তাফসীরুল কুরআন এর গ্রহনযোগ্য উৎস

তাফসীরুল কুরআন এর গ্রহনযোগ্য উৎস
মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলামতাফসীরুল কুরআন এর গ্রহনযোগ্য উৎসসমূহ

তাফসীরুল কুরআনের গ্রহনযোগ্য উৎসসমূহ পবিত্র কুরআনের সহীহ তাফসীর করার জন্য মুফাসসিরের পনের প্রকার শাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করার সাথে সাথে আরো কিছু বিষয়ের প্রতি পরিপূর্ণ সজাগ দৃষ্টি রেখে কুরআনে কারীমের তাফসীর করা অপরিহার্য। তাফসীরুল কুরআনের এরূপ আপরিহার্য বিষয়াবলীর মধ্য হতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাফসীরুল কুরআনের উৎস সমূহের বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করা এবং এসবের আলোকে

তাফসীরুল কুরআনের গ্রহনযোগ্য উৎসসমূহ

পবিত্র কুরআনের সহীহ তাফসীর করার জন্য মুফাসসিরের পনের প্রকার শাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করার সাথে সাথে আরো কিছু বিষয়ের প্রতি পরিপূর্ণ সজাগ দৃষ্টি রেখে কুরআনে কারীমের তাফসীর করা অপরিহার্য।
তাফসীরুল কুরআনের এরূপ আপরিহার্য বিষয়াবলীর মধ্য হতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাফসীরুল কুরআনের উৎস সমূহের বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করা এবং এসবের আলোকে কুরআনের তাফসীর করা। এতদভিন্ন কালামুল্লাহর তাফসীর করা সম্ভব নয়। বিধায় নিম্নে ধারাবাহিকভাবে তাফসীরুল কুরআনের উৎসগুলোর আলোচনা পেশ করা হল।

স্মরণীয় যে কুরআনে কারীমের আয়াত দু’ধরনের।
১. কিছু আয়াত এত সহজ যে, কেবলমাত্র আরবী ভাষা জ্ঞান জানার দ্বারাই সেগুলোর মর্ম অনুধাবন করা সম্ভব। সুতরাং এ জাতীয় আয়াতের তাফসীরে মতানৈক্যেও কোন প্রশ্নই উঠে না।

প্রথম প্রকার আয়াতসমূহের উৎস
শুধু আরবী ভাষা জানা।

২. পক্ষান্তরে আরো বহু সংখ্যক আয়াত এমন যে, সেগুলোর বর্ণনা একেবারেই সংক্ষিপ্ত ও অস্পষ্ট। এসব আয়াত বুঝতে আয়াতের প্রেক্ষাপট জানার প্রয়োজন হয়।

আরো উল্লেখ্য যে, এ জাতীয় আয়াত ব্যাখ্যার জন্য শুধু আরবী ভাষার জ্ঞান অর্জন করা যথেষ্ট নয়; বরং এসবের পাশাপাশি আরো অনেক বিষয় জানা প্রয়োজন। আর এগুলোই তাফসীরুল কুরআনের উৎস হিসাবে বিবেচিত।

দ্বিতীয় প্রকার আয়াতের উৎস সমূহ
১. কুরআন কারীম
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস সমগ্র
৩. হযরত সাহাবায়ে কিরাম রা. এর উক্তি সমূহ
৪. তাবেয়ীদের উক্তি সমূহ
৫. আরবী ভাষা
৬. আকলে সালীম

তাফসীরুল কুরআনের উৎস সমূহের বিশ্লেষণ:

১. তাফসীরুল কুরআনের প্রথম উৎস কুরআন কারীম:

অর্থাৎ কোন একটি বিষয় কুরআন কারীমের কোন আয়াতে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছে। আবার অন্য স্থানে সেই একই বিষয় বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং কুরআনের বিশ্লেষণমুলক আয়াতটি সংক্ষিপ্ত আয়াতের তাফসীর হিসাবে গন্য হবে।

উল্লেখ্য যে, কুরআন কারীমের জটিলতার বিভিন্নরূপ হতে পারে, তন্মধ্য হতে তিনটি নিম্নরূপ।

১. তাফসীরুল কুরআনের জটিলতার প্রথম সূরত:কুরআন কারীমের এক স্থানে কোন বিষয় অস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়। অন্য স্থানে সেই অস্পষ্টতা কে দুর করা হয়। যেমন: আল্লাহ তা‘লার ইরশাদ
اهدنا الصراط المستقيم০ صراط الذين انعمت عليهم
অর্থ: “আমাদেরকে সহজ সরল সোজা পথে তথা তাদের পথে পরিচালিত কর যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ।” (সূরা ফাতিহা:)
উল্লিখিত আয়াতের মাঝে “যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ” বাক্যটি অস্পষ্ট কারণ আয়াতের মাঝে এটা বলা হয়নি যে, আল্লাহ তা‘আলা কার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। এই অস্পষ্টতা দূর করে আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেন:
فاولئك مع الذين انعم الله عليهم من النبيين والصديقين والشهداء والصالحين০ (النساء-٦٩)
“তারা তাদের সাথে থাকবে যাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও নেকদের সঙ্গী হবে।” (সূরা নিসা: ) এ আয়াতটি পূর্বের অস্পষ্ট বর্ণনার বিশ্লেষক যে, যাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করেছেন তারা হলেন ১. নবীগন। ২. সিদ্দীকগন। ৩. শহীদগন। ৪. নেককারগন।
অনুরূপভাবে ياايهاالذين امنوااتقواالله وكونوامع الصادقين (سورة التوبة-١١٩)
উল্লিখিত আয়াতে صادقين দ্বারা কারা উদ্দেশ্য সে বিষয়টি অস্পষ্ট। এ অস্পষ্টতার বিশ্লেষক আয়াত হল: ليس البر…اولئك الذين صدقواواولئك هم المتقون০ ( البقرة-١١٧)

২. তাফসীরুল কুরআনের জটিলতার দ্বিতীয় সূরত:
কুরআনের কোন একটি বিষয় এক ক্বিরাআত অনুযায়ী অস্পষ্ট থাকে এবং অন্য ক্বিরাআত সে অস্পষ্টতার বিশ্লেষণ করে দেয়। যেমন:
আরবী ব্যকরণের দৃষ্টিকোন থেকে এ আয়াতের দু’টি অর্থ হতে পারে।
১. তোমরা তোমাদের চেহারা ও উভয় হাত কনুই সহ ধৌত কর এবং তোমরা তোমাদের মাথা ও উভয় পা টাখনু সহ মাসাহ কর।
ارجلِكم ) শব্দটিকে رؤوسِكم এর উপর عطف করে)
২. তোমরা তোমাদের চেহারা ও তোমাদের উভয় হাত কনুইসহ ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর ও উভয় পা ধৌত কর টাখনুসহ। وارجلِكم শব্দটিকে وجوهَكم ও ايديَكمএর উপর عطف করে এবং ارجلِكم এর মাঝে
যের, ارجلِكم শব্দটি رؤوسِكم এর নিকটবর্তী হওয়ার কারনে। )
)تفسير البيضاوى: وجره الباقون على جر الجوار)
ارجلِكم ক্বিরাআত অনুযায়ী উভয় অর্থের সম্ভাবনার কারনে আয়াতের অর্থ বুঝতে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ارجلكم শব্দটিতে ارجلِكم ক্বিরাআত ব্যতিত অন্য আরেকটি ক্বিরাআত রয়েছে ارجُلَكم । এ ক্বিরাআত অনুযায়ী আয়াতের অর্থ পা ধৌত করা ব্যতিত অন্য অর্থ হতে পারবে না। সুতরাং ارجُلَكم এ ক্বিরাআতটি ارجُلِكم ক্বিরাআতের জন্য বিশ্লেষক যে, ارجُلِكم এর মাঝে যে দুই অর্থের সম্ভাবনা ছিল তন্মধ্য হতে “তোমরা পা ধৌত কর” অর্থই উদ্দেশ্য। এভাবে মুতাওয়াতির ক্বিরাআতের আলোকে কুরআন কারীমের যে তাফসীর করা হয় সে তাফসীরটি পূর্ণ আস্থাশীল ও সুস্পষ্ট হয়ে থাকে। তবে মাশহুর ক্বিরাআতের মাধ্যমে কুরআনে যদিও ইলমে ইয়াক্বীনের ফায়েদা দেয়না তবুও তাফসীর শাস্ত্রে উক্ত তাফসীরের গুরুত্ব রয়েছে।

