কুরআন বিষয়ক মাসআলা-মাসায়িল

কুরআন বিষয়ক  মাসআলা-মাসায়িল
কুরআন বিষয়ক মাসআলা-মাসায়িলমুফতী মাসউদুর রহমান

কুরআন বিষয়ক মাসআলা-মাসায়িল ১.বিষয়:মসজিদের কুরআন বাড়িতে নেয়া প্রসঙ্গে। প্রশ্ন:মসজিদের কুরআন শরীফ বাড়িতে নিয়ে তিলাওয়াত করা জায়েয হবে কি? উত্তরঃ আমাদের দেশে সাধারণত যেসব কুরআন শরীফ মসজিদে দেয়া হয়, সেগুলোর মালিকানা মসজিদ সংশ্লিষ্ট। অতএব মসজিদের কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের জন্য বাড়িতে নেয়া জায়েয হবে না। বরং প্রয়োজনে কুরআন তিলাওয়াতে আগ্রহী ব্যক্তিগণ মসজিদে এসে তিলাওয়াত করবেন।  (আদ্দুররুলমুখতার:খ-৪,পৃ-৩৬৫,আলবাহরুররায়িক:খ-৫, পৃ-৩৫৫,

কুরআন বিষয়ক

মাসআলা-মাসায়িল

১.বিষয়:মসজিদের কুরআন বাড়িতে নেয়া প্রসঙ্গে।

প্রশ্ন:মসজিদের কুরআন শরীফ বাড়িতে নিয়ে তিলাওয়াত করা জায়েয হবে কি?

উত্তরঃ আমাদের দেশে সাধারণত যেসব কুরআন শরীফ মসজিদে দেয়া হয়, সেগুলোর মালিকানা মসজিদ সংশ্লিষ্ট। অতএব মসজিদের কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের জন্য বাড়িতে নেয়া জায়েয হবে না। বরং প্রয়োজনে কুরআন তিলাওয়াতে আগ্রহী ব্যক্তিগণ মসজিদে এসে তিলাওয়াত করবেন।  (আদ্দুররুলমুখতার:খ-৪,পৃ-৩৬৫,আলবাহরুররায়িক:খ-৫, পৃ-৩৫৫, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া:খ২১, পৃ-৩০০)

২.বিষয়: মসজিদের কুরআন বিক্রয় প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ বিভিন্ন মসজিদে দানকৃত প্রয়োজনের অতিরিক্ত এমন অনেক কুরআন শরীফ তাকে রাখা থাকে, যেগুলো তিলাওয়াত করা হয় না। দীর্ঘ দিন এভাবে থাকার ফলে সেগুলো তিলাওয়াতের অনুপযোগী হয়ে যায়। এমতাবস্থায় উক্ত কুরআন শরীফগুলো বিক্রি করা এবং এগুলোর বিক্রয় লব্ধ মূল্য মসজিদের কোন কাজে ব্যয় করা জায়েয হবে কী না?

উত্তরঃ যে কাজের জন্য কোন জিনিস দান করা হয় তা সে কাজেই ব্যবহার করা শরীয়তের বিধান। অন্য কোন কাজে তা ব্যবহার করা জায়েয নয়। মসজিদে কুরআন শরীফ দান করার উদ্দেশ্য হল সেগুলো তিলাওয়াত করা। এছাড়া অন্য কিছু নয়। অতএব, আলোচ্য কুরআন শরীফগুলো বিক্রি করা এবং এগুলোর বিক্রয় লব্ধ টাকা ইমাম-মুআজ্জিনের বেতনসহ মসজিদের অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা জায়েয হবে না। তবে এক্ষেত্রে উক্ত কুরআন শরীফগুলো যেসব মসজিদে কুরআন শরীফের প্রয়োজন রয়েছে সেখানে দেয়া যেতে পারে। (আদদুররুল মুখতর:খ-৪, পৃ-৩৬৫, ফাতাওয় আলমগীরী:খ ৩, পৃ-৩১২, ইমদাদুল ফাতাওয়া:খ ২,পৃ-৫৯৬)

৩.বিষয়: নাবালেগের কণ্ঠে সাজদার আয়াত শ্রবণের হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ নাবালেগের কন্ঠে সাজদার আয়াত শ্রবণ করলে শ্রবণকারীর উপর সাজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে কী না?

উত্তরঃ সহীহ-শুদ্ধ কুরআন পাঠে সক্ষম ও সাজদার আয়াতের জ্ঞান সম্পন্ন নাবালেগ বাচ্চাদের কন্ঠে সাজদার আয়াত শ্রবণ করার দ্বারা শ্রবণ কারীর উপর সাজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে। আর নাবালেগ বাচ্চার জ্ঞান-বুদ্ধি এরূপ না হলে তার কন্ঠে তিলায়াতকৃত সাজদার আয়াত শ্রবণ করার দ্বারা শ্রবণকারীর উপর সাজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে না।  (রদ্দুল মুহতার:খ ২, পৃ-৫৮১,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:খ ১, পৃ-১৯২,আল বাহরুররায়িক:খ ২, পৃ-১৯০,আহসানুল ফাতাওয়া:খ৪, পৃ-৬০)

৪.বিষয়:মনে মনে সাজদার আয়াত তিলাওয়াতের হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ মনে মনে সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করার দ্বারা তিলাওয়াত কারীর উপর সাজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে কি?

