কুরআন সম্পর্কে প্রাচ্যবিদদের অভিব্যক্তি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে পৃথিবী হতে নিশ্চিহ্ন করতে অমুসলিমরা কখনো বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি। ইসলামের সূচনালগ্ন হতেই শুরু হয়েছে এ ষড়যন্ত্র, যা অব্যাহত রয়েছে আজও পর্যন্ত। নিজেদের এ হীন চক্রান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা ইসলামের মহানগ্রন্থ কুরআনকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। তারা কুরআন সম্পর্কে বিভিন্ন উদ্ভট উক্তি ও ভিত্তিহীন যুক্তি প্রদর্শন করে এর
কুরআন সম্পর্কে প্রাচ্যবিদদের অভিব্যক্তি
ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে পৃথিবী হতে নিশ্চিহ্ন করতে অমুসলিমরা কখনো বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি। ইসলামের সূচনালগ্ন হতেই শুরু হয়েছে এ ষড়যন্ত্র, যা অব্যাহত রয়েছে আজও পর্যন্ত। নিজেদের এ হীন চক্রান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা ইসলামের মহানগ্রন্থ কুরআনকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। তারা কুরআন সম্পর্কে বিভিন্ন উদ্ভট উক্তি ও ভিত্তিহীন যুক্তি প্রদর্শন করে এর সত্যতা ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের সকল প্রচেষ্টাই নিস্ফল ও ব্যর্থ হয়েছে। আর এরূপই হবে কিয়ামত পর্যন্ত। কারণ কুরআন হচ্ছে মহান আল্লাহর চিরন্তন বাণী, সর্বপ্রকার সন্দেহমুক্ত, সবরকম ত্রুটি বিচ্যুতির উর্ধ্বে। খোলা মন নিয়ে যে কেউই কুরআন অধ্যয়ন করবে ও কুরআন নিয়ে গবেষণা করবে তার সম্মুখেই কুরআনের মর্যাদা-মাহাত্ম্য,অলংকারিত্ব ও অলৌকিকত্বসহ সার্বিক গুণাবলী উম্মোচিত হবে। আর এটা কেবল মৌখিক দাবী মাত্র নয়, বরং বাস্তবতাও তাই। প্রমাণস্বরূপ নিম্নে কুরআন সম্পর্কে সুস্থ চিন্তার অধিকারী অমুসলিম কুরআন গবেষক ও প্রাচ্যবিদদের কয়েকজনের অভিব্যক্তি পেশ করা হল।
অধ্যাপক পামার বিখ্যাত “Introbuetion to the Quran ” নামক গ্রন্থে কুরআন সম্পর্কে লিখেছেন; আজ পর্যন্ত আরবের কোন বিখ্যাত সাহিত্যিকও কুরআনের সমকক্ষ সৌন্দর্যময় কোন গ্রন্থ প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়নি।”
প্রাচ্যবিদ কার্লাইল কুরআন সম্পর্কে বলেন,কুরআনে সাহিত্যগুণ ছাড়া আরো বহুবিধ গুণ রয়েছে। এর ভাষা ও বর্ণনাভঙ্গির নিকট সকল শিল্পকলা ও সাহিত্যের কলাকৌশল নিস্প্রভ। আজ পর্যন্ত দেড় হাজার বৎসর অতিবাহিত হলেও কেউ কুরআনের ভাষার মত আরবী ভাষাকে এমন সার্থকভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়নি। কুরআন শক্তি,সাহস ও ভাবের অভিব্যক্তিতে যে আরবী ভাষা প্রয়োগ করেছে তা নজীরবিহীন।
তিনি আরো বলেন, সর্বতোভাবে কুরআনের নি:স্বার্থপরতা আমাকে তার গুণমুগ্ধ করে।
প্রখ্যাত খৃষ্টান ঐতিহাসিক গীবন তার রচিত “Deelino Ond Fall Of The Roman Empire” নামক গ্রন্থে লিখেছেন, পবিত্র কুরআন আল্লাহ তা‘আলার অদ্বিতীয়তার এক উজ্জল নিদর্শন।
স্যার উইলিয়াম মোর বলেন,পবিত্র কুরআন স্বভাব,প্রকৃতি ও সৃষ্টি জগতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলাকে সর্বোচ্চ সত্ত্বা হিসাবে প্রমাণ করেছে এবং মানব জাতিকে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য ও কৃতজ্ঞতার প্রতি আকৃষ্ট করেছে।
অধ্যাপক এডওয়ার্ডজি ব্রাউন বলেন, আমি যতই কুরআন সম্পর্কে গবেষণা করি এবং এর অন্তর্নিহিত ভাবধারা ও তাৎপর্য অনুধাবনের চেষ্টা করি ততই আমার মনে এর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান বৃদ্ধি পায়।
মি. এমানুয়েল ডি এনশ বলেন,সমগ্র ইউরোপ যখন গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল,তখন সেখানে কুরআনের আলোকরশ্মি প্রবেশ করে এবং তা গ্রীসের মৃত জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তাকে সঞ্জিবনী শক্তি দান করে।