৩. তাফসীরুল কুরআনের জটিলতার তৃতীয় সূরত:
যে আয়াতের তাফসীর করা উদ্দেশ্য হবে সে আয়াতের পূর্বাপর লক্ষ্য করে তাফসীর করা। যেমন: আল্লাহ তা‘আলার ইরশাদ:وقرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى.
“তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান কর এবং পূর্বের অজ্ঞতা যুগের প্রথানুযায়ী চলিওনা।” (সূরা আহযাব: ৩৩)
শরীয়তের উসূল সম্পর্কে অজ্ঞ কিছু লোক আয়াতের বাহ্যিক তরজমা দেখে দাবী করে বসেছে যে, এ আয়াতের মাঝে তো উম্মুল মু‘মিনদের সম্মোধন করা হয়েছে। সুতরাং আয়াতে আলোচিত পর্দার বিধান শুধু তাদের জন্যই হবে। অন্যদের জন্য পর্দার বিধান মানা জরুরী নয়। কিন্তু উল্লিখিত আয়াতের পূর্বাপর তাদের দাবীকে খন্ডন করে দেয়। কেননা এ আয়াতের পূর্বে ও পরে উম্মুল মু‘মিনদের কে সম্বোধন করে আরো কিছু বিধান বর্ণিত হয়েছে। যেমন: ইরশাদ হয়েছ।
فلا تخضعن بالقول. وقلن قولا معروفا . واقمن الصلوة. واتين الزكوة. واطعن الله ورسوله
“(পর পুরুষের সাথে) বাক্যালাপে কোমলতা অবলম্বন করিওনা। এবং (সতিত্বের) রীতি অনুসারে কথা বল। নামায আদায় কর. যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের অনুগত থাক।” (সূরা আহযাব: )
উল্লিখিত বিধানবলী সম্পর্কে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এ দাবী করবেনা যে, সেগুলো শুধু উম্মুল মু‘মিনদেরই জন্য। অন্য কোন মহিলার জন্য সে বিধানাবলীর উপর আমল করা জরুরী নয়। সুতরাং আলোচিত সকল বিধানাবলীর মধ্য হতে শুধু একটি বিধানের ব্যাপারে দাবী করা যে এটি সকল নারীদের জন্য নয়; বরং কেবল উম্মুল মু‘মিনদের জন্য। এ দাবী শুধু কুরআনের অন্য আয়াত ও হাদীসই নয়; বরং উল্লিখিত আয়াতের পূর্বাপরেরও বিপরীত। বাস্তব হল এ সকল বিধানাবলীর উপর সকল মুসলমান নারীর জন্য আমল করা জরুরী তবে এখানে বিশেষভাবে উম্মুল মু‘মিনদেরকে সম্বোধন শুধু এ জন্য করা হয়েছে যে, অন্যদের তুলনায় তাদের উপর শরীয়ত পালানের দায়িত্ব একটু বেশী এবং তাদের এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিত। (আল্লামা তাকী উসমানী কৃত: উলূমুল কুরআন: ৩২৭)
উল্লেখ্য যে, কোন কোন মুফাসসির তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআনের পন্থা অনুসরণে পূর্ণ কুরআনের তাফসীর সম্পন্ন করেছেন। অর্থাৎ কুরআন কারীমের অধীকাংশ আয়াতের তাফসীর অন্য আয়াত দ্বারা সম্পন্ন করেছেন। এ জাতীয় তাফসীর গ্রন্থ সমূহের মধ্যে মদীনা মুনাওয়ারার প্রসিদ্ধ মুফাসসির শায়খ মুহাম্মদ আল-আমীন শানক্বীতি রহ. কৃত তাফসীর “আজওয়াউল বয়ানি ফী ঈ-জাহিল কুরআনি বিল কুরআন” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উক্ত তাফসীর গ্রন্থের ভূমিকায় তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআনের বিভিন্ন প্রকার সর্ম্পকিত বিস্তারিত বর্ণনা পেশ করেছেন। উক্ত তাফসীর গ্রন্থের ভূমিকার আলোকে তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআনের প্রকার সংক্রান্ত জরুরী আলোচন নিম্নে উদ্বৃত হল।

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআনের প্রকার সমূহের মধ্য হতে একটি বিশেষ প্রকার হল:

১. بيان الاجمال :(অস্পষ্ট বা সংক্ষিপ্ত বর্ণনার বিশ্লেষণ)

উল্লেখ্যা যে, কুরআনী আয়াত সমূহে اجمال বা অস্পষ্টতা বিভিন্ন কারনে হতে পারে।

এক. একাধিক অর্থবোধক শব্দ প্রয়োগ করার কারণে।
আর আরবী ভাষার শব্দ তিন প্রকার (যথা: اسم. فعل. حرف )
উল্লেখ্য যে, এ ধরনের একাধিক অর্থে তিন প্রকার শব্দই কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে। নিম্নে প্রত্যেক প্রকার শব্দের একেকটি উদাহরণ পেশ করা হল:
اسم একাধিক অর্থের সম্ভাবনা রাখার উদাহরণ। যেমন:
وليطوفوا بالبيت العتيق. )سورة الحج-٢٩)
উক্ত আয়াতে ব্যবহৃত عتيق শব্দটির অর্থ যথাক্রমে পুরাতন, অহংকারী, বশ্যতা স্বীকারকারী, সম্মানিত। কিন্তু এস্থলে উক্ত তিন অর্থের মধ্য হতে কোনটি উদ্দেশ্য, তা অন্য আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, عتيق শব্দটি দ্বারা উদ্দেশ্য হল ‘পুরাতন’। যেমন ইরশাদ হচ্ছে: ان اول بيت وضع للناس “নিশ্চয় প্রথম ঘর যা মানুষের জন্য বরকতপূর্ণ ও জগতবাসীর জন্য হিদায়াতরূপে নির্মাণ করা হয়েছে তা বাক্কা (মক্কা) শহরে অবস্থিত।” অর্থাৎ সূরাহ হজ্জ এর আয়াতে উল্লিখিত بيت العتيق এর বিশ্লেষণ সূরাহ আলে ইমরানে উল্লিখিত اول بيت শব্দটি দ্বারা করা হয়েছে।
فعل একাধিক অর্থের সম্ভাবনা রাখার উদাহরণ। যেমন: والليل اذا عسعس
এ আয়াতে উল্লিখিত عسعس শব্দটি রাত্রির আগমন ও প্রস্থান উভয় অর্থে সমানভাবে ব্যবহৃত হয়। তবে উল্লিখিত আয়াতে এ দু‘টি অর্থের মধ্য হতে প্রকৃতপক্ষে কোন অর্থ উদ্দেশ্য হবে তা কুরআনের অপরাপর আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়। আমরা দেখতে পাই যে, কুরআনে রাতের আগমনকাল ও প্রস্থানকাল উভয় সময়ের শপথ করা হলেও কুরআনের অধিকাংশ স্থানেই রাতের আগমন কালের শপথ ব্যক্ত করা হয়েছে। সুতরাং পূর্বোক্ত আয়াতে উল্লিখিত عسعس শব্দটির ‘আগমন করা’ অর্থ গ্রহণ করাই সমীচীন। আল্লামা ইবনে কাছীরও (রহ.) এটা পছন্দ করেছেন।
حرف : একাধিক অর্থের সম্ভাবনা রাখার উদাহরণ:
خَتَمَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ وَعَلَىٰ سَمۡعِهِمۡۖ وَعَلَىٰۤ أَبۡصَـٰرِهِمۡ غِشَـٰوَةۖ (بقرة :৭)
উল্লিখিত আয়াতে وَعَلَىٰ سَمۡعِهِمۡۖ وَعَلَىٰۤ أَبۡصَـٰرِهِمۡ এর শুরুর و হরফে আত্ফ ও হরফে ইস্তিনাফিয়া উভয় অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। কিন্তু এ স্থানে কোন অর্থটি গ্রহণ করা আমাদের জন্য কর্তব্য, তা সূরাহ জাসিয়ায় বর্ণিত আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
أَفَرَءَیۡتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَـٰهَهُۥ هَوَىٰهُ وَأَضَلَّهُ ٱللَّهُ عَلَىٰ عِلۡم وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمۡعِهِۦ وَقَلۡبِهِۦ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِۦ غِشَـٰوَة– (الجاثية:২৩)
এ আয়াতে وعلى سمعهم এর و আতফের জন্য আর وعلى ابصارهم এর শুরুর و ইস্তিনাফিয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়েঝে।

