কুরআন কারীম আল্লাহর কালাম। আরবী অনারবী সকল ভাষার মানুষের হিদায়াতের জন্য বিশ্ব নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দীর্ঘ তেইশ বছরে আরবী ভাষা ও বর্ণে নাযিল করেছেন এ কালাম। সহজ করে দিয়েছেন এর পঠনপাঠন। কুরআনে তিনি ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: অবশ্যই নিশ্চিতভাবে আমি কুরআনকে (তিলাওয়াত ও বুঝার জন্য) সহজ করে দিয়েছি। অতঃপর আছে কি কেউ
কুরআন কারীম আল্লাহর কালাম। আরবী অনারবী সকল ভাষার মানুষের হিদায়াতের জন্য বিশ্ব নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দীর্ঘ তেইশ বছরে আরবী ভাষা ও বর্ণে নাযিল করেছেন এ কালাম। সহজ করে দিয়েছেন এর পঠনপাঠন। কুরআনে তিনি ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: অবশ্যই নিশ্চিতভাবে আমি কুরআনকে (তিলাওয়াত ও বুঝার জন্য) সহজ করে দিয়েছি। অতঃপর আছে কি কেউ চিন্তাশীল বা উপদেশ গ্রহণকারী? সূরা কামার:১৭,২২,৩২,৪০। এর সার্বিক হিফাযাতের দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন স্বয়ং রাব্বুল আলামীন। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, অর্থানুবাদ: এর (কুরআন) সংরক্ষণ ও কিরাআতের দায়িত্ব আমারই। সূরা কিয়ামাহ:১৭। তিনি আরও ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: ‘অবশ্যই আমি যিক্র (কুরআন) নাযিল করেছি এবং অবশ্যই আমি এর হিফাযাতকারী। সূরা হিজ্র:৯। তাই কখনও কুরআনের তিলাওয়াতে ও উচ্চারণে বিকৃতি ঘটেনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে এর কোনই বিকৃতি ঘটবে না। অনারবী ভাষা ও বর্ণে কুরআন লিখনের সূচনা কুরআন অবতীর্ণের সময়কাল থেকে এ পর্যন্ত বিজ্ঞ আলিমগণের কেউ একমাত্র আরবী বর্ণে উসমানী লিখন পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতি এমনকি প্রচলিত আরবী লিখন পদ্ধতিতেও কুরআন লেখাকে বৈধ বা জায়েয বলেননি। অন্যান্য ভাষার বর্ণে তো কুরআন লেখা কল্পনাই করা যায় না। কুরআন কারীম বিজয়ী বেশে দেশে দেশে প্রবেশ করে। ছড়িয়ে দেয় তাওহীদ রিসালাত ও আখিরাতের নূরের পরশ। জয় করে নেয় মানুষের মন। আর তারই বরকতে বিশ্বের বহু দেশে আরবী ভাষা ও হরফে লেখালেখি প্রচলিত হয়। জনগণ কুরআনকে আপন করে নেয় ও আত্মস্থ করে নেয় তার ভাষা ও হরফকে। অথচ তারাও ছিল আমাদের মতই অনারব। তাদেরও প্রয়োজন ছিল স্থানীয় ভাষা ও হরফে কুরআন লেখার। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত তো এমনটি হয়নি। কখন থেকে এবং কোথায় অনারবী ভাষা ও বর্ণে কুরআন লিখনের সূচনা হয় এ প্রসঙ্গে যতটুকু জানা যায় তাতে দেখা যায় খিলাফাতে উসমানিয়ার পতনের পর তুরস্কে সর্ব প্রথম পাশ্চাত্যবাদীদের দোসর ও ত্রুীড়নক মুস্তফা কামাল সংস্কারের নামে এর সূচনা করে। কামাল আতাতুর্ক সরকারীভাবে ইসলামী চিন্তা চেতনা ও তাহযীব তামাদ্দুনের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়। ঐ ব্যক্তিটিই সর্বপ্রথম আরবী ভাষার বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। আরবী ভাষা ও হরফ নিষিদ্ধ করে তার পরিবর্তে ল্যাটিন বর্ণে কুরআন লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ জারি করে। এভাবে শুরু হয় অন্য ভাষার বর্ণে কুরআন লিখনের মাধ্যমে কুরআন বিকৃতির অপপ্রয়াস। এটা তার কুরআন চর্চা বা তিলাওয়াতের সুবিধার জন্য ছিল না। তার এ পদক্ষেপ ছিল ইসলামের প্রতি সম্পূর্ণ হিংসা প্রসুত। ইসলামের অন্যান্য শি‘আর (ঐতিহ্য) যেমন দাঁড়ি রাখা, নারীদের হিজাব ও ইসলামী পোষাক পরিচ্ছদ এবং আরবী ভাষা ও হরফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিধি নিষেধ আরোপের মাধ্যমে সে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ধ্বংসের কার্যক্রম শুরু করে। সেগুলোর একটি ছিল আরবী বর্ণমালার পরিবর্তে ল্যাটিন বর্ণে কুরআনের প্রতিবর্ণায়ন। এর প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপি খিলাফত আন্দোলন শুরু হলেও তাকে থামানো যায় নি। তবে কুরআনের প্রতিবর্ণায়নসহ তার সংস্কারগুলো কেউ মেনে নেয় নি। কুরআনের তিলাওয়াত হতে হবে সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে। কেউ কোনদিন কল্পনাও করেনি যে, সহজীকরণের নামে কখনও কুরআনের প্রতিবর্ণায়ন হবে। পরবর্তিতে নিখিল ভারতে হিন্দী, নাগরী, গুজরাটি ও তামিল বর্ণে কুরআন লিখনের বিষয়টি সামনে আসে। তখন ভারতীয় আলিমগণের প্রচন্ড বিরোধিতা করায় তা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সম্ভবত সত্তরের দশকে বাংলা উচ্চারণে কুরআন প্রতিবর্ণায়নের মাধ্যমে নতুনভাবে শুরু হয় উচ্চারণ কেন্দ্রিক কুরআন বিকৃতির গুরুতর এ ফিৎনা। গবেষণা ও খোজ খবর নিয়ে দেখা যায় শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয় দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপ ও আফ্রিকার কোন কোন দেশেও আঞ্চলিক বর্ণে কুরআন প্রতিবর্ণায়নের নামে কুরআন বিকৃতির অপপ্রয়াস শুরু হয়। বাংলাদেশে কুরআনের বাংলা প্রতিবর্ণায়ন তারই একটি অংশ মাত্র। ইংরেজী উচ্চারণে কুরআন এর সাথে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ডিজিটাল কুরআনের ওয়েব সাইট খোলা হয়েছে। সেখানে মূল আরবীর সাথে সাথে বাংলা ও ইংরেজী বর্ণমালায় কুরআনের প্রতিবর্ণায়ন দেয়া হচ্ছে। খোজ নিয়ে জানা যায়, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় আলিমগণের মতামত গ্রহণ করেছে। তারা নাকি বাংলা ইংরেজী প্রতিবর্ণায়নকে কুরআন তিলাওয়াতের সহায়ক (?) হিসাবে উল্লেখ করে এর পক্ষে মত দিয়েছেন। পরবর্তি আলোচনায় প্রতিবর্ণায়ন তিলাওয়াতের সহায়ক না বিকৃতির সহায়ক তা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হবে। সার কথা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় বা বর্ণে কুরআন লিখন ইতিপূর্বে কোথাও শুরু হয়নি বা কেউ এ ধরনের চিন্তাও করেনি। ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যখন এর সূচনা হয় তখন থেকেই হক্কানী আলিমগণ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং প্রবন্ধ ও পুস্তিকা রচনা করেন। তাঁরা সবাই এভাবে কুরআন লেখাকে কুরআনের তাহরীফ বা বিকৃতি আখ্যা দিয়ে এটা না জায়েয ও হারাম বলে এক বাক্যে ফাতওয়া প্রদান করেন। এরপর দুঃখজনক হলেও সত্য মুসলমানদের এক শ্রেণীর আলিম ও প্রকাশক এ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়েন। তারা স্থানীয় ভাষায় ও বর্ণে কুরআন লিখনের মাধ্যমে কুরআন লিপিবদ্ধ শুরু করে। এভাবে শুরু হয় অন্য ভাষার বর্ণে কুরআন লিখনের মাধ্যমে কুরআন বিকৃতির অপপ্রয়াস। পরের দিকে বেসরকারী তথা সেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে স্থানীয় ভাষা ও বর্ণে কুরআন লেখার প্রবণতা দেখা যায়। এ দুয়ের মাঝে মৌলিক পার্থক্য হল, প্রথমটি ছিল শাসকদের পক্ষ থেকে আরবী ভাষা ও হরফের প্রতি বিদ্বেষমূলক সরাসরি আঘাত। আর দ্বিতীয়টি হল বেসরকারীভাবে প্রকাশকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কুরআনের খিদমাত ও কুরআন প্রচারের-তাদের ভাষায়-এক মহৎ প্রচেষ্টা। অনারবী বর্ণে কুরআন লেখার কুপ্রভাব দ্বীন সম্পর্কে জানা, কুরআন তিলাওয়াত ও বুঝার ক্ষেত্রে মুসলমানদের আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু সবাই ঝুঁকছে বাংলা উচ্চারণে কুরআনের দিকে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এতে কুরআন তিলাওয়াতের হক আদায় হচ্ছে কিনা এর প্রতি কারো দৃষ্টি নেই। বিভিন্ন প্রকাশক নিজ নিজ ইচ্ছানুযায়ী তথাকথিত প্রতিবর্ণায়নের মাধ্যমে তাদের ভাষায় ‘বাংলা উচ্চারণসহ কুরআন প্রকাশ করছেন। তিক্ত হলেও সত্য এতে যেমন কিছু আলিম (?) প্রতিবর্ণায়নে সরাসরি অংশগ্রহণ করছেন অনুরূপ উচ্চারণ বিশুদ্ধ হওয়ার সার্টিফিকেটও প্রদান করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ৮৫ ভাগ উচ্চারণ বিশুদ্ধ হতে পারে, শতভাগ নয়। অথচ তাঁরা যদি এমনটি না করে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতেন এবং জনগণকে এ বিষয়ে সতর্ক করতেন তাহলে প্রকাশকগণ এককভাবে এমন দুঃসাহস দেখাতে পারত না। এর সুদূর প্রসারী কুপ্রভাব হিসেবে দেখা যায়, ক-লেখালেখিতে নিজ নিজ জ্ঞান অনুযায়ী বাংলা ও ইংরেজী বর্ণে কুরআন প্রতিবর্ণায়নের ব্যবহার। খ-সরকারী ও বেসরকারী পাঠ্য পুস্ককেও দেখা যায় এর ব্যাপক প্রয়োগ। গ-নোট বুক, গাইড, ডায়েরী, রাস্তার ফুটপাত ও বাসে বিক্রির উদ্দেশে প্রণীত বিভিন্ন ধরনের বই, নামায শিক্ষা, পাঞ্জ সূরা, ওযীফা এমনকি বিভিন্ন যান বাহন বাস, ট্রাক, টেম্পো, ইত্যাদিতে কুরআনের আয়াত ও দুআ দরূদের বিকৃত উচ্চরণের ছড়াছড়ি। ঘ-সর্বপরি অমুসলিম তথা ইসলাম বিদ্বেষী মহল কুরআন সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে। সুযোগ পাবে মুসলমানদের মন থেকে কুরআনের আযমাত ও সম্মান মুছে ফেলার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র ফাঁদার। আমার জানামতে পশ্চিমা জগতের কিছু বুদ্ধিজীবী এতে উৎসাহ যোগাচ্ছেন। উদ্দেশ্য, এভাবে বিভিন্ন ভাষার বর্ণে তথাকথিত কুরআনের মাধ্যমে মূল কুরআন থেকে মুসলিম জনগণকে বিচ্যুত করা। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখা ও পড়া যাবে না বাংলা-ইংরেজী তথা অনারবী বর্ণে কেন কুরআন লেখা ও পড়া যাবে না। কারণগুলো সংক্ষিপ্তাকারে এভাবে সাজানো যেতে পারে। ১-এতে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক কুরআনকে সহজ করার ঘোষণা অস্বীকার করা হবে। ২-প্রতি বর্ণায়ন অসম্ভব বিধায় কুরআন লিখনে ও পঠনে উচ্চারণ বিকৃতির দ্বার উন্মুক্ত হবে। ৩-উচ্চরণ বিকৃতির ফলে নিশ্চিত অর্থ বিকৃতি ঘটবে। ৪-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ে বিভিন্ন ভাষাভাষী সাহাবীগণের উপস্থিতি সত্বেও ও পরবর্তী প্রয়োজনকে সামনে রেখে প্রচলিত ভাষা ও বর্ণে কুরআন লিখা হয়নি। ৫-খুলাফা রাশিদূনের যুগে ইসলামী বিশ্বের বিস্তৃতির ফলে অনারব মুসলিমদের প্রয়োজনেও তাদের স্থানীয় ভাষা ও হরফে কুরআন লিখা হয়নি। ৬-অন্য বর্ণে কুরআন লিখার অনুমতি দেয়া হলে আল্লাহর কিতাব- আল্লাহর পানাহ -মানুষের হাতে পরিণত হবে খেলনার বস্তুতে। ৭-সৃষ্টি হবে বিভিন্ন ভাষার-এমনকি একই ভাষার-উচ্চারণে কুরআন নামের বিচিত্র গ্রন্থের, যেগুলোর একটির সাথে অন্যটির কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। ৮- দুশমনদের জন্য কুরআনে অপবাদ দেয়ার মহা সুযোগ সৃষ্টি হবে। ৯-আরবীতে কুরআন তিলাওয়াত অসাধ্য কিছু নয়। ১০-সৃষ্টি হবে বর্ণিক ও উচ্চারণিক নানান জটিলতা, বিভ্রাট ও সমস্যা। কুরআন কারীম কেন একমাত্র আরবী বর্ণেই লিখতে ও পড়তে হবে ক. আরবী ভাষা ও বর্ণেই কুরআন কারীম নাযিল করা হয়েছে নিঃসন্দেহে পৃথিবীতে প্রচলিত আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় সকল ভাষাই আল্লাহর মহা নেয়ামত ও মহান দান। তবে এর মাঝে আরবী ভাষা প্রাঞ্জল ও সর্বত্তোম। তাই সকল ভাষার স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা এ ভাষাকেই তাঁর নাযিলকৃত সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী গ্রন্থ আল কুরআনের জন্য নির্বাচন করেছেন। কুরআন কারীম আরবী ভাষা ও বর্ণে নাযিল করা হয়েছে মর্মে আল্লাহ তা‘আলা এগারোটি আয়াত নাযিল করেছেন। যেমন, তিনি ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: “সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় শু‘আরা:১৯৫। তিনি আরও ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: ‘অবশ্যই আমি কুরআন নাযিল করেছি আরবী ভাষায়”। ইউসুফ:২। ইবন ফারিস (মৃ: ৩৯৫ হিজরী) বলেন, অবশ্যই এর বর্ণগুলো সেই নামগুলোর অন্তর্ভুক্ত যেগুলো আল্লাহ আদমকে শিখিয়েছিলেন” অতএব এর বর্ণগুলোর উচ্চারণ বিকৃত হয় এমন প্রতিবর্ণায়ন কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমনটি করা হলে প্রকারান্তরে একথাই বুঝানো হবে যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য কঠিন ভাষা ও বর্ণে কিতাব নাযিল করেছেন। (আল্লাহর পানাহ)। খ. উচ্চারণ বিকৃতিতে অর্থ বিকৃত হতে বাধ্য কুরআনী শব্দাবলীর উচ্চারণ বিকৃতি নিশ্চিত অর্থ বিকৃতি ঘটায়। কুরআন আরবী ভাষা ও বর্ণে নাযিল হয়েছে। তাই আরবী বর্ণেই কুরআন লিখিত হতে হবে। অন্য কোন ভাষা বা বর্ণে নয়। অন্য ভাষা বা বর্ণে লিখিত হলে বর্ণিক, উচ্চারণিক ও অর্থ বিকৃতির কারণে তা কুরআন হিসেবে গণ্য হবে না। বিকৃত তিলাওয়াতে সাওয়াবের পরিবর্তে অবশ্যই গুনাহ হবে। গ.সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত আলিমগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরবী বর্ণে গঠিত শব্দ ও অর্থের সমষ্টি কুরআন। সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণ কুরআন কারীমের এক অবিচ্ছেদ্দ অংশ। সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে অন্তরায় সৃষ্টিকারী অন্য কোন বর্ণে ও পন্থায় কুরআন লিখা যাবে না। অতএব সঠিক ও বিশুদ্ধ উচ্চারণের প্রয়োজনেই একমাত্র আরবী হরফ ও বর্ণেই কুরআন লিখতে ও পড়তে হবে। ঘ. উসমানী লিখন পদ্ধতির অনুসরণ সাহাবা ও আইম্মায়ে কিরামের সর্বসম্মত ইজমা অনুযায়ী উসমানী লিখন পদ্ধতিতে কুরআন লিখা ওয়াজিব। একমাত্র আরবী হরফেই এ পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব। অনারবী বর্ণে এ পদ্ধতিতে কখনই কুরআন লিখা যাবে না। ঙ. কুরআন কারীমের তিলাওয়াতে রূহানিয়্যাত কুরআন কারীমের তিলাওয়াতে রূহানিয়্যাত প্রাপ্তির জন্যই আরবী হরফে কুরআন লিখতে হবে। অন্যথায় বিকৃত উচ্চারণে কুরআন পাঠে সাধারণ মুসলিমের অন্তর থেকে কুরআনের আযমাত ও রূহানিয়্যাত উঠে যাবে। কাংখিত ও গ্রহণযোগ্য তিলাওয়াত কুরআন নাযিল করা হয়েছে তারতীলের সাথে তিলাওয়াত ও আমল করার জন্য। তিলাওয়াত হলো কাংখিত এক ইবাদাত যা সালাতের অন্যতম একটি রুকন। কুরআনই একমাত্র আসমানী গ্রন্থ যা না বুঝে তিলাওয়াত করলেও তার প্রতিটি হরফ উচ্চারণে দশ দশটি নেকী। তাই তিলাওয়াত হতে হবে সহীহ ও উচ্চারণিক বিকৃতমুক্ত। নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে পড়ে দেখিয়েছেন কিভাবে আল্লাহর পছন্দনীয় তিলাওয়াত করতে হবে। সাহাবা কিরাম রাসূলের অনুকরণে তাঁদের ছাত্রদের শিখিয়েছেন কুরআন তিলাওয়াত পদ্ধতি। এসব কিছুই অকাট্যভাবে প্রমাণ করে সহী-শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত ফরযে আইন। এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামীন নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তারতীল অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াতের সরাসরি নির্দেশ প্রদান করেন, অর্থানুবাদ: সুস্পষ্ট তারতীলের সাথে ধীরে ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করুন। সূরা মুয্যাম্মিল : ৪। তারতীলের অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে রাগিব ইসফাহানী বলেন, সহজ ও সঠিকভাবে মুখ হতে শব্দ উচ্চারণ করা। ইবন মানযূর বলেন, কিরাআতে তারতীল হলো, ধীরে সুস্থে পড়া এবং হরূফ ও হারাকাতের স্পষ্ট উচ্চারণ করা। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তারতীলের ব্যাখ্যায় বলেছেন, হরফসমূহের যথাযথ সুন্দর উচ্চারণ ও বিরাম স্থল সম্পর্কে জ্ঞানার্জন হল তারতীল নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতেন এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন, হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কুরআন পাঠ কেমন ছিল ? উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাঁর পড়া ছিল টানা টানা। এরপর তিনি নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণে بسم الله الرحمن الرحيم তিলাওয়াত করেন। তিনি بسم الله টেনে পড়েন। الرحمنএ দীর্ঘ করেন। الرحيم টেনে পড়েন। ইমাম তিরমিযী ইয়ালা ইবন মামলাক হতে একটি বর্ণনায় বলেন, তিনি উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তিলাওয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণে কিছু আয়াত তিলাওয়াত করে শোনান। তিনি এমন তিলাওয়াত করেন যার প্রতিটি হরফ ছিল স্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। একবার তিনি এক ব্যক্তিকে কুরআনের আয়াত إِنَّمَا الصَّدَقتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسكِينِ পড়তে শুনলেন। কিন্তু সে তাড়াতাড়ি পড়ে গেল। অর্র্র্থাৎ لِلْفُقَرَاءِ শব্দটিতে মাদ্দ করেনি (অর্থাৎ: রা হরফ টেনে পড়েনি)। তখন ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এভাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে পড়াননি। লোকটি বলল, তাহলে হে আবূ আবদির রহমান! তিনি আপনাকে কিভাবে পড়িয়েছেন ? তখন ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আয়াতটি পড়লেন এবং لِلْفُقَرَاءِ শব্দটিতে মাদ্দ করলেন (অর্থাৎ: রা হরফ টেনে পড়লেন)। এরপর বললেন, নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে আমাকে পড়িয়েছেন। উল্লিখিত আয়াত, হাদীস ও সাহাবীর বর্ণনানুযায়ী বিশুদ্ধ ও তাজওয়ীদ অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াত ফরযে আইন। আর তাই পরবর্তীতে ইলমুল ক্বিরাআতের ইমামগণও এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাজওয়ীদের নিয়ম কানুন অনুযায়ী অবশ্যই কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। হাফেয ইবনুল জাযারী বলেন, নিঃসন্দেহে যেভাবে উম্মতের উপর কুরআন বুঝা ও তার বিধিবিধান মেনে চলার মাধ্যমে ইবাদাত ফরয তেমনিভাবে কুরআনিক শব্দাবলী ও হরফসমূহের ঠিক সেভাবে বিশুদ্ধ উচ্চারণও (অর্থাৎ তিলাওয়াত) ফরয, যেভাবে ক্বিরাআতের ইমামগণ বর্ণনা পরম্পরায় আরবী নাবীর দরবার হতে লাভ করেছেন। কোন অবস্থাতেই তার বিরোধিতা করা যাবে না এবং এটা বাদ দিয়ে অন্যটাও গ্রহণ করা যাবে না মুহাম্মদ মাক্কী ইবন নাস্র বলেন, ‘নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ হতে আমাদের যুগ পর্যন্ত উম্মাতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল তাজওয়ীদ সহকারে অর্থাৎ বিশুদ্ধ তিলাওয়াত ওয়াজিব। এ ব্যাপারে তাদের কেউ কখনো দ্বিমত পোষণ করেননি। আর এটা সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী একটি দলীল। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখা ও পাঠের সমস্যা প্রথমতঃ প্রতিবর্ণায়ন সমস্যা আরবী হরফের প্রতিবর্ণায়ন সমস্যাই প্রকট সমস্যা। এর সমাধানকল্পে বিভিন্ন সময় গবেষণা করা হয়েছে। তবে সর্বসম্মত কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় নি। তাই প্রতিবর্ণায়ন সমস্যা থেকেই গেছে। আরবী হরফ সংখ্যা উনত্রিশটি। এগুলোর মধ্যে চৌদ্দটি বর্ণ রয়েছে যেগুলোর প্রতিবর্ণায়ন অন্য কোন ভাষায় সম্ভব নয়। ث، ح ، خ ، ذ ، ز ، ص ، ض ، ط ، ظ ، ع ، غ ، ق ، و ، ي । যেমন, প্রাথমিকভাবে আরবী পাঁচটি বর্ণের (ج ، ذ ، ز، ض ، ظ ) জন্য একটিমাত্র বাংলা বর্ণ (জ) ব্যবহার করা হত। পরবর্তীতে এগুলোর জন্য বাংলা তিনটি বর্ণের ব্যবহার শুরু হয়। (ذ، ز ، ظ) এর জন্য (যা), (ج) এর জন্য (জ) ও (ض) এর জন্য (দ)। অথচ (দ) আরবী (د) এর হুবহু প্রতিবর্ণ। এখন আবার (ض)-এর জন্য ব্যবহার শুরু হয়েছে বাংলায় য বা জ বা দ। অনুরূপ আরবী তিনটি হফর (ث ، س ، ص) এর জন্য বাংলা একটি বর্ণ (স) প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে তা দটিতে উন্নীত হয়। (ث) এর জন্য (ছ বা স) ও (س ، ص) এর জন্য (স)। (غ) – এর জন্য (গ)। (ع)- এর জন্য যবর যের পেশ ভেদে (আ, ই, উ) ব্যবহার হয়। তাছাড়া আরবী দু’টি হরফের জন্য রয়েছে বাংলা একটি বর্ণ। যেমন, (ه ، ح) এর জন্য (হ), (ق ، ك) এর জন্য (ক), (ت ، ط) এর জন্য (ত)। এখানে কেউ কেউ বফলা যোগে দু’টি হরফের মাঝে পার্থক্য করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন বটে। এখানে (ه) এর জন্য (হ) (ت) এর জন্য (ত) (ك) এর জন্য (ক) ঠিক আছে। কিন্তু (ق ، ط ، ح) এর জন্য বাংলায় কোন প্রতিবর্ণ নেই। অনুরূপ (ي ، و) এর জন্য কোন প্রতিবর্ণ খুজে পাওয়া যায় না। মজার ব্যাপার হলো তাও এগুলো আবার সর্বসম্মত নয়। অর্থাৎ যার যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যবহার করেছে। এগুলোর কোনটিই সঠিক উচ্চারণ নয়। যার যার খেয়াল খুশিমত এগুলোর প্রতিবর্ণ দিয়ে লিখিত কুরআনিক শব্দাবলী বিকৃত হতে বাধ্য। ইংরেজী বর্ণ ছাব্বিশটি যা আরবী হরফ সংখ্যা হতে কম। অতএব নিঃসন্দেহে ইংরেজীতে আরবীর প্রতিবর্ণায়ন যে সম্ভব নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তা ছাড়াও আরবীতে এমন কিছু হরফ রয়েছে যার প্রতিবর্ণায়ন ইংরেজীতে একেবারেই অসম্ভব। আরবী কোন কোন হরফের জন্য ইংরেজীতে ব্যবহৃত হয় দু’টি বর্ণ। মাখরাজ ও গুণাবলীতে এগুলোর মাঝে রয়েছে আকাশ পাতাল ফারাক। যেমন, (د ، ض) – এর জন্য (উ)। (ث ، س ، ص) এর জন্য (ঝ)। (ه ، ح) – এর জন্য (ঐ)। (ج، ذ ، ز ، ض، ظ) – এর জন্য (ঔত)। (ش) – এর জন্য (ঝঐ)। (ث)- এর জন্য (ঞঐ)। (خ) – এরজন্য (কঐ)। (ق) এর জন্য (ছ)। (ت) এর জন্য (ঞ)। (ي ، و) এর জন্য কোন বরাদ্দ নেই। ঘ. বর্ণিক বিকৃতিতে উচ্চারণিক বিকৃতি হতে বাধ্য। বিকৃত উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত জায়েয নেই। যেমন আরবী একটি শব্দ। একাধিক বাংলা উচ্চারণ। অথচ সঠিক উচ্চারণে এর কোনটিই শুদ্ধ নয়। যেমন, رمضان=রমজান, রামাদান, রমযান, রামাযান, صالح = সালেহ, ছালেহ, سلام = সালাম, ছালাম ثالث =সালিস, ছালিছ। ব্যক্তি পর্যায়েও চলে এ সম্পর্কে প্রচুর গবেষণা। এদের মধ্যে রয়েছেন ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক প্রমুখ। কিন্তু সর্বসম্মত কোন সিদ্ধান্তে কেউ উপনীত হতে পারেননি। ফলে অবস্থা যা দাঁড়ায় এ, টি, এম, ফাখরুদ্দীনদের ভাষায়, ‘আরবী হরফ সমূহের বাংলা প্রতিবর্ণায়ন বা অনুলিখনের ক্ষেত্রে যেহেতু কোন সুষ্ঠু ও স্বীকৃত নীতিমালা নেই তাই এক এক বইতে এক এক রকমভাবে লেখা থাকে। যদিও ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক প্রমুখ এ বিষয়ে লিখেছেন এবং তৎপরবর্তীতেও অনেকে আলোচনা করেছেন, কিন্তু এ সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং দ্বিধা-সন্দেহ আরো বেড়ে গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুসৃত নীতি রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটির নীতির সাথে বিসদৃশ্য, আবার বাংলা একাডেমীর অভিধানের সাথে অন্যান্য বইয়ের নীতি মেলে না। আর এতে করে শিক্ষার্থী ও সাধারণ পাঠক বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এমনকি মাদ্রাসা শিক্ষিত অনেক লোকও তা বুঝে উঠতে পারে না। যে কোন ভাষাকে বুঝতে হলে অবশ্যই তার নিজস্ব ভাবধারা ও স্বকীয়তা অক্ষুণ্নরেখে সেই আলোকেই বিচার বিশ্লে-ষণ করতে হবে। এমন কোন পন্থা বা পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে না যাতে করে ভাষার বিকৃতি ঘটে এবং ভাষা তার আপন ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলে। প্রতিবর্ণায়নের ক্ষেত্রে ধ্বনিই হবে একমাত্র বিচার্য। কারণ, বর্ণ হরফ এগুলো সেই ধ্বনির প্রতীক হিসাবেই নির্ধারিত। ড. আব্দুল হাই বলেন, ধ্বনিবিজ্ঞানীদের কাছে ধ্বনির অক্ষর বা প্রতীক বড় নয়, ধ্বনিই সর্বেসর্বা। তাদের মতে যে কোন প্রতীকের সাহায্যেই যে কোন ধ্বনির প্রতিলিপি নির্মাণ করা যায়, তবে সুবিধা-অসুবিধার কথা ভেবে তাঁরা তা করেন না। প্রাচীন সংস্কার এবং অক্ষরের ঐতিহাসিক মূল্যকেই বড় স্থান দিয়ে থাকেন এ প্রসঙ্গে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আরবী শব্দের বানান শুদ্ধির ব্যাপারটি অতীব জটিল। এ জন্য বিভিন্ন ভাষায় প্রতিবর্ণায়নের (ঞৎধহংষধঃরড়হ) ব্যবস্থা রয়েছে। যেহেতু আরবীতে এমন কতক বর্ণ আছে যা আর কোন ভাষায় নেই, তাই উচ্চারণ ও প্রতিবর্ণায়নের বেলায় সহজ সমাধান লাভ করা দুরূহ। তাই দুঃখ পাই যখন দেখি কেউ কুরআনিক বর্ণের প্রতিবর্ণায়নের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। দুঃখ পাই যখন কেউ বলেন, কুরআন মাজীদ নাকি প্রতিবর্ণায়িত উচ্চারণে একা একা নিজে নিজেই পড়া যায়। ভাবতে অবাক লাগে বাংলা সাহিত্যের প্রতিথযশা পন্ডিত সর্বজন স্বীকৃত ভাষা বিশারদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ও ড. মুহাম্মদ এনামুল হক যেটা পারেন নি এখন কিছু মানুষ সে দুঃসাহস দেখচ্ছেন। তারা নিজ নিজ মেধা, চিন্তা ভাবনা দিয়ে জোর করে আরবী বর্ণ প্রতিবর্ণায়নের ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। সত্যিকার অর্থে পৃথিবীর কোন ভাষাতেই উপরে বর্ণিত চৌদ্দটি বর্ণের প্রতিবর্ণায়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই আরবী ভিন্ন অন্য কোন বর্ণেই কুরআন লিপিবদ্ধ করা সম্পূর্ণ অবান্তর, অসম্ভব এবং নিজ মস্তিস্কপ্রসূত প্রতিবর্ণায়নে নিঃসন্দেহে ও নিশ্চিত কুরআনের উচ্চারণ বিকৃতির মাধ্যমে অর্থ বিকৃতি ঘটাবে। দ্বিতীয়তঃ বর্ণিক ও উচ্চারণিক বিকৃতিতে অবশ্যম্ভাবি অর্থ বিকৃতি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্ণিক উচ্চারণিক বিকৃতিতে অর্থ বিকৃতি হতে বাধ্য। কিন্তু কীভাবে ? পাঠকবর্গের অবগতির জন্য এর কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যেমন: মূল আরবী অর্থ ইংরেজী বাংলা আরবী উচ্চারণ অর্থ الحمد সকল প্রশংসা অখঐঅগউট আলহামডু الهمد মৃত্যু, অগ্নি নির্বাপন قل বলুন কটখ কুল كل খাও عليم মহাজ্ঞানী অখওগ আলীম أليم কঠিন যন্ত্রনাদায়ক অতএব এমন বিকৃত অর্থবোধক তিলাওয়াত কি জায়েয বলা যেতে পারে? শুধু কি তাই? কুরআনিক শব্দ مُمَدَّدَةٍ বাংলায়: মুমাদ্দাদাহ, ইংরেজীতে: গঁসধফফধফধয, এর বাংলা উচ্চারণ মুমাড্ডাডাহ। গোল তা-এর ব্যবহার বড়ই জটিল। تَوَّاباً বাংলায়: তাওয়াবা, ইংরেজীতে ঞধিিধনধ, এর বাংলা উচ্চারণ টাওয়াবা। ইংরেজীতে দাল হয়ে গেল ডাল, তা হয়ে গেল টা। তানওয়ীন ও মাদ্দের কোন খবর নেই। তৃতীয়তঃ ইলমুত তাজওয়ীদের প্রয়োগিক সমস্যা কুরআন তিলাওয়াতের সাথে ইলমুত তাজওয়ীদের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। ইলমুত তাজওয়ীদ কুরআন কারীমের অলংকার। ইলমুত তাজওয়ীদ বাদ দিয়ে সহীহ ও বিশুদ্ধ তিলাওয়াত কল্পনাও করা যেতে পারে না। তিলাওয়াতের সাথে রয়েছে মাখরাজ (হরফ উচ্চারণস্থল) পরিচিতি, গুন্নাহ, মাদ্দ ইত্যাদির সম্পর্ক। এগুলো ছাড়া সুন্দর সাবলিল তিলাওয়াত সম্ভব নয়। মাদ্দের হরফ, হারাকাত (যবর, যের, পেশ) নূন সাকিন, তানওয়ীন (দু’যবর, দু’যের, দু’পেশ) সাকিন, তাশদীদ ইত্যাদির প্রয়োগ ছাড়া এগুলো জানার কোন উপায় নেই। গোল তা-র ব্যবহার অন্য কোন ভাষায় দেখা যায় না। ইদগামের আহকাম, লাম ও রা-এর আহকাম ইত্যাদির কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। ওয়াকফ-এর কোন হুকুম মেনে চলা হবে অসম্ভব। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখিত হলে অনাকাংখিতভাবে মূল কুরআনে বর্ণ ও শব্দ সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি পাবে। এক কথায় আরবী হরফ ব্যতিত অন্য কোন ভাষায় ইলমুত তাজওয়ীদের ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্ভব নয়। হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক লিখন নিতিমালা যা রাসমে উসমানী নামে পরিচিত এবং তৎকালীন সময়ের সকল সাহাবী কর্তৃক স্বীকৃত এর প্রয়োগ আরবী হরফ ব্যতিত অন্য কোন বর্ণে কল্পনাই করা যায় না। অনারবী উচ্চারণে কুরআন লিখা ও পড়া হারাম তাই অন্য কোন ভাষায় প্রতিবর্ণায়িত বর্ণমালা দ্বারা লিখিত বা মুদ্রিত কোন কুরআন হতেই পারে না। এ জন্যই দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা ও আলিমগণ আরবী হরফ ছাড়া অন্য কোন বর্ণে কুরআন লিখাকে হারাম বলেছেন। তাই অন্য বর্ণে লিখিত বা মুদ্রিত কুরআন পড়া হারাম হিসেবেই গণ্য। সহীহ-শুদ্ধ তিলাওয়াতের জন্য শিক্ষক প্রয়োজন আরবী ছাড়া অন্য যে কোন বর্ণেই কুরআন প্রতিবর্ণায়িত হোক না কেন নিজে নিজে বা একা একা কখনই বিশুদ্ধ তিলাওয়াত সম্ভব নয়। এর জন্য অবশ্যই কোন না কোন উস্তায বা শিক্ষকের সামনে বসতেই হবে। সঠিক উচ্চারণ নিজে নিজে কখনই সম্ভব নয়। নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুরআন নাযিলের পাশাপাশি সঠিক উচ্চারণের নিমিত্ত হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামকে সঠিক উচ্চারণের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। তিলাওয়াতে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অনুসরণ করতেন। সাহাবীগণও লিখিত কুরআনের উপর নির্ভর করেন নি। তাঁরাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর নিয়োজিত ও নির্ধারিত সাহাবী উস্তাযগণের নিকট সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত শিখেছেন। তাহলে আমরা অনারবী শিক্ষিতরা কীভাবে দাবি করতে পারি যে, প্রতিবর্ণায়িত বাংলা বা ইংরেজী উচ্চারণে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত করতে পারবো? বাংলাকে যদি ইংরেজীতে লিখা হয় বা ইংরেজীকে লিখা হয় বাংলায়, বলতে পারেন এতে একজন বাংলাভাষী বা একজন ইংরেজীভাষী সঠিক উচ্চারণে তা পড়তে বা বলতে পারবেন? বাংলা বা ইংরেজীকে যদি আরবীতে লিখা হয় তাহলে কি কোন আরবীভাষী সঠিক বাংলা বা ইংরেজী উচ্চারণে পড়তে বা বলতে পারবেন? আমাদের ঢাকা আরবীতে হয়ে যাচ্ছে دكا (দাক্কা) বা داكا (দাকা), বাংলাদেশ আরবীতে হয়ে যাচ্ছে بنغلاديش(বাঙ্গালাদেশ) বা بنجلاديش(বাংজালাদেশ)। ইংরেজীতে প্লাষ্টিক আরবীতে হয়ে যাচ্ছে ব্লাস্টিক, টেলিফোন আরবীতে হয়ে যাচ্ছে তালিফোন। আরবীতে طيب বাংলায় হয়ে যাচ্ছে তাইয়েব, তায়্যেব, তায়্যিব, তাইয়্যিব, বলতে পারেন এগুলোর কোন্টি সঠিক? ইংরেজীতে হয়ে যাচ্ছে, (ঞবন,ঞধরবন,ঞধুবন) এর বাংলা উচ্চারণ টাইয়েব…। আরবী ط বর্ণের সঠিক কোন প্রতিবর্ণ আরবী ছাড়া অন্য কোন বর্ণে পাওয়া যাবে কী? অন্যান্য হরফ তো রয়েছে যেমনটি উপরে বর্ণিত হয়েছে-যেগুলোর প্রতিবর্ণায়ন অন্য কোন ভাষায় নেই। আমাদের করণীয় দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশী ভাষা শিখি; এজন্য রয়েছে প্রচুর ব্যবস্থা। এজন্য সময় অর্থ ব্যয়ে আমরা কুণ্ঠিত হই না। কিন্তু আসমানী কিতাব আল্লাহর কালাম যা আমাদের সকলের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য অপরিহার্য এর জন্য আমরা সময় ব্যয় করতে প্রস্তুত নই। বিপুল টাকা খরচ করে কোমলমতি শিশুদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করি। বয়স্করা বিভিন্ন কাজে সময় ব্যয় করি। কিন্তু কুরআন শেখার জন্য একটুও বিচলিত হই না। আল্লাহর কাছে কি জবাব দেব এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই অথচ সালাত আদায় সকল নারী পুরুষের উপর ফরয। আর কুরআনের সহীহ তিলাওয়াত ছাড়া নামায সহীহ হয় না। এ জন্যই আলিমগণ সকল নারী পুরুষের জন্য বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত জানা ফরয বলেছেন। অল্প একটু সময় ব্যয় করলেই কিন্তু বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত শেখা একেবারেই সহজ। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা একাধিকবার বলেছেন, অবশ্যই আমি যিকর (কুরআন)- কে সহজ করে দিয়েছি। অত:পর আছে কি কেউ চিন্তাশীল বা উপদেশ গ্রহণকারী? সূরা কামার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগেও তো অনেক অনারব আজমী সাহাবী ছিলেন। তাদের জন্য তাদের ভাষার বর্ণে কুরআন লিখা হয়নি। এর চাইতেও প্রকট প্রয়োজন ছিল খুলাফা রাশিদূনের যুগে। যখন দিকে দিকে ইসলামী ঝান্ডা বুলন্দ হচ্ছিল। কেউ কি বলতে পারবেন তাদের প্রয়োজনে সেখানে তাদের ভাষায় বা বর্ণে কুরআন লিখা হয়েছিল? পারস্য, ইউরোপ ও আফ্রিকার মুসলমানগণও কখনও এমন উদ্ভট বক্তব্য দেন নি বা নিজেদের ভাষায় কুরআন লিখেন নি। অথচ তারা ছিলেন সে সময়কার নও মুসলিম। ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথেই তাদের উপর সালাত ফরয ছিল। ফরয আদায়ের জন্য তারা বিনা বাক্য ব্যয়ে আরবী হরফেই কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিখেছেন এবং বিশ্বে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয় আফ্রিকা ইউরোপের অনেক এলাকায় স্থানিয় ভাষার পরিবর্তে আরবী ভাষার প্রচলন হয়। তারা যদি সহীহ কুরআন তিলাওয়াত আয়ত্ব করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না? তাই আসুন আমরা সকলেই আরবীতে সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত শিখি। এজন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। ১. সম্মানিত ইমাম/খতীব ও কুরআন গবেষকগণ সাধারণ মুসলিম ভাই বোনদেরকে বাংলা ইংরেজী উচ্চারণে কুরআনের ভুল তিলাওয়াত থেকে বিরত থেকে কুরআন সহীহভাবে তিলাওয়াতের ব্যপারে সচেতন করবেন। ২. যারা কুরআন কারীম সহীহভাবে তিলাওয়াতে অক্ষম তারা অতি দ্রুত বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ৩. সন্তানদের জন্য শিশু বয়সেই কুরআনের সহীহ তিলাওয়াতের ব্যবস্থা করুন। ৪. প্রতিটি মাসজিদে সকালে/দুপুরে ছোটদের জন্য এবং বয়স্কদের জন্য সান্ধকালিন কুরআন তিলাওয়াত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ৫. বয়স্কা মা বোনদের জন্যও কুরআনের সহীহ তিলাওয়াত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখা ও পড়া হারাম বলেছেন যারা ব্যক্তি পর্যায়ে যখনি এ ধরণের কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে তখনই সমসাময়িক আলিমগণ এর বিরোধিতা করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন মাজীদ হিফাযতের জন্য তাঁর বান্দাদেরকে কাজে লাগিয়েছেন। পাশাপাশি বর্তমান সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্থা এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। সবাই এক বাক্যে অনারবী বর্ণে কুরআন লিখাকে হারাম বলেছেন। এরই আলোকে অনারবী হরফে প্রতিবর্ণায়িত তথাকথিত কুরআন পড়াও হারাম হিসাবে গণ্য। তাঁদের গবেষণা, আলোচনা-পর্যালোচনা, সিদ্ধান্ত ও বক্তব্যের বিস্তারিত বিবরণ সূত্রসহ (সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমার লিখিত) আরবী কিতাবে দেয়া হয়েছে। এখানে শুধু তাঁদের নাম উল্লেখ করছি। ১. ইবন ফারিস (মৃত: ৩৯৫ হিজরী) ২. কাযী ইয়ায (মৃত: ৫৪৪ হিজরী) ৩. ফাকীহ আবূ বাকর ইবনুল আরাবী (মৃত: ৫৪৬ হিজরী) ৪. শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (মৃত: ৭২৮ হিজরী) ৫. ইমাম ইবনুল হাজ্জ আবদারী (মৃত: ৭৩৭ হিজরী) ৬. আবূ ইসহাক শাতিবী (মৃত: ৭৯০হিজরী) ৭. বুরহানুদ্দীন যারকাশী (মৃত: ৭৯৪ হিজরী) ৮. জালালুদ্দীন সুয়ূতী (মৃত: ৯১১ হিজরী) ভারত: ৯. ১. হাকীমুল উম্মাত আশরাফ আলী থানবী (মৃত: ১৩৬২ হিজরী) ১০. ২. মুফতী মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী (মৃত: ১৪১৭ হিজরী) ১১. ৩. মুফতী সায়্যিদ আবদুর রাহীম (ভারত) ১২. ৪. মাওলানা সাইয়্যিদ হুসাইন আহমাদ (মাদানী), সদরে মুদাররিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ ১৩. ৫. মাওলানা সাইয়্যেদ আসগার