উত্তরঃ মুখে উচ্চারণ ব্যতীত শুধুমাত্র মনে মনে সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করার দ্বারা তিলাওয়াতকারীর উপর সাজদায়ে তিলাওয়াত ওয়াজিব হবে না।  (আদদুররুল মুখতার:খ ২,পৃ-৫৭৫, আল বাহরুররায়েক:খ ২, পৃ-১৮৮, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া:খ ১১, পৃ-৫৫৩)

৫. বিষয়: কুরআন শরীফের পুরাতন কপি হেফাজত প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ ছেড়া, ফাটা বা পুরাতন তিলাওয়াতের অনুপযোগী কুরআন শরীফ হেফাজতের পদ্ধতি কি? হেফাজতের উদ্দেশ্যে তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা জায়েয হবে কী না?

উত্তরঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে ছেড়া, ফাটা বা অধিক পুরাতন তিলাওয়াতের অনুপযোগী কুরআন শরীফ হেফাজতের উত্তম পদ্ধতি হল এগুলোকে কোন পবিত্র কাপড়ে জড়িয়ে মায়্যিতকে দাফন করার ন্যায় গোরস্তানে অথবা এমন কোন স্থানে দাফন করা, যেখানে সাধারণত লোকজন চলাচল করে না। অথবা কুরআন শরীফের সাথে ইট, পাথর বা এজাতীয় কোন ভারি বস্তু বেঁধে প্রবহমান পানিতে ডুবিয়ে দেয়া। হেফাজতের উদ্দেশ্যেও কুরআনের পুরাতন কপি না পুড়িয়ে উল্লিখিত পদ্ধতিদ্বয়ের মধ্য হতে কোন একটি পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। তবে যদি কেউ ছেড়া, ফাটা বা তিলাওয়াতের অনুপযোগী পুরাতন কুরআন শরীফ হেফাজতের উদ্দেশ্যে পুড়িয়ে ফেলে এবং এর ছাইগুলো পবিত্র পানিতে ফেলে দেয়, তাহলে সেটাও জায়েয আছে। এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি শরীয়তের দৃষ্টিতে অপরাধী বা গুনাহ্গার সাব্যস্ত হবে না।  (বুখারী শরীফ:২/৭৪৬, ফাতাওয়া আলমগিরী:খ-৫, পৃ-৩২৩, আদদুররুল মুখতার:খ-৬, পৃ-৪২২, ইমদাদুল ফাতাওয়া:খ-৪, পৃ-৫৪,৫৫, ফাতাওয়া উছমানী:খ-১, পৃ-১৯৪)

৬.বিষয়:কুরআন তিলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করে এর বিনিময় গ্রহণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কিরূপ?

উত্তরঃ কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা না হয়; বরং কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে ছাওয়াব লাভের আশায় বা ছাওয়াব রেসানির উদ্দেশ্যে তা তিলাওয়াত করা হয়, তবে এর বিনিময় গ্রহণ করা বা টাকা পয়সা নেয়া কিংবা দেয়া জায়েয নয়। তবে কোন দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে, যেমন- কোন রোগ থেকে মুক্তির জন্য কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য কুরআন তিলাওয়াত করে এর বিনিময় নেয়া জায়েয আছে। (বুখারী শরীফ:২/৮৫২, শরহে নববী আলা মুসলিম:২২৪, রদ্দুর মুহতার:খ ৬, পৃ-৫৬, আহসানুল ফাতাওয়া:খ ৭,পৃ-২৯১,২৯৬)

৭.বিষয়:মুখের লালা লঅগিয়ে কুরআনের পৃষ্ঠা উল্টানো প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ সাধারণত কুরআন শরীফের পৃষ্ঠা উল্টানোর সময় মুখে আঙ্গুল দিয়ে লালা লাগিয়ে পৃষ্ঠা উল্টানো হয়। এরূপ করা জায়েয কী না?

উত্তরঃ কুরআন শরীফের পাতা উল্টানোর সময় এরূপ করা ন জায়েয নয়। তবে কুরআনে কারীমের আদবের প্রতি লক্ষ্য রেখে এর পাতা উল্টানোর সময় এরূপ না করা উচিত। (আদদুররুল মুখতার:খ১, পৃ-৪২৪, ফাতহুল কাদীর:খ১, পৃ-১১২, ফাতাওয়া হক্কানিয়া:খ২, পৃ-৫৮৬)

৮.বিষয়: ঋতুস্রাব   অবস্থায় মহিলাদের কুরআন তিলাওয়াত প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ ঋতুস্রাব অবস্থায় মহিলারা কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে পারবে কী না? উত্তরঃ না, ঋতু¯্রাব অবস্থায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা জায়েয নয়। তবে দু‘আর আয়াতগুলো তিলাওয়াতের নিয়ত না করে দু‘আর নিয়তে পড়া কিংবা শিক্ষা দেয়ার জন্য পূর্ণ আয়াত এক সাথে না পড়ে আয়াতের শব্দগুলো পৃথক পৃথক ভাবে উচ্চারণ করা জায়েয আছে।  (তিরমিজী শরীফ:১/৩৪, আদ্দুররুল মুখতার:খ-১, পৃ-১৭২, আল বাহরুর রায়িক:খ-১, পৃ-৩৪৫, ফাতহুল কাদীর:খ-১, পৃ-১৭১, ইমদাদুল ফাতাওয়া:খ-১, পৃ-৮৮, ১০৬, আহসানুল ফাতাওয়া:খ ২,পৃ-৬৭)

৯.বিষয়: কুরআন শরীফ উপর থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ কুরআন শরীফ উপর থেকে নিচে পড়ে গেলে এর জন্য করণীয় কি? কোন কোন এলাকায় এরূপ ক্ষেত্রে কুরআনের কপি ওজন করে এর সমপরিমাণ চাউল ফকীর-মিসকীনকে দিয়ে থাকে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এর গুরুত্ব কতটুকু?