দুই. ইসমে জিনস, ইসমে জমা ও ইসমে মওসূল ব্যবহৃত হওয়ার কারনে।
*ইসমে জিনস (বহুবচন) এর উদাহরণ। যেমন:
فَتَلَقَّىٰۤ ءَادَمُ مِن رَّبِّهِۦ كَلِمَـٰت এ আয়াতে كلمات শব্দটি ইসমে জিনস বহুবচন এ শব্দটির অর্থ সহজে জানা গেলেও এর মর্ম অস্পষ্ট। তবে অন্য আয়াতের বর্ণনা দ্বারা তা স্পষ্ট হয়ে যায়। সূরাহ আ‘রাফের ২৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:
قالا ربنا ظلمنا انفسنا وان لم تغفرلنا وترحمنا لناكونن من الخسرين
এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, হযরত আদম আ. এর প্রাপ্ত كلمات দ্বারা উদ্দেশ্য এ আয়াতে উল্লিখিত দু‘আ।
*ইসমে জিনস (একবচন) এর উদাহরণ। যেমন: ولكن حقت كلمة العذاب على الكفرين – زمر এ আয়াতে كلمة শব্দটির উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। তবে অন্য আয়াতের বর্ণনা দ্বারা كلمة শব্দের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন:ولكن حق القول منى لأملئن جهنم من الجِنَّة والناس اجمعين – سجدة এ আয়াতটি পূর্বের كلمة শব্দের বিশ্লেষক।
*ইসমে জমা এর উদাহরণ। যেমন: كذلك واورثنها قوما اخرين – دخان-২৮ উল্লিখিত আয়াতে قوم শব্দটি দ্বারা কাদেরকে বুঝানো উদ্দেশ্য তা জানা সম্ভব না হওয়ায় এর মর্ম অস্পষ্ট। তবে অন্য আয়াত দ্বারা এর মর্ম স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন: ইরশাদ হয়েছে: كذلك واورثنها بنى اسرائيل- شعراء-৫৯ এর দ্বারা জানা গেল যে, পূর্বোক্ত সূরাহ দুখানের আয়াতে উল্লিখিত قوم শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়।
*ইসমে মওসূলের সিলা এর উদাহরণ। যেমন: احلت لكم بهيمة الانعام الا ما يتلى عليكم – مائدة-১ এ আয়াতে مايتلى عليكم এর মাঝে ما ইসমে মওসূলের সিলা يتلى عليكم এর উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। তবে অন্য আয়াত দ্বারা يتلى عليكم এর উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন: ইরশাদ হয়েছে: حرمت عليكم الميتة والدم ولحم الخنزير- مائدة-৩ এ আয়াত দ্বারা জানা গেল যে, মৃতজন্তু, রক্ত, শুকর ইত্যাদি হারাম করা হয়েছে। আর يتلى عليكم দ্বারা এগুলোই উদ্দেশ্য।

তিন. যমীর এর مرجع একাধিক সম্ভাবনার কারনে: যেমন: وانه على ذلك لشهيد – عاديات উক্ত আয়াতের মাঝে উল্লিখিত ‘ه ’ যমীরটির مرجع পূর্ববর্তী আয়াত ان الانسان لربه لكنود এর মাঝে উল্লিখিত انسان ও رب الانسان উভয়টি হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। তবে পরবর্তী আয়াত وانه لحب الخير لشديد এর বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, উক্ত আয়াতের ‘ه ’ যমীর এর مرجع- -رب الانسان নয়; বরং الانسان কেননা উল্লিখিত আয়াত দু‘টির ضميرمنصوب متصل এর مرجع একই। আর দ্বিতীয় আয়াতের ضمير منصوب متصل এর مرجع – انسان হওয়া অপরিহার্য। কেননা সম্পদের প্রতি মোহ ও প্রবল আসক্তি এটা কেবল মানুষেরই হতে পারে رب الانسان এর নয়। কারণ তিনি এসব কিছু হতে পবিত্র।

চার. কুরআনে উল্লিখিত অস্পষ্ট কোন বিষয় সম্পর্কে সৃষ্ট প্রশ্নের উত্তর, সংশ্লিষ্ট আয়াতে উল্লেখ না করে অন্যত্র তা বর্ণনার কারণে। যেমন: الحمد لله رب العالمين- فاتحة-১ এ আয়াতে عالمين দ্বারা উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়নি কিন্তু সূরা শু‘আরায় عالمين সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমেعالمين এর বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেমন: ইরশাদ হয়েছে: قال فرعون وما رب العالمين০ قال رب السموت الارض وما بينهما – شعراء-২৩-২৪

পাঁচ. কুরআনের কোন আয়াতের শব্দগত অর্থের বিবেচনায় একধরনের অর্থ বোধগম্য হওয়া এবং পরবর্তীতে কুরআনী দলীলের মাধ্যমে উক্ত আয়াতের ভিন্ন অর্থ উদ্দেশ্য হওয়া প্রমাণিত হওয়ার কারণে। যেমন: الطلاق مرتان এ আয়াত দ্বারা বাহ্যত বুঝা যায় যে, সকল প্রকার তালাকের সংখ্যা মাত্র দু’টি। তালাক প্রদান করা দুই বারের মাঝেই সীমিত, এর বেশী নয়। কিন্তু উক্ত আয়াতের পর فان طلقها فلا تحل له الاية দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, الطلاق مرتان এর দ্বারা উদ্দেশ্য সকল প্রকার তালাক নয়; বরং বিশেষ শ্রেণীর তালাক। অর্থাৎ এমন তালাক যে তালাকের পর স্বামীর নিজের স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার থাকে।

ছয়. কুরআনে কারীমের এক জায়গায় কোন বিষয় সংঘটিত হওয়ার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এবং উক্ত বিষয় সংঘটিত হওয়ার অবস্থা সম্পর্কিত বর্ণনা অন্য আয়াতে থাকার কারণে: যেমন: واذ وعدنا موسى اربعين ليلة ثم اتخذتم العجل من بعده . سورة البقرة- ٥١
“স্মরণ কর যখন আমি মুসাকে চল্লিশ রজনীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম অতপর তোমরা তাঁর পরে গোবৎসকে উপাস্য বানিয়েছিলে।” (সূরা বাকারা:৫১)
সূরাহ্ বাক্বারাহর এ আয়াতে বর্ণিত সেই ওয়াদা কিভাবে সংঘটিত হয়েছিল এতদ সংক্রান্ত কোন বর্ণনা নেই। তবে সূরাহ্ আ‘রাফের নিম্নোক্ত আয়াত,
ووعدنا موسى ثلثين ليلة واتممناها بعشرفتم ميقات ربه اربعين ليلة . (سورة الاعراف- ١٤٢)
এ আয়াতে সেই বর্ণনা রয়েছে।

সাত. কুরআন কারীমের এক স্থানে কোন বিষয় কামনা করা, অন্য স্থানে উক্ত বিষয় কামনা করার উদ্দেশ্য বর্ণনার কারণে: যেমন ইরশাদ হয়েছে.
وقالوا لولا انزل عليه ملك ولوانزلناملكا لقضى الامر. (سورة الانعام- ٨)
এ আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ফেরেস্তা অবতরণের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। কুরআনের অন্য স্থানে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে
وقالوا مال هذا الرسول يأكل الطعام ويمشى فى الأسواق لولا انزل اليه ملك فيكون معه نذيرا০ (سورة الفرقان-٧)
এ আয়াতে ফেরেস্তা অবতরণের উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, ফেরেস্তা অবতরণ করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সতর্ককারী হত।