হুসাইন, মুহাদ্দিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৪. ৬. মাওলানা শিব্বির আহমাদ উসমানী, শাইখুল হাদীস ওয়াত তাফসীর, সদরে মুহতামিম, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৫. ৭. মাওলানা মুহাম্মদ তাইয়্যিব, মুহতামিম, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৬. ৮. মাওলানা ই‘যায আলী, মুদাররিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৭. ৯. মুফতী মুহাম্মাদ শফী, ১৮. ১০. সাইয়্যিদ আহমাদ আলী সাঈদ, নায়েবে মুফতী, দারুল ঊলূম, দেওবন্দ। ১৯. ১১. মুহাম্মদ ইদ্রীস কান্দলুভী, মুদাররিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ২০. ১২. মুফতী ফারুক আহমাদ, মুফতী, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ২১. ১৩. মাওলানা বাশীর আহমাদ, মুদাররিস, ফাইয়াদুল ঊলূম মাদ্রাসা, ভারত। ২২. ১৪. মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ, কাযী, মাদরাজ, ভারত ২৩. ১৫. মাওলানা মুহাম্মাদ কাসিম, মুদাররিস, ফাইয়্যাদুল উলূম মাদ্রাসা, ভারত। ২৪. ১৬. শাইখ আদম মুদাররিস, বাকিয়াত সালিহাত মাদরাসা, দীলোর, ভারত। ২৫. ১৬. মাওলানা আস‘আদ মাদানী, সভাপতি, জমিয়তে উলামা হিন্দ দিল্লী, ভারত। বাংলাদেশ ২৬. ১. শাইখ উবাইদুল হক, খতীব বাইতুল মুর্কারম জাতীয় মাসজিদ, ঢাকা। ২৭. ২. শাহ আহমাদ শফী, মহা পরিচালক, জামিয়া ইসলামিয়া মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। ২৮. ৩. মুফতী আহমাদুল হক, বিভাগীয় প্রধান, দারুল ইফতা, হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ ২৯. ৪. শাইখুল হাদীস আল্লামা আযীযুল হক, শাইখুল হাদীস জামিয়া রাহমানিয়া, ঢাকা। ৩০. ৫. মুফতী আবদুর রহমান, মহা পরিচালক, ইসলামিক রিচার্স সেন্টার, বসুন্ধরা ঢাকা। ৩১. ৬. কারী বেলাইত হোসাইন, প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা, নূরানী পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষা, ঢাকা। ৩২. ৭. মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দা‘ঈ ও মুফাসসির, ঢাকা। ৩৩. ৮. মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মাসিক মাদীনা সম্পাদক, ঢাকা, বাংলাদেশ ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, রাবিতাতুল আলামিল ইসলামী, মাক্কা, সৌদী আরব। ৩৪. ৯. মাওলানা কামালুদ্দীন যাফরী, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ৩৫. ১০. শাইখ সায়্যিদ আনওয়ার হুসাইন তাহির জাবিরী মাদানী, খতীব, আন্দর কিল্লা শাহী মাসজিদ, চট্টগ্রাম। সৌদী আরব ৩৬. ১. শাইখ আবদুল আযীয ইবন ‘আবদুল্লাহ ইবন বায, সভাপতি, আললাজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩৭. ২. শাইখ আবদুর রায্যাক ‘আফীফী, সহ সভাপতি, আল লুজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩৮. ৩. শাইখ আবদুল্লাহ ইবন কুউদ, সদস্য, আল লুজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩৯. ৪. শাইখ আবদুল্লাহ ইবন গাদয়ান, সদস্য, আল লুজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৪০.৫. ড. মানে আল জুহানী। মহা সচিব, আন নাদওয়াতুল আলামিয়্যাহ লিশ শাবাবিল ইসলামী, বিশ্ব ইসলামী যুব সংগঠন, (ওয়ামী) রিয়ায, সৌদী আরব। ৪১. ৬. শাইখ আবূ বাকর আল জাযাইরী, ওয়াইয, মাসজিদে নববী ও শিক্ষক, মাদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রিয়ায. সৌদী আরব। ৪২.৮. ড. মুহাম্মাদ আহমাদ র্ফারাখ, জিদ্দা, সৌদী আরব। ৪৩.৯. ড. তালাল উমার বাফাকীহ, কমপ্লেক্স, মহা পরিচালক, আল মুজাম্মাআল ফিকহী (ফিকহ কমপ্লেক্স), মাক্কা মুকাররামাহ, সৌদী আরব। ৪৪.১০. শাইখ আলী আবদুর রহমান হুযাইফী, ক. শিক্ষক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনা মুনাওয়ারা, খ. উপদেষ্টা, মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা, গ. ইমাম ও খতীব মাসজিদে নববী, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৪৫.১১. শাইখ আবদুল আযীয জানদাওয়াল, উপদেষ্টা, হজ্জ ও আওকাফ মন্ত্রণালয় ও প্রধান তত্ত্বাবধায়ক মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৪৬.১২. শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আকীল ইবন সুলাইমান আকীল, সহকারী মহাসচিব মসজিদ বিভাগ, মাক্কা মুর্ক্কারমা সৌদী আরব। মিসর ৪৭.১. শাইখ মুহাম্মাদ রাশীদ রিযা (মৃত:১৩৫৪ হি.) মিসর। ৪৮.২. শাইখ মুহাম্মাদ আবদুল আযীম যুরকানী (মৃত: ১৩৬৭ হি.) মিসর। ৪৯.৩. শাইখ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ দাররায (মৃত: ১৩৭৭ হি.) মিসর। ৫০.৪. শাইখ মুহাম্মাদ শাকির (মৃত: ১৩৭৭ হি.) মিসর। ৫১.৫. শাইখ মাহমূদ আবূ দাকীকাহ, আল আযহার, মিসর। ৫২.৬. ড.আবদুল হালীম মাহমূদ (মৃত: ১৩৯৭ হি.) শাইখুল আযহার, মিসর। ৫৩.৭. শাইখ মুহাম্মাদ গায্যালী (মৃত: ১৪১৬ হি.) মিসর (আমীর আবদুল কাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুসতুনতুনিয়্যাহ, জাযায়ের) ৫৪.৮. শাইখ জাদুল হক (মৃত: ১৪১৭ হি.) শাইখুল আযহার, মিসর ৫৫.৯. শাইখ সায়্যিদ সাবেক (মৃত: ১৪২০ হি.) মিসর, (উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, মাক্কাতুল মুর্কারামাহ, সৌদী আরব)। ৫৬.১০. ড.আবদুল গনী রাজিহী, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিসর। পাকিস্তান ৫৭.১.মুফতী মুহাম্মাদ শাফী (মৃত: ১৩৯৬ হি.) পাকিস্তান। ৫৮.২.শাইখ যাফার আহমাদ উসমানী (মৃত: ১৩৯৪ হি.) পাকিস্তান। কুয়েত ৫৯.১.শাইখ মাশআল মুবারাক সাবাহ, পরিচালক: ইফতা বিভাগ, আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়, কুয়েত। ৬০.২. শাইখ আবদুর রাহমান সাফী। কাতার ৬১.১.শাইখ আবদুল্লাহ ইবন ইবরাহীম আনসারী, মুদীর, ইয়উত তুরাসিল ইসলামী, দোহা, কাতার, মৃত: ১৪১০হিজরী। ৬২.২. ড. ইউসুফ কারযাভী, শরীয়া এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়, কাতার। সিরিয়া ৬৩.১. শাইখ মুহাম্মাদ আলী সাবূনী (সিরিয়া) শিক্ষক, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, মাক্কাহ মুকাররামা, সৌদী আরব)। ৬৪.২. শাইখ আবদুর রায্যাক হালাব, আওকাফ মন্ত্রণালয়, বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, সিরিয়া। ৬৫.৩. শাইখ আবদুর রায্যাক হালাবী, বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, দামেস্ক বিশেষজ্ঞ কারী ও মাশায়েখ পরিষদ, হানাফী মাযহাবের মুফতী। ৬৬.৪. শাইখ আবদুল ফাত্তাহ বাযাম, মহাপরিচালক: মা‘হাদুল ফতহিল ইসলাম, দামেস্ক। জর্ডান ৬৭.১. শাইখ ইউসুফ ইবন আবদুর রাহমান বারকাবী, যারকা, হাশিমী রাজতন্ত্র জর্ডান। ৬৮.২. শাইখ ইযযুদ্দীন আল খাতীব তামীমী, প্রধান মুফতী, আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়, ফাতওয়া বিভাগ, আম্মান, জর্ডান। মৌরিতানিয়া ৬৯.১. শাইখ বাদ্দাহ ইবন বূসিরী (মৃত:১৪৩০হি.) ইসলামিক গণতান্ত্রিক মৌরিতানিয়া। ৭০.২. ড. ইবরাহীম ইবন ইসমাঈল, অফিস প্রধান রাবেতাতুল আলামিল ইসলামী ও মাকতাবুল মা‘হাদুল কুরআনী, নাওয়াকশোত, মৌরিতানিয়া। সুদান ৭১.১.ড. আবদুর রাহীম আলী মুহাম্মাদ, সহকারী পরিচালক, আফ্রিকান ইসলামিক সেন্টার, খারতুম, সূদান। লিবিয়া ৭২.১. শাইখ তাহির আহমাদ যাবী (মৃত:১৪০৬ হি.) মুফতী লিবিয়া। তুরস্ক ৭৩.১. শাইখ লূতফী দোগান, ওয়াকফ প্রধান ও প্রাক্তন ধর্ম বিষয়ক চেয়ারম্যান, গবেষণা সেন্টার, আঙ্কারা, তুরস্ক। ফ্রান্স ৭৪.১. শাইখ মুহাম্মাদ আইয়ুব, সভাপতি: ফ্রান্স মুসলিম কম্যুনিটি। ৭৫.২. শাইখ সালিহ আল আওয়াদ, ইসলামিক এডুকেশন সেন্টার, প্যরিস, ফ্রান্স যুক্তরাজ্য ৭৬.১. শাইখ শরীফ আহমাদ হাফেয, জমইতুল কুরআন, লন্ডন, যুক্তরাজ্য। বেলজিকা ৭৭.১. শাইখ মাহমূদ মুজাহিদ মুহাম্মাদ হাসান, ইফতা, দাওয়াত, ইরশাদ ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, বেলজিকা শাখা। জাযিরা রিনোন ৭৮.১. আহমাদ সাঈদ আনকার, সভাপতি, ইসলামিক সেন্টার, জাযিরা রীনোন। ৭৯.২. শাইখ ফায়সাল মওলুবী, ইসলামী ঐক্য পরিষদ। ৮০.৩. শাইখ ইয়াহইয়া ইবন আলী হাজূরী। বিভন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও সংস্থা ১. আন্তর্জাতিক ইসলামিক শিক্ষা সেমিনার/১৩৯৭ হিজরী, অনুবাদ কমিটি, মাক্কা মুকাররামা, সৌদী আরব। ২. আললাজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩. হাইআতু কিবারিল উলামা (বিশেষজ্ঞ উলামা পরিষদ), সৌদী আরব। ৪. আল আমানাতুল আম্মা, আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা সংস্থা, রিয়ায, সৌদী আরব। ৫. বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, দামেস্ক বিশেষজ্ঞ কারী ও মাশায়েখ পরিষদ। ৬. মা‘হাদুল ফাতহিল ইসলামী, দামেস্ক। ৭. আল আযহার ফাতওয়া বিভাগ, মিসর। ৮. মজলিসে ইলমী (একাডেমী কাউন্সিল) দারুল উলূম দেওবন্দ, ভারত। ৯. দারুর ইফতা, আইন মন্ত্রণালয়, মিসর। ১০. আল আযহার বিশেষজ্ঞ উলামা কমিটি, মিসর। ১১. মাজলিসু ইকরা (বিশেষজ্ঞ আলিমগণের উপস্থিতি), দামেস্ক, সিরিয়া। ১২. শরীয়া এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়। ১৩. আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রনালয়, ফাতওয়া বিভাগ, আম্মান, জর্ডান। ১৪. ইফতা বিভাগ, আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রনালয়, কুয়েত। ১৫. জমিয়তে উলামা হিন্দ, দিল্লী, ভারত। ১৬. আওকাফ মন্ত্রণালয়, বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, সিরিয়া। ১৭. ধর্ম বিষয়ক বিভাগ, আঙ্কারা, তুরস্ক। ১৮. ইউরোপীয় পরিষদ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, প্যারিস, ফ্রান্স। ১৯. রাবেতাতুল আলামিল ইসলামী ও মাকতাবুল মাহাদুল কুরআনী, নাওয়াকশোত, মৌরিতানিয়া। ২০.আজমী (অনারবী) ও লাতীনী বর্ণে কুরআন লিখন প্রতিরোধ শির্ষক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন, আয়োজক: মারকাযুত তারবিয়াতিল ইসলামিয়া, প্যারিস, ১৯ শাওয়াল ১৪০৮ হিজরী / ৪.৬.১৯৮৮ ইংরেজী। এ সম্মেলনে সৌদী আরব, সিরিয়া, সূদান, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে ১৪ জন বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ আলিম অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারী দেশ ও সংস্থাগুলো নিম্নরূপ: ১. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনা মুনাওয়ারা। ২. উপদেষ্টা, মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৩. ইমাম ও খতীব মাসজিদে নববী, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৪. হজ্জ ও আওকাফ মন্ত্রণালয় ও প্রধান তত্ত্বাবধায়ক মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৫. মাসজিদ বিভাগ, মাক্কা মুর্কারামা, সৌদী আরব। ৬. ইফতা, দাওয়াত, ইরশাদ ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, বেলজিকা শাখা। ৭. বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, দামেস্ক বিশেষজ্ঞ কারী ও মাশায়েখ পরিষদ। ৮. মা‘হাদুল ফাতহিল ইসলামী, দামেস্ক। ৯. আফ্রিকান ইসলামিক সেন্টার, খারতুম, সূদান। ১০.যারকা. দারুল ইফতা, জর্ডান। ১১. গবেষণা সেন্টার, আঙ্কারা, তুরুস্ক। ১২. জমইতুল কুরআন, লন্ডন, যুক্তরাজ্য। ১৩. ফ্রান্স মুসলিম কম্যুনিটি। ১৪. ইসলামিক এডুকেশন সেন্টার, প্যারিস, ফ্রান্স। ১৫. ইসলামী ঐক্য পরিষদ। ১৬. ইসলামিক সেন্টার, জাযিরা রীনোন। এর পর আশা করি আর কোন সন্দেহ সংশয় নয়। আর দেরী নয়। আখিরাতের ডাক আসার আগেই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমরা আমাদের কোন লেখালেখির বিকৃত উচ্চারণ যেমন মেনে নিতে পারি না, অনুরূপ আল্লাহর কালামের অর্থ বিকৃতকারী বিকৃত উচ্চারণ তিনি (আল্লাহ) কীভাবে মেনে নেবেন ? তাই আসুন, অনারবী বর্ণে কুরআনের আয়াত প্রতিবর্ণায়ন এবং প্রতিবর্ণায়িত তথাকথিত কুরআন প্রকাশ ও পড়া থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ-শুদ্ধ উচ্চারণে তাঁর কালাম তিলাওয়াতের তাওফীক দান করুন। আমীন॥”>বাংলা-ইংরেজী উচ্চারণে কুরআন লিখা ও পড়ার শরঈ বিধান -ড.হাফেজ মাওলানা এবিএম হিজবুল্লাহ
বাংলা-ইংরেজী উচ্চারণে কুরআন লিখা ও পড়ার শরঈ বিধান -ড.হাফেজ মাওলানা এবিএম হিজবুল্লাহ কুরআন কারীম আল্লাহর কালাম। আরবী অনারবী সকল ভাষার মানুষের হিদায়াতের জন্য বিশ্ব নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দীর্ঘ তেইশ বছরে আরবী ভাষা ও বর্ণে নাযিল করেছেন এ কালাম। সহজ করে দিয়েছেন এর পঠনপাঠন। কুরআনে তিনি ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: অবশ্যই নিশ্চিতভাবে আমি কুরআনকে (তিলাওয়াত ও বুঝার জন্য) সহজ করে দিয়েছি। অতঃপর আছে কি কেউ চিন্তাশীল বা উপদেশ গ্রহণকারী? সূরা কামার:১৭,২২,৩২,৪০। এর সার্বিক হিফাযাতের দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন স্বয়ং রাব্বুল আলামীন। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, অর্থানুবাদ: এর (কুরআন) সংরক্ষণ ও কিরাআতের দায়িত্ব আমারই। সূরা কিয়ামাহ:১৭। তিনি আরও ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: ‘অবশ্যই আমি যিক্র (কুরআন) নাযিল করেছি এবং অবশ্যই আমি এর হিফাযাতকারী। সূরা হিজ্র:৯। তাই কখনও কুরআনের তিলাওয়াতে ও উচ্চারণে বিকৃতি ঘটেনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে এর কোনই বিকৃতি ঘটবে না। অনারবী ভাষা ও বর্ণে কুরআন লিখনের সূচনা কুরআন অবতীর্ণের সময়কাল থেকে এ পর্যন্ত বিজ্ঞ আলিমগণের কেউ একমাত্র আরবী বর্ণে উসমানী লিখন পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতি এমনকি প্রচলিত আরবী লিখন পদ্ধতিতেও কুরআন লেখাকে বৈধ বা জায়েয বলেননি। অন্যান্য ভাষার বর্ণে তো কুরআন লেখা কল্পনাই করা যায় না। কুরআন কারীম বিজয়ী বেশে দেশে দেশে প্রবেশ করে। ছড়িয়ে দেয় তাওহীদ রিসালাত ও আখিরাতের নূরের পরশ। জয় করে নেয় মানুষের মন। আর তারই বরকতে বিশ্বের বহু দেশে আরবী ভাষা ও হরফে লেখালেখি প্রচলিত হয়। জনগণ কুরআনকে আপন করে নেয় ও আত্মস্থ করে নেয় তার ভাষা ও হরফকে। অথচ তারাও ছিল আমাদের মতই অনারব। তাদেরও প্রয়োজন ছিল স্থানীয় ভাষা ও হরফে কুরআন লেখার। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত তো এমনটি হয়নি। কখন থেকে এবং কোথায় অনারবী ভাষা ও বর্ণে কুরআন লিখনের সূচনা হয় এ প্রসঙ্গে যতটুকু জানা যায় তাতে দেখা যায় খিলাফাতে উসমানিয়ার পতনের পর তুরস্কে সর্ব প্রথম পাশ্চাত্যবাদীদের দোসর ও ত্রুীড়নক মুস্তফা কামাল সংস্কারের নামে এর সূচনা করে। কামাল আতাতুর্ক সরকারীভাবে ইসলামী চিন্তা চেতনা ও তাহযীব তামাদ্দুনের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়। ঐ ব্যক্তিটিই সর্বপ্রথম আরবী ভাষার বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। আরবী ভাষা ও হরফ নিষিদ্ধ করে তার পরিবর্তে ল্যাটিন বর্ণে কুরআন লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ জারি করে। এভাবে শুরু হয় অন্য ভাষার বর্ণে কুরআন লিখনের মাধ্যমে কুরআন বিকৃতির অপপ্রয়াস। এটা তার কুরআন চর্চা বা তিলাওয়াতের সুবিধার জন্য ছিল না। তার এ পদক্ষেপ ছিল ইসলামের প্রতি সম্পূর্ণ হিংসা প্রসুত। ইসলামের অন্যান্য শি‘আর (ঐতিহ্য) যেমন দাঁড়ি রাখা, নারীদের হিজাব ও ইসলামী পোষাক পরিচ্ছদ এবং আরবী ভাষা ও হরফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিধি নিষেধ আরোপের মাধ্যমে সে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ধ্বংসের কার্যক্রম শুরু করে। সেগুলোর একটি ছিল আরবী বর্ণমালার পরিবর্তে ল্যাটিন বর্ণে কুরআনের প্রতিবর্ণায়ন। এর প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপি খিলাফত আন্দোলন শুরু হলেও তাকে থামানো যায় নি। তবে কুরআনের প্রতিবর্ণায়নসহ তার সংস্কারগুলো কেউ মেনে নেয় নি। কুরআনের তিলাওয়াত হতে হবে সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে। কেউ কোনদিন কল্পনাও করেনি যে, সহজীকরণের নামে কখনও কুরআনের প্রতিবর্ণায়ন হবে। পরবর্তিতে নিখিল ভারতে হিন্দী, নাগরী, গুজরাটি ও তামিল বর্ণে কুরআন লিখনের বিষয়টি সামনে আসে। তখন ভারতীয় আলিমগণের প্রচন্ড বিরোধিতা করায় তা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সম্ভবত সত্তরের দশকে বাংলা উচ্চারণে কুরআন প্রতিবর্ণায়নের মাধ্যমে নতুনভাবে শুরু হয় উচ্চারণ কেন্দ্রিক কুরআন বিকৃতির গুরুতর এ ফিৎনা। গবেষণা ও খোজ খবর নিয়ে দেখা যায় শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয় দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপ ও আফ্রিকার কোন কোন দেশেও আঞ্চলিক বর্ণে কুরআন প্রতিবর্ণায়নের নামে কুরআন বিকৃতির অপপ্রয়াস শুরু হয়। বাংলাদেশে কুরআনের বাংলা প্রতিবর্ণায়ন তারই একটি অংশ মাত্র। ইংরেজী উচ্চারণে কুরআন এর সাথে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ডিজিটাল কুরআনের ওয়েব সাইট খোলা হয়েছে। সেখানে মূল আরবীর সাথে সাথে বাংলা ও ইংরেজী বর্ণমালায় কুরআনের প্রতিবর্ণায়ন দেয়া হচ্ছে। খোজ নিয়ে জানা যায়, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় আলিমগণের মতামত গ্রহণ করেছে। তারা নাকি বাংলা ইংরেজী প্রতিবর্ণায়নকে কুরআন তিলাওয়াতের সহায়ক (?) হিসাবে উল্লেখ করে এর পক্ষে মত দিয়েছেন। পরবর্তি আলোচনায় প্রতিবর্ণায়ন তিলাওয়াতের সহায়ক না বিকৃতির সহায়ক তা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হবে। সার কথা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় বা বর্ণে কুরআন লিখন ইতিপূর্বে কোথাও শুরু হয়নি বা কেউ এ ধরনের চিন্তাও করেনি। ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যখন এর সূচনা হয় তখন থেকেই হক্কানী আলিমগণ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং প্রবন্ধ ও পুস্তিকা রচনা করেন। তাঁরা সবাই এভাবে কুরআন লেখাকে কুরআনের তাহরীফ বা বিকৃতি আখ্যা দিয়ে এটা না জায়েয ও হারাম বলে এক বাক্যে ফাতওয়া প্রদান করেন। এরপর দুঃখজনক হলেও সত্য মুসলমানদের এক শ্রেণীর আলিম ও প্রকাশক এ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়েন। তারা স্থানীয় ভাষায় ও বর্ণে কুরআন লিখনের মাধ্যমে কুরআন লিপিবদ্ধ শুরু করে। এভাবে শুরু হয় অন্য ভাষার বর্ণে কুরআন লিখনের মাধ্যমে কুরআন বিকৃতির অপপ্রয়াস। পরের দিকে বেসরকারী তথা সেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে স্থানীয় ভাষা ও বর্ণে কুরআন লেখার প্রবণতা দেখা যায়। এ দুয়ের মাঝে মৌলিক পার্থক্য হল, প্রথমটি ছিল শাসকদের পক্ষ থেকে আরবী ভাষা ও হরফের প্রতি বিদ্বেষমূলক সরাসরি আঘাত। আর দ্বিতীয়টি হল বেসরকারীভাবে প্রকাশকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কুরআনের খিদমাত ও কুরআন প্রচারের-তাদের ভাষায়-এক মহৎ প্রচেষ্টা। অনারবী বর্ণে কুরআন লেখার কুপ্রভাব দ্বীন সম্পর্কে জানা, কুরআন তিলাওয়াত ও বুঝার ক্ষেত্রে মুসলমানদের আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু সবাই ঝুঁকছে বাংলা উচ্চারণে কুরআনের দিকে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এতে কুরআন তিলাওয়াতের হক আদায় হচ্ছে কিনা এর প্রতি কারো দৃষ্টি নেই। বিভিন্ন প্রকাশক নিজ নিজ ইচ্ছানুযায়ী তথাকথিত প্রতিবর্ণায়নের মাধ্যমে তাদের ভাষায় ‘বাংলা উচ্চারণসহ কুরআন প্রকাশ করছেন। তিক্ত হলেও সত্য এতে যেমন কিছু আলিম (?) প্রতিবর্ণায়নে সরাসরি অংশগ্রহণ করছেন অনুরূপ উচ্চারণ বিশুদ্ধ হওয়ার সার্টিফিকেটও প্রদান করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ৮৫ ভাগ উচ্চারণ বিশুদ্ধ হতে পারে, শতভাগ নয়। অথচ তাঁরা যদি এমনটি না করে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতেন এবং জনগণকে এ বিষয়ে সতর্ক করতেন তাহলে প্রকাশকগণ এককভাবে এমন দুঃসাহস দেখাতে পারত না। এর সুদূর প্রসারী কুপ্রভাব হিসেবে দেখা যায়, ক-লেখালেখিতে নিজ নিজ জ্ঞান অনুযায়ী বাংলা ও ইংরেজী বর্ণে কুরআন প্রতিবর্ণায়নের ব্যবহার। খ-সরকারী ও বেসরকারী পাঠ্য পুস্ককেও দেখা যায় এর ব্যাপক প্রয়োগ। গ-নোট বুক, গাইড, ডায়েরী, রাস্তার ফুটপাত ও বাসে বিক্রির উদ্দেশে প্রণীত বিভিন্ন ধরনের বই, নামায শিক্ষা, পাঞ্জ সূরা, ওযীফা এমনকি বিভিন্ন যান বাহন বাস, ট্রাক, টেম্পো, ইত্যাদিতে কুরআনের আয়াত ও দুআ দরূদের বিকৃত উচ্চরণের ছড়াছড়ি। ঘ-সর্বপরি অমুসলিম তথা ইসলাম বিদ্বেষী মহল কুরআন সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে। সুযোগ পাবে মুসলমানদের মন থেকে কুরআনের আযমাত ও সম্মান মুছে ফেলার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র ফাঁদার। আমার জানামতে পশ্চিমা জগতের কিছু বুদ্ধিজীবী এতে উৎসাহ যোগাচ্ছেন। উদ্দেশ্য, এভাবে বিভিন্ন ভাষার বর্ণে তথাকথিত কুরআনের মাধ্যমে মূল কুরআন থেকে মুসলিম জনগণকে বিচ্যুত করা। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখা ও পড়া যাবে না বাংলা-ইংরেজী তথা অনারবী বর্ণে কেন কুরআন লেখা ও পড়া যাবে না। কারণগুলো সংক্ষিপ্তাকারে এভাবে সাজানো যেতে পারে। ১-এতে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক কুরআনকে সহজ করার ঘোষণা অস্বীকার করা হবে। ২-প্রতি বর্ণায়ন অসম্ভব বিধায় কুরআন লিখনে ও পঠনে উচ্চারণ বিকৃতির দ্বার উন্মুক্ত হবে। ৩-উচ্চরণ বিকৃতির ফলে নিশ্চিত অর্থ বিকৃতি ঘটবে। ৪-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ে বিভিন্ন ভাষাভাষী সাহাবীগণের উপস্থিতি সত্বেও ও পরবর্তী প্রয়োজনকে সামনে রেখে প্রচলিত ভাষা ও বর্ণে কুরআন লিখা হয়নি। ৫-খুলাফা রাশিদূনের যুগে ইসলামী বিশ্বের বিস্তৃতির ফলে অনারব মুসলিমদের প্রয়োজনেও তাদের স্থানীয় ভাষা ও হরফে কুরআন লিখা হয়নি। ৬-অন্য বর্ণে কুরআন লিখার অনুমতি দেয়া হলে আল্লাহর কিতাব- আল্লাহর পানাহ -মানুষের হাতে পরিণত হবে খেলনার বস্তুতে। ৭-সৃষ্টি হবে বিভিন্ন ভাষার-এমনকি একই ভাষার-উচ্চারণে কুরআন নামের বিচিত্র গ্রন্থের, যেগুলোর একটির সাথে অন্যটির কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। ৮- দুশমনদের জন্য কুরআনে অপবাদ দেয়ার মহা সুযোগ সৃষ্টি হবে। ৯-আরবীতে কুরআন তিলাওয়াত অসাধ্য কিছু নয়। ১০-সৃষ্টি হবে বর্ণিক ও উচ্চারণিক নানান জটিলতা, বিভ্রাট ও সমস্যা। কুরআন কারীম কেন একমাত্র আরবী বর্ণেই লিখতে ও পড়তে হবে ক. আরবী ভাষা ও বর্ণেই কুরআন কারীম নাযিল করা হয়েছে নিঃসন্দেহে পৃথিবীতে প্রচলিত আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় সকল ভাষাই আল্লাহর মহা নেয়ামত ও মহান দান। তবে এর মাঝে আরবী ভাষা প্রাঞ্জল ও সর্বত্তোম। তাই সকল ভাষার স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা এ ভাষাকেই তাঁর নাযিলকৃত সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী গ্রন্থ আল কুরআনের জন্য নির্বাচন করেছেন। কুরআন কারীম আরবী ভাষা ও বর্ণে নাযিল করা হয়েছে মর্মে আল্লাহ তা‘আলা এগারোটি আয়াত নাযিল করেছেন। যেমন, তিনি ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: “সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় শু‘আরা:১৯৫। তিনি আরও ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: ‘অবশ্যই আমি কুরআন নাযিল করেছি আরবী ভাষায়”। ইউসুফ:২। ইবন ফারিস (মৃ: ৩৯৫ হিজরী) বলেন, অবশ্যই এর বর্ণগুলো সেই নামগুলোর অন্তর্ভুক্ত যেগুলো আল্লাহ আদমকে শিখিয়েছিলেন” অতএব এর বর্ণগুলোর উচ্চারণ বিকৃত হয় এমন প্রতিবর্ণায়ন কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমনটি করা হলে প্রকারান্তরে একথাই বুঝানো হবে যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য কঠিন ভাষা ও বর্ণে কিতাব নাযিল করেছেন। (আল্লাহর পানাহ)। খ. উচ্চারণ বিকৃতিতে অর্থ বিকৃত হতে বাধ্য কুরআনী শব্দাবলীর উচ্চারণ বিকৃতি নিশ্চিত অর্থ বিকৃতি ঘটায়। কুরআন আরবী ভাষা ও বর্ণে নাযিল হয়েছে। তাই আরবী বর্ণেই কুরআন লিখিত হতে হবে। অন্য কোন ভাষা বা বর্ণে নয়। অন্য ভাষা বা বর্ণে লিখিত হলে বর্ণিক, উচ্চারণিক ও অর্থ বিকৃতির কারণে তা কুরআন হিসেবে গণ্য হবে না। বিকৃত তিলাওয়াতে সাওয়াবের পরিবর্তে অবশ্যই গুনাহ হবে। গ.সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত আলিমগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরবী বর্ণে গঠিত শব্দ ও অর্থের সমষ্টি কুরআন। সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণ কুরআন কারীমের এক অবিচ্ছেদ্দ অংশ। সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে অন্তরায় সৃষ্টিকারী অন্য কোন বর্ণে ও পন্থায় কুরআন লিখা যাবে না। অতএব সঠিক ও বিশুদ্ধ উচ্চারণের প্রয়োজনেই একমাত্র আরবী হরফ ও বর্ণেই কুরআন লিখতে ও পড়তে হবে। ঘ. উসমানী লিখন পদ্ধতির অনুসরণ সাহাবা ও আইম্মায়ে কিরামের সর্বসম্মত ইজমা অনুযায়ী উসমানী লিখন পদ্ধতিতে কুরআন লিখা ওয়াজিব। একমাত্র আরবী হরফেই এ পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব। অনারবী বর্ণে এ পদ্ধতিতে কখনই কুরআন লিখা যাবে না। ঙ. কুরআন কারীমের তিলাওয়াতে রূহানিয়্যাত কুরআন কারীমের তিলাওয়াতে রূহানিয়্যাত প্রাপ্তির জন্যই আরবী হরফে কুরআন লিখতে হবে। অন্যথায় বিকৃত উচ্চারণে কুরআন পাঠে সাধারণ মুসলিমের অন্তর থেকে কুরআনের আযমাত ও রূহানিয়্যাত উঠে যাবে। কাংখিত ও গ্রহণযোগ্য তিলাওয়াত কুরআন নাযিল করা হয়েছে তারতীলের সাথে তিলাওয়াত ও আমল করার জন্য। তিলাওয়াত হলো কাংখিত এক ইবাদাত যা সালাতের অন্যতম একটি রুকন। কুরআনই একমাত্র আসমানী গ্রন্থ যা না বুঝে তিলাওয়াত করলেও তার প্রতিটি হরফ উচ্চারণে দশ দশটি নেকী। তাই তিলাওয়াত হতে হবে সহীহ ও উচ্চারণিক বিকৃতমুক্ত। নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে পড়ে দেখিয়েছেন কিভাবে আল্লাহর পছন্দনীয় তিলাওয়াত করতে হবে। সাহাবা কিরাম রাসূলের অনুকরণে তাঁদের ছাত্রদের শিখিয়েছেন কুরআন তিলাওয়াত পদ্ধতি। এসব কিছুই অকাট্যভাবে প্রমাণ করে সহী-শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত ফরযে আইন। এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামীন নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তারতীল অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াতের সরাসরি নির্দেশ প্রদান করেন, অর্থানুবাদ: সুস্পষ্ট তারতীলের সাথে ধীরে ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করুন। সূরা মুয্যাম্মিল : ৪। তারতীলের অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে রাগিব ইসফাহানী বলেন, সহজ ও সঠিকভাবে মুখ হতে শব্দ উচ্চারণ করা। ইবন মানযূর বলেন, কিরাআতে তারতীল হলো, ধীরে সুস্থে পড়া এবং হরূফ ও হারাকাতের স্পষ্ট উচ্চারণ করা। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তারতীলের ব্যাখ্যায় বলেছেন, হরফসমূহের যথাযথ সুন্দর উচ্চারণ ও বিরাম স্থল সম্পর্কে জ্ঞানার্জন হল তারতীল নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতেন এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন, হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কুরআন পাঠ কেমন ছিল ? উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাঁর পড়া ছিল টানা টানা। এরপর তিনি নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণে بسم الله الرحمن الرحيم তিলাওয়াত করেন। তিনি بسم الله টেনে পড়েন। الرحمنএ দীর্ঘ করেন। الرحيم টেনে পড়েন। ইমাম তিরমিযী ইয়ালা ইবন মামলাক হতে একটি বর্ণনায় বলেন, তিনি উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তিলাওয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণে কিছু আয়াত তিলাওয়াত করে শোনান। তিনি এমন তিলাওয়াত করেন যার প্রতিটি হরফ ছিল স্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। একবার তিনি এক ব্যক্তিকে কুরআনের আয়াত إِنَّمَا الصَّدَقتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسكِينِ পড়তে শুনলেন। কিন্তু সে তাড়াতাড়ি পড়ে গেল। অর্র্র্থাৎ لِلْفُقَرَاءِ শব্দটিতে মাদ্দ করেনি (অর্থাৎ: রা হরফ টেনে পড়েনি)। তখন ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এভাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে পড়াননি। লোকটি বলল, তাহলে হে আবূ আবদির রহমান! তিনি আপনাকে কিভাবে পড়িয়েছেন ? তখন ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আয়াতটি পড়লেন এবং لِلْفُقَرَاءِ শব্দটিতে মাদ্দ করলেন (অর্থাৎ: রা হরফ টেনে পড়লেন)। এরপর বললেন, নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে আমাকে পড়িয়েছেন। উল্লিখিত আয়াত, হাদীস ও সাহাবীর বর্ণনানুযায়ী বিশুদ্ধ ও তাজওয়ীদ অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াত ফরযে আইন। আর তাই পরবর্তীতে ইলমুল ক্বিরাআতের ইমামগণও এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাজওয়ীদের নিয়ম কানুন অনুযায়ী অবশ্যই কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। হাফেয ইবনুল জাযারী বলেন, নিঃসন্দেহে যেভাবে উম্মতের উপর কুরআন বুঝা ও তার বিধিবিধান মেনে চলার মাধ্যমে ইবাদাত ফরয তেমনিভাবে কুরআনিক শব্দাবলী ও হরফসমূহের ঠিক সেভাবে বিশুদ্ধ উচ্চারণও (অর্থাৎ তিলাওয়াত) ফরয, যেভাবে ক্বিরাআতের ইমামগণ বর্ণনা পরম্পরায় আরবী নাবীর দরবার হতে লাভ করেছেন। কোন অবস্থাতেই তার বিরোধিতা করা যাবে না এবং এটা বাদ দিয়ে অন্যটাও গ্রহণ করা যাবে না মুহাম্মদ মাক্কী ইবন নাস্র বলেন, ‘নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ হতে আমাদের যুগ পর্যন্ত উম্মাতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল তাজওয়ীদ সহকারে অর্থাৎ বিশুদ্ধ তিলাওয়াত ওয়াজিব। এ ব্যাপারে তাদের কেউ কখনো দ্বিমত পোষণ করেননি। আর এটা সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী একটি দলীল। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখা ও পাঠের সমস্যা প্রথমতঃ প্রতিবর্ণায়ন সমস্যা আরবী হরফের প্রতিবর্ণায়ন সমস্যাই প্রকট সমস্যা। এর সমাধানকল্পে বিভিন্ন সময় গবেষণা করা হয়েছে। তবে সর্বসম্মত কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় নি। তাই প্রতিবর্ণায়ন সমস্যা থেকেই গেছে। আরবী হরফ সংখ্যা উনত্রিশটি। এগুলোর মধ্যে চৌদ্দটি বর্ণ রয়েছে যেগুলোর প্রতিবর্ণায়ন অন্য কোন ভাষায় সম্ভব নয়। ث، ح ، خ ، ذ ، ز ، ص ، ض ، ط ، ظ ، ع ، غ ، ق ، و ، ي । যেমন, প্রাথমিকভাবে আরবী পাঁচটি বর্ণের (ج ، ذ ، ز، ض ، ظ ) জন্য একটিমাত্র বাংলা বর্ণ (জ) ব্যবহার করা হত। পরবর্তীতে এগুলোর জন্য বাংলা তিনটি বর্ণের ব্যবহার শুরু হয়। (ذ، ز ، ظ) এর জন্য (যা), (ج) এর জন্য (জ) ও (ض) এর জন্য (দ)। অথচ (দ) আরবী (د) এর হুবহু প্রতিবর্ণ। এখন আবার (ض)-এর জন্য ব্যবহার শুরু হয়েছে বাংলায় য বা জ বা দ। অনুরূপ আরবী তিনটি হফর (ث ، س ، ص) এর জন্য বাংলা একটি বর্ণ (স) প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে তা দটিতে উন্নীত হয়। (ث) এর জন্য (ছ বা স) ও (س ، ص) এর জন্য (স)। (غ) – এর জন্য (গ)। (ع)- এর জন্য যবর যের পেশ ভেদে (আ, ই, উ) ব্যবহার হয়। তাছাড়া আরবী দু’টি হরফের জন্য রয়েছে বাংলা একটি বর্ণ। যেমন, (ه ، ح) এর জন্য (হ), (ق ، ك) এর জন্য (ক), (ت ، ط) এর জন্য (ত)। এখানে কেউ কেউ বফলা যোগে দু’টি হরফের মাঝে পার্থক্য করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন বটে। এখানে (ه) এর জন্য (হ) (ت) এর জন্য (ত) (ك) এর জন্য (ক) ঠিক আছে। কিন্তু (ق ، ط ، ح) এর জন্য বাংলায় কোন প্রতিবর্ণ নেই। অনুরূপ (ي ، و) এর জন্য কোন প্রতিবর্ণ খুজে পাওয়া যায় না। মজার ব্যাপার হলো তাও এগুলো আবার সর্বসম্মত নয়। অর্থাৎ যার যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যবহার করেছে। এগুলোর কোনটিই সঠিক উচ্চারণ নয়। যার যার খেয়াল খুশিমত এগুলোর প্রতিবর্ণ দিয়ে লিখিত কুরআনিক শব্দাবলী বিকৃত হতে বাধ্য। ইংরেজী বর্ণ ছাব্বিশটি যা আরবী হরফ সংখ্যা হতে কম। অতএব নিঃসন্দেহে ইংরেজীতে আরবীর প্রতিবর্ণায়ন যে সম্ভব নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তা ছাড়াও আরবীতে এমন কিছু হরফ রয়েছে যার প্রতিবর্ণায়ন ইংরেজীতে একেবারেই অসম্ভব। আরবী কোন কোন হরফের জন্য ইংরেজীতে ব্যবহৃত হয় দু’টি বর্ণ। মাখরাজ ও গুণাবলীতে এগুলোর মাঝে রয়েছে আকাশ পাতাল ফারাক। যেমন, (د ، ض) – এর জন্য (উ)। (ث ، س ، ص) এর জন্য (ঝ)। (ه ، ح) – এর জন্য (ঐ)। (ج، ذ ، ز ، ض، ظ) – এর জন্য (ঔত)। (ش) – এর জন্য (ঝঐ)। (ث)- এর জন্য (ঞঐ)। (خ) – এরজন্য (কঐ)। (ق) এর জন্য (ছ)। (ت) এর জন্য (ঞ)। (ي ، و) এর জন্য কোন বরাদ্দ নেই। ঘ. বর্ণিক বিকৃতিতে উচ্চারণিক বিকৃতি হতে বাধ্য। বিকৃত উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত জায়েয নেই। যেমন আরবী একটি শব্দ। একাধিক বাংলা উচ্চারণ। অথচ সঠিক উচ্চারণে এর কোনটিই শুদ্ধ নয়। যেমন, رمضان=রমজান, রামাদান, রমযান, রামাযান, صالح = সালেহ, ছালেহ, سلام = সালাম, ছালাম ثالث =সালিস, ছালিছ। ব্যক্তি পর্যায়েও চলে এ সম্পর্কে প্রচুর গবেষণা। এদের মধ্যে রয়েছেন ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক প্রমুখ। কিন্তু সর্বসম্মত কোন সিদ্ধান্তে কেউ উপনীত হতে পারেননি। ফলে অবস্থা যা দাঁড়ায় এ, টি, এম, ফাখরুদ্দীনদের ভাষায়, ‘আরবী হরফ সমূহের বাংলা প্রতিবর্ণায়ন বা অনুলিখনের ক্ষেত্রে যেহেতু কোন সুষ্ঠু ও স্বীকৃত নীতিমালা নেই তাই এক এক বইতে এক এক রকমভাবে লেখা থাকে। যদিও ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক প্রমুখ এ বিষয়ে লিখেছেন এবং তৎপরবর্তীতেও অনেকে আলোচনা করেছেন, কিন্তু এ সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং দ্বিধা-সন্দেহ আরো বেড়ে গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুসৃত নীতি রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটির নীতির সাথে বিসদৃশ্য, আবার বাংলা একাডেমীর অভিধানের সাথে অন্যান্য বইয়ের নীতি মেলে না। আর এতে করে শিক্ষার্থী ও সাধারণ পাঠক বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এমনকি মাদ্রাসা শিক্ষিত অনেক লোকও তা বুঝে উঠতে পারে না। যে কোন ভাষাকে বুঝতে হলে অবশ্যই তার নিজস্ব ভাবধারা ও স্বকীয়তা অক্ষুণ্নরেখে সেই আলোকেই বিচার বিশ্লে-ষণ করতে হবে। এমন কোন পন্থা বা পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে না যাতে করে ভাষার বিকৃতি ঘটে এবং ভাষা তার আপন ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলে। প্রতিবর্ণায়নের ক্ষেত্রে ধ্বনিই হবে একমাত্র বিচার্য। কারণ, বর্ণ হরফ এগুলো সেই ধ্বনির প্রতীক হিসাবেই নির্ধারিত। ড. আব্দুল হাই বলেন, ধ্বনিবিজ্ঞানীদের কাছে ধ্বনির অক্ষর বা প্রতীক বড় নয়, ধ্বনিই সর্বেসর্বা। তাদের মতে যে কোন প্রতীকের সাহায্যেই যে কোন ধ্বনির প্রতিলিপি নির্মাণ করা