উত্তরঃ কুরআন শরীফ অসতর্কতা বশতঃ পড়ে গেলে এর জন্য ইস্তিগফার করা কর্তব্য। কাফ্ফারা স্বরূপ কুরআনের কপির ওজনের সমপরিমাণ চাউল বা অন্য কিছু ফকীর-মিসকীনকে দেয়া জরুরী নয়। তবে অন্যায়ের মূল কাফ্ফারা অর্থাৎ ইস্তিগফার করার পর যদি এমনিতেই কিছু সদকা করে দেয়া হয়, তাহলে সেটা উত্তম। কেননা, তওবা-ইস্তিগফারের পর সদকার দ্বারা পূর্ণ কাফ্ফারা হয়ে যায়।  (ইমদাদুল ফাতাওয়া:খ৪, পৃ-৬০, ফাতাওয়া রশীয়িা: ২২১)

১০ .বিষয়: এক মসজিদের কুরআন অন্য মসজিদে দেয়া প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ কোন মসজিদে মুসল্লীদের তিলাওয়াতের জন্য যত সংখ্যক কুরআনের কপি প্রয়োজন, এর চেয়ে অনেক বেশী রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কুরআনের কপিগুলো অন্য কোন মসজিদে দেয়া যাবে কী না?

উত্তরঃ যদি কোন মসজিদে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কুরআন শরীফ থাকে, তাহলে সেগুলো যে মসজিদে কুরআন শরীফের প্রয়োজন রয়েছে, সেখানে দেয়া জায়েয। (অদদুররুল মুখতার:খ ৪, পৃ-৩৬৫)

১১ .বিষয়: মোবাইলে টেপকৃত কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণের হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ মোবাইলে বা টেপ রেকর্ডারে ধারণকৃত কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণের দ্বারা কি ছাওয়াব পাওয়া যাবে না?

উত্তরঃ মোবাইল বা টেপ রেকর্ডারের আওয়াজ তিলাওয়াতকারীর নিজস্ব আওয়াজ নয়। বরং প্রতিধ্বনির ন্যায় তিলাওয়তকারীর স্বরের নকল মাত্র। এজন্যই মোবাইল বা টেপ রেকর্ডারের তিলাওয়াত বস্তুত তিলাওয়াত নয়। সুতরাং টেপ রেকর্ডার ও মোবাইলে তিলাওয়াত শ্রবণে সরাসরি কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণের ছাওয়ব হয় না। তবে তা শ্রবণে কোন সমস্যা নেই। কারণ, এর দ্বারা সহীহ্ কিরাআত শিক্ষায় সহযোগিতা হয়। (রদ্দুল মুহতার:খ ৬, পৃ-৩৪৮)

১২.বিষয়: ওজু ব্যতিত ইসলামী বই স্পর্শ করার হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ অনেক ইসলামী বই-পুস্তক এমন রয়েছে, যেগুলোতে মাঝে মাঝে কুরআনের আয়াত লেখা থাকে। এ সকল বই পুস্তক ওজু ছাড়া পড়া যাবে কী না?

উত্তরঃ হাঁ, এসকল বই-পুস্তক ওজু ছাড়া পড়া যাবে। তবে যে স্থানে কুরআনের আয়াত লেখা রয়েছে, উক্ত স্থান ওজু ব্যতিত স্পর্শ করা জায়েয হবে না। (ইমদাদুল আহকাম:খ১, পৃ-২৪১)

১৩.বিষয়: শায়িত অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতের হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের নিয়ম কি? তা বসে তিলাওয়াত করতে হবে? নাকি দাঁড়ানো অবস্থায়, শায়িত অবস্থায় ও হাটা-চলা অবস্থায়ও তিলাওয়াত করা জায়েয হবে?

উত্তরঃ নামায ব্যতিত কুরআন তিলাওয়াতের মুস্তাহাব তরীকা হল অত্যন্ত বিনয় ও ন¤্রতার সাথে কিবলামুখী হয়ে বসে মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত করা। তবে দাঁড়িয়ে, শুয়ে ও হেলান দিয়েও কুরআন তিলাওয়াত জায়েয আছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এতে কোন সমস্যা নেই (সূরা আলে ইমরান:১৯০, বুখারী শরীফ:হা:২৯৭)

১৪.বিষয়: কুরআনের আয়াত ওয়েলকাম টোন হিসাবে ব্যবহার প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ মোবাইল ফোনে পবিত্র কুরআনের আয়াত ওয়েলকাম টোন হিসাবে ব্যবহার করা যাবে কী না?