আট. কুরআনে কারীমের কোন স্থানে একটি বিষয় উল্লেখ করা এবং অন্য স্থানে উক্ত বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট জিনিস উল্লেখ করার কারণে: আয়াতের সংশ্লিষ্ট বিষয় বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন: سبب- مفعول – ظرف مكان – ظرف زمان – ومتعلق
سبب এর উদাহরণ: ثم قست قلوبكم من بعد ذلك فهى كالحجارة او اشد قسوة ০ سورة البقرة-٧٤
উল্লেখিত আয়াতে অন্তর কঠোর হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে, তবে কি কারণে অন্তর কঠোর হয় তার উল্লেখ নেই। এ বিষয়টি অন্য আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়।
যেমন ইরশাদ হয়েছে: فبما نقضهم ميثقهم لعنهم وجعلنا قلوبهم قسية . المائدة-١٣
قوله تعالى: فطال عليهم الامد فقست قلوبهم. سورة الحديد-١٦
এ আয়াতদ্বয় দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের অন্তর কঠোর হওয়ার কারণ হল তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করা। (পাপে লিপ্ত অবস্থায় ) দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়া।
এক مفعول এর উদাহরণ:
ان فى ذلك لعبرة لمن يخشى . (سورة النازعات – ٢٦)
এ আয়াতে من يخشى এর مفعول উল্লেখ নেই কিন্তু সূরা হুদের
ان فى ذلك لاية لمن خاف عذاب الاخرة . (سورة الهود- ১০৩)
এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে يخشى এর مفعول হবে عذاب الاخرة
দুই مفعول এর একটি উল্লেখ থাকার উদাহরণ:
ثم اتخذتم العجل- )سورة البقرة-١٥ (
এবং সে সকল আয়াত যার মাঝে গো বৎসকে মা‘বূদ বানানোর উল্লেখ আছে। এ জাতীয় আয়াতে দ্বিতীয় مفعول তথা الها উহ্য থাকে। এ বিষয়টিই স্পষ্ট করে দেয় কুরআনে কারীমের অপর একটি আয়াত। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
فكذلك القى السامرى . فاخرج لهم عجلا جسدا له خوار فقالوا هذا الهكم واله موسى . )طه-٨٧-٨٨ (
ظرف مكان এর উদাহরণ:الحمد لله رب العالمين এ আয়াতে আল্লাহ তা‘লার حمد এর ظرف مكان সংক্রান্ত আলোচনা নেই। কিন্তু সূরাহ্ রূমের ১৮ নং আয়াতে এ সম্পর্কিত স্পষ্ট আলোচনা রয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
وله الحمد فى السموت والارض.
অর্থাৎ আসমান ও যমীনে সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলারই জন্য।” (সূরা রূম:১৮)
ظرف زمان এর উদাহরণ: الحمد لله رب العالمين “সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘লার জন্য যিনি জগত বাসীর রব।” (সূরা ফাতিহা:১)
এ আয়াতে এ বিষয়টি উল্লেখ নেই যে, حمد আল্লাহ তা‘আলার জন্য কখন? তবে সূরাহ ক্বাসাস এর ৭০ নং আয়াতে তা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন:له الحمد فى الاولى والاخرة . قصص- ٧٠ “দুনিয়া ও আখিরাতের সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য।” (সূরা কাসাস:৭০) সুতরাং বুঝা গেল সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানেই।
متعلق এর উদাহরণ: যেমন ইরশাদ হয়েছে: وحرض المؤمنين سورة النساء- ٨٤ “আর মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ কর।” (সূরা নিসা:৮৪)
উল্লিখিত আয়াতে মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করার নির্দেশ রয়েছে, কিন্তু কোন কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে তা উল্লেখ নেই। তবে সূরাহ্ আনফালের ৬৫ নং আয়াতে এতদ সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে: وحرض المؤمنين على القتال . “তুমি মুমিনদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ কর।” (সূরা আনফাল:৬৫)

নয়: لفظ محتمل তথা এমন শব্দ প্রয়োগ করার কারণে যা একাধিক বস্তুর সম্ভাবনা রাখে।  যেমন: واذ قتلتم نفسا “আর যখন তোমরা কোন ব্যাক্তিকে হত্যা করলে।” (সূরা বাকারা:৭২)
এ আয়াতে ব্যবহৃত نفسا শব্দটি مذكر ومؤنث উভয়ভাবে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনটি উদ্দেশ্য তা পরবর্তী আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়। যেমন ইরশাদ হয়েছে: فقلنا اضربوه ببعضها এ উল্লিখিত ضميرمنصوب متصل এর مرجع হচ্ছে পূর্ববতী আয়াতের نفسا শব্দটি, সুতরাং বুঝা গেল نفس শব্দটি দ্বারা পুরুষ ব্যক্তি উদ্দেশ্য।

দশ: আল্লাহ তা‘আলা কোন কোন সৃষ্ট বস্তুর একাধিক হিকমাত বিভিন্ন আয়াতে বিক্ষিপ্তভাবে বর্ণনার কারণে: যেমন ইরশাদ হয়েছে: وهوالذى جعل لكم النجوم لتهتدوا بها. “আর তিনি সে সত্তা যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন নক্ষত্ররাজি যাতে তোমরা তার সাহায্যে পথের দিশা পাও।” (সূরা আনআম:৯৭)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নক্ষত্র সৃষ্টির হিকমাত উল্লেখ করেছেন, মানুষের পথ প্রাপ্ত হওয়া। কিন্তু এছাড়াও নক্ষত্র সৃষ্টির আরো হিকমাত রয়েছে। সেগুলো তিনি অন্য আয়াতে উল্লেখ করেছেন যেমন ইরশাদ হয়েছে:
ولقد زينا السماء الدنيا بمصابيح وجعلناها رجوما للشياطين . “আর নিশ্চয় আমি নিকটতম আসমানকে প্রদিীপমালা দ্বারা সজ্জিত করেছি এবং সেগুলোকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ।” (সূরা মুলক:৫)
এ আয়াতে নক্ষত্র সৃষ্টির আরো দু’টি হিকমাত বর্ণিত হয়েছে, তা হলো দুনিয়ার আসমান তথা নিকটতম আসমানকে সুশোভিত করা ও শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ করা।

এগার: কুরআন কারীমের এক স্থানে কোন আদেশ নিষেধ উল্লেখ হয় আর সেই আদেশ বা নিষেধ বাস্তবায়ন হয়েছে কীনা তা অন্য স্থানে উল্লেখ করার কারণে। যেমন ইরশাদ হয়েছে: قولوا امنا بالله وما انزل الينا……الى قوله تعالى لانفرق بين احد منهم . (সূরা বাকারা:১৩৬) এ আয়াতে শুধু আদেশ বর্ণিত হয়েছে কিন্তু উক্ত আদেশ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কোন আলোচনা এখানে নেই। তবে অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে উক্ত আদেশ বাস্তবায়ন হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
امن الرسول بما انزل اليه من ربه …. الى قوله تعالى لا نفرق بين احد من رسوله . سورة البقرة- ٢٨٥
নিষেধের উদাহরণ: وقلنا لهم لاتعدوا فى السبت .
“আর আমি তাদেরকে বললাম তোমরা শনিবারের ব্যাপাওে সীমালঙ্গন কর না।” (সূরা নিসা: ১৫৩) এ আয়াতে কেবল একটি বিষয়ের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়েছে কীনা তা উল্লেখ নেই। তবে অন্য আয়াতে এ বিষয়টির স্পষ্ট আলোচনা রয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
اذ يعدون فى السبت . “যখন তারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্গন করল।” সূরা আ‘রাফ:১৬৩) আরো ইরশাদ হয়েছে- ولقد علمتم الذين اعتدوا منكم فى السبت .
“আর নিশ্চয় তোমরা জেনেছো তাদেরকে যারা তোমাদেও থেকে শনিবারের ব্যাপাওে সীমালঙ্গন করেছে।” (সূরা বাকারা: ৬৫) এ আয়াত দ্বারা জানা যায় যে, তারা উক্ত নিষেধাজ্ঞার প্রতি সম্মান প্রদশর্ণ করেনি।

