মা‘হাদ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট

মা‘হাদ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট
মা‘হাদ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটমাওলানা কামরুল ইসলাম মুসা সাহেব, মুদীর মা‘হাদু উলূমিল কুরআন

মা‘হাদ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব পবিত্র কুরআন। আর আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। সেই হিসাবে এই মুসলিম ভূখন্ডে কুরআনের খিদমাত বিশেষতঃ তাফসীরুল কুরআন ও উলূমুল কুরআন বিষয়ক খিদমাত, কুরআন গবেষণা ও কুরআন চর্চা অনেক বেশী হওয়াই সকলের কাম্য। কিন্তু বাস্তবতা ছিল এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই এখানের কুরআনী খিদমাতের হাল ও আমাদের

মাহাদ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট

সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব পবিত্র কুরআন। আর আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। সেই হিসাবে এই মুসলিম ভূখন্ডে কুরআনের খিদমাত বিশেষতঃ তাফসীরুল কুরআন ও উলূমুল কুরআন বিষয়ক খিদমাত, কুরআন গবেষণা ও কুরআন চর্চা অনেক বেশী হওয়াই সকলের কাম্য। কিন্তু বাস্তবতা ছিল এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই এখানের কুরআনী খিদমাতের হাল ও আমাদের উদাসীনতা দেখে উলামায়ে কিরাম অন্তরে দারুণ ব্যথা অনুভব করতেন। সেই ব্যথার সামান্য অংশ আল্লাহ তা‘আলা তাকেও দান করেছিলেন যার মাধ্যমে পরবর্তিতে মা‘হাদু উলূমিল কুরআন শুরু করার কাজ নিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন পর্যন্ত সেই ব্যথা তার অন্তরেই লোকায়িত থাকে। ১৯৯৪ সনে তার প্রাতিষ্ঠানিক ইলম অর্জনের সমাপ্তি ঘটে। এরপর পেরিয়ে যায় দীর্ঘ এক যুগ। এ দীর্ঘ সময়ে দরস-তাদরীস ও অন্য দ¦ীনী খিদমাতের তাওফীক হলেও অন্তরের সুপÍ ব্যথা প্রশমনের চেষ্টা করার কোন সুযোগ হয়নি। অবশেষে ২০০৬ সনের রমজান মাসে বৃহৎ পরিসরের কুরআনী প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে তাফসীর ও উলূমুল কুরআন বিষয়ে ক্ষুদ্র পরিসরের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করার চিন্তা-ফিকির করা হয়। এ পথে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর মনে হয়- কাজটিকে আগে যতটুকু কঠিন মনে করা হয়েছিল বাস্তবে তা আরও অনেক বেশী কঠিন। কেননা, আগে কেবল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইলমের অপযার্পÍতা ও অনভিজ্ঞতাকে বাধা হিসাবে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এ পথে কদম রাখার পর পরিবেশের প্রতিকূলতা ও সহযোগিতার দারুণ অভাব প্রকটভাবে দেখা দিল। তৎকালীন সময়ে জেএমবি ভীতিতে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কেও মাদরাসার জন্য বাড়ী ভাড়া দিতে সম্মত ছিল না। আর অপরিচিতির কারণে কেউ কোনরূপ সহযোগিতার আশ্বাসও দেয়নি। সুতরাং ২০০৬ এর শাওয়াল মাসে  মাদরাসা শিক্ষাবর্ষের শুরুতে আর কাঙ্খিত  সেই কুরআনী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। তারপরও চেষ্টা অব্যাহত