উত্তরঃ কুরআনের আয়াত ওয়েলকাম টোন হিসাবে ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে একটি ভাল কাজ। ওয়েলকাম টোনে মিউজিক বা গান না শুনিয়ে কুরআন তিলাওয়াত, আযান বা জিক্র ইত্যাদি শুনানোর ব্যবস্থা করা অবশ্যই প্রশংসনীয় কাজ। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এটি ভাল মনে হলেও এক্ষেত্রে এগুলোর ব্যবহারে একাধিক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যার একটিই এ থেকে বিরত থাকার জন্য যথেষ্ট। যেমন: (ক) ওয়েলকাম টোন এর ব্যবহার হয় যার কাছে ফোন করা হযেছে, তার সাথে সংযোগ সৃষ্টি হয়েছে কী না সেটা বুঝার জন্য। কারো কাছে কল করার পর রিংটোন পেলে বুঝা যায় যে, তার মেবোইলে রিং হচ্ছে। কল করার পর বিজিটোন আসলে বুঝা যায় সে এখন অন্যের সাথে কথা বলছে। আবার ফোন বন্ধ থাকলেও এক ধরণের টোন পাওয়া যায়। মোটকথা, কাঙ্খিত ফোনটিতে সংযোগ স্থাপনের জন্য স্বাভাবিক যে সংকেত টোন রয়েছে, সেটার পরিবর্তে কুরআন তিলাওয়াত, আযান, জিক্র ইত্যাদি ব্যবহার করলে এই তিলাওয়াত ও আযানও ফোনকারীকে প্রথমে সেই টোনের কাজ দিবে। অর্থৎ ফোনকারী বুঝবে যে, কাক্সিক্ষত ফোনটিতে সংযোগ পেয়েছে ও রিংটোন বেজে চলছে। আচ্ছা বলুন তো আল্লাহ তা‘আলার মহান কালাম কি এই কাজে ব্যবহার করা উচিত। এই কাজে তিলাওয়াতের ব্যবহার কি অপাত্রে কুরআনের ব্যবহার নয়। তেমনিভাবে আযান, যা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিয়ার, তা এই কাজে ব্যবহার করা কি সমীচীন?

(খ) কাঙ্খিত নাম্বারে ফোন করার পর সেই মোবাইল হতে রিংটোন হিসাবে কুরআন তিলাওয়াত ভেসে আসছে, হয়ত রিসিভের অপেক্ষার সাথে সাথে কলকারী ব্যক্তি তিলাওয়াতও শুনছেন। কিন্তু যার নাম্বারে কল করা হয়েছে তিনি তো তিলাওয়াত শুনতে পাচ্ছেন না। বিধায় তিনি তিলাওয়াত এমন স্থানে থাকা অবস্থায় রিসিভ করলেন, যে স্থানে থেমে গেলে আয়াতের অর্থই বিকৃত হয়ে যায়। তদ্রƒপ আযান ডাউনলোড করলে কেউ যদি লা-ইলাহা পর্যন্ত উচ্চারিত হওয়ার পর ফোন রিসিভ করে ফেলে তাহলে অর্থ দাঁড়ায়-কোন মা‘বুদ নেই। ফলে অর্থের বিকৃতি ঘটে এই সমস্যার কারণেও এস্থানে এগুলোর ব্যবহার জায়েয হবে না।

(গ) এছাড়া বিভিন্ন ব্যস্ততার মধ্যে থেকে ফোনে কথা বলার সময় কানে তিলাওয়াতের ধ্বনি আসলেও তা মনোযোগ সহকারে শোনা হয় না। ফলে তিলাওয়াত শোনার হক আদায় হয় না। তাই ওয়েলকাম টোন হিসাবে কুরআন তিলাওয়াত, আযান, জিক্র ইত্যাদির ব্যবহার জায়েয হবে না। বরং এর জন্য স্বাভবিক রিংটোনই উপযোগী।

(আত-তিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন নববীঃ৪৬, ফাতাওয়া আলমগীরীঃ ৫/৩১৫, রদ্দুল মুহতারঃ ১/৫১৮, অলাতে জদীদাহ কী শরয়ী আহকামঃ ১৭১)

১৫.বিষয়: মোবাইলে রিংটোন হিসাবে কুরআনের আয়াত ব্যবহার প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ অনেকে রিংটোন হিসাবে গান-বাজনা ইত্যাদির পরিবর্তে তিলাওয়াত, আযান বা জিক্র ব্যবহারকে পছন্দ করে। সুতরাং রিংটোন হিসাবে এসব ব্যবহার করতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন ক্ষতি আছে কী না?

উত্তরঃ তিলাওযাত, আযান, জিক্র ও তাসবীহ সবকিছুই অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। এগুলোর ব্যবহার একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে রাজি-খুশি করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী হওয়া বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া শরীয়তে এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্র সুনির্ধারিত। তাই মোবাইলের রিংটোন হিসাবে এগুলোর প্রয়োগ অপব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, মোবাইলে রিংটোন মূলতঃ এ সংবাদ দেয়ার জন্য যে কেউ কথা বলতে চাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র কালামের তিলাওয়াত, আযান, জিকর, তাসবীহ্ ইত্যাদি ব্যবহার করা যে এগুলোর অপাত্রে ব্যবহার হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।

ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য বিক্রেতার জোরে জোরে সুবহানাল্লাহ বলা, তেমনিভাবে প্রহরী জাগ্রত আছে, একথা বুঝানোর জন্য জোরে জোরে জিক্র করাকেই ফিক্বহ্বিদগণ এগুলোর অপব্যবহার হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। তাহলে মোবাইল ফোনে কল আসার সংবাদ দেয়ার জন্য এগুলোর ব্যবহার যে কেমন হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উপরন্তু রিংটোন হিসাবে এগুলোর ব্যবহারে আরো অন্যান্য শরয়ী ত্রুটিও রয়েছে। যেমন:

(ক) কল এলে কুরআন তিলাওয়াত হতে থাকে, অথচ অনেক ক্ষেত্রে ব্যস্ততার দরুণ বাহকের উক্ত তিলাওয়াতের প্রতি ভ্রƒক্ষেপ করারই সুযোগ হয় না। তাছাড়া কে কল করেছে তা দেখা ও কল রিসিভ করার ব্যস্ততা তো লেগেই থাকে। এ কারণেও তিলাওয়াতের আদব রক্ষা করে তা শ্রবণ করা সম্ভব হয় না।

(খ) কল এলে যেহেতু রিসিভের জন্য বাহক ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং কল রিসিভ করাই মূল উদ্দেশ্য থাকে, তাই আয়াতের যে কোন অংশেই তিলাওয়াত চলতে থাকুক না কেন, সেদিকে ভ্রƒক্ষেপ না করে বাহক কল রিসিভ করে ফেলে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারিত অংশের বিবেচনায় আয়াতের অর্থ বিকৃত হয়ে যায়।

(গ) মোবাইল নিয়ে টয়লেট কিংবা বাথরুমে প্রবেশের পর কল এলে অপবিত্র স্থানে আল্লাহর পবিত্র কালামের তিলাওয়াত, আযান, জিকর ইত্যাদি আওয়ায বেজে উঠে। এতেকরে এসবের পবিত্রতা ক্ষুণœ হয়। মোটকথা, এসব বহুবিধ কারণেই কুরআনে কারীমের তিলাওয়াত, আযান, জিকর ইত্যাদি রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা জায়েয নয়। অতএব, তা থেকে বিরত থাকা জরুরী।

(রদ্দুল মুহতার:খ ১, পৃ-৫১, পৃ-৫৪৬, ফাতাওয়া আলমগীরী:খ৫, পৃ-৩১৫, আলাতে জাদীদাহ কি শরয়ী আহকাম:১৭১, আততিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন: ৪৬)

১৬.বিষয়: মোবাইল মেমোরিতে কুরআন তিলাওয়াত ডাউনলোড প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ মোবাইল মেমোরী বা মেমোরী কার্ডে কুরআন তিলাওয়াত বা কোন জিকর ডাউনলোড করা জায়েয আছে কী না?

উত্তরঃ মেমোরী কার্ড বা মোবাইল মেমোরীতে তিলাওয়াত ডাউনলোড বা রেকর্ড করা জায়েয। শরীয়তের দৃষ্টিতে এতে কোন অসুবিধা নেই। এর হুকুম অন্যান্য রেকর্ডারের মতই। তবে যখন তিলাওয়াত চলতে থাকবে, তখন খুব মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করতে হবে। কারণ অন্য কাজে ব্যস্ত থেকে তিলাওয়াতের রেকর্ড বাজানো নিঃসন্দেহে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের আদব পরিপন্থী কাজ। (আত-তিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন নববীঃ৪৬, ফাতাওয়া আলমগীরীঃ ৫/৩১৫, রদ্দুল মুহতারঃ ১/৫১৮, অলাতে জদীদাহ কী শরয়ী আহকামঃ ১৭১)

১৭.বিষয়: লিখিত কুরআন মোবাইলে ডাউনলোড করা প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ লিখিত কুরআন শরীফ পূর্ণ বা আংশিক মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করা এবং তা মোবাইল মেমোরী বা মেমোরী কার্ডে সংরক্ষণ করা জায়েয কী না?

উত্তরঃ হাঁ, লিখিত পূর্ণ কুরআন বা তার অংশ বিশেষ ডাউনলোড করে মোবাইল মেমোরী বা মেমোরী কার্ডে রেখে দেয়া জায়েয। তবে তা স্ক্রিনে দৃশ্যমান অবস্থায় এর অসম্মানী যেন না হয়, সেদিকে তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে। মেমোরীতে হেফাজত করা অবস্থায় মোবাইল স্পর্শ করতে অজুর প্রয়োজন নেই। (আততিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন: ৪৬)

১৮.বিষয়:মোবাইল স্ক্রিনে কুরআনী আয়াতের ক্যালিগ্রাফী ডাউনলোড প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ মোবাইল স্ক্রিনে কুরআনে কারীমের আয়াত, কুরআনী আয়াতের ক্যালিগ্রাফী, জিক্র বা আল্লাহ তা‘আলার নাম ডাউনলোড করে সেভ করে রাখা জায়েয আছে কী না?