বার: কুরআন কারীমের কোন আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার অস্পষ্টভাবে এমন দলীলের প্রতি ইশারা করার কারণে যার দ্বারা কুরআন কারীমে কোন জিনিসের উপর দলীল পেষ করা হয়। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
يا ايها الناس اعبدوا ربكم الذى خلقكم …… من الثمرات رزقا لكم .
(সূরা বাকারা:২১-২২)
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তা‘লা পুনরুত্থানের এমন তিনটি দলীলের প্রতি ইশারা করেছেন, যার প্রত্যেকটি দ্বারা কুরআন কারীমে দলীল পেষ করা হয়।
১. আল্লাহ তা‘আলা মাখলূককে প্রথমবার সৃষ্টি করা, আল্লাহ তা‘আলা দ্বিতীয় বার মাখলূক সৃষ্টিতে সক্ষম হওয়ার সাক্ষ্য বহন করে। আল্লাহ তা‘আলা উল্লিখিত আয়াতে এ দলীলের প্রতি ইঈিত করেছেন الذى خلقكم বাক্য দ্বারা। এ বিষয়টি কুরআন কারীমের অন্য আয়াতে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
وهوالذى يبدأ الخلق ثم يعيده وهوأهون عليه . سورة الروم – ٢٧
“আর তিনি সে সত্তা যিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন, অতপর তিনি সৃষ্টিকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আর এটা (পুনরায় সৃষ্টি করা) আল্লাহ তা‘আলার নিকট সহজতর।” (সূরা রূম: ২৭)
২. আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক আসমান যমীন সৃষ্টি করা। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, যিনি বিশাল জিনিস সৃষ্টিতে সক্ষম তিনি নিশ্চিতরূপে তদপেক্ষা ছোট জিনিস সৃষ্টিতেও সক্ষম। আল্লাহ তা‘আলা এ দলীলের দিকে ইঈিত করেছেন الذى جعل لكم الارض فراشا والسماء بناء বাক্য দ্বারা । এ বিষয়টি কুরআন কারীমের অন্য আয়াতে আরো স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন যেমন ইরশাদ হয়েছে:
اوليس الذى خلق السموت والارض بقادر على ان يخلق مثلهم بلى وهو الخلاق العليم.
“যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? অবশ্যই সক্ষম। আর তিনি মহান স্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা ইয়াসীন: ৮১) আরো ইরশাদ হয়েছে-لخلق السموت والارض اكبر من خلق الناس. “আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি মানুষ সৃষ্টি থেকে কঠিনতর কাজ।” (সূরা গাফের: ৫৭)
৩. যমীন অনুর্বর হয়ে যাওয়ার পর তাতে উর্বরতা ফিরিয়ে আনা: এ আয়াতে এ বিষয়টির প্রতি ইঈিত করেছেন وَأَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَاۤءِ مَاۤء فَأَخۡرَجَ بِهِۦ مِنَ ٱلثَّمَرَ ٰتِ رِزۡقا لَّكُمۡۖ . “আর তিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন অপতর তা দ্বারা ফলমুল উৎপন্ন করেন তোমাদের জীবিকাস¦রূপ।” (সূরা বাকারা:২২) এ অংশ দ্বারা। আর এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন অন্য আয়াতের বর্ণনা দ্বারা যেমন ইরশাদ হয়েছে:ان الذى أحياها لمحى الموتى .
“নিশ্চয় সে সত্তা যিনি যমীনকে জীবিত তথা উর্বরতা দান করেন, তিনিইতো মৃতদেরকে জীবন দান করবেন।” (সূরা ফুসসিলাত:৩৯)
ويحيى الارض بعد موتها وكذلك تخرجون.
“আর তিনিই যমীনকে উর্বর করেন যমীনের অনুর্বরতার পর। আর এভাবেই তোমরা পুনরত্থিত হবে।” (সূরা রূম:১৯)
واحيينا به بلدة ميتا كذلك الخروج
“আর আমি বৃষ্টির দ্বারা মৃত ভূমিকে সঞ্জীবিত করি, এভাবেই উত্থান হবে।” (সূরা ক্বাফ:১১)

তের: কুরআন কারীমের কোন শব্দকে অন্য আয়াতে ত’লনামূলক অধিক প্রসিদ্ধ ও পাঠক বা শ্রোতার নিকট অধিক বোধগম্য শব্দ দ্বারা বিশ্লেষণ করার কারণে। যেমন ইরশাদ হয়েছে: وامطرنا عليهم حجارة من سجيل .
“আর আমি তাদেও উপর প্রস্তর-কংকর নিক্ষেপ করলাম।” (সূরা হিজর:৭৪) উল্লিখিত আয়াতে سجيل শব্দটি অপ্রসিদ্ধ ও সহজে বোধগম্য নয়, কিন্তু এ শব্দটির বিশ্লেষণ করে দেয়, স্পষ্ট করে দেয় সূরাহ যারিয়াহর ৩৩ নং আয়াতে উল্লিখিত من طين শব্দটি যেমন ইরশাদ হয়েছে: لنرسل عليهم حجارة من طين এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, حجارة من سجيل আর حجارة من طين একই অর্থে অর্থাৎ শুকনো মাটির ঢিলা অর্থে ব্যবহৃত। তবে من طين এটা من سجيل এর তুলনায় অধিক প্রসিদ্ধ।

চৌদ্দ. কুরআন কারীমের কোন আয়াতে কোন কাজ শীঘ্র সংঘটিত হওয়ার সংবাদ উল্লেখ করা এবং ভিন্ন আয়াতে তা বাস্তবে সংঘটিত থাকার কারণে। যেমন ইরশাদ হয়েছে: سيقول الذين اشركوا لو شاء الله ما اشركنا . الانعام-١٤٨
“মুশরিকরা অচিরেই বলবে, যদি আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা না করতেন তাহলে আমরা শিরক করতাম না।” (সূরা আনআম:১৪৮)
উল্লিখিত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে যে মুশরিকরা অচিরেই বলবে “আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে আমরা শিরক করতাম না।” কিন্তু সেটা তারা বলেছে কীনা তা এ আয়াতে উল্লেখ নেই। তবে সূরাহ নাহল এর ৩৫ নং আয়াত স্পষ্ট করে দেয় যে, তারা উল্লিখিত বিষয়টি বলেছে: যেমন ইরশাদ হয়েছে:
وقال الذين اشركوا لوشاء الله ما عبدنا من دونه من شيئ .
“আর মুশরিকরা বলল, যদি আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করতেন তাহলে আমরা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন কিছুর ইবাদাত করতাম না।” (সূরা নাহল:৩৫)

পনের. কুরআন কারীমের কোন আয়াতে একটি বিষয় সাধারণভাবে উল্লেখ করার পর, সেটার বিভিন্ন গুন বিভিন্ন আয়াতে বিক্ষিপ্তভাবে বর্ণনার কারণে প্রথমোক্ত আয়াতে অস্পষ্টতা (إجمال ) সৃষ্টি হয়। যেমন ইরশাদ হয়েছে: وندخلهم ظلا ظليلا
এ আয়াতে ظل এর একটি সিফাত উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু কুরআন কারীমে ظل শব্দটির আরো কিছু সিফাত উল্লেখ আছে যা এ আয়াতে নেই বরং অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে: اكلها دائم وظلها .
“জান্নাতের ফল ও ছায়া চিরস্থায়ী।” (সূরা রা‘দ:৩৫)
আরো ইরশাদ হয়েছে- وظل ممود “দীর্ঘ ছায়া।” (সূরা ওয়াক্বিয়া:৩০)

ষোল: কুরআন কারীমের কোন আয়াতে عام বা সমষ্টিবাচক শব্দ প্রয়োগের কারণে অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য যে, কুরআনের কোন আয়াতে عام তথা সমষ্টিবাচক শব্দ প্রয়োগ করার পর অন্য কোন আয়াতে উক্ত সমষ্টিবাচক শব্দের মধ্যে বিভিন্ন এককের (ব্যক্তি বা বস্তু) অন্তভুক্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করার কারণে প্রথমোক্ত আয়াতে অস্পষ্টতা বা إجمال সৃষ্টি হয়। যেমন ইরশাদ হয়েছে:
ذلك ومن يعظم شعائر الله . سورة الحج- ٣٢ “এটাই (আল্লাহ তা‘আলার বিধান) আর যে আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীকে সম্মান করবে….।” (সূরা হজ্জ:৩২)
উক্ত আয়াতে شعائر শব্দটি عام বা সমষ্টিবাচক কিন্তু এ আয়াতে عام বা সমষ্টিবাচক শব্দের কোন فرد বা একক, عام এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। তবে সূরাহ্ হজ্জের অন্য আয়াত অর্থাৎ والبدن جعلنها لكم من شعائر الله . “আর উটকে বানিয়েছি আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীর অন্যতম।” (সূরা হাজ্জ: ৩৬) এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আয়াতে উল্লিখিত البدن শব্দটিও شعائر الله এর অন্তভুক্ত।

২.তাফসীরুল কুরআনের দ্বিতীয় উৎস:

 