যায়, তবে সুবিধা-অসুবিধার কথা ভেবে তাঁরা তা করেন না। প্রাচীন সংস্কার এবং অক্ষরের ঐতিহাসিক মূল্যকেই বড় স্থান দিয়ে থাকেন এ প্রসঙ্গে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আরবী শব্দের বানান শুদ্ধির ব্যাপারটি অতীব জটিল। এ জন্য বিভিন্ন ভাষায় প্রতিবর্ণায়নের (ঞৎধহংষধঃরড়হ) ব্যবস্থা রয়েছে। যেহেতু আরবীতে এমন কতক বর্ণ আছে যা আর কোন ভাষায় নেই, তাই উচ্চারণ ও প্রতিবর্ণায়নের বেলায় সহজ সমাধান লাভ করা দুরূহ। তাই দুঃখ পাই যখন দেখি কেউ কুরআনিক বর্ণের প্রতিবর্ণায়নের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। দুঃখ পাই যখন কেউ বলেন, কুরআন মাজীদ নাকি প্রতিবর্ণায়িত উচ্চারণে একা একা নিজে নিজেই পড়া যায়। ভাবতে অবাক লাগে বাংলা সাহিত্যের প্রতিথযশা পন্ডিত সর্বজন স্বীকৃত ভাষা বিশারদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ও ড. মুহাম্মদ এনামুল হক যেটা পারেন নি এখন কিছু মানুষ সে দুঃসাহস দেখচ্ছেন। তারা নিজ নিজ মেধা, চিন্তা ভাবনা দিয়ে জোর করে আরবী বর্ণ প্রতিবর্ণায়নের ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। সত্যিকার অর্থে পৃথিবীর কোন ভাষাতেই উপরে বর্ণিত চৌদ্দটি বর্ণের প্রতিবর্ণায়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই আরবী ভিন্ন অন্য কোন বর্ণেই কুরআন লিপিবদ্ধ করা সম্পূর্ণ অবান্তর, অসম্ভব এবং নিজ মস্তিস্কপ্রসূত প্রতিবর্ণায়নে নিঃসন্দেহে ও নিশ্চিত কুরআনের উচ্চারণ বিকৃতির মাধ্যমে অর্থ বিকৃতি ঘটাবে। দ্বিতীয়তঃ বর্ণিক ও উচ্চারণিক বিকৃতিতে অবশ্যম্ভাবি অর্থ বিকৃতি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্ণিক উচ্চারণিক বিকৃতিতে অর্থ বিকৃতি হতে বাধ্য। কিন্তু কীভাবে ? পাঠকবর্গের অবগতির জন্য এর কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যেমন: মূল আরবী অর্থ ইংরেজী বাংলা আরবী উচ্চারণ অর্থ الحمد সকল প্রশংসা অখঐঅগউট আলহামডু الهمد মৃত্যু, অগ্নি নির্বাপন قل বলুন কটখ কুল كل খাও عليم মহাজ্ঞানী অখওগ আলীম أليم কঠিন যন্ত্রনাদায়ক অতএব এমন বিকৃত অর্থবোধক তিলাওয়াত কি জায়েয বলা যেতে পারে? শুধু কি তাই? কুরআনিক শব্দ مُمَدَّدَةٍ বাংলায়: মুমাদ্দাদাহ, ইংরেজীতে: গঁসধফফধফধয, এর বাংলা উচ্চারণ মুমাড্ডাডাহ। গোল তা-এর ব্যবহার বড়ই জটিল। تَوَّاباً বাংলায়: তাওয়াবা, ইংরেজীতে ঞধিিধনধ, এর বাংলা উচ্চারণ টাওয়াবা। ইংরেজীতে দাল হয়ে গেল ডাল, তা হয়ে গেল টা। তানওয়ীন ও মাদ্দের কোন খবর নেই। তৃতীয়তঃ ইলমুত তাজওয়ীদের প্রয়োগিক সমস্যা কুরআন তিলাওয়াতের সাথে ইলমুত তাজওয়ীদের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। ইলমুত তাজওয়ীদ কুরআন কারীমের অলংকার। ইলমুত তাজওয়ীদ বাদ দিয়ে সহীহ ও বিশুদ্ধ তিলাওয়াত কল্পনাও করা যেতে পারে না। তিলাওয়াতের সাথে রয়েছে মাখরাজ (হরফ উচ্চারণস্থল) পরিচিতি, গুন্নাহ, মাদ্দ ইত্যাদির সম্পর্ক। এগুলো ছাড়া সুন্দর সাবলিল তিলাওয়াত সম্ভব নয়। মাদ্দের হরফ, হারাকাত (যবর, যের, পেশ) নূন সাকিন, তানওয়ীন (দু’যবর, দু’যের, দু’পেশ) সাকিন, তাশদীদ ইত্যাদির প্রয়োগ ছাড়া এগুলো জানার কোন উপায় নেই। গোল তা-র ব্যবহার অন্য কোন ভাষায় দেখা যায় না। ইদগামের আহকাম, লাম ও রা-এর আহকাম ইত্যাদির কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। ওয়াকফ-এর কোন হুকুম মেনে চলা হবে অসম্ভব। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখিত হলে অনাকাংখিতভাবে মূল কুরআনে বর্ণ ও শব্দ সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি পাবে। এক কথায় আরবী হরফ ব্যতিত অন্য কোন ভাষায় ইলমুত তাজওয়ীদের ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্ভব নয়। হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক লিখন নিতিমালা যা রাসমে উসমানী নামে পরিচিত এবং তৎকালীন সময়ের সকল সাহাবী কর্তৃক স্বীকৃত এর প্রয়োগ আরবী হরফ ব্যতিত অন্য কোন বর্ণে কল্পনাই করা যায় না। অনারবী উচ্চারণে কুরআন লিখা ও পড়া হারাম তাই অন্য কোন ভাষায় প্রতিবর্ণায়িত বর্ণমালা দ্বারা লিখিত বা মুদ্রিত কোন কুরআন হতেই পারে না। এ জন্যই দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা ও আলিমগণ আরবী হরফ ছাড়া অন্য কোন বর্ণে কুরআন লিখাকে হারাম বলেছেন। তাই অন্য বর্ণে লিখিত বা মুদ্রিত কুরআন পড়া হারাম হিসেবেই গণ্য। সহীহ-শুদ্ধ তিলাওয়াতের জন্য শিক্ষক প্রয়োজন আরবী ছাড়া অন্য যে কোন বর্ণেই কুরআন প্রতিবর্ণায়িত হোক না কেন নিজে নিজে বা একা একা কখনই বিশুদ্ধ তিলাওয়াত সম্ভব নয়। এর জন্য অবশ্যই কোন না কোন উস্তায বা শিক্ষকের সামনে বসতেই হবে। সঠিক উচ্চারণ নিজে নিজে কখনই সম্ভব নয়। নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুরআন নাযিলের পাশাপাশি সঠিক উচ্চারণের নিমিত্ত হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামকে সঠিক উচ্চারণের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। তিলাওয়াতে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অনুসরণ করতেন। সাহাবীগণও লিখিত কুরআনের উপর নির্ভর করেন নি। তাঁরাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর নিয়োজিত ও নির্ধারিত সাহাবী উস্তাযগণের নিকট সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত শিখেছেন। তাহলে আমরা অনারবী শিক্ষিতরা কীভাবে দাবি করতে পারি যে, প্রতিবর্ণায়িত বাংলা বা ইংরেজী উচ্চারণে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত করতে পারবো? বাংলাকে যদি ইংরেজীতে লিখা হয় বা ইংরেজীকে লিখা হয় বাংলায়, বলতে পারেন এতে একজন বাংলাভাষী বা একজন ইংরেজীভাষী সঠিক উচ্চারণে তা পড়তে বা বলতে পারবেন? বাংলা বা ইংরেজীকে যদি আরবীতে লিখা হয় তাহলে কি কোন আরবীভাষী সঠিক বাংলা বা ইংরেজী উচ্চারণে পড়তে বা বলতে পারবেন? আমাদের ঢাকা আরবীতে হয়ে যাচ্ছে دكا (দাক্কা) বা داكا (দাকা), বাংলাদেশ আরবীতে হয়ে যাচ্ছে بنغلاديش(বাঙ্গালাদেশ) বা بنجلاديش(বাংজালাদেশ)। ইংরেজীতে প্লাষ্টিক আরবীতে হয়ে যাচ্ছে ব্লাস্টিক, টেলিফোন আরবীতে হয়ে যাচ্ছে তালিফোন। আরবীতে طيب বাংলায় হয়ে যাচ্ছে তাইয়েব, তায়্যেব, তায়্যিব, তাইয়্যিব, বলতে পারেন এগুলোর কোন্টি সঠিক? ইংরেজীতে হয়ে যাচ্ছে, (ঞবন,ঞধরবন,ঞধুবন) এর বাংলা উচ্চারণ টাইয়েব…। আরবী ط বর্ণের সঠিক কোন প্রতিবর্ণ আরবী ছাড়া অন্য কোন বর্ণে পাওয়া যাবে কী? অন্যান্য হরফ তো রয়েছে যেমনটি উপরে বর্ণিত হয়েছে-যেগুলোর প্রতিবর্ণায়ন অন্য কোন ভাষায় নেই। আমাদের করণীয় দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশী ভাষা শিখি; এজন্য রয়েছে প্রচুর ব্যবস্থা। এজন্য সময় অর্থ ব্যয়ে আমরা কুণ্ঠিত হই না। কিন্তু আসমানী কিতাব আল্লাহর কালাম যা আমাদের সকলের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য অপরিহার্য এর জন্য আমরা সময় ব্যয় করতে প্রস্তুত নই। বিপুল টাকা খরচ করে কোমলমতি শিশুদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করি। বয়স্করা বিভিন্ন কাজে সময় ব্যয় করি। কিন্তু কুরআন শেখার জন্য একটুও বিচলিত হই না। আল্লাহর কাছে কি জবাব দেব এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই অথচ সালাত আদায় সকল নারী পুরুষের উপর ফরয। আর কুরআনের সহীহ তিলাওয়াত ছাড়া নামায সহীহ হয় না। এ জন্যই আলিমগণ সকল নারী পুরুষের জন্য বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত জানা ফরয বলেছেন। অল্প একটু সময় ব্যয় করলেই কিন্তু বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত শেখা একেবারেই সহজ। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা একাধিকবার বলেছেন, অবশ্যই আমি যিকর (কুরআন)- কে সহজ করে দিয়েছি। অত:পর আছে কি কেউ চিন্তাশীল বা উপদেশ গ্রহণকারী? সূরা কামার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগেও তো অনেক অনারব আজমী সাহাবী ছিলেন। তাদের জন্য তাদের ভাষার বর্ণে কুরআন লিখা হয়নি। এর চাইতেও প্রকট প্রয়োজন ছিল খুলাফা রাশিদূনের যুগে। যখন দিকে দিকে ইসলামী ঝান্ডা বুলন্দ হচ্ছিল। কেউ কি বলতে পারবেন তাদের প্রয়োজনে সেখানে তাদের ভাষায় বা বর্ণে কুরআন লিখা হয়েছিল? পারস্য, ইউরোপ ও আফ্রিকার মুসলমানগণও কখনও এমন উদ্ভট বক্তব্য দেন নি বা নিজেদের ভাষায় কুরআন লিখেন নি। অথচ তারা ছিলেন সে সময়কার নও মুসলিম। ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথেই তাদের উপর সালাত ফরয ছিল। ফরয আদায়ের জন্য তারা বিনা বাক্য ব্যয়ে আরবী হরফেই কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিখেছেন এবং বিশ্বে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয় আফ্রিকা ইউরোপের অনেক এলাকায় স্থানিয় ভাষার পরিবর্তে আরবী ভাষার প্রচলন হয়। তারা যদি সহীহ কুরআন তিলাওয়াত আয়ত্ব করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না? তাই আসুন আমরা সকলেই আরবীতে সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত শিখি। এজন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। ১. সম্মানিত ইমাম/খতীব ও কুরআন গবেষকগণ সাধারণ মুসলিম ভাই বোনদেরকে বাংলা ইংরেজী উচ্চারণে কুরআনের ভুল তিলাওয়াত থেকে বিরত থেকে কুরআন সহীহভাবে তিলাওয়াতের ব্যপারে সচেতন করবেন। ২. যারা কুরআন কারীম সহীহভাবে তিলাওয়াতে অক্ষম তারা অতি দ্রুত বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ৩. সন্তানদের জন্য শিশু বয়সেই কুরআনের সহীহ তিলাওয়াতের ব্যবস্থা করুন। ৪. প্রতিটি মাসজিদে সকালে/দুপুরে ছোটদের জন্য এবং বয়স্কদের জন্য সান্ধকালিন কুরআন তিলাওয়াত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ৫. বয়স্কা মা বোনদের জন্যও কুরআনের সহীহ তিলাওয়াত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখা ও পড়া হারাম বলেছেন যারা ব্যক্তি পর্যায়ে যখনি এ ধরণের কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে তখনই সমসাময়িক আলিমগণ এর বিরোধিতা করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন মাজীদ হিফাযতের জন্য তাঁর বান্দাদেরকে কাজে লাগিয়েছেন। পাশাপাশি বর্তমান সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্থা এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। সবাই এক বাক্যে অনারবী বর্ণে কুরআন লিখাকে হারাম বলেছেন। এরই আলোকে অনারবী হরফে প্রতিবর্ণায়িত তথাকথিত কুরআন পড়াও হারাম হিসাবে গণ্য। তাঁদের গবেষণা, আলোচনা-পর্যালোচনা, সিদ্ধান্ত ও বক্তব্যের বিস্তারিত বিবরণ সূত্রসহ (সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমার লিখিত) আরবী কিতাবে দেয়া হয়েছে। এখানে শুধু তাঁদের নাম উল্লেখ করছি। ১. ইবন ফারিস (মৃত: ৩৯৫ হিজরী) ২. কাযী ইয়ায (মৃত: ৫৪৪ হিজরী) ৩. ফাকীহ আবূ বাকর ইবনুল আরাবী (মৃত: ৫৪৬ হিজরী) ৪. শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (মৃত: ৭২৮ হিজরী) ৫. ইমাম ইবনুল হাজ্জ আবদারী (মৃত: ৭৩৭ হিজরী) ৬. আবূ ইসহাক শাতিবী (মৃত: ৭৯০হিজরী) ৭. বুরহানুদ্দীন যারকাশী (মৃত: ৭৯৪ হিজরী) ৮. জালালুদ্দীন সুয়ূতী (মৃত: ৯১১ হিজরী) ভারত: ৯. ১. হাকীমুল উম্মাত আশরাফ আলী থানবী (মৃত: ১৩৬২ হিজরী) ১০. ২. মুফতী মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী (মৃত: ১৪১৭ হিজরী) ১১. ৩. মুফতী সায়্যিদ আবদুর রাহীম (ভারত) ১২. ৪. মাওলানা সাইয়্যিদ হুসাইন আহমাদ (মাদানী), সদরে মুদাররিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ ১৩. ৫. মাওলানা সাইয়্যেদ আসগার হুসাইন, মুহাদ্দিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৪. ৬. মাওলানা শিব্বির আহমাদ উসমানী, শাইখুল হাদীস ওয়াত তাফসীর, সদরে মুহতামিম, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৫. ৭. মাওলানা মুহাম্মদ তাইয়্যিব, মুহতামিম, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৬. ৮. মাওলানা ই‘যায আলী, মুদাররিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৭. ৯. মুফতী মুহাম্মাদ শফী, ১৮. ১০. সাইয়্যিদ আহমাদ আলী সাঈদ, নায়েবে মুফতী, দারুল ঊলূম, দেওবন্দ। ১৯. ১১. মুহাম্মদ ইদ্রীস কান্দলুভী, মুদাররিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ২০. ১২. মুফতী ফারুক আহমাদ, মুফতী, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ২১. ১৩. মাওলানা বাশীর আহমাদ, মুদাররিস, ফাইয়াদুল ঊলূম মাদ্রাসা, ভারত। ২২. ১৪. মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ, কাযী, মাদরাজ, ভারত ২৩. ১৫. মাওলানা মুহাম্মাদ কাসিম, মুদাররিস, ফাইয়্যাদুল উলূম মাদ্রাসা, ভারত। ২৪. ১৬. শাইখ আদম মুদাররিস, বাকিয়াত সালিহাত মাদরাসা, দীলোর, ভারত। ২৫. ১৬. মাওলানা আস‘আদ মাদানী, সভাপতি, জমিয়তে উলামা হিন্দ দিল্লী, ভারত। বাংলাদেশ ২৬. ১. শাইখ উবাইদুল হক, খতীব বাইতুল মুর্কারম জাতীয় মাসজিদ, ঢাকা। ২৭. ২. শাহ আহমাদ শফী, মহা পরিচালক, জামিয়া ইসলামিয়া মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। ২৮. ৩. মুফতী আহমাদুল হক, বিভাগীয় প্রধান, দারুল ইফতা, হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ ২৯. ৪. শাইখুল হাদীস আল্লামা আযীযুল হক, শাইখুল হাদীস জামিয়া রাহমানিয়া, ঢাকা। ৩০. ৫. মুফতী আবদুর রহমান, মহা পরিচালক, ইসলামিক রিচার্স সেন্টার, বসুন্ধরা ঢাকা। ৩১. ৬. কারী বেলাইত হোসাইন, প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা, নূরানী পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষা, ঢাকা। ৩২. ৭. মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দা‘ঈ ও মুফাসসির, ঢাকা। ৩৩. ৮. মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মাসিক মাদীনা সম্পাদক, ঢাকা, বাংলাদেশ ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, রাবিতাতুল আলামিল ইসলামী, মাক্কা, সৌদী আরব। ৩৪. ৯. মাওলানা কামালুদ্দীন যাফরী, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ৩৫. ১০. শাইখ সায়্যিদ আনওয়ার হুসাইন তাহির জাবিরী মাদানী, খতীব, আন্দর কিল্লা শাহী মাসজিদ, চট্টগ্রাম। সৌদী আরব ৩৬. ১. শাইখ আবদুল আযীয ইবন ‘আবদুল্লাহ ইবন বায, সভাপতি, আললাজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩৭. ২. শাইখ আবদুর রায্যাক ‘আফীফী, সহ সভাপতি, আল লুজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩৮. ৩. শাইখ আবদুল্লাহ ইবন কুউদ, সদস্য, আল লুজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩৯. ৪. শাইখ আবদুল্লাহ ইবন গাদয়ান, সদস্য, আল লুজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৪০.৫. ড. মানে আল জুহানী। মহা সচিব, আন নাদওয়াতুল আলামিয়্যাহ লিশ শাবাবিল ইসলামী, বিশ্ব ইসলামী যুব সংগঠন, (ওয়ামী) রিয়ায, সৌদী আরব। ৪১. ৬. শাইখ আবূ বাকর আল জাযাইরী, ওয়াইয, মাসজিদে নববী ও শিক্ষক, মাদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রিয়ায. সৌদী আরব। ৪২.৮. ড. মুহাম্মাদ আহমাদ র্ফারাখ, জিদ্দা, সৌদী আরব। ৪৩.৯. ড. তালাল উমার বাফাকীহ, কমপ্লেক্স, মহা পরিচালক, আল মুজাম্মাআল ফিকহী (ফিকহ কমপ্লেক্স), মাক্কা মুকাররামাহ, সৌদী আরব। ৪৪.১০. শাইখ আলী আবদুর রহমান হুযাইফী, ক. শিক্ষক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনা মুনাওয়ারা, খ. উপদেষ্টা, মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা, গ. ইমাম ও খতীব মাসজিদে নববী, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৪৫.১১. শাইখ আবদুল আযীয জানদাওয়াল, উপদেষ্টা, হজ্জ ও আওকাফ মন্ত্রণালয় ও প্রধান তত্ত্বাবধায়ক মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৪৬.১২. শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আকীল ইবন সুলাইমান আকীল, সহকারী মহাসচিব মসজিদ বিভাগ, মাক্কা মুর্ক্কারমা সৌদী আরব। মিসর ৪৭.১. শাইখ মুহাম্মাদ রাশীদ রিযা (মৃত:১৩৫৪ হি.) মিসর। ৪৮.২. শাইখ মুহাম্মাদ আবদুল আযীম যুরকানী (মৃত: ১৩৬৭ হি.) মিসর। ৪৯.৩. শাইখ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ দাররায (মৃত: ১৩৭৭ হি.) মিসর। ৫০.৪. শাইখ মুহাম্মাদ শাকির (মৃত: ১৩৭৭ হি.) মিসর। ৫১.৫. শাইখ মাহমূদ আবূ দাকীকাহ, আল আযহার, মিসর। ৫২.৬. ড.আবদুল হালীম মাহমূদ (মৃত: ১৩৯৭ হি.) শাইখুল আযহার, মিসর। ৫৩.৭. শাইখ মুহাম্মাদ গায্যালী (মৃত: ১৪১৬ হি.) মিসর (আমীর আবদুল কাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুসতুনতুনিয়্যাহ, জাযায়ের) ৫৪.৮. শাইখ জাদুল হক (মৃত: ১৪১৭ হি.) শাইখুল আযহার, মিসর ৫৫.৯. শাইখ সায়্যিদ সাবেক (মৃত: ১৪২০ হি.) মিসর, (উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, মাক্কাতুল মুর্কারামাহ, সৌদী আরব)। ৫৬.১০. ড.আবদুল গনী রাজিহী, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিসর। পাকিস্তান ৫৭.১.মুফতী মুহাম্মাদ শাফী (মৃত: ১৩৯৬ হি.) পাকিস্তান। ৫৮.২.শাইখ যাফার আহমাদ উসমানী (মৃত: ১৩৯৪ হি.) পাকিস্তান। কুয়েত ৫৯.১.শাইখ মাশআল মুবারাক সাবাহ, পরিচালক: ইফতা বিভাগ, আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়, কুয়েত। ৬০.২. শাইখ আবদুর রাহমান সাফী। কাতার ৬১.১.শাইখ আবদুল্লাহ ইবন ইবরাহীম আনসারী, মুদীর, ইয়উত তুরাসিল ইসলামী, দোহা, কাতার, মৃত: ১৪১০হিজরী। ৬২.