উত্তরঃ মোবাইল স্ক্রিনে কুরআনে কারীমের লিখিত আয়াত, আয়াতের ক্যালিগ্রাফী, আল্লাহ তা‘আলার নাম কিংবা অন্য কোন জিক্র ইত্যাদি সেভ করে রাখা ঠিক নয়। কারণ, ক্ষেত্র বিশেষে এগুলোর সাথে বেয়াদবী হওয়ার আশংকা থাকে। এছাড়া মোবাইল স্ক্রিনে কুরআনের আয়াত রয়েছে, এরূপ চিন্তা মনে রেখে আদবের সাথে তা ব্যবহার করা হয় না। বরং অধিক ব্যবহারের ফলে যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হয়। এমও দেখা যায়, অনেক সময় বসার স্থানে বা চার্জ দেয়ার প্রয়োজনে তা নিচেও রাখতে হয়। সুতরাং কুরআনের আয়াত ও উল্লিখিত মর্যাদাপূর্ণ জিনিসগুলো স্ক্রিনে দৃশ্যমান অবস্থায় রেখে সেগুলোর যথাযথ আদব রক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই এ ধরনের কিছু স্ক্রিন সেভারে রাখা ঠিক হবে না।  (আততিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন:৪৬)

১৯.বিষয়: কুরআনের কপিতে চুমু দেয়ার শরয়ী হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্ন: কুরআনে কারীম তিলাওয়াত শুরুর আগে ও তিলাওয়াত শেষ করে রেখে দেয়ার সময় অনেকে কুরআনের কপিতে চুমু দিয়ে থাকেন শরীয়তের দৃষ্টিতে এর হুকুম কি? উত্তরঃ সাহাবায়ে কিরাম রা.ও সলফে সালিহীনের অভ্যাস ছিল যে, তাঁরা কুরআনে কারীমে চুমু খেতেন। তাছাড়া এর দ্বারা কুরআনে কারীমের তা‘জীম ও সম্মান প্রকাশ পায়। অতএব, কুরআনে কারীম তিলাওয়াতের জন্য নেয়ার সময় বা তিলাওয়াত করে রেখে দেয়ার সময় অথবা অন্য কোন সময় তাতে চুমু দেয়াতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা নেই। (ফাতাওয়া হক্কানিয়া:খ ২, পৃ-১৫৯)

১৮.বিষয়: কুরআন তিলাওয়াতরত অবস্থায় দরূদ পাঠের হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্ন: যদি কুরআনে কারীম তিলাওয়াতের সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম উচ্চারিত হয়, তাহলে তিলাওয়াত বন্ধ রেখে তখনই কি দরূদ পড়া জরুরী? না তিলাওয়াত শেষে তা পাঠ করলেও হবে?

উত্তরঃ এক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে তিলাওয়াত বন্ধ না করে তা চালিয়ে যাওয়া এবং তিলাওয়াত শেষে দরূদ পাঠ করা। তবে কেউ যদি তিলাওয়াত বন্ধ করে দরূদ পাঠ করে, তাহলেও এতে কোন অসুবিধা নেই। (ফাতাওয়া হক্কানিয়া: ২/১৬২)

২০.বিষয়: আজানের সময় কুরআন তিলাওয়াত প্রসঙ্গে।

প্রশ্ন: আজানের সময় কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েয হবে কী না? নিজ মহল্লার মসজিদে আজান হওয়ার পর, পার্শ্ববর্তী মহল্লার মসজিদের আজানের আওয়ায শোনা গেলেও কি কুরআন তিলাওয়াত বন্ধ রেখে আজানের জবাব দিতে হবে?

উত্তরঃ আজানের সময় কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করা না জায়েয নয়। তবে এক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে আজান শুরু হলে তিলাওয়াত বন্ধ করে আজানের জবাব দেয়া। (ফাতওয়া হক্কানিয়া:খ ২, পৃ-১৬৩)

২১.বিষয়: ওজু ব্যতিত কুরআন স্পর্শ করার হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ কারো ওজু নেই, আর অবস্থা এরূপ যে, ওজু করার কোন সুযোগও নেই, এমতাবস্থায় কুরআন শরীফ বা কুরআনের পৃষ্ঠা স্পর্শ করা যাবে কি? যদি তা স্পর্শ করা না যায়, তাহলে এক্ষেত্রে করণীয় কি?

উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কোন পবিত্র কাপড়, রুমাল ইত্যাদি ব্যতিত কুরআন শরীফ স্পর্শ করা জায়েয হবে না। (ইমদদুল আহকাম:খ ১, পৃ-২৪১)

২২. বিষয়: মনে মনে কুরআন তিলাওয়াতের ছাওয়াব প্রাপ্তি প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ কুরআন শরীফ মনে মনে তিলাওয়াত করলে ছাওয়াব হবে কী না?

উত্তরঃ মুখে উচ্চারণ করা ব্যতিত শুধুমাত্র মনে মনে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করলেও ছাওয়াব হবে। তবে মুখে উচ্চারণ করে তিলাওয়াত করলে মনে মনে তিলাওয়াত করার তুলনায় ছাওয়াব বেশী হবে। (ইমদাদুল আহকাম:খ ১, পৃ-২৪৬)

২৩. বিষয়: সাজদায়ে তিলাওয়াত আদায়ের হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ সাজদায়ে তিলাওয়াত আদায়ের হুকুম কি? তা কখন আদায় করতে হবে? ভুলবশতঃ অনাদায়ী থেকে গেলে তার জন্য গুনাহ হবে কী না?