অর্থাৎ কুরআন কারীমের তাফসীর এর উৎস সমূহের মধ্যে দ্বিতীয় উৎস হল কুরআন কারীমের তাফসীর সুন্নাহ দ্বারা করা। সুন্নাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হল السنة القولية،السنة العملية،السنة التقريرية তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা, কাজ ও অনুমোদন বা সমর্থন।
সুন্নাতে ক্বওলিয়্যা দ্বারা কুরআন কারীমের তাফসীর। যেমন:
الا ان القوة الرمى.(رواه مسلم ) فى تفسيرقوله تعالى واعدوا لهم مااستطعتم من قوة
সুন্নাতে আমালিয়্যা দ্বারা কুরআন কারীমের তাফসীর। যেমন:
صلواكما رأيتمونى اصلى.(رواه البخارى
এ হাদীসটি أقيمواالصلوة আয়াতের ব্যাখ্যা।
خذوا عنى مناسككم এ হাদীসটি ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا আয়াতের ব্যাখ্যা।
সুন্নাতে তাক্বরিরিয়্যা দ্বারা কুরআনের তাফসীর। যেমন:
قصة عمروبن العاص رضى الله عنه عند ما كان فى غزوة(ذات السلاسل) قال: احتملت فى ليلة شديدة البرودة،فاشفقت ان اغتسلت ان اهلك، ثم صليت باصحابى صلاة الصبح فلما قدمنا على رسول الله صلى الله عليه وسلم ذكروا ذلك له، فقال:((ياعمرو، صليت باصحابك وانت جنب؟)) فقلت:ذكرت قول الله عزوجل:((ولاتقتلواانفسكم ان الله كان بكم رحيما)) فتيممت، ثم صليت فضحك النبى صلى الله عليه وسلم ولم يقل شيئا)) رواه احمد وابوداود والحاكم وابن حبان وعلقه البخارى
(দিরাসাত ফী উলূমিল কুরআনিল কারীম:পৃ- ২১০)
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা রহ. বলেন, কুরআন কারীমের তাফসীর যদি কুরআন দ্বারা সম্ভব না হয় তাহলে কুরআন কারীমের তফসীরের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহর প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে।
(বুহুসুন ফী উসূলিত তাফসীর ওয়া মানাহিজুহু:পৃ-৭৫)
ইমাম শাফেয়ী রহ. বলেন: كل ما حكم به رسول الله صلى الله عليه وسلم ممافهمه من القران
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কুরআন কারীমের মর্মানুসারে দিয়েছেন।” (হাওয়ালা?)
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. বলেন:السنة تُفَسِّرُ الكتاب وتُبَيِّنُه
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ কিতাবুল্লাহর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে।” তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কুরআনের তাফসীর অল্পই বর্ণিত হয়েছে। হাদীস রচনাকারী ইসলামের শত্রুরা তাফসীরের ক্ষেত্রে হাদীস রচনা করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামে চালিয়ে দিয়েছে। ফলে তাফসীরের রিওয়ায়াতসমূহ সন্দেহযুক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং তাফসীরের ক্ষেত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতগুলো গ্রহণ করার ব্যপারে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এবং যাচাই-বাছাই করতে হবে। (বুহুসুন ফী উসূলিত তাফসীর ওয়া মানাহিজুহু:পৃ-৭৫)

সূন্নাহর মাধ্যমে কুরআনর তাফসীরের বিভিন্ন প্রকার

১. রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের নিকট কুরআনের কোন আয়াত বা শব্দের তাফসীর করেছেন সাহাবায়ে কিরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা ব্যতিত। এ প্রকারের তাফসীর দু’ভাবে করেছেন। (১) প্রথমে কোন আয়াতের তাফসীর করেছেন এরপর উক্ত আয়াত উল্লেখ করেছেন। যেমন:
ان الذين امنوا وعملوالصلحت سيجعل لهم الرحمن ودّا
এ আয়াতের তাফসীরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
عن ابى هريرة رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ((إذا أحب الله عبدان نادى يا جبريل انى أحببت فلانا فاحبه، قال: فينادى فى السماء ، ثم تنزل له المحبة فى اهل الارض، فذلك قوله تعالى:(( ان الذين امنوا وعملواالصلحت سيجعل لهم الرحمن ودا)) واذا ابغض الله عبدا نادى ياجبريل، انى ابغضت فلانا فينادى فى السماء ، ثم تنزل له البغضاء فى الارض )) رواه الترمذى (٥/٣١٨)
(২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে কোন আয়াত তিলাওয়াত করেছেন অতপর উক্ত আয়াতের তাফসীর করেছেন। যেমন:
(واعدوا لهم مااستطعتم من قوة ) الا ان القوة الرمى، الا ان القوة الرمى، الا ان القوة الرمى ) رواه مسلم
২. সাহাবায়ে কিরামের নিকট কোন আয়াত বুঝতে সমস্যা হয়েছে, অতপর তাদের জিজ্ঞাসার কারনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়াতের ব্যাখ্যা তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। যেমন:
عن عبد الله بن مسعودرضى الله عنه قال:لمانزلت: (( الذين امنوا ولم يلبسوا ايمانهم بظلم)) شق ذلك على المسلمين فقالوا: يا رسول الله ايُّنا لم يظلم نفسه؟ قال: ليس ذلك، انما هوالشرك،ألم تسمعوا ما قال لقمان لابنه وهويعظه:(( ان الشرك لظلم عظيم))
৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সে সকল হাদীস যা কোন আয়াতের তাফসীর হিসাবে উল্লেখ হয়নি, তবে হাদীসের মাঝে এমন বিষয় রয়েছে যা কোন আয়াতের তাফসীর হতে পারে। যেমন:
قوله تعالى:((وجيئ يومئذ بجهنم)) عن عبد الله بن مسعود قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:(( يؤتى بجهنم يومئذ لها سبعون الف زمام، لكل زمام سبعون الف ملك يجرونها )) رواه الترمذى (٤/٧٠١ )
এ হাদীসটি উল্লিখিত আয়াতের তাফসীর হিসাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেননি তবে হাদীসের বিষয়বস্তু এমন যা উক্ত আয়াতের তাফসীর হতে পারে।
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম এর কুরআনের কোন বিষয়ের ব্যাখ্যা করে তার উপর আমল করা। যেমন:
قوله تعالى:(( فسبح بحمد ربك واستغفره)) عن عائشة رضى الله عنها قالت : ما صلى الله عليه وسلم صلاة بعد ان نزلت عليه اذا جاء نصرالله والفتح)) الايقول فيها:(( سبحانك ربنا وبحمدك، اللهم اغفرلى وفى رواية عند البخارى عن عائشة: ان النبى صلى الله عليه وسلم كان ان يكثر ان يقول فى ركوعه وسجوده:(( سبحانك اللهم ربنا وبحمدك، اللهم اغفرلى)) يتأل القران رواه البخارى
(ফুসূলুন ফী উসূলিত তাফসীর:পৃ-২৮)

 

সুন্নাহর মাধ্যমে কুরআনের তাফসীরের কিছু রূপ:

১. (ক) সুন্নাহ কুরআনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনার বিশ্লেষণ করবে। যেমন কুরআনের মাঝে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ اقيموا الصلوة এর বর্ণনা বিশ্লেষণ করা হয় সুন্নাহ দ্বারা। অর্থাৎ নামাযের সময়, নামাযের রাকা‘আত সংখ্যা, নামায আদায় পদ্ধতী এবং واتوا الزكوة এর বিশ্লেষণ সুন্নাহ দ্বারা। অর্থাৎ যাকাতের পরিমাণ, যাকাত আদায়ের সময়, যাকাতের মালের প্রকার। এবং اتموا الحج এর বিশ্লেষণ সুন্নাহ দ্বারা। অর্থাৎ হজ্বের আহক্বামের বর্ণনা ও হজ্জ আদায় পদ্ধতীর বর্ণনা।
(খ) সুন্নাহ কুরআনের কঠিন বর্ণনাকে সহজ ও স্পষ্ট করে দিবে। যেমন الخيط الابيض والخيط الاسود এর তাফসীর بياض النهار وسواد الليل দ্বারা করা।
(গ) সুন্নাহ দ্বারা কুরআনের ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ কে সীমাবদ্ব করা। যেমন الذين امنوا ولم يلبسوا ايمانهم بظلم এ আয়াতে ظلم শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক কিন্তু এখানে ظلم শব্দটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ দ্বারা শিরক অর্র্থের উপর সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
(ঘ) কুরআন কারীমের মুতলাক্ব (ক্বয়েদমুক্ত) বর্ণনাকে সুন্নাহ দ্বারা মুকায়্যেদ (শর্তযুক্ত) করা। যেমন فاقطعوا ايديهما এ আয়াতের মাঝে ايدهما অর্থাৎ ايديهما দ্বারা ডান হাত উদ্দেশ্য, না বাম হাত, হাতের কব্জি পর্যন্ত উদ্দেশ্য, না কনুই পর্যন্ত, এটা জানা যায়নি। কিন্তু সুন্নাহ দ্বারা মুকায়্যিদ করা হয়েছে যে এখানে হাত দ্বারা উদ্দেশ্য হল ডান হাত কব্জি পর্যন্ত।