থাকে। বিভিন্ন জনের সাথে মত বিনিময় হয়, পরামর্শ হয়, বেশ কয়েকবার ইজতিমায়ী মজলিসের আয়োজন হয়। কিন্তু সবকিছুর ফলাফলই ছিল চরম হতাশাব্যঞ্জক ও দারুণ নৈরাশ্যজনক। অবশ্য তারা খায়েরখাহী  ও কল্যাণকামী হিসাবেই এরূপ পরামর্শ দিয়েছেন। সার্বিক বিবেচনায় তাদের পরামর্শ অযৌক্তিক ছিল না। তাদের যুক্তি ছিল, আমাদের দেশে তাফসীর ও উলূমুল কুরআন বিষয়ের প্রতি ছাত্রদের তেমন আগ্রহ নেই। তাছাড়া ইলমুল ফিকহ ও উলূমুল হাদীছের মত বিষয়টি এতটা গুরুত্বপূর্ণও নয়। কিন্তু আল্লাহ পাকের অসীম কুদরত যে, এমন পরিস্থিতিতেও তিনি হতাশাগ্রস্ত ও হিম্মতহারা করেননি। বরং চেষ্টায় ইসতিকামাত দান করেছেন, বরকত দান করছেন। আসলে রাব্বুল আলামীন একটি একক কুরআনী প্রতিষ্ঠান এই জমিনে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং এর ফয়সালা পূর্বেই সম্পন্ন হয়েছিল, তাই আজকের এই মা‘হাদু উলূমিল কুরআন। অন্যথায় বাহ্যিক কোন আসবাবই এর অনুকূলে ছিল না। সরাসরি কুদরতে ইলাহী রাহনুমায়ী করেছে। ফলে এমন পরিস্খিতিতেও মনোবল ভেঙ্গে পড়েনি। বরং হিতাকাঙ্খীগণের নিরুৎসাহ অুপাতে আল্লাহ পাক উৎসাহ আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। এরই সাথে চেষ্টা ও দু‘আ চালিয়ে যাওয়ার তাওফীক দিয়েছেন। এভাবে এক বৎসর অতিবাহিত হয়ে যায়। ফিরে আসে রমজান মাস। মুহাম্মদপুরস্থ সাত মসজিদের দক্ষিণ পাশের্^র জনাব কামরুল হাসান চৌধুরী সাহেবের ৫তলা ভবনের নিচ তলার পূর্বের অংশ নতুন কুরআনী প্রতিষ্ঠানের জন্য ভাড়ায় প্রাপ্তির আশ^াস পাওয়া যায়। কিন্তু আর্থিক সংকট মারাত্মক বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বাসা ভাড়ার জন্য অগ্রিম জমা, রং করানো, সংস্কার কাজ সম্পাদন, আসবাব পত্র ও প্রয়োজনীয় কিতাব ক্রয়সহ তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজন ছিল ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা। অথচ প্রতিষ্ঠিতব্য নতুন প্রতিষ্ঠানের তহবিল ছিল একেবারে শূন্য। এদিকে দান সংগ্রহের যোগ্যতা থেকে মাহরূম থাকার দরুণ কারও নিকট থেকে সহযোগিতা প্রাপ্তিরও কোন আশা ছিল না। এমন মুহূর্তেও আল্লাহ পাকের রহমত বিশেষ রাহ্নুমায়ী করে এবং ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করার তাওফীক দেন। এভাবে রমজান মাসেই আরও বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষার সম্মুক্ষীন হতে হয়। আর রাব্বুল আলামীন তাঁর কুদরত দ্বারা উত্তীর্ণ করিয়ে নেন। পূর্বেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছিল যে, মাদরাসা শিক্ষাবর্ষের শুরুতে অর্থাৎ শাওয়াল মাসে নতুন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করা হবে এবং এর নাম হবে মা‘হাদু উলূমিল কুরআন। সেই মুতাবেক ১৪২৮ হিজরীর ৭ শাওয়াল মুতাবেক ২০০৭ সনের অক্টোবর মাসে মা‘হাদু উলূমিল কুরআন এর কার্যক্রম শুরু হয়।

চলমান পোষ্ট

মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।

সর্বশেষ পোস্ট

শীর্ষ লেখক

সর্বাধিক মন্তব্য

বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভিডিও

ক্যাটাগরি