ড. জনসন বলেন,কুরআনের বক্তব্য এত সময়োপযোগী ও সহজবোধ্য যে, মানবজাতি তা সহজেই গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদেরকে দেখে দেখে সমগ্র দুনিয়া কুরআনকে উপেক্ষা করছে।
অধ্যাপক আর. এ. নিকলসন বলেন, কুরআনের প্রভাবে আরবী ভাষা সমগ্র মুসলিম জাহানের মহিমান্বিত ভাষায় পরিণত হয়েছে এবং কুরআনই কন্যা সন্তান জীবন্ত প্রোথিত করার ন্যায় জঘন্য রীতির চির অবসান ঘটিয়েছে।
মি. এইচ. এস. লিভার বলেন,পবিত্র কুরআনের শিক্ষা থেকেই দর্শন ও বিজ্ঞান উৎসারিত হচ্ছে এবং এতে উন্নতির এমন স্বর্ণযুগের সূচনা করেছে যে, সম সাময়িক ইউরোপের বড় বড় সা¤্রাজ্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানকেও তা ম্লান করে দিয়েছে।
মি. এ. ডি. মবিল বলেন, ইসলামের শক্তি কুরআনেই নিহিত। কুরআন হচ্ছে আইনের উৎস ও মানবাধিকারের শাশ্বত সনদ।
মি. স্টেনলি লেনপুল বলেন, একটি বিশ্বজনীন ধর্মে যেসব উপাদান থাকা প্রয়োজন, তা কুরআনে রয়েছে এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যক্তি সত্ত্বায় তা সমুজ্জল।
এইচ. জি. ওয়েলস বলেন, কুরআন মুসলমানদেরকে এমন গভীর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে,যা বর্ণ,বংশ ও ভাষার সীমারেখা স্বীকার করে না।
পাদ্রী ভলা বসান ডিডি বলেন, কুরআন আনীত ধর্ম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম।
গড ক্লিহেংস বলেন, কুরআন দরিদ্রের হিতাকাঙ্খী ও বন্ধু। আর ধনীদের অবিচারের কঠোর সমালোচক।
ডিন স্টোলী বলেন, কুরআনের আইন বাইবেলের আইনের চেয়ে অধিক প্রভাবশালী। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
সুবিখ্যাত জার্মান দার্শনিক গ্যাটে বলেন, কুরআন প্রথমত আমাদের মনে এক বিজাতীয় বিতৃষ্ণা সঞ্চার করে। কিন্তু এরপর অতি শীঘ্রই আমাদেরকে তার প্রতি আকর্ষণ করে নেয়। আমাদের হৃদয়-মনে আলো সম্প্রসারণ করে। অবশেষে তাকে সম্মান করতে আমাদেরকে বাধ্য করে। তিনি আরো বলেন,মত ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী এর রচনাবলী অত্যন্ত জোড়ালো, উচ্চ ও প্রভাবশালী। আমরা তা যতই পাঠ করি ততই তার প্রতি আকৃষ্ট হই এবং আমাদের অন্তরে তার প্রভাব অনুভব করি। একগুঁয়েমি পরিত্যাগ করে স্বচ্ছ চিন্তা, সুস্থ মস্তিস্ক ও খোলা মন নিয়ে যে কেউই কুরআন পাঠ করবে তার নিকটই কুরআনের অলৌকিকত্ব নিশ্চিতভাবে প্রকাশ পাবে এবং কুরআনের সত্যতার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হবে। তবে নাজাতের জন্য এই মৌখিক স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়; বরং কুরআন যে আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত মহানগ্রন্থ এর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস ও এতে বর্ণিত বিধানাবলীর যথার্থ অনুসরণ অপরিহার্য।
বিখ্যাত আরবী-ইংরেজী অভিধান প্রণেতা ড.স্টঙ্গাস বলেন, আমরা একথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, পৃথিবীতে কুরআন সমতুল্য কোন গ্রন্থই প্রণীত হয়নি। মানবতার ইতিহাসের অনুসন্ধিৎসু প্রত্যেক ধীর মস্তিস্ক ও সংযত স্বভাব ব্যক্তির পক্ষেই এটা একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় কীর্তি।
কুরআনের শক্তি সম্পর্কে ইম্যানয়েল ডাস বলেন, একটি পুস্তক যার সাহায্যে আরবরা মহান আলেকজান্ডার অপেক্ষা পৃথিবীর বৃহত্তর ভূভাগ জয় করতে সমর্থ হয়েছিল। রোমের যত শতক লেগেছিল তার জয় নিশ্চিত করতে, আরবের লেগেছিল তত দশক। এরই সাহায্যে সকল সেমিটিক জাতির মধ্যে কেবল আরবরাই এসেছিল ইউরোপের রাজারূপে। যেখানে ফিনিশিয়রা এসেছিল বণিকরূপে, আর ইয়াহুদীরা এসেছিল পলাতক কিংবা বন্দীরূপে।
উপরে কুরআন সম্পর্কে বিভিন্ন অমুসলিমের প্রশংসাসূচক উক্তি উদ্ধৃত হল। তবে কুরআন সম্পর্কে এসব উক্তি তখনই তাদের জন্য ফলদায়ক হবে, যখন তারা কুরআনের প্রতি ঈমান আনবে। আর এটা নিশ্চিত সত্য যে, কুরআনের প্রতি ঈমান ব্যতিরেকে এসব প্রশংসা কোন ফল বয়ে আনবে না।
মতামত দিন
আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।