২. ড. ইউসুফ কারযাভী, শরীয়া এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়, কাতার। সিরিয়া ৬৩.১. শাইখ মুহাম্মাদ আলী সাবূনী (সিরিয়া) শিক্ষক, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, মাক্কাহ মুকাররামা, সৌদী আরব)। ৬৪.২. শাইখ আবদুর রায্যাক হালাব, আওকাফ মন্ত্রণালয়, বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, সিরিয়া। ৬৫.৩. শাইখ আবদুর রায্যাক হালাবী, বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, দামেস্ক বিশেষজ্ঞ কারী ও মাশায়েখ পরিষদ, হানাফী মাযহাবের মুফতী। ৬৬.৪. শাইখ আবদুল ফাত্তাহ বাযাম, মহাপরিচালক: মা‘হাদুল ফতহিল ইসলাম, দামেস্ক। জর্ডান ৬৭.১. শাইখ ইউসুফ ইবন আবদুর রাহমান বারকাবী, যারকা, হাশিমী রাজতন্ত্র জর্ডান। ৬৮.২. শাইখ ইযযুদ্দীন আল খাতীব তামীমী, প্রধান মুফতী, আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়, ফাতওয়া বিভাগ, আম্মান, জর্ডান। মৌরিতানিয়া ৬৯.১. শাইখ বাদ্দাহ ইবন বূসিরী (মৃত:১৪৩০হি.) ইসলামিক গণতান্ত্রিক মৌরিতানিয়া। ৭০.২. ড. ইবরাহীম ইবন ইসমাঈল, অফিস প্রধান রাবেতাতুল আলামিল ইসলামী ও মাকতাবুল মা‘হাদুল কুরআনী, নাওয়াকশোত, মৌরিতানিয়া। সুদান ৭১.১.ড. আবদুর রাহীম আলী মুহাম্মাদ, সহকারী পরিচালক, আফ্রিকান ইসলামিক সেন্টার, খারতুম, সূদান। লিবিয়া ৭২.১. শাইখ তাহির আহমাদ যাবী (মৃত:১৪০৬ হি.) মুফতী লিবিয়া। তুরস্ক ৭৩.১. শাইখ লূতফী দোগান, ওয়াকফ প্রধান ও প্রাক্তন ধর্ম বিষয়ক চেয়ারম্যান, গবেষণা সেন্টার, আঙ্কারা, তুরস্ক। ফ্রান্স ৭৪.১. শাইখ মুহাম্মাদ আইয়ুব, সভাপতি: ফ্রান্স মুসলিম কম্যুনিটি। ৭৫.২. শাইখ সালিহ আল আওয়াদ, ইসলামিক এডুকেশন সেন্টার, প্যরিস, ফ্রান্স যুক্তরাজ্য ৭৬.১. শাইখ শরীফ আহমাদ হাফেয, জমইতুল কুরআন, লন্ডন, যুক্তরাজ্য। বেলজিকা ৭৭.১. শাইখ মাহমূদ মুজাহিদ মুহাম্মাদ হাসান, ইফতা, দাওয়াত, ইরশাদ ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, বেলজিকা শাখা। জাযিরা রিনোন ৭৮.১. আহমাদ সাঈদ আনকার, সভাপতি, ইসলামিক সেন্টার, জাযিরা রীনোন। ৭৯.২. শাইখ ফায়সাল মওলুবী, ইসলামী ঐক্য পরিষদ। ৮০.৩. শাইখ ইয়াহইয়া ইবন আলী হাজূরী। বিভন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও সংস্থা ১. আন্তর্জাতিক ইসলামিক শিক্ষা সেমিনার/১৩৯৭ হিজরী, অনুবাদ কমিটি, মাক্কা মুকাররামা, সৌদী আরব। ২. আললাজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩. হাইআতু কিবারিল উলামা (বিশেষজ্ঞ উলামা পরিষদ), সৌদী আরব। ৪. আল আমানাতুল আম্মা, আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা সংস্থা, রিয়ায, সৌদী আরব। ৫. বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, দামেস্ক বিশেষজ্ঞ কারী ও মাশায়েখ পরিষদ। ৬. মা‘হাদুল ফাতহিল ইসলামী, দামেস্ক। ৭. আল আযহার ফাতওয়া বিভাগ, মিসর। ৮. মজলিসে ইলমী (একাডেমী কাউন্সিল) দারুল উলূম দেওবন্দ, ভারত। ৯. দারুর ইফতা, আইন মন্ত্রণালয়, মিসর। ১০. আল আযহার বিশেষজ্ঞ উলামা কমিটি, মিসর। ১১. মাজলিসু ইকরা (বিশেষজ্ঞ আলিমগণের উপস্থিতি), দামেস্ক, সিরিয়া। ১২. শরীয়া এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়। ১৩. আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রনালয়, ফাতওয়া বিভাগ, আম্মান, জর্ডান। ১৪. ইফতা বিভাগ, আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রনালয়, কুয়েত। ১৫. জমিয়তে উলামা হিন্দ, দিল্লী, ভারত। ১৬. আওকাফ মন্ত্রণালয়, বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, সিরিয়া। ১৭. ধর্ম বিষয়ক বিভাগ, আঙ্কারা, তুরস্ক। ১৮. ইউরোপীয় পরিষদ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, প্যারিস, ফ্রান্স। ১৯. রাবেতাতুল আলামিল ইসলামী ও মাকতাবুল মাহাদুল কুরআনী, নাওয়াকশোত, মৌরিতানিয়া। ২০.আজমী (অনারবী) ও লাতীনী বর্ণে কুরআন লিখন প্রতিরোধ শির্ষক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন, আয়োজক: মারকাযুত তারবিয়াতিল ইসলামিয়া, প্যারিস, ১৯ শাওয়াল ১৪০৮ হিজরী / ৪.৬.১৯৮৮ ইংরেজী। এ সম্মেলনে সৌদী আরব, সিরিয়া, সূদান, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে ১৪ জন বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ আলিম অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারী দেশ ও সংস্থাগুলো নিম্নরূপ: ১. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনা মুনাওয়ারা। ২. উপদেষ্টা, মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৩. ইমাম ও খতীব মাসজিদে নববী, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৪. হজ্জ ও আওকাফ মন্ত্রণালয় ও প্রধান তত্ত্বাবধায়ক মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৫. মাসজিদ বিভাগ, মাক্কা মুর্কারামা, সৌদী আরব। ৬. ইফতা, দাওয়াত, ইরশাদ ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, বেলজিকা শাখা। ৭. বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, দামেস্ক বিশেষজ্ঞ কারী ও মাশায়েখ পরিষদ। ৮. মা‘হাদুল ফাতহিল ইসলামী, দামেস্ক। ৯. আফ্রিকান ইসলামিক সেন্টার, খারতুম, সূদান। ১০.যারকা. দারুল ইফতা, জর্ডান। ১১. গবেষণা সেন্টার, আঙ্কারা, তুরুস্ক। ১২. জমইতুল কুরআন, লন্ডন, যুক্তরাজ্য। ১৩. ফ্রান্স মুসলিম কম্যুনিটি। ১৪. ইসলামিক এডুকেশন সেন্টার, প্যারিস, ফ্রান্স। ১৫. ইসলামী ঐক্য পরিষদ। ১৬. ইসলামিক সেন্টার, জাযিরা রীনোন। এর পর আশা করি আর কোন সন্দেহ সংশয় নয়। আর দেরী নয়। আখিরাতের ডাক আসার আগেই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমরা আমাদের কোন লেখালেখির বিকৃত উচ্চারণ যেমন মেনে নিতে পারি না, অনুরূপ আল্লাহর কালামের অর্থ বিকৃতকারী বিকৃত উচ্চারণ তিনি (আল্লাহ) কীভাবে মেনে নেবেন ? তাই আসুন, অনারবী বর্ণে কুরআনের আয়াত প্রতিবর্ণায়ন এবং প্রতিবর্ণায়িত তথাকথিত কুরআন প্রকাশ ও পড়া থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ-শুদ্ধ উচ্চারণে তাঁর কালাম তিলাওয়াতের তাওফীক দান করুন। আমীন॥”>কুরআন কারীম আল্লাহর কালাম। আরবী অনারবী সকল ভাষার মানুষের হিদায়াতের জন্য বিশ্ব নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দীর্ঘ তেইশ বছরে আরবী ভাষা ও বর্ণে নাযিল করেছেন এ কালাম। সহজ করে দিয়েছেন এর পঠনপাঠন। কুরআনে তিনি ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: অবশ্যই নিশ্চিতভাবে আমি কুরআনকে (তিলাওয়াত ও বুঝার জন্য) সহজ করে দিয়েছি। অতঃপর আছে কি কেউ চিন্তাশীল বা উপদেশ গ্রহণকারী? সূরা কামার:১৭,২২,৩২,৪০। এর সার্বিক হিফাযাতের দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন স্বয়ং রাব্বুল আলামীন। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, অর্থানুবাদ: এর (কুরআন) সংরক্ষণ ও কিরাআতের দায়িত্ব আমারই। সূরা কিয়ামাহ:১৭। তিনি আরও ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: ‘অবশ্যই আমি যিক্র (কুরআন) নাযিল করেছি এবং অবশ্যই আমি এর হিফাযাতকারী। সূরা হিজ্র:৯। তাই কখনও কুরআনের তিলাওয়াতে ও উচ্চারণে বিকৃতি ঘটেনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে এর কোনই বিকৃতি ঘটবে না। অনারবী ভাষা ও বর্ণে কুরআন লিখনের সূচনা কুরআন অবতীর্ণের সময়কাল থেকে এ পর্যন্ত বিজ্ঞ আলিমগণের কেউ একমাত্র আরবী বর্ণে উসমানী লিখন পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতি এমনকি প্রচলিত আরবী লিখন পদ্ধতিতেও কুরআন লেখাকে বৈধ বা জায়েয বলেননি। অন্যান্য ভাষার বর্ণে তো কুরআন লেখা কল্পনাই করা যায় না। কুরআন কারীম বিজয়ী বেশে দেশে দেশে প্রবেশ করে। ছড়িয়ে দেয় তাওহীদ রিসালাত ও আখিরাতের নূরের পরশ। জয় করে নেয় মানুষের মন। আর তারই বরকতে বিশ্বের বহু দেশে আরবী ভাষা ও হরফে লেখালেখি প্রচলিত হয়। জনগণ কুরআনকে আপন করে নেয় ও আত্মস্থ করে নেয় তার ভাষা ও হরফকে। অথচ তারাও ছিল আমাদের মতই অনারব। তাদেরও প্রয়োজন ছিল স্থানীয় ভাষা ও হরফে কুরআন লেখার। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত তো এমনটি হয়নি। কখন থেকে এবং কোথায় অনারবী ভাষা ও বর্ণে কুরআন লিখনের সূচনা হয় এ প্রসঙ্গে যতটুকু জানা যায় তাতে দেখা যায় খিলাফাতে উসমানিয়ার পতনের পর তুরস্কে সর্ব প্রথম পাশ্চাত্যবাদীদের দোসর ও ত্রুীড়নক মুস্তফা কামাল সংস্কারের নামে এর সূচনা করে। কামাল আতাতুর্ক সরকারীভাবে ইসলামী চিন্তা চেতনা ও তাহযীব তামাদ্দুনের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়। ঐ ব্যক্তিটিই সর্বপ্রথম আরবী ভাষার বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। আরবী ভাষা ও হরফ নিষিদ্ধ করে তার পরিবর্তে ল্যাটিন বর্ণে কুরআন লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ জারি করে। এভাবে শুরু হয় অন্য ভাষার বর্ণে কুরআন লিখনের মাধ্যমে কুরআন বিকৃতির অপপ্রয়াস। এটা তার কুরআন চর্চা বা তিলাওয়াতের সুবিধার জন্য ছিল না। তার এ পদক্ষেপ ছিল ইসলামের প্রতি সম্পূর্ণ হিংসা প্রসুত। ইসলামের অন্যান্য শি‘আর (ঐতিহ্য) যেমন দাঁড়ি রাখা, নারীদের হিজাব ও ইসলামী পোষাক পরিচ্ছদ এবং আরবী ভাষা ও হরফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিধি নিষেধ আরোপের মাধ্যমে সে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ধ্বংসের কার্যক্রম শুরু করে। সেগুলোর একটি ছিল আরবী বর্ণমালার পরিবর্তে ল্যাটিন বর্ণে কুরআনের প্রতিবর্ণায়ন। এর প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপি খিলাফত আন্দোলন শুরু হলেও তাকে থামানো যায় নি। তবে কুরআনের প্রতিবর্ণায়নসহ তার সংস্কারগুলো কেউ মেনে নেয় নি। কুরআনের তিলাওয়াত হতে হবে সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে। কেউ কোনদিন কল্পনাও করেনি যে, সহজীকরণের নামে কখনও কুরআনের প্রতিবর্ণায়ন হবে। পরবর্তিতে নিখিল ভারতে হিন্দী, নাগরী, গুজরাটি ও তামিল বর্ণে কুরআন লিখনের বিষয়টি সামনে আসে। তখন ভারতীয় আলিমগণের প্রচন্ড বিরোধিতা করায় তা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সম্ভবত সত্তরের দশকে বাংলা উচ্চারণে কুরআন প্রতিবর্ণায়নের মাধ্যমে নতুনভাবে শুরু হয় উচ্চারণ কেন্দ্রিক কুরআন বিকৃতির গুরুতর এ ফিৎনা। গবেষণা ও খোজ খবর নিয়ে দেখা যায় শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয় দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপ ও আফ্রিকার কোন কোন দেশেও আঞ্চলিক বর্ণে কুরআন প্রতিবর্ণায়নের নামে কুরআন বিকৃতির অপপ্রয়াস শুরু হয়। বাংলাদেশে কুরআনের বাংলা প্রতিবর্ণায়ন তারই একটি অংশ মাত্র। ইংরেজী উচ্চারণে কুরআন এর সাথে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ডিজিটাল কুরআনের ওয়েব সাইট খোলা হয়েছে। সেখানে মূল আরবীর সাথে সাথে বাংলা ও ইংরেজী বর্ণমালায় কুরআনের প্রতিবর্ণায়ন দেয়া হচ্ছে। খোজ নিয়ে জানা যায়, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় আলিমগণের মতামত গ্রহণ করেছে। তারা নাকি বাংলা ইংরেজী প্রতিবর্ণায়নকে কুরআন তিলাওয়াতের সহায়ক (?) হিসাবে উল্লেখ করে এর পক্ষে মত দিয়েছেন। পরবর্তি আলোচনায় প্রতিবর্ণায়ন তিলাওয়াতের সহায়ক না বিকৃতির সহায়ক তা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হবে। সার কথা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় বা বর্ণে কুরআন লিখন ইতিপূর্বে কোথাও শুরু হয়নি বা কেউ এ ধরনের চিন্তাও করেনি। ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে যখন এর সূচনা হয় তখন থেকেই হক্কানী আলিমগণ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং প্রবন্ধ ও পুস্তিকা রচনা করেন। তাঁরা সবাই এভাবে কুরআন লেখাকে কুরআনের তাহরীফ বা বিকৃতি আখ্যা দিয়ে এটা না জায়েয ও হারাম বলে এক বাক্যে ফাতওয়া প্রদান করেন। এরপর দুঃখজনক হলেও সত্য মুসলমানদের এক শ্রেণীর আলিম ও প্রকাশক এ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়েন। তারা স্থানীয় ভাষায় ও বর্ণে কুরআন লিখনের মাধ্যমে কুরআন লিপিবদ্ধ শুরু করে। এভাবে শুরু হয় অন্য ভাষার বর্ণে কুরআন লিখনের মাধ্যমে কুরআন বিকৃতির অপপ্রয়াস। পরের দিকে বেসরকারী তথা সেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে স্থানীয় ভাষা ও বর্ণে কুরআন লেখার প্রবণতা দেখা যায়। এ দুয়ের মাঝে মৌলিক পার্থক্য হল, প্রথমটি ছিল শাসকদের পক্ষ থেকে আরবী ভাষা ও হরফের প্রতি বিদ্বেষমূলক সরাসরি আঘাত। আর দ্বিতীয়টি হল বেসরকারীভাবে প্রকাশকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কুরআনের খিদমাত ও কুরআন প্রচারের-তাদের ভাষায়-এক মহৎ প্রচেষ্টা। অনারবী বর্ণে কুরআন লেখার কুপ্রভাব দ্বীন সম্পর্কে জানা, কুরআন তিলাওয়াত ও বুঝার ক্ষেত্রে মুসলমানদের আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আশাব্যঞ্জক। কিন্তু সবাই ঝুঁকছে বাংলা উচ্চারণে কুরআনের দিকে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এতে কুরআন তিলাওয়াতের হক আদায় হচ্ছে কিনা এর প্রতি কারো দৃষ্টি নেই। বিভিন্ন প্রকাশক নিজ নিজ ইচ্ছানুযায়ী তথাকথিত প্রতিবর্ণায়নের মাধ্যমে তাদের ভাষায় ‘বাংলা উচ্চারণসহ কুরআন প্রকাশ করছেন। তিক্ত হলেও সত্য এতে যেমন কিছু আলিম (?) প্রতিবর্ণায়নে সরাসরি অংশগ্রহণ করছেন অনুরূপ উচ্চারণ বিশুদ্ধ হওয়ার সার্টিফিকেটও প্রদান করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ৮৫ ভাগ উচ্চারণ বিশুদ্ধ হতে পারে, শতভাগ নয়। অথচ তাঁরা যদি এমনটি না করে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতেন এবং জনগণকে এ বিষয়ে সতর্ক করতেন তাহলে প্রকাশকগণ এককভাবে এমন দুঃসাহস দেখাতে পারত না। এর সুদূর প্রসারী কুপ্রভাব হিসেবে দেখা যায়, ক-লেখালেখিতে নিজ নিজ জ্ঞান অনুযায়ী বাংলা ও ইংরেজী বর্ণে কুরআন প্রতিবর্ণায়নের ব্যবহার। খ-সরকারী ও বেসরকারী পাঠ্য পুস্ককেও দেখা যায় এর ব্যাপক প্রয়োগ। গ-নোট বুক, গাইড, ডায়েরী, রাস্তার ফুটপাত ও বাসে বিক্রির উদ্দেশে প্রণীত বিভিন্ন ধরনের বই, নামায শিক্ষা, পাঞ্জ সূরা, ওযীফা এমনকি বিভিন্ন যান বাহন বাস, ট্রাক, টেম্পো, ইত্যাদিতে কুরআনের আয়াত ও দুআ দরূদের বিকৃত উচ্চরণের ছড়াছড়ি। ঘ-সর্বপরি অমুসলিম তথা ইসলাম বিদ্বেষী মহল কুরআন সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে। সুযোগ পাবে মুসলমানদের মন থেকে কুরআনের আযমাত ও সম্মান মুছে ফেলার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র ফাঁদার। আমার জানামতে পশ্চিমা জগতের কিছু বুদ্ধিজীবী এতে উৎসাহ যোগাচ্ছেন। উদ্দেশ্য, এভাবে বিভিন্ন ভাষার বর্ণে তথাকথিত কুরআনের মাধ্যমে মূল কুরআন থেকে মুসলিম জনগণকে বিচ্যুত করা। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখা ও পড়া যাবে না বাংলা-ইংরেজী তথা অনারবী বর্ণে কেন কুরআন লেখা ও পড়া যাবে না। কারণগুলো সংক্ষিপ্তাকারে এভাবে সাজানো যেতে পারে। ১-এতে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক কুরআনকে সহজ করার ঘোষণা অস্বীকার করা হবে। ২-প্রতি বর্ণায়ন অসম্ভব বিধায় কুরআন লিখনে ও পঠনে উচ্চারণ বিকৃতির দ্বার উন্মুক্ত হবে। ৩-উচ্চরণ বিকৃতির ফলে নিশ্চিত অর্থ বিকৃতি ঘটবে। ৪-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময়ে বিভিন্ন ভাষাভাষী সাহাবীগণের উপস্থিতি সত্বেও ও পরবর্তী প্রয়োজনকে সামনে রেখে প্রচলিত ভাষা ও বর্ণে কুরআন লিখা হয়নি। ৫-খুলাফা রাশিদূনের যুগে ইসলামী বিশ্বের বিস্তৃতির ফলে অনারব মুসলিমদের প্রয়োজনেও তাদের স্থানীয় ভাষা ও হরফে কুরআন লিখা হয়নি। ৬-অন্য বর্ণে কুরআন লিখার অনুমতি দেয়া হলে আল্লাহর কিতাব- আল্লাহর পানাহ -মানুষের হাতে পরিণত হবে খেলনার বস্তুতে। ৭-সৃষ্টি হবে বিভিন্ন ভাষার-এমনকি একই ভাষার-উচ্চারণে কুরআন নামের বিচিত্র গ্রন্থের, যেগুলোর একটির সাথে অন্যটির কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। ৮- দুশমনদের জন্য কুরআনে অপবাদ দেয়ার মহা সুযোগ সৃষ্টি হবে। ৯-আরবীতে কুরআন তিলাওয়াত অসাধ্য কিছু নয়। ১০-সৃষ্টি হবে বর্ণিক ও উচ্চারণিক নানান জটিলতা, বিভ্রাট ও সমস্যা। কুরআন কারীম কেন একমাত্র আরবী বর্ণেই লিখতে ও পড়তে হবে ক. আরবী ভাষা ও বর্ণেই কুরআন কারীম নাযিল করা হয়েছে নিঃসন্দেহে পৃথিবীতে প্রচলিত আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও স্থানীয় সকল ভাষাই আল্লাহর মহা নেয়ামত ও মহান দান। তবে এর মাঝে আরবী ভাষা প্রাঞ্জল ও সর্বত্তোম। তাই সকল ভাষার স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা এ ভাষাকেই তাঁর নাযিলকৃত সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী গ্রন্থ আল কুরআনের জন্য নির্বাচন করেছেন। কুরআন কারীম আরবী ভাষা ও বর্ণে নাযিল করা হয়েছে মর্মে আল্লাহ তা‘আলা এগারোটি আয়াত নাযিল করেছেন। যেমন, তিনি ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: “সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় শু‘আরা:১৯৫। তিনি আরও ইরশাদ করেন, অর্থানুবাদ: ‘অবশ্যই আমি কুরআন নাযিল করেছি আরবী ভাষায়”। ইউসুফ:২। ইবন ফারিস (মৃ: ৩৯৫ হিজরী) বলেন, অবশ্যই এর বর্ণগুলো সেই নামগুলোর অন্তর্ভুক্ত যেগুলো আল্লাহ আদমকে শিখিয়েছিলেন” অতএব এর বর্ণগুলোর উচ্চারণ বিকৃত হয় এমন প্রতিবর্ণায়ন কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমনটি করা হলে প্রকারান্তরে একথাই বুঝানো হবে যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য কঠিন ভাষা ও বর্ণে কিতাব নাযিল করেছেন। (আল্লাহর পানাহ)। খ. উচ্চারণ বিকৃতিতে অর্থ বিকৃত হতে বাধ্য কুরআনী শব্দাবলীর উচ্চারণ বিকৃতি নিশ্চিত অর্থ বিকৃতি ঘটায়। কুরআন আরবী ভাষা ও বর্ণে নাযিল হয়েছে। তাই আরবী বর্ণেই কুরআন লিখিত হতে হবে। অন্য কোন ভাষা বা বর্ণে নয়। অন্য ভাষা বা বর্ণে লিখিত হলে বর্ণিক, উচ্চারণিক ও অর্থ বিকৃতির কারণে তা কুরআন হিসেবে গণ্য হবে না। বিকৃত তিলাওয়াতে সাওয়াবের পরিবর্তে অবশ্যই গুনাহ হবে। গ.সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত আলিমগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরবী বর্ণে গঠিত শব্দ ও অর্থের সমষ্টি কুরআন। সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণ কুরআন কারীমের এক অবিচ্ছেদ্দ অংশ। সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে অন্তরায় সৃষ্টিকারী অন্য কোন বর্ণে ও পন্থায় কুরআন লিখা যাবে না। অতএব সঠিক ও বিশুদ্ধ উচ্চারণের প্রয়োজনেই একমাত্র আরবী হরফ ও বর্ণেই কুরআন লিখতে ও পড়তে হবে। ঘ. উসমানী লিখন পদ্ধতির অনুসরণ সাহাবা ও আইম্মায়ে কিরামের সর্বসম্মত ইজমা অনুযায়ী উসমানী লিখন পদ্ধতিতে কুরআন লিখা ওয়াজিব। একমাত্র আরবী হরফেই এ পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব। অনারবী বর্ণে এ পদ্ধতিতে কখনই কুরআন লিখা যাবে না। ঙ. কুরআন কারীমের তিলাওয়াতে রূহানিয়্যাত কুরআন কারীমের তিলাওয়াতে রূহানিয়্যাত প্রাপ্তির জন্যই আরবী হরফে কুরআন লিখতে হবে। অন্যথায় বিকৃত উচ্চারণে কুরআন পাঠে সাধারণ মুসলিমের অন্তর থেকে কুরআনের আযমাত ও রূহানিয়্যাত উঠে যাবে। কাংখিত ও গ্রহণযোগ্য তিলাওয়াত কুরআন নাযিল করা হয়েছে তারতীলের সাথে তিলাওয়াত ও আমল করার জন্য। তিলাওয়াত হলো কাংখিত এক ইবাদাত যা সালাতের অন্যতম একটি রুকন। কুরআনই একমাত্র আসমানী গ্রন্থ যা না বুঝে তিলাওয়াত করলেও তার প্রতিটি হরফ উচ্চারণে দশ দশটি নেকী। তাই তিলাওয়াত হতে হবে সহীহ ও উচ্চারণিক বিকৃতমুক্ত। নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে পড়ে দেখিয়েছেন কিভাবে আল্লাহর পছন্দনীয় তিলাওয়াত করতে হবে। সাহাবা কিরাম রাসূলের অনুকরণে তাঁদের ছাত্রদের শিখিয়েছেন কুরআন তিলাওয়াত পদ্ধতি। এসব কিছুই অকাট্যভাবে প্রমাণ করে সহী-শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত ফরযে আইন। এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামীন নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তারতীল অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াতের সরাসরি নির্দেশ প্রদান করেন, অর্থানুবাদ: সুস্পষ্ট তারতীলের সাথে ধীরে ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করুন। সূরা মুয্যাম্মিল : ৪। তারতীলের অর্থ বর্ণনা করতে গিয়ে রাগিব ইসফাহানী বলেন, সহজ ও সঠিকভাবে মুখ হতে শব্দ উচ্চারণ করা। ইবন মানযূর বলেন, কিরাআতে তারতীল হলো, ধীরে সুস্থে পড়া এবং হরূফ ও হারাকাতের স্পষ্ট উচ্চারণ করা। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তারতীলের ব্যাখ্যায় বলেছেন, হরফসমূহের যথাযথ সুন্দর উচ্চারণ ও বিরাম স্থল সম্পর্কে জ্ঞানার্জন হল তারতীল নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতেন এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন, হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কুরআন পাঠ কেমন ছিল ? উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাঁর পড়া ছিল টানা টানা। এরপর তিনি নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণে بسم الله الرحمن الرحيم তিলাওয়াত করেন। তিনি بسم الله টেনে পড়েন। الرحمنএ দীর্ঘ করেন। الرحيم টেনে পড়েন। ইমাম তিরমিযী ইয়ালা ইবন মামলাক হতে একটি বর্ণনায় বলেন, তিনি উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তিলাওয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণে কিছু আয়াত তিলাওয়াত করে শোনান। তিনি এমন তিলাওয়াত করেন যার প্রতিটি হরফ ছিল স্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। একবার তিনি এক ব্যক্তিকে কুরআনের আয়াত إِنَّمَا الصَّدَقتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسكِينِ পড়তে শুনলেন। কিন্তু সে তাড়াতাড়ি পড়ে গেল। অর্র্র্থাৎ لِلْفُقَرَاءِ শব্দটিতে মাদ্দ করেনি (অর্থাৎ: রা হরফ টেনে পড়েনি)। তখন ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এভাবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে পড়াননি। লোকটি বলল, তাহলে হে আবূ আবদির রহমান! তিনি আপনাকে কিভাবে পড়িয়েছেন ? তখন ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আয়াতটি পড়লেন এবং لِلْفُقَرَاءِ শব্দটিতে মাদ্দ করলেন (অর্থাৎ: রা হরফ টেনে পড়লেন)। এরপর বললেন, নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে আমাকে পড়িয়েছেন। উল্লিখিত আয়াত, হাদীস ও সাহাবীর বর্ণনানুযায়ী বিশুদ্ধ ও তাজওয়ীদ অনুযায়ী কুরআন তিলাওয়াত ফরযে আইন। আর তাই পরবর্তীতে ইলমুল ক্বিরাআতের ইমামগণও এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, তাজওয়ীদের নিয়ম কানুন অনুযায়ী অবশ্যই কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। হাফেয ইবনুল জাযারী বলেন, নিঃসন্দেহে যেভাবে উম্মতের উপর কুরআন বুঝা ও তার বিধিবিধান মেনে চলার মাধ্যমে ইবাদাত ফরয তেমনিভাবে কুরআনিক শব্দাবলী ও হরফসমূহের ঠিক সেভাবে বিশুদ্ধ উচ্চারণও (অর্থাৎ তিলাওয়াত) ফরয, যেভাবে ক্বিরাআতের ইমামগণ বর্ণনা পরম্পরায় আরবী নাবীর দরবার হতে লাভ করেছেন। কোন অবস্থাতেই তার বিরোধিতা করা যাবে না এবং এটা বাদ দিয়ে অন্যটাও গ্রহণ করা যাবে না মুহাম্মদ মাক্কী ইবন নাস্র বলেন, ‘নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ হতে আমাদের যুগ পর্যন্ত উম্মাতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল তাজওয়ীদ সহকারে অর্থাৎ বিশুদ্ধ তিলাওয়াত ওয়াজিব। এ ব্যাপারে তাদের কেউ কখনো দ্বিমত পোষণ করেননি। আর এটা সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী একটি দলীল। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখা ও পাঠের সমস্যা প্রথমতঃ প্রতিবর্ণায়ন সমস্যা আরবী হরফের প্রতিবর্ণায়ন সমস্যাই প্রকট সমস্যা। এর সমাধানকল্পে বিভিন্ন সময় গবেষণা করা হয়েছে। তবে সর্বসম্মত কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় নি। তাই প্রতিবর্ণায়ন সমস্যা থেকেই গেছে। আরবী হরফ সংখ্যা উনত্রিশটি। এগুলোর মধ্যে চৌদ্দটি বর্ণ রয়েছে যেগুলোর প্রতিবর্ণায়ন অন্য কোন ভাষায় সম্ভব নয়। ث، ح ، خ ، ذ ، ز ، ص ، ض ، ط ، ظ ، ع ، غ ، ق ، و ، ي । যেমন, প্রাথমিকভাবে আরবী পাঁচটি বর্ণের (ج ، ذ ، ز، ض ، ظ ) জন্য একটিমাত্র বাংলা বর্ণ (জ) ব্যবহার করা হত। পরবর্তীতে এগুলোর জন্য বাংলা তিনটি বর্ণের ব্যবহার শুরু হয়। (ذ، ز ، ظ) এর জন্য (যা), (ج) এর জন্য (জ) ও (ض) এর জন্য (দ)। অথচ (দ) আরবী (د) এর হুবহু প্রতিবর্ণ। এখন আবার (ض)-এর জন্য ব্যবহার শুরু হয়েছে বাংলায় য বা জ বা দ। অনুরূপ আরবী তিনটি হফর (ث ، س ، ص) এর জন্য বাংলা একটি বর্ণ (স) প্রচলিত ছিল। পরবর্তীতে তা দটিতে উন্নীত হয়। (ث) এর জন্য (ছ বা স) ও (س ، ص) এর জন্য (স)। (غ) – এর জন্য (গ)। (ع)- এর জন্য যবর যের পেশ ভেদে (আ, ই, উ) ব্যবহার হয়। তাছাড়া আরবী দু’টি হরফের জন্য রয়েছে বাংলা একটি বর্ণ। যেমন, (ه ، ح) এর জন্য (হ), (ق ، ك) এর জন্য (ক), (ت ، ط) এর জন্য (ত)। এখানে কেউ কেউ বফলা যোগে দু’টি হরফের মাঝে পার্থক্য করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন বটে। এখানে (ه) এর জন্য (হ) (ت) এর জন্য (ত) (ك) এর জন্য (ক) ঠিক আছে। কিন্তু (ق ، ط ، ح) এর জন্য বাংলায় কোন প্রতিবর্ণ নেই। অনুরূপ (ي ، و) এর জন্য কোন প্রতিবর্ণ খুজে পাওয়া যায় না। মজার ব্যাপার হলো তাও এগুলো আবার সর্বসম্মত নয়। অর্থাৎ যার যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যবহার করেছে। এগুলোর কোনটিই সঠিক উচ্চারণ নয়। যার যার খেয়াল খুশিমত এগুলোর প্রতিবর্ণ দিয়ে লিখিত কুরআনিক শব্দাবলী বিকৃত হতে বাধ্য। ইংরেজী বর্ণ ছাব্বিশটি যা আরবী হরফ সংখ্যা হতে কম। অতএব নিঃসন্দেহে ইংরেজীতে আরবীর প্রতিবর্ণায়ন যে সম্ভব নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তা ছাড়াও আরবীতে এমন কিছু হরফ রয়েছে যার প্রতিবর্ণায়ন ইংরেজীতে একেবারেই অসম্ভব। আরবী কোন কোন হরফের জন্য ইংরেজীতে ব্যবহৃত হয় দু’টি বর্ণ। মাখরাজ ও গুণাবলীতে এগুলোর মাঝে রয়েছে আকাশ পাতাল ফারাক। যেমন, (د ، ض) – এর জন্য (উ)। (ث ، س ، ص) এর জন্য (ঝ)। (ه ، ح) – এর জন্য (ঐ)। (ج، ذ ، ز ، ض، ظ) – এর জন্য (ঔত)। (ش) – এর জন্য (ঝঐ)। (ث)- এর জন্য (ঞঐ)। (خ) – এরজন্য (কঐ)। (ق) এর জন্য (ছ)। (ت) এর জন্য (ঞ)। (ي ، و) এর জন্য কোন বরাদ্দ নেই। ঘ. বর্ণিক বিকৃতিতে উচ্চারণিক বিকৃতি হতে বাধ্য। বিকৃত উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত জায়েয নেই। যেমন আরবী একটি শব্দ। একাধিক বাংলা উচ্চারণ। অথচ সঠিক উচ্চারণে এর কোনটিই শুদ্ধ নয়। যেমন, رمضان=রমজান, রামাদান, রমযান, রামাযান, صالح = সালেহ, ছালেহ, سلام = সালাম, ছালাম ثالث =সালিস, ছালিছ। ব্যক্তি পর্যায়েও চলে এ সম্পর্কে প্রচুর গবেষণা। এদের মধ্যে রয়েছেন ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক প্রমুখ। কিন্তু সর্বসম্মত কোন সিদ্ধান্তে কেউ উপনীত হতে পারেননি। ফলে অবস্থা যা দাঁড়ায় এ, টি, এম, ফাখরুদ্দীনদের ভাষায়, ‘আরবী হরফ সমূহের বাংলা প্রতিবর্ণায়ন বা অনুলিখনের ক্ষেত্রে যেহেতু কোন সুষ্ঠু ও স্বীকৃত নীতিমালা নেই তাই এক এক বইতে এক এক রকমভাবে লেখা থাকে। যদিও ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. মুহাম্মদ এনামুল হক প্রমুখ এ বিষয়ে লিখেছেন এবং তৎপরবর্তীতেও অনেকে আলোচনা করেছেন, কিন্তু এ সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং দ্বিধা-সন্দেহ আরো বেড়ে গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুসৃত নীতি রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটির নীতির সাথে বিসদৃশ্য, আবার বাংলা একাডেমীর অভিধানের সাথে অন্যান্য বইয়ের নীতি মেলে না। আর এতে করে শিক্ষার্থী ও সাধারণ পাঠক বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এমনকি মাদ্রাসা শিক্ষিত অনেক লোকও তা বুঝে উঠতে পারে না। যে কোন ভাষাকে বুঝতে হলে অবশ্যই তার নিজস্ব ভাবধারা ও স্বকীয়তা অক্ষুণ্নরেখে সেই আলোকেই বিচার বিশ্লে-ষণ করতে হবে। এমন কোন পন্থা বা পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে না যাতে করে ভাষার বিকৃতি ঘটে এবং ভাষা তার আপন ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলে। প্রতিবর্ণায়নের ক্ষেত্রে ধ্বনিই হবে একমাত্র বিচার্য। কারণ, বর্ণ হরফ এগুলো সেই ধ্বনির প্রতীক হিসাবেই নির্ধারিত। ড. আব্দুল হাই বলেন, ধ্বনিবিজ্ঞানীদের কাছে ধ্বনির অক্ষর বা প্রতীক বড় নয়, ধ্বনিই সর্বেসর্বা। তাদের মতে যে কোন প্রতীকের সাহায্যেই যে কোন ধ্বনির প্রতিলিপি নির্মাণ করা যায়, তবে সুবিধা-অসুবিধার কথা ভেবে তাঁরা তা করেন না। প্রাচীন সংস্কার এবং অক্ষরের ঐতিহাসিক মূল্যকেই বড় স্থান দিয়ে থাকেন এ প্রসঙ্গে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আরবী শব্দের বানান শুদ্ধির ব্যাপারটি অতীব জটিল। এ জন্য বিভিন্ন ভাষায় প্রতিবর্ণায়নের (ঞৎধহংষধঃরড়হ) ব্যবস্থা রয়েছে। যেহেতু আরবীতে এমন কতক বর্ণ আছে যা আর কোন ভাষায় নেই, তাই উচ্চারণ ও প্রতিবর্ণায়নের বেলায় সহজ সমাধান লাভ করা দুরূহ। তাই দুঃখ পাই যখন দেখি কেউ কুরআনিক বর্ণের প্রতিবর্ণায়নের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। দুঃখ পাই যখন কেউ বলেন, কুরআন মাজীদ নাকি প্রতিবর্ণায়িত উচ্চারণে একা একা নিজে নিজেই পড়া যায়। ভাবতে অবাক লাগে বাংলা সাহিত্যের প্রতিথযশা পন্ডিত সর্বজন স্বীকৃত ভাষা বিশারদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ও ড. মুহাম্মদ এনামুল হক যেটা পারেন নি এখন কিছু মানুষ সে দুঃসাহস দেখচ্ছেন। তারা নিজ নিজ মেধা, চিন্তা ভাবনা দিয়ে জোর করে আরবী বর্ণ প্রতিবর্ণায়নের ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। সত্যিকার অর্থে পৃথিবীর কোন ভাষাতেই উপরে বর্ণিত চৌদ্দটি বর্ণের প্রতিবর্ণায়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই আরবী ভিন্ন অন্য কোন বর্ণেই কুরআন লিপিবদ্ধ করা সম্পূর্ণ অবান্তর, অসম্ভব এবং নিজ মস্তিস্কপ্রসূত প্রতিবর্ণায়নে নিঃসন্দেহে ও নিশ্চিত কুরআনের উচ্চারণ বিকৃতির মাধ্যমে অর্থ বিকৃতি ঘটাবে। দ্বিতীয়তঃ বর্ণিক ও উচ্চারণিক বিকৃতিতে অবশ্যম্ভাবি অর্থ বিকৃতি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্ণিক উচ্চারণিক বিকৃতিতে অর্থ বিকৃতি হতে বাধ্য। কিন্তু কীভাবে ? পাঠকবর্গের অবগতির জন্য এর কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যেমন: মূল আরবী অর্থ ইংরেজী বাংলা আরবী উচ্চারণ অর্থ الحمد সকল প্রশংসা অখঐঅগউট আলহামডু الهمد মৃত্যু, অগ্নি নির্বাপন قل বলুন কটখ কুল كل খাও عليم মহাজ্ঞানী অখওগ আলীম أليم কঠিন যন্ত্রনাদায়ক অতএব এমন বিকৃত অর্থবোধক তিলাওয়াত কি জায়েয বলা যেতে পারে? শুধু কি তাই? কুরআনিক শব্দ مُمَدَّدَةٍ বাংলায়: মুমাদ্দাদাহ, ইংরেজীতে: গঁসধফফধফধয, এর বাংলা উচ্চারণ মুমাড্ডাডাহ। গোল তা-এর ব্যবহার বড়ই জটিল। تَوَّاباً বাংলায়: তাওয়াবা, ইংরেজীতে ঞধিিধনধ, এর বাংলা উচ্চারণ টাওয়াবা। ইংরেজীতে দাল হয়ে গেল ডাল, তা হয়ে গেল টা। তানওয়ীন ও মাদ্দের কোন খবর নেই। তৃতীয়তঃ ইলমুত তাজওয়ীদের প্রয়োগিক সমস্যা কুরআন তিলাওয়াতের সাথে ইলমুত তাজওয়ীদের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। ইলমুত তাজওয়ীদ কুরআন কারীমের অলংকার। ইলমুত তাজওয়ীদ বাদ দিয়ে সহীহ ও বিশুদ্ধ তিলাওয়াত কল্পনাও করা যেতে পারে না। তিলাওয়াতের সাথে রয়েছে মাখরাজ (হরফ উচ্চারণস্থল) পরিচিতি, গুন্নাহ, মাদ্দ ইত্যাদির সম্পর্ক। এগুলো ছাড়া সুন্দর সাবলিল তিলাওয়াত সম্ভব নয়। মাদ্দের হরফ, হারাকাত (যবর, যের, পেশ) নূন সাকিন, তানওয়ীন (দু’যবর, দু’যের, দু’পেশ) সাকিন, তাশদীদ ইত্যাদির প্রয়োগ ছাড়া এগুলো জানার কোন উপায় নেই। গোল তা-র ব্যবহার অন্য কোন ভাষায় দেখা যায় না। ইদগামের আহকাম, লাম ও রা-এর আহকাম ইত্যাদির কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। ওয়াকফ-এর কোন হুকুম মেনে চলা হবে অসম্ভব। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখিত হলে অনাকাংখিতভাবে মূল কুরআনে বর্ণ ও শব্দ সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি পাবে। এক কথায় আরবী হরফ ব্যতিত অন্য কোন ভাষায় ইলমুত তাজওয়ীদের ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্ভব নয়। হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক লিখন নিতিমালা যা রাসমে উসমানী নামে পরিচিত এবং তৎকালীন সময়ের সকল সাহাবী কর্তৃক স্বীকৃত এর প্রয়োগ আরবী হরফ ব্যতিত অন্য কোন বর্ণে কল্পনাই করা যায় না। অনারবী উচ্চারণে কুরআন লিখা ও পড়া হারাম তাই অন্য কোন ভাষায় প্রতিবর্ণায়িত বর্ণমালা দ্বারা লিখিত বা মুদ্রিত কোন কুরআন হতেই পারে না। এ জন্যই দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা ও আলিমগণ আরবী হরফ ছাড়া অন্য কোন বর্ণে কুরআন লিখাকে হারাম বলেছেন। তাই অন্য বর্ণে লিখিত বা মুদ্রিত কুরআন পড়া হারাম হিসেবেই গণ্য। সহীহ-শুদ্ধ তিলাওয়াতের জন্য শিক্ষক প্রয়োজন আরবী ছাড়া অন্য যে কোন বর্ণেই কুরআন প্রতিবর্ণায়িত হোক না কেন নিজে নিজে বা একা একা কখনই বিশুদ্ধ তিলাওয়াত সম্ভব নয়। এর জন্য অবশ্যই কোন না কোন উস্তায বা শিক্ষকের সামনে বসতেই হবে। সঠিক উচ্চারণ নিজে নিজে কখনই সম্ভব নয়। নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কুরআন নাযিলের পাশাপাশি সঠিক উচ্চারণের নিমিত্ত হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামকে সঠিক উচ্চারণের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। তিলাওয়াতে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অনুসরণ করতেন। সাহাবীগণও লিখিত কুরআনের উপর নির্ভর করেন নি। তাঁরাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর নিয়োজিত ও নির্ধারিত সাহাবী উস্তাযগণের নিকট সহীহ শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত শিখেছেন। তাহলে আমরা অনারবী শিক্ষিতরা কীভাবে দাবি করতে পারি যে, প্রতিবর্ণায়িত বাংলা বা ইংরেজী উচ্চারণে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত করতে পারবো? বাংলাকে যদি ইংরেজীতে লিখা হয় বা ইংরেজীকে লিখা হয় বাংলায়, বলতে পারেন এতে একজন বাংলাভাষী বা একজন ইংরেজীভাষী সঠিক উচ্চারণে তা পড়তে বা বলতে পারবেন? বাংলা বা ইংরেজীকে যদি আরবীতে লিখা হয় তাহলে কি কোন আরবীভাষী সঠিক বাংলা বা ইংরেজী উচ্চারণে পড়তে বা বলতে পারবেন? আমাদের ঢাকা আরবীতে হয়ে যাচ্ছে دكا (দাক্কা) বা داكا (দাকা), বাংলাদেশ আরবীতে হয়ে যাচ্ছে بنغلاديش(বাঙ্গালাদেশ) বা بنجلاديش(বাংজালাদেশ)। ইংরেজীতে প্লাষ্টিক আরবীতে হয়ে যাচ্ছে ব্লাস্টিক, টেলিফোন আরবীতে হয়ে যাচ্ছে তালিফোন। আরবীতে طيب বাংলায় হয়ে যাচ্ছে তাইয়েব, তায়্যেব, তায়্যিব, তাইয়্যিব, বলতে পারেন এগুলোর কোন্টি সঠিক? ইংরেজীতে হয়ে যাচ্ছে, (ঞবন,ঞধরবন,ঞধুবন) এর বাংলা উচ্চারণ টাইয়েব…। আরবী ط বর্ণের সঠিক কোন প্রতিবর্ণ আরবী ছাড়া অন্য কোন বর্ণে পাওয়া যাবে কী? অন্যান্য হরফ তো রয়েছে যেমনটি উপরে বর্ণিত হয়েছে-যেগুলোর প্রতিবর্ণায়ন অন্য কোন ভাষায় নেই। আমাদের করণীয় দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশী ভাষা শিখি; এজন্য রয়েছে প্রচুর ব্যবস্থা। এজন্য সময় অর্থ ব্যয়ে আমরা কুণ্ঠিত হই না। কিন্তু আসমানী কিতাব আল্লাহর কালাম যা আমাদের সকলের দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য অপরিহার্য এর জন্য আমরা সময় ব্যয় করতে প্রস্তুত নই। বিপুল টাকা খরচ করে কোমলমতি শিশুদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করি। বয়স্করা বিভিন্ন কাজে সময় ব্যয় করি। কিন্তু কুরআন শেখার জন্য একটুও বিচলিত হই না। আল্লাহর কাছে কি জবাব দেব এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই অথচ সালাত আদায় সকল নারী পুরুষের উপর ফরয। আর কুরআনের সহীহ তিলাওয়াত ছাড়া নামায সহীহ হয় না। এ জন্যই আলিমগণ সকল নারী পুরুষের জন্য বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত জানা ফরয বলেছেন। অল্প একটু সময় ব্যয় করলেই কিন্তু বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত শেখা একেবারেই সহজ। