আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. একদা শপথ করে বললেন…..
১। আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রমাযানের রোযা রাখে এরপর শাওয়ালের ছয়টি রোযা রাখে সে সারা জীবন রোযা রাখার প্রতিদান লাভ করবে। -সহীহ মুসলিম; হাদীস ১১৬৪, সুনানে আবূ দাউদ; হাদীস ২৪৩৩।
২। সাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঈদুল ফিতরের পরে যে ব্যক্তি ছয় দিন রোযা রাখবে সে পূর্ণ বছর রোযা রাখার সওয়াব লাভ করবে। যে ব্যক্তি একটি নেকির কাজ করবে সে দশটি নেকির সওয়াব লাভ করবে। -সুনানে ইবনে মাজাহ; হাদীস ১৭১৫।
৩। অন্য বর্ণনায় এসেছে, সাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রমাযানের রোযা রাখলো (এবং শাওয়ালের ছয় রোযা রাখলো সে যেন পুরো বছর রোযা রাখলো। কারণ) এক মাস রোযা রাখা দশ মাস রোযা রাখার সমতুল্য এবং ছয় দিন রোযা রাখা দুই মাস রোযা রাখার সমতুল্য। এটাই হলো পুরো বছর রোযা রাখার তাৎপর্য। -মুসনাদে আহমাদ; হাদীস ২২৪৬৫।
৪। অন্য বর্ণনায় আরো পরিষ্কার এসেছে, সাওবান রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমাযানের রোযা হলো দশ মাস রোযা, আর ছয় দিনের রোযা হলো দুই মাসের রোযা। এ হলো পুরো বছরের রোযা। -সহীহ ইবনে খুযাইমাহ; হাদীস ২১১৫।
ছয় রোযায় পুরো বছরের রোযার পরিসংখ্যান
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. একদা শপথ করে বললেন, আমি যতো দিন বেঁচে থাকবো ততো দিন দিনের বেলা রোযা রাখবো এবং রাতের বেলা নামায পড়বো। তখন তাঁকে লক্ষ্য করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এটা পারবে না। বরং তুমি রোযা রাখো এবং রোযা ভাঙ্গো এবং নামায পড়ো ও ঘুমাও। তুমি মাসে তিনটি করে রোযা রাখো। কারণ এক নেকিতে দশ নেকি লাভ হয়। আর এটাই হলো সারা বছর রাখার তাৎপর্য। -সহীহ বুখারী মাআ ফাতহিল বারী; হাদীস ১৯৭৬।
রমাযানের ত্রিশটি রোযা। আর প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখা হলে এগারো মাসে ৩×১১=৩৩ রোযা। আর প্রতি রোযায় দশ রোযার নেকি। সুতরাং ৩৩×১০=৩৩০ রোযার নেকি হলো। আর রমাযানের ৩০ রোযা। সুতরাং মোট ৩৩০+৩০=৩৬০ দিনে ৩৬০ রোযার প্রতিদান লাভ হলো। তবে এর সাথে রমাযানের ত্রিশ রোযার দশ গুণ বৃদ্ধি করা হলে বছরে ৩৩০+৩০০=৬৩০ টি রোযা রাখার সওয়াব লাভ হবে।
তদ্রূপ শাওয়ালের ছয় রোযা আর রমাযানের ত্রিশ রোযা মোট ৩৬ রোযা হলো। আর প্রতি রোযায় দশ রোযার নেকি লাভ হয়। সুতরাং ৩৬×১০=৩৬০ রোযা। সুতরাং একজন ব্যক্তি যেরূপ রমাযানের রোযা রেখে প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রেখে সারা বছর বা সারা জীবন রোযা রাখার সওয়াব লাভ করে তদ্রূপ সে রমাযানের রোযাসহ শাওয়ালের ছয় রোযা রেখে সারা বছর বা সারা জীবন রোযা রাখার সওয়াব লাভ করে।
ফুকাহায়ে কেরাম বলেছেন, রমাযানের পর শাওয়ালের ছয় রোযা রাখার দ্বারা এক বছর ফরয রোযা রাখার সওয়াব লাভ হবে। নতুবা এক নেকিতে দশ নেকি লাভের বিষয়টি তো নফল রোযার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
শাওয়ালের ছয় রোযা রাখার দ্বারা সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, রমাযানের রোযাগুলোতে ঘটে যাওয়া ত্রুটিগুলোর ক্ষতিপূরণ। কারণ রোযাদারের রোযা পালনের ক্ষেত্রে কম বেশ ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েই যায়। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা ফরযের ত্রুটিগুলোকে নফল দ্বারা সমন্বয় করে দিবেন।
আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন মানুষের আমলসমূহের মধ্য হতে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব হবে। আল্লাহ সব বিষয়ে অবগত হওয়া সত্ত্বেও ফেরেশতাদেরকে বলবেন, আমার বান্দার নামায দেখো তো- সে কি তা পূর্ণ করেছে না অসম্পূর্ণ করেছে। যদি সে পূর্ণ করে থাকে তবে পূর্ণ লিখে দেয়া হবে। আর যদি তাতে কোনো অসম্পূর্ণতা করে থাকে তবে আল্লাহ বলবেন, আমার বান্দার কোনো নফল আমল আছে? যদি তার নফল আমল থাকে তবে তার ফরযের অসম্পূর্ণতাকে তার নফল দ্বারা পরিপূর্ণ করে দাও। এরপর অন্যান্য আমলের ঘাটতিগুলোকেও এ নিয়মে পূরণ করা হবে। -সুনানে আবূ দাউদ; হাদীস ৮৬৪।
মতামত দিন
আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।