দ্বীন পালনে বলপ্রয়োগ কি ‘বাড়াবাড়ি’ ? মুরতাদের শাস্তিদান কি কুরআন-পরিপন্থি? لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ “দ্বীনের বিষয়ে কোন জবরদস্তি নেই।” (সূরা বাকারা:256) মুসলিমদেরকে অবশ্যই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে এ বিষয়ে বলপ্রয়োগ ও জবরদস্তিরও বিধান রয়েছে। যেমন এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যায় কাজে বাধা দেয়ার তিনটি স্তর বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে
দ্বীন পালনে বলপ্রয়োগ কি ‘বাড়াবাড়ি’ ?
মুরতাদের শাস্তিদান কি কুরআন-পরিপন্থি?
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ
“দ্বীনের বিষয়ে কোন জবরদস্তি নেই।” (সূরা বাকারা:256)
মুসলিমদেরকে অবশ্যই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে এ বিষয়ে বলপ্রয়োগ ও জবরদস্তিরও বিধান রয়েছে।
যেমন এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যায় কাজে বাধা দেয়ার তিনটি স্তর বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে প্রথম স্তর হল বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বাধা দান। দ্বিতীয় স্তর হল মৌখিক প্রতিবাদ। তৃতীয় স্তর হল, অন্তরে ঘৃণা পোষণ করা। ( সহিহ মুসলিম:৭৮)
কিন্তু একশ্রেণীর নামধারী মুসলিম দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের বিষয়টিকে ‘বাড়াবাড়ি’ আখ্যা দেয়। এমনকি তারা কুরআনের দলিল পেশ করে। কারণ, কুরআনে বলা হয়েছে, لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ তথা ধর্মে জোর-জবরদস্তি নেই।
মূলত তারা জানে না যে, এ আয়াতের মর্ম হল, দ্বীন গ্রহণের জন্য বা দ্বীনে প্রবেশের জন্য বলপ্রয়োগ করা যাবে না।
যেমন: আইসারুত তাফাসীর গ্রন্থে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে – لا يكره المرء على الدخول في الدين অর্থ্যাৎ “দ্বীনে প্রবেশের জন্য কোন ব্যক্তিকে বাধ্য করা যাবে না”। কিন্তু দ্বীনগ্রহণকারীকে দ্বীন পালনের জন্য বা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য বাধ্য করা যাবে না এমনটি কিছুতেই উক্ত আয়াতের মর্ম নয়।
যেমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাউকে তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য বাধ্য করতে পারে না। প্রতিষ্ঠানের আইন-কানুন মানতে বাধ্য করার তো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু যে ছাত্র স্বেচ্ছায় কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে, তাকে অবশ্যই উক্ত প্রতিষ্ঠানের আইন-কানুন মানতে বাধ্য করা যাবে। এটাকে বাড়াবাড়ি বলাটা চরম মূর্খতা। তদ্রূপ কোন অমুসলিমকে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা যাবে না। উক্ত আয়াতে এটাই বলা হয়েছে। কিন্তু মুসলিমকে ইসলামের বিধি-বিধান মানতে অবশ্যই বাধ্য করা যাবে। এটি উক্ত আয়াতকর্তৃক ‘নিষিদ্ধ বলপ্রয়োগ’ এর অন্তর্ভূক্ত নয়।