উত্তরঃ যদি কোন ব্যক্তি সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করে, তাহলে তার উপর সাজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করা ওয়াজিব হয়। তেমনিভাবে যদি কেউ সাজদার আয়াত শ্রবণ করে তাহলে তার উপরও সাজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করা ওয়াজিব হয়। শ্রবণকারী তা ইচ্ছাকৃত শ্রবণ করুক অথবা অনিচ্ছাকৃত শ্রবণ করুক, উভয় অবস্থায় তার উপর সাজদায়ে তিলাওয়াত আদায় করা ওয়াজিব হবে।

সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করার পর অথবা শ্রবণ করার পর বিলম্ব না করে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি সাজদা করে নেয়া উচিত। সাজদা আদায় করতে বিলম্ব করা মাকরূহ। বিলম্ব করার কারণে যদি ভুলবশতঃ সাজদায়ে তিলাওয়াত অনাদায়ী থেকে যায়, তাহলে ওয়াজিব ছেড়ে দেয়ার গুনাহ হবে।

(আল বহরুরায়িক:খ-২, পৃ-২১০, রদ্দুর মুহতার:খ ২, পৃ-১০৯)

২৪.বিষয়: ওজু ব্যতিত কুরআন শরীফের পৃষ্ঠার সাদা অংশে স্পর্শ প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ ওজু ব্যতিত কুরআন শরীফের পৃষ্ঠার যে অংশে কুরআনের আয়াত লেখা নেই, তা স্পর্শ করা যাবে কী না?

উত্তরঃ না, ওজু ব্যতিত কুরআন শরীফের পৃষ্ঠার যে অংশে কুরআনের আয়াত লেখা নেই, সে অংশও স্পর্শ করা জায়েয হবে না। তবে প্রয়োজনে পবিত্র কাপড় অথবা পবিত্র অন্য কোন বস্তু দ্বারা (ওজু ব্যতিত) সেখানে স্পর্শ করা যাবে। (ফাতওয়া আলমগীর:খ ১, পৃ-৩৯)

২৫.বিষয়: আয়াতবিহীন কুরআনের অনুবাদ প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ মূল আরবী কুরআন ব্যতিত কুরআন শরীফের শুধুমাত্র অনুবাদ লেখা, ছাপানো, প্রচার, ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি জায়েয হবে কী না?

উত্তরঃ না, মূল আরবী কুরআন ব্যতিত শুধুমাত্র অনুবাদ লেখা, ছাপানো, প্রচার,ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদির কোনটিই শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়, বরং এরূপ করা না জায়েয ও হারাম। এ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই গুনাহগার হবে। এর উপর উম্মতের ইজমা সংঘটিত হয়েছে। তবে আরবী কুরআনের আয়াত ব্যতিত এক দুই আয়াতের শুধুমাত্র অনুবাদ লেখা না জায়েয নয়।  (ফাতহুল কাদীর:খ ১,পৃ-২৮৬, রদ্দুল মুহতার:খ১, পৃ-৪৮৬, জাওয়াহিরুল ফিকহ:খ ১, পৃ-৯৭-৯৯, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া:খ৩, পৃ-৫১০)

২৬.বিষয়: বাংলা অক্ষরে লিখিত কুরআন তিলাওয়াতের শরঈ বিধান প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ আমাদের দেশে অনেকে যারা আরবী অক্ষরে লিখিত কুরআন শরীফ পড়তে পারে না তারা বাংলা অক্ষরে লিখিতকুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে। এখন জানার বিষয় হল বাংলা অক্ষরে লিখিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা জায়েয হবে কি না? এবং বাংলা অক্ষরে লিখিত কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার দ্বারা প্রতি হরফে দশটি করে নেকী হবে কি না?

উত্তরঃ কুরআনে কারীম তিলাওয়াতের মাধ্যমে সাওয়াব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য শর্ত হল, তা তাজবীদের নিয়ম-কানুনের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করতে হবে। আর বাংলা অক্ষরে লিখিত কুরআনের দ্বারা বিশুদ্ধভাবে আরবী হরফের উচ্চারণ সম্ভব নয়। কেননা আরবী ভাষায় কয়েকটি হরফ এমন রয়েছে যেগুলোর বাংলা উচ্চারণ একই রকম।সেক্ষেত্রে বাংলায় আরবী ঐসকল হরফগুলো পার্থক্য করা এবং সহীহ মাখরাজ থেকে উচ্চারণ করা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। অথচ সে হরফগুলোর মধ্যে হতে একটির স্থানে অপরটি উচ্চারণ করা হলে অর্থের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য হয়ে যায়, এবং তার অর্থও বিকৃত হয়ে যায়, যা মারাত্মক গুনাহের কারণ হয়ে দাড়ায়। এমনিভাবে কুরআনের অনেক হরফে মদ হয়, অর্থৎ অনেক হরফ একটু লম্বা করে পড়তে হয়, আবার। নেক হরফ লম্বা না করে তাড়াতাড়ি পড়তে হয়। তাজবীদের নিয়ম জানলে আরবী হরফের প্রয়োগ রীতি দেখে এ বিষয়টিঅবগত হওয়া যায়। কিন্তু বাংলায় লিখিত কুরঅন পাঠে এসব মদ ও কসর অর্থাৎ ক্ষেত্র বিশেষে লম্বা ও খাট করে উচ্চারণ করা সম্ভব হয় না। অথচ কুরআনে কারীমে অনেক ক্ষেত্র এরূপ রয়েছে যে লম্বা করা প্রয়োজন এমন স্থানে যদি খাট করা হয়, অথাৎ তাড়াতাড়ি পড়া হয়, তাহলে অর্থের মারাত্মক বিকৃতি ঘটে। তেমনি ভাবে কোন জায়গা এমন রয়েছে যে সেখানে লম্বা না করে তাড়াতাড়ি পড়তে হয়, এরূপ ক্ষেত্রে যদি লম্বা করা হয় তাহলেও অর্থের বিকৃতি ঘটে থাকে। সুতরাং উল্লেখিত বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে বাংলা অক্ষরে লিখিত কুরআন শরীফ পড়া জায়েয হবে না। তিলাওয়াত শুদ্ধ হয় না, তার অর্থের মধ্যে বিকৃতি ঘটে তাই এর দ্বারা নামাযও শুদ্ধ হবে না। অনেক ক্ষেত্রে সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহগার হতে হবে। অতএব যারা বিশুদ্ধ ভাবে কুরআন পড়তে জানে না তাদের উচিত বিশুদ্ধ কুরআন পাঠে সক্ষম কোন কারী সাহেব থেকে সরাসরি কুরআন তিলাওয়াত শিখে নেয়া। আজকাল নূরাণী পদ্ধতিতে অল্প সময়ে সহজে কুরআন শিক্ষা করা সম্ভব। সুতরাং এসব ভুল পদ্ধতির আশ্রয় নেয়ার কোন অর্থ হয় না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ:খ ১,পৃ-৭৭, ইমদাদুল ফাতাওয়া:খ ৪, পৃ-৪৫-৪৭)