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা একাধিকবার বলেছেন, অবশ্যই আমি যিকর (কুরআন)- কে সহজ করে দিয়েছি। অত:পর আছে কি কেউ চিন্তাশীল বা উপদেশ গ্রহণকারী? সূরা কামার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগেও তো অনেক অনারব আজমী সাহাবী ছিলেন। তাদের জন্য তাদের ভাষার বর্ণে কুরআন লিখা হয়নি। এর চাইতেও প্রকট প্রয়োজন ছিল খুলাফা রাশিদূনের যুগে। যখন দিকে দিকে ইসলামী ঝান্ডা বুলন্দ হচ্ছিল। কেউ কি বলতে পারবেন তাদের প্রয়োজনে সেখানে তাদের ভাষায় বা বর্ণে কুরআন লিখা হয়েছিল? পারস্য, ইউরোপ ও আফ্রিকার মুসলমানগণও কখনও এমন উদ্ভট বক্তব্য দেন নি বা নিজেদের ভাষায় কুরআন লিখেন নি। অথচ তারা ছিলেন সে সময়কার নও মুসলিম। ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথেই তাদের উপর সালাত ফরয ছিল। ফরয আদায়ের জন্য তারা বিনা বাক্য ব্যয়ে আরবী হরফেই কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিখেছেন এবং বিশ্বে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয় আফ্রিকা ইউরোপের অনেক এলাকায় স্থানিয় ভাষার পরিবর্তে আরবী ভাষার প্রচলন হয়। তারা যদি সহীহ কুরআন তিলাওয়াত আয়ত্ব করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না? তাই আসুন আমরা সকলেই আরবীতে সহীহ ও বিশুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তিলাওয়াত শিখি। এজন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। ১. সম্মানিত ইমাম/খতীব ও কুরআন গবেষকগণ সাধারণ মুসলিম ভাই বোনদেরকে বাংলা ইংরেজী উচ্চারণে কুরআনের ভুল তিলাওয়াত থেকে বিরত থেকে কুরআন সহীহভাবে তিলাওয়াতের ব্যপারে সচেতন করবেন। ২. যারা কুরআন কারীম সহীহভাবে তিলাওয়াতে অক্ষম তারা অতি দ্রুত বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শেখার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। ৩. সন্তানদের জন্য শিশু বয়সেই কুরআনের সহীহ তিলাওয়াতের ব্যবস্থা করুন। ৪. প্রতিটি মাসজিদে সকালে/দুপুরে ছোটদের জন্য এবং বয়স্কদের জন্য সান্ধকালিন কুরআন তিলাওয়াত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ৫. বয়স্কা মা বোনদের জন্যও কুরআনের সহীহ তিলাওয়াত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অনারবী বর্ণে কুরআন লিখা ও পড়া হারাম বলেছেন যারা ব্যক্তি পর্যায়ে যখনি এ ধরণের কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে তখনই সমসাময়িক আলিমগণ এর বিরোধিতা করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন মাজীদ হিফাযতের জন্য তাঁর বান্দাদেরকে কাজে লাগিয়েছেন। পাশাপাশি বর্তমান সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সংস্থা এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। সবাই এক বাক্যে অনারবী বর্ণে কুরআন লিখাকে হারাম বলেছেন। এরই আলোকে অনারবী হরফে প্রতিবর্ণায়িত তথাকথিত কুরআন পড়াও হারাম হিসাবে গণ্য। তাঁদের গবেষণা, আলোচনা-পর্যালোচনা, সিদ্ধান্ত ও বক্তব্যের বিস্তারিত বিবরণ সূত্রসহ (সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমার লিখিত) আরবী কিতাবে দেয়া হয়েছে। এখানে শুধু তাঁদের নাম উল্লেখ করছি। ১. ইবন ফারিস (মৃত: ৩৯৫ হিজরী) ২. কাযী ইয়ায (মৃত: ৫৪৪ হিজরী) ৩. ফাকীহ আবূ বাকর ইবনুল আরাবী (মৃত: ৫৪৬ হিজরী) ৪. শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ (মৃত: ৭২৮ হিজরী) ৫. ইমাম ইবনুল হাজ্জ আবদারী (মৃত: ৭৩৭ হিজরী) ৬. আবূ ইসহাক শাতিবী (মৃত: ৭৯০হিজরী) ৭. বুরহানুদ্দীন যারকাশী (মৃত: ৭৯৪ হিজরী) ৮. জালালুদ্দীন সুয়ূতী (মৃত: ৯১১ হিজরী) ভারত: ৯. ১. হাকীমুল উম্মাত আশরাফ আলী থানবী (মৃত: ১৩৬২ হিজরী) ১০. ২. মুফতী মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী (মৃত: ১৪১৭ হিজরী) ১১. ৩. মুফতী সায়্যিদ আবদুর রাহীম (ভারত) ১২. ৪. মাওলানা সাইয়্যিদ হুসাইন আহমাদ (মাদানী), সদরে মুদাররিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ ১৩. ৫. মাওলানা সাইয়্যেদ আসগার হুসাইন, মুহাদ্দিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৪. ৬. মাওলানা শিব্বির আহমাদ উসমানী, শাইখুল হাদীস ওয়াত তাফসীর, সদরে মুহতামিম, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৫. ৭. মাওলানা মুহাম্মদ তাইয়্যিব, মুহতামিম, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৬. ৮. মাওলানা ই‘যায আলী, মুদাররিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ১৭. ৯. মুফতী মুহাম্মাদ শফী, ১৮. ১০. সাইয়্যিদ আহমাদ আলী সাঈদ, নায়েবে মুফতী, দারুল ঊলূম, দেওবন্দ। ১৯. ১১. মুহাম্মদ ইদ্রীস কান্দলুভী, মুদাররিস, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ২০. ১২. মুফতী ফারুক আহমাদ, মুফতী, দারুল উলূম, দেওবন্দ। ২১. ১৩. মাওলানা বাশীর আহমাদ, মুদাররিস, ফাইয়াদুল ঊলূম মাদ্রাসা, ভারত। ২২. ১৪. মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ, কাযী, মাদরাজ, ভারত ২৩. ১৫. মাওলানা মুহাম্মাদ কাসিম, মুদাররিস, ফাইয়্যাদুল উলূম মাদ্রাসা, ভারত। ২৪. ১৬. শাইখ আদম মুদাররিস, বাকিয়াত সালিহাত মাদরাসা, দীলোর, ভারত। ২৫. ১৬. মাওলানা আস‘আদ মাদানী, সভাপতি, জমিয়তে উলামা হিন্দ দিল্লী, ভারত। বাংলাদেশ ২৬. ১. শাইখ উবাইদুল হক, খতীব বাইতুল মুর্কারম জাতীয় মাসজিদ, ঢাকা। ২৭. ২. শাহ আহমাদ শফী, মহা পরিচালক, জামিয়া ইসলামিয়া মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম। ২৮. ৩. মুফতী আহমাদুল হক, বিভাগীয় প্রধান, দারুল ইফতা, হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ ২৯. ৪. শাইখুল হাদীস আল্লামা আযীযুল হক, শাইখুল হাদীস জামিয়া রাহমানিয়া, ঢাকা। ৩০. ৫. মুফতী আবদুর রহমান, মহা পরিচালক, ইসলামিক রিচার্স সেন্টার, বসুন্ধরা ঢাকা। ৩১. ৬. কারী বেলাইত হোসাইন, প্রবর্তক ও প্রতিষ্ঠাতা, নূরানী পদ্ধতিতে কুরআন শিক্ষা, ঢাকা। ৩২. ৭. মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দা‘ঈ ও মুফাসসির, ঢাকা। ৩৩. ৮. মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, মাসিক মাদীনা সম্পাদক, ঢাকা, বাংলাদেশ ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, রাবিতাতুল আলামিল ইসলামী, মাক্কা, সৌদী আরব। ৩৪. ৯. মাওলানা কামালুদ্দীন যাফরী, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ৩৫. ১০. শাইখ সায়্যিদ আনওয়ার হুসাইন তাহির জাবিরী মাদানী, খতীব, আন্দর কিল্লা শাহী মাসজিদ, চট্টগ্রাম। সৌদী আরব ৩৬. ১. শাইখ আবদুল আযীয ইবন ‘আবদুল্লাহ ইবন বায, সভাপতি, আললাজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩৭. ২. শাইখ আবদুর রায্যাক ‘আফীফী, সহ সভাপতি, আল লুজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩৮. ৩. শাইখ আবদুল্লাহ ইবন কুউদ, সদস্য, আল লুজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩৯. ৪. শাইখ আবদুল্লাহ ইবন গাদয়ান, সদস্য, আল লুজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৪০.৫. ড. মানে আল জুহানী। মহা সচিব, আন নাদওয়াতুল আলামিয়্যাহ লিশ শাবাবিল ইসলামী, বিশ্ব ইসলামী যুব সংগঠন, (ওয়ামী) রিয়ায, সৌদী আরব। ৪১. ৬. শাইখ আবূ বাকর আল জাযাইরী, ওয়াইয, মাসজিদে নববী ও শিক্ষক, মাদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, রিয়ায. সৌদী আরব। ৪২.৮. ড. মুহাম্মাদ আহমাদ র্ফারাখ, জিদ্দা, সৌদী আরব। ৪৩.৯. ড. তালাল উমার বাফাকীহ, কমপ্লেক্স, মহা পরিচালক, আল মুজাম্মাআল ফিকহী (ফিকহ কমপ্লেক্স), মাক্কা মুকাররামাহ, সৌদী আরব। ৪৪.১০. শাইখ আলী আবদুর রহমান হুযাইফী, ক. শিক্ষক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনা মুনাওয়ারা, খ. উপদেষ্টা, মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা, গ. ইমাম ও খতীব মাসজিদে নববী, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৪৫.১১. শাইখ আবদুল আযীয জানদাওয়াল, উপদেষ্টা, হজ্জ ও আওকাফ মন্ত্রণালয় ও প্রধান তত্ত্বাবধায়ক মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৪৬.১২. শাইখ আবদুল্লাহ ইবন আকীল ইবন সুলাইমান আকীল, সহকারী মহাসচিব মসজিদ বিভাগ, মাক্কা মুর্ক্কারমা সৌদী আরব। মিসর ৪৭.১. শাইখ মুহাম্মাদ রাশীদ রিযা (মৃত:১৩৫৪ হি.) মিসর। ৪৮.২. শাইখ মুহাম্মাদ আবদুল আযীম যুরকানী (মৃত: ১৩৬৭ হি.) মিসর। ৪৯.৩. শাইখ মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ দাররায (মৃত: ১৩৭৭ হি.) মিসর। ৫০.৪. শাইখ মুহাম্মাদ শাকির (মৃত: ১৩৭৭ হি.) মিসর। ৫১.৫. শাইখ মাহমূদ আবূ দাকীকাহ, আল আযহার, মিসর। ৫২.৬. ড.আবদুল হালীম মাহমূদ (মৃত: ১৩৯৭ হি.) শাইখুল আযহার, মিসর। ৫৩.৭. শাইখ মুহাম্মাদ গায্যালী (মৃত: ১৪১৬ হি.) মিসর (আমীর আবদুল কাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুসতুনতুনিয়্যাহ, জাযায়ের) ৫৪.৮. শাইখ জাদুল হক (মৃত: ১৪১৭ হি.) শাইখুল আযহার, মিসর ৫৫.৯. শাইখ সায়্যিদ সাবেক (মৃত: ১৪২০ হি.) মিসর, (উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, মাক্কাতুল মুর্কারামাহ, সৌদী আরব)। ৫৬.১০. ড.আবদুল গনী রাজিহী, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিসর। পাকিস্তান ৫৭.১.মুফতী মুহাম্মাদ শাফী (মৃত: ১৩৯৬ হি.) পাকিস্তান। ৫৮.২.শাইখ যাফার আহমাদ উসমানী (মৃত: ১৩৯৪ হি.) পাকিস্তান। কুয়েত ৫৯.১.শাইখ মাশআল মুবারাক সাবাহ, পরিচালক: ইফতা বিভাগ, আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়, কুয়েত। ৬০.২. শাইখ আবদুর রাহমান সাফী। কাতার ৬১.১.শাইখ আবদুল্লাহ ইবন ইবরাহীম আনসারী, মুদীর, ইয়উত তুরাসিল ইসলামী, দোহা, কাতার, মৃত: ১৪১০হিজরী। ৬২.২. ড. ইউসুফ কারযাভী, শরীয়া এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়, কাতার। সিরিয়া ৬৩.১. শাইখ মুহাম্মাদ আলী সাবূনী (সিরিয়া) শিক্ষক, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, মাক্কাহ মুকাররামা, সৌদী আরব)। ৬৪.২. শাইখ আবদুর রায্যাক হালাব, আওকাফ মন্ত্রণালয়, বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, সিরিয়া। ৬৫.৩. শাইখ আবদুর রায্যাক হালাবী, বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, দামেস্ক বিশেষজ্ঞ কারী ও মাশায়েখ পরিষদ, হানাফী মাযহাবের মুফতী। ৬৬.৪. শাইখ আবদুল ফাত্তাহ বাযাম, মহাপরিচালক: মা‘হাদুল ফতহিল ইসলাম, দামেস্ক। জর্ডান ৬৭.১. শাইখ ইউসুফ ইবন আবদুর রাহমান বারকাবী, যারকা, হাশিমী রাজতন্ত্র জর্ডান। ৬৮.২. শাইখ ইযযুদ্দীন আল খাতীব তামীমী, প্রধান মুফতী, আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়, ফাতওয়া বিভাগ, আম্মান, জর্ডান। মৌরিতানিয়া ৬৯.১. শাইখ বাদ্দাহ ইবন বূসিরী (মৃত:১৪৩০হি.) ইসলামিক গণতান্ত্রিক মৌরিতানিয়া। ৭০.২. ড. ইবরাহীম ইবন ইসমাঈল, অফিস প্রধান রাবেতাতুল আলামিল ইসলামী ও মাকতাবুল মা‘হাদুল কুরআনী, নাওয়াকশোত, মৌরিতানিয়া। সুদান ৭১.১.ড. আবদুর রাহীম আলী মুহাম্মাদ, সহকারী পরিচালক, আফ্রিকান ইসলামিক সেন্টার, খারতুম, সূদান। লিবিয়া ৭২.১. শাইখ তাহির আহমাদ যাবী (মৃত:১৪০৬ হি.) মুফতী লিবিয়া। তুরস্ক ৭৩.১. শাইখ লূতফী দোগান, ওয়াকফ প্রধান ও প্রাক্তন ধর্ম বিষয়ক চেয়ারম্যান, গবেষণা সেন্টার, আঙ্কারা, তুরস্ক। ফ্রান্স ৭৪.১. শাইখ মুহাম্মাদ আইয়ুব, সভাপতি: ফ্রান্স মুসলিম কম্যুনিটি। ৭৫.২. শাইখ সালিহ আল আওয়াদ, ইসলামিক এডুকেশন সেন্টার, প্যরিস, ফ্রান্স যুক্তরাজ্য ৭৬.১. শাইখ শরীফ আহমাদ হাফেয, জমইতুল কুরআন, লন্ডন, যুক্তরাজ্য। বেলজিকা ৭৭.১. শাইখ মাহমূদ মুজাহিদ মুহাম্মাদ হাসান, ইফতা, দাওয়াত, ইরশাদ ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, বেলজিকা শাখা। জাযিরা রিনোন ৭৮.১. আহমাদ সাঈদ আনকার, সভাপতি, ইসলামিক সেন্টার, জাযিরা রীনোন। ৭৯.২. শাইখ ফায়সাল মওলুবী, ইসলামী ঐক্য পরিষদ। ৮০.৩. শাইখ ইয়াহইয়া ইবন আলী হাজূরী। বিভন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও সংস্থা ১. আন্তর্জাতিক ইসলামিক শিক্ষা সেমিনার/১৩৯৭ হিজরী, অনুবাদ কমিটি, মাক্কা মুকাররামা, সৌদী আরব। ২. আললাজনাতুত দাইমাহ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, সৌদী আরব। ৩. হাইআতু কিবারিল উলামা (বিশেষজ্ঞ উলামা পরিষদ), সৌদী আরব। ৪. আল আমানাতুল আম্মা, আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতা সংস্থা, রিয়ায, সৌদী আরব। ৫. বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, দামেস্ক বিশেষজ্ঞ কারী ও মাশায়েখ পরিষদ। ৬. মা‘হাদুল ফাতহিল ইসলামী, দামেস্ক। ৭. আল আযহার ফাতওয়া বিভাগ, মিসর। ৮. মজলিসে ইলমী (একাডেমী কাউন্সিল) দারুল উলূম দেওবন্দ, ভারত। ৯. দারুর ইফতা, আইন মন্ত্রণালয়, মিসর। ১০. আল আযহার বিশেষজ্ঞ উলামা কমিটি, মিসর। ১১. মাজলিসু ইকরা (বিশেষজ্ঞ আলিমগণের উপস্থিতি), দামেস্ক, সিরিয়া। ১২. শরীয়া এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি, কাতার বিশ্ববিদ্যালয়। ১৩. আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রনালয়, ফাতওয়া বিভাগ, আম্মান, জর্ডান। ১৪. ইফতা বিভাগ, আওকাফ ও ধর্ম মন্ত্রনালয়, কুয়েত। ১৫. জমিয়তে উলামা হিন্দ, দিল্লী, ভারত। ১৬. আওকাফ মন্ত্রণালয়, বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, সিরিয়া। ১৭. ধর্ম বিষয়ক বিভাগ, আঙ্কারা, তুরস্ক। ১৮. ইউরোপীয় পরিষদ, ইফতা ও গবেষণা বিভাগ, প্যারিস, ফ্রান্স। ১৯. রাবেতাতুল আলামিল ইসলামী ও মাকতাবুল মাহাদুল কুরআনী, নাওয়াকশোত, মৌরিতানিয়া। ২০.আজমী (অনারবী) ও লাতীনী বর্ণে কুরআন লিখন প্রতিরোধ শির্ষক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন, আয়োজক: মারকাযুত তারবিয়াতিল ইসলামিয়া, প্যারিস, ১৯ শাওয়াল ১৪০৮ হিজরী / ৪.৬.১৯৮৮ ইংরেজী। এ সম্মেলনে সৌদী আরব, সিরিয়া, সূদান, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে ১৪ জন বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ আলিম অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারী দেশ ও সংস্থাগুলো নিম্নরূপ: ১. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মাদীনা মুনাওয়ারা। ২. উপদেষ্টা, মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৩. ইমাম ও খতীব মাসজিদে নববী, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৪. হজ্জ ও আওকাফ মন্ত্রণালয় ও প্রধান তত্ত্বাবধায়ক মালিক ফাহদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স, মাদীনা মুনাওয়ারা। ৫. মাসজিদ বিভাগ, মাক্কা মুর্কারামা, সৌদী আরব। ৬. ইফতা, দাওয়াত, ইরশাদ ও গবেষণা বিভাগ, রিয়ায, বেলজিকা শাখা। ৭. বনী উমাইয়া জাতীয় মাসজিদ বিভাগ, দামেস্ক বিশেষজ্ঞ কারী ও মাশায়েখ পরিষদ। ৮. মা‘হাদুল ফাতহিল ইসলামী, দামেস্ক। ৯. আফ্রিকান ইসলামিক সেন্টার, খারতুম, সূদান। ১০.যারকা. দারুল ইফতা, জর্ডান। ১১. গবেষণা সেন্টার, আঙ্কারা, তুরুস্ক। ১২. জমইতুল কুরআন, লন্ডন, যুক্তরাজ্য। ১৩. ফ্রান্স মুসলিম কম্যুনিটি। ১৪. ইসলামিক এডুকেশন সেন্টার, প্যারিস, ফ্রান্স। ১৫. ইসলামী ঐক্য পরিষদ। ১৬. ইসলামিক সেন্টার, জাযিরা রীনোন। এর পর আশা করি আর কোন সন্দেহ সংশয় নয়। আর দেরী নয়। আখিরাতের ডাক আসার আগেই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমরা আমাদের কোন লেখালেখির বিকৃত উচ্চারণ যেমন মেনে নিতে পারি না, অনুরূপ আল্লাহর কালামের অর্থ বিকৃতকারী বিকৃত উচ্চারণ তিনি (আল্লাহ) কীভাবে মেনে নেবেন ? তাই আসুন, অনারবী বর্ণে কুরআনের আয়াত প্রতিবর্ণায়ন এবং প্রতিবর্ণায়িত তথাকথিত কুরআন প্রকাশ ও পড়া থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ-শুদ্ধ উচ্চারণে তাঁর কালাম তিলাওয়াতের তাওফীক দান করুন-আমীন।
মতামত দিন
আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।