্বে বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং এদেশের মুসলমানদের কুরআন বুঝার চাহিদা পূরণে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাভাষায় এ পর্যন্ত যত তাফসীর গ্রন্থ লিখিত বা অনূদিত হয়েছে, তন্মধ্যে তাফসীরে আশরাফীই সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য এবং সর্ব সাধারণের জন্য সবচে বেশী উপকারী।
মতামত দিন
আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।