২. সুন্নাহ দ্বারা কুরআনের কোন শব্দ বা শব্দের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কিছুর উদ্দেশ্য বর্ণনা করা। যেমন المغضوب عليهم এর দ্বারা উদ্দেশ্য ইয়াহুদী আর الضالين দ্বারা উদ্দেশ্য খৃষ্টান।

৩. সুন্নাহ দ্বারা কুরআন কারীমের আহকামের অতিরিক্ত আহকাম বর্ণনা করা। যেমন ফুফা, খালুর সাথে ফুফু-খালা থাকা অবস্থায় ভাতিজী, ভাগ্নির বিবাহ হারাম হওয়ার বর্ণনা। সদক্বাতুল ফিতরের বর্ণনা, বিবাহিত যিনা কারীর রজমের বর্ণনা। দাদী- নানীর মিরাছের বর্ণনা। সুন্নাহ দ্বারা কুরআনের অতিরিক্ত আহকাম।

৪. কোন বিধানের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য সুন্নাহ কুরআনের বিধানের সমর্থন করা। যেমন لايحل مال إمرإ الابطيب نفسه এ হাদীসটি কুরআনের আয়াত لاتاكلوا اموالكم بينكم بالباطل এর সমর্থন করে। (বুহুসুন ফী উসূলিত তাফসীর:পৃ-৭৬)

৩. তাফসীরুল কুরআনের তৃতীয় উৎস:

অর্থাৎ তাফসীরুল কুরআনের উৎসসমূহের মাঝে তৃতীয় উৎস হল হযরত “সাহাবায়ে কিরামের উক্তিসমূহ”।
কুরআন কারীমের কোন আয়াতের তাফসীর কুরআন ও সুন্নাহ এ খোজ পাওয়া সম্ভব না হলে, আক্বওয়ালে সাহাবা তথা সাহাবায়ে কিরাম রা. কৃত কুরআনের তাফসীরের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। (বুহুসুন ফী উসূলিত তাফসীর:পৃ-৭৭, দিরাসাত ফী উলূমিল কুরআন:পৃ-২১২)
কারণ (ক) তাঁরা কুরআন অবতরণ প্রত্যক্ষ্য করেছেন ও অবতরণ প্রেক্ষাপট বুঝেছেন। (খ) তাঁরা কুরআনের ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।
(গ) যাদের সম্পর্কে কুরআন অবতরণ হয়েছে তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। (ঘ) প্রকৃত বিষয় বর্ণনায় তাদের উদ্দেশ্য সত্যনিষ্ঠ ছিল। (ঙ) তাঁদের অনুধাবন শক্তি ছিল খুবই চমৎকার। (ফুসূলুন ফী উসূলিত তাফসীর:পৃ-৩১)

সাহাবায়ে কিরাম রা. কৃত তাফসীরের হুকুম

কোন কোন আলেমের মমে সাহাবায়ে কিরাম রা. এর কৃত তাফসীর মারফু রিওয়ায়াতের হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্লেষণ রয়েছে। সুতরাং সাহাবায়ে কিরাম রা. কৃত তাফসীর সম্পর্কে সঠিক অভিমত হচ্ছে, সাহাবায়ে কিরাম রা. কৃত তাফসীর বিভিন্ন প্রকারের এবং প্রত্যেক প্রকারের হুকুমও ভিন্ন ভিন্ন।

১. সাহাবায়ে কিরামের কৃত তাফসীর মারফু‘ রিওয়াতের হুকুমে। এ প্রকারের মাঝে আসবাবুননুযূল এবং সে সকল ঘটনাবলী অন্তর্ভুক্ত যা অদৃশ্যবিষয়াবলী সংক্রান্ত। এ ক্ষেত্রে যখন কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে তখন তা গ্রহণীয় হবে। কারণ এ ক্ষেত্রে ইজতিহাদের অবকাশ নেই। অনূরূপভাবে সাহাবায়ে কিরাম রা. কৃত সেসব তাফসীরও মারফু রিওয়ায়াতের হুকুমে হবে যেগুলোর বিষয়ে তাদের ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কারণ ইজমা মারফু রিওয়ায়াতের মত শক্তিশালী হুজ্জত। (ফুসূলূন ফী উসূলিত তাফসীর:পৃ-৩৪)
অবশ্য কোন কোন আলেম অদৃশ্যের বিষয়াবলীর ক্ষেত্রে শর্ত যুক্ত করেছেন যে, মুফাসসির সাহাবী বনী ইসরাঈল থেকে রিওয়ায়াত গ্রহণ করার ব্যাপারে প্রসিদ্ধ না হতে হবে। কারণ এমতাবস্থায় তার কথার মাঝে ইসরাঈলী রিওয়ায়াত অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সন্দেহ থেকে যায়।

২. সাহাবায়ে কিরাম রা. কৃত তাফসীরের এক বিশেষ অংশ লুগাত বা ভাষা সংক্রান্ত অর্থাৎ শব্দ বা বাক্যের অর্থ বর্ণনা সম্পর্কিত। এ প্রকারের তাফসীরকেও নির্দ্বিধায় গ্রহণ করা যাবে, কারণ কুরআন কারীমের ভাষা সম্পর্কে তারা অন্যদের থেকে অধিক পারদর্শী ছিলেন।

৩. সাহাবায়ে কিরাম রা. কৃত তাফসীরের একটি উৎস হল আহলে কিতাবদের বর্ণনা। এ প্রকারের তাফসীরের হুকুম ইসরাঈলী রিওয়ায়াতের হুকুমের অনুরূপ।

৪. কুরআন কারীমের তাফসীরের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরাম রা. এর ইজতিহাদ। এ প্রকারের হুকুমের মাঝে সামান্য বিশ্লেষণ রয়েছে।
(ক) সাহাবায়ে কিরামের পরস্পরের ইজতিহাদ একরকম হলে তাদের ইজতিহাদ হুজ্জত হবে।
(খ) সাহাবায়ে কিরামের ইজতিহাদ পরস্পর বিরোধপূর্ণ হলে সেক্ষেত্রে হুকুম হল তারজীহ এর নিয়ম অনুযায়ী কোন একটিকে তারজীহ দেয়া।
(গ) কুরআন কারীমের কোন আয়াতের তাফসীর শুধু এক সাহাবী থেকে বর্ণিত হওয়া এবং উক্ত বর্ণনার বিপরীত কোন বর্ণনা বিদ্যমান না থাকা। এ প্রকারের তাফসীর গ্রহণযোগ্য হবে। বিশেষকরে যখন তার সাথে গ্রহণ করার কোন আলামাত থাকে। যেমন সাহাবায়ে কিরাম রা. এর মধ্যে হতে প্রসিদ্ধ মুফাসসির এর উক্তি হওয়া। যেমন হযরত আলী রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর উক্তি হওয়া। অথবা এক সাহাবীর (রা.) কৃত তাফসীর তাবেয়ীগণের গ্রহণ করা বা এ জাতীয় অন্য কোন আলামত বিদ্যমান থাকা। (ফুসূলুন ফী উসূলিত তাফসীর:পৃ-৩৪)

৪. তাফসীরুল কুরআনের চতুর্থ উৎস:

অর্থাৎ তাফসীরুল কুরআনের উৎসসমূহের মাঝে চতুর্থ উৎস হল “তাবিয়ীদের উক্তিসমূহ”। এখানে তাবিয়ীন বলার দ্বারা উদ্দেশ্য, যারা হযরত সাহাবায়ে কিরাম রা. হতে ইলম শিখেছেন। -ফুসূলূন ফী উসূলিত তাফসীর:পৃ-৩৬, উলূমুল কুরআন লি-ত্বক্বী উসমানী:পৃ-৩৪০
তাফসীরের ক্ষেত্রে তাবিয়ীনদের উক্তিসমূহ হুজ্জত হবে কিনা সে ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের একাধিক মত বর্ণিত আছে।
হাফেয ইবনে কাসীর রহ. এ ব্যাপারে চমৎকার আলোচনা করেছেন যার সার-সংক্ষেপ নিম্নে প্রদত্ত হল।
১. তাবিয়ীর কৃত কুরআনে কারীমের তাফসীর যদি কোন সাহাবী রা. থেকে বর্ণিত হয় তাহলে এর হুকুম হুবহু সাহাবায়ে কিরামের কৃত তাফসীরের অনূরূপ।