আবার অনেকে এ আয়াতের মাধ্যমে মুরতাদের শাস্তির বিষয়ে আপত্তি তোলে থাকে। মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম উল্লেখ করেছেন যে, তারা বলে, উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যায়, যার ইচ্ছা ঈমান আনবে, যার ইচ্ছা আনবে না। এটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারও উপর কোন চাপ সৃষ্টি করা যাবে না। স্বাধীনভাবে যার ইচ্ছা সে ঈমানের উপর থাকবে আবার যদি ঈমান ছেড়ে দিতে চায়, সেই স্বাধীনতাও তার থাকবে। এ আয়াতের আলোকে তা থাকাই চাই। সেই হিসেবে কেউ ইসলাম পরিত্যাগ করলে তা কোনও অপরাধ হবে না এবং সেজন্য তাকে শাস্তি দেওয়াও যাবে না।
মূলত তাদের কাছে এ আয়াতের অর্থ স্পষ্ট নয়। আমরা বলেছি, এ আয়াতের সম্পর্ক ইসলামে দাখিল করানোর সাথে, ইসলামগ্রহণ পরবর্তী কর্তব্য-কর্মের সাথে নয়। এ আয়াতের শানে নুযূল দ্বারাও এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। মদীনা মুনাওয়ারায় ইসলামী যুগের আগে অনেক সময় শিশুদেরকে ইহুদীধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হত। যখন মদীনা মুনাওয়ারায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করল, আনসারগণ চিন্তা করলেন, ইসলাম গ্রহণের আগে তো এখানে শিশুদেরকে ইহুদী হওয়ার জন্য বাধ্য করা হত, সেই হিসেবে এখন আমরা তাদেরকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করছি না কেন? এরই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াত নাযিল হয়। এর দ্বারা জানিয়ে দেওয়া হয় যে, কাউকে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য বাধ্য করা যাবে না।
এতো গেল ইসলাম গ্রহণের আগের কথা। কিন্তু কেউ যখন একবার ইসলাম গ্রহণ করে ফেলে, তখন ইসলামের বিধানাবলী অনুসরণ করতে সে বাধ্য। তার জন্য ইসলাম পরিত্যাগেরও কোনও অনুমতি নেই। মুসলিম রাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় সে যদি ইসলাম পরিত্যাগ করতে চায়, তবে তা শৃংখলাবিরোধী ও অশান্তি সৃষ্টিকারী একটি কাজ বলেই গণ্য হবে। মুসলিম রাষ্ট্রে এরূপ কাজের অনুমতি দেওয়া যায় না। সে যদি ইসলাম ত্যাগ করতে চায়, তবে মুসলিম রাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যাক এবং কোনও অমুসলিম রাষ্ট্রে চলে যাক। অতঃপর সে যা ইচ্ছা তাই করুক। সেখানে তো আমাদের কোনও কর্তৃত্ব নেই, তাই তার কোনও কাজের দায়-দায়িত্ব আমাদের উপর বর্তাবে না। পক্ষান্তরে মুসলিম রাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় সে ইসলাম ত্যাগ করতে চাইলে তা কিছুতেই অনুমোদনযোগ্য হতে পারে না। সেটা হবে শরীরের কোনও অঙ্গে পচন ধরার মত। এরূপ অঙ্গকে কেটে ফেলা জরুরি, অন্যথায় সেই পচন অন্যান্য অঙ্গেও সংক্রমিত হবে, ফলে সম্পূর্ণ দেহই ধ্বংস হয়ে যাবে। সেই ধ্বংস থেকে রক্ষার জন্য পচন ধরা অঙ্গটি কেটে ফেলাই যুক্তিযুক্ত। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- من بدل دينه فاقتلوه
‘যে ব্যক্তি তার দ্বীন বদলে ফেলবে, তাকে হত্যা করো।’ (তিরমিযী-১৩৭৮, বুখারী-২৭৯৪)
মুরতাদের হত্যা করা সম্পর্কিত হাদীছ অর্থের দিক থেকে প্রায় মুতাওয়াতির। কাজেই মুরতাদের শাস্তি হত্যা করা নয়- এ দাবি করার কোনও বৈধতা নেই। আর এ দাবি প্রমাণ করার জন্য আলোচ্য আয়াতের দলিল দেওয়া কুরআনের অপব্যাখ্যার শামিল। কারণ, ইসলামগ্রহণ পরবর্তী কর্ম-কর্তব্যের সাথে আয়াতটির কোন সম্পর্কই নেই। (ইসলাম ও আমাদের জীবন-১৪/৩২৯-৩৩৪)
মতামত দিন
আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।