২৭.বিষয়ঃ ওজু ব্যতিত কুরআনের আয়াত লেখার হুকুম প্রসঙ্গে।

উত্তরঃ বিনা অজুতে কাগজ হাতে নিয়ে বা কাগজে হাত লাগিয়ে কুরআন শরীফ লেখা জায়েয নেই। তবে যদি কোন জিনিসের উপর কাগজ রেখে তাতে হাত লাগানো ব্যতিত লেখা হয় তাহলে তা মাকরুহের সাথে জায়েয।

(ফাতাওয়া আলমগীরী:খ১, পৃ-৩৯, হাসিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ: ১৪৪,রদ্দুল মুহতার:খ১, পৃ-১৭৫, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া:খ ৩,পৃ-৫২৩)

২৮.বিষয়: ওজু ব্যতিত কুরআন শরীফ সরানোর হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ অজু না থাকাবস্থায় কুরআন শরীফ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরানোর একান্ত প্রয়োজন হলে তা কিভাবে সরাতে হবে।

উত্তরঃ পবিত্র কাপড়, গিলাফ ইত্যাদি দ্বারা ধরে সরাতে হবে।কাপড় গিলাফ ইত্যদি ব্যতিত খালি হাতে সরানো জায়েয হবে না। তবে পূর্বে থেকেই যদি গিলাফ কাপড় ইত্যাদি দ্বারা আবৃত থাকে তাহলে তা অজু না থাকাবস্থায় সরানো যাবে। (আলমগীরী:খ-১, ৩৯, আর্দ্দুরুল মুখতার:খ-১, পৃ-১৭৩)

২৯.বিষয়: তাফসীরুল কুরআন গ্রন্থ পাঠকালে ওজু করার হুকুম প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ কুরআনের তাফসির গ্রন্থ পাঠ করার সময় অজু করা জরুরি কি না?

উত্তরঃ না, কুরআনের তাফসির গ্রন্থ পাঠ করার সময় অজু করা জরুরী না। অজু করা ব্যতিত তা পাঠ করা যাবে। এমনকি তার যে স্থানে কুরআনে কারীমের আয়াত লেখা রয়েছে সে স্থান ব্যতিত অন্য স্থানে হাত দ্বারা স্পর্শ করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে অজু করে নেয়াই উত্তম। উল্লেখ্য এ বিধান ঐক্ষেত্রে হবে যখন তাফসির গ্রন্থে মূল কুরআনের তুলনায় তাফসিরের লেখা বেশী হবে। যদি তাফসির গ্রন্থের তাফসিরের লেখা মূল কুরআনের সমান বা তার থেকে কম হয় তাহলে অজু ব্যতিত তা স্পর্শ করা জায়েয হবে না। (রদ্দুল মুহতার:খ ১, প ৃ-১৭৭,ফাতাওয়া মাহমূদিয়া:খ ৩, পৃ-৫২৩)

৩০.বিষয়: কুরআনের উপর তাফসীর বা হাদীস গ্রন্থ রাখার বিধান প্রসঙ্গে।

প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের উপর হাদীস বা তাফসীর গ্রন্থ রাখা যাবে কি না?

উত্তরঃ না, পবিত্র কুরআনের উপর হাদীস বা তাফসীর গ্রন্থ রাখা যাবে না। ইচ্ছাকৃত রাখলে গুনাহ হবে। যদি এগুলোর একটিকে অপরটির উপর রাখতে হয় তাহলে প্রথমে নীচে হাদিসের কিতাব রাখবে, তার উপর তাফসীর গ্রন্থর রাখবে অতপর সবার উপর কুরআন শরীফ রাখবে। (সূরা হজ্জ: ২৩)

চলমান পোষ্ট

মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।

সর্বশেষ পোস্ট

শীর্ষ লেখক

সর্বাধিক মন্তব্য

বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভিডিও

ক্যাটাগরি