২. তাবিয়ী যদি তাফসীরের ব্যাপারে নিজের উক্তি বর্ণনা করেন তাহলে লক্ষণীয় বিষয় হল অন্য কোন তাবেয়ীর উক্তি তার বিপরীত কিনা? অন্য তাবিয়ীর উক্তি বিপরীত না হলে তাবিয়ীর কৃত তাফসীরও অনুস্মরণীয় হিসাবে গ্রহণ করা হবে।

৩. তাবিয়ীর কৃত তাফসীরের বিপরীত কোন তাফসীর অন্য তাবিয়ী থেকে বর্ণিত হলে সেক্ষেত্রে তাবিয়ীর কৃত তাফসীর হুজ্জত নয়। তখন উক্ত আয়াতের তাফসীরের জন্য কুরআন কারীম, হাদীসে নববী, সাহাবাদের আছার, আরবী ভাষা, অথবা অন্য কোন শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। (উলূমুল কুরআন লি-ত্বক্বী উসমানী:পৃ-৩৪০)

সাহাবায়ে কিরাম রা. ও তাবিয়ীদেরকৃত তাফসীরে সতর্কতা

১. হাদীস বর্ণনার ধারা বা সূত্র সহীহ হওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখা।

২. সাহাবী রা. ও তাবিয়ীদের থেকে বর্ণিত তাফসীরের বর্ণনা ধারা বা সূত্রগুলোর মাঝে সমন্বয় করা, যাতে তাদের থেকে বর্ণিত রিওয়ায়াতগুলোতে মতানৈক্যের পার্থক্য করা ও তাতে চিন্তা-ফিকির করা যায়।

৩. সাহাবা রা. ও তাবিয়ীদের থেকে তাফসীরের ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ দুটি বর্ণনাই যদি সঠিক হয় এবং দুটির মাঝে সমন্বয় সাধন সম্ভব না হয়, তাহলে দুই রিওয়ায়াতকে তাফসীরের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন দুটি বর্ণনা মনে করতে হবে। তবে যদি এ শ্রেণীর দুই রিওয়ায়াতের মধ্য হতে কোন এক রিওয়ায়াতের উপর অন্য দলীল পাওয়া যায় তাহলে সেটিই গ্রহণীয় হবে।

৪. কোন আয়াতের তাফসীরের ক্ষেত্রে সাহাবা রা. ও তাবেয়ীদেও থেকে বর্ণিত রিওয়ায়াতগুলোকে একত্রিত করায় আয়াতের মর্ম ও উদ্দেশ্য বুঝতে অধিক সহায়ক হয়ে থাকে।

৫. সাহাবী রা. ও তাবিয়ীদের যে কোন উক্তিগত বিরোধকেই প্রকৃত ইখতিলাফ মনে না করা।

৬. কোন আয়াতের তাফসীরের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরাম রা. ও তাবিয়ীদের ইজমার পর তাতে অন্য কোন নতুন মত উদ্ভাবন করা জায়েয কিনা সে ব্যাপারে বিশ্লেষণ হল, যদি উদ্ভাবিত নতুন মত হযরত সাহাবায়ে কিরাম রা. ও তাবিয়ীদের মতের সম্পূর্ণ বিপরিত হয় তাহলে তা গৃহীত হবে না আর যদি নতুন মতটি সম্পূর্ণ বিপরীত নয়; বরং সেটাও আয়াতের সম্ভাব্য তাফসীর হতে পারে, তাহলে তা গ্রহণীয় হবে। কারণ তা সাহাবায়ে কিরাম রা. ও তাবিয়ীদের বর্ণনার সাথে বিরোধপূর্ণ নয়।

(ফুসূলুন ফী উসূলিত তাফসীর:পৃ-৪০)

৫.তাফসীরুল কুরআনের পঞ্চম উৎস:

অর্থাৎ তাফসীরুল কুরআনের উৎসসমূহের মাঝে পঞ্চম উৎস হল “লুগাতে আরব” তথা আরবী ভাষা।
আরবী ভাষাকে তাফসীরুল কুরআনের উৎস গন্য করার কারণ।
(ক) কুরআনে কারীম আরবী ভাষায় অবতীর্ণ।
(খ) কুরআনে কারীমে সম্বোধন রীতিতে আরবী ভাষার নীতিই ব্যবহৃত হয়েছে।

(গ) আরবী ভাষাকে তাফসীরুল কুরআনের উৎস গন্য করা সে হাদীস দ্বারাও বুঝা যায়, যা ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন “الذين امنوا ولم يلبسوا ايمانهم بظلم ” আয়াতটি অবতীর্ণ হল তখন তাদের নিকট ظلم শব্দটি আয়াতের মর্ম বুঝতে সমস্যার সৃষ্টি করল। কারণ তাঁরা ظلم শব্দটিকে তার আভিধানিক অর্থে বুঝেছিলেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আরবী ভাষার জ্ঞানও তাফসীরুল কুরআনের উৎসসমূহের একটি। অন্যথায় তাদের নিকট ظلم শব্দটির ব্যাখ্যা বুঝতে সমস্যা হতনা।

(ঘ) এভাবে সাহাবায়ে কিরাম রা. ও তাবিয়ীদের তাফসীরের ক্ষেত্রে আরবী ভাষার উপর নির্ভর করা এবং তাদের কুরআন কারীমের অর্থ বয়ান করতে আরবী ভাষা রীতি ও আরবী কাব্য দ্বারা দলীল পেষ করা।
“মুকাদ্দামাতুল মাবানী” কিতাবের রচনা কারী আরবী ভাষা দ্বারা কুরআন কারীমের তাফসীর বর্ণনার বৈধতার ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম রা. এর ইজমা বয়ান করেছেন। (ফুসূলুন ফী উসূলিত তাফসীর:পৃ-৪২)

আরবী ভাষা দ্বারা কুরআনে কারীমের তাফসীরের নিয়ম-নীতি

কোন আরবী শব্দে যদি পরস্পর বৈপরিত্ব ও অসঙ্গতি ব্যাতীত একাধিক অর্থের সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সবগুলো অর্থ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত করা জায়েয। উল্লেখ্য যে, কখনো একাধিক অর্থ থেকে এক অর্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে।

আরবী ভাষার কোন শব্দের অর্থ যদি একটিই হয় তাহলে কুরআন কারীমের তাফসীরের ক্ষেত্রে তা গ্রহণীয় হওয়ার ব্যাপারে নিয়ম হল-

১. বিশ্লেষক শব্দটি সহীহ আরবী ভাষার শব্দ হওয়া (ও বহুল প্রচলিত হওয়া)। কারণ আরবী ভাষায় অপরিচিত শব্দ দ্বারা কুরআন কারীমের তাফসীর জায়েয নেই।

২. আরবী ভাষার পরিচিত প্রসিদ্ধ শব্দ দ্বারা কুরআন কারীমের তাফসীর করা। তাফসীরের ক্ষেত্রে শায বা বিরল ও অপ্রচলিত শব্দ প্রয়োগ না করা। যেমন لايذوقون فيها بردا ولاشرابا এ আয়াতের মাঝে “برد” শব্দটির একটি অর্থ হল নিদ্রা, কিন্তু এ অর্থটি বিরল ও অপ্রচলিত হওয়ার কারণে برد এর তাফসীর নিদ্রা দ্বারা না করে برد এর প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ অর্থ ঠান্ডা দ্বারা এর তাফসীর করতে হবে।

৩. মুফাসসিরের উচিত আরবী শব্দ দিয়ে কুরআন কারীমের তাফসীরের ক্ষেত্রে পূর্বাপরের প্রতি দৃষ্টি রাখা এবং পূর্বাপরের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দ গ্রহণ না করা।

৪. আরবী কোন শব্দের তাফসীর জানতে আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট জানার প্রয়োজন হলে তা জানা, যাতে তা দ্বারা আয়াতের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়। যেমন انما النسيئ زيادة আয়াতের মাঝে النسيئ শব্দটি বিলম্ব করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু আয়াতের মাঝে কোন্ জিনিসের বিলম্ব সেটা জানতে আয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনা জানতে হবে এবং এর দ্বারাই আয়াতের মাঝে النسيئ শব্দ দ্বারা কোন্ জিনিসের বিলম্ব তা সুস্পষ্ট হবে। ঘটনা দ্বারা জানা যায় যে, আয়াতে النسيئ শব্দ দ্বারা الاشهرالحرم তথা সম্মানিত মাসসমূহকে বিলম্ব করা উদ্দেশ্য।

৫. আভিধানিক ও শরয়ী কোন অর্থের মাঝে বৈপরিত্ব দেখা দিলে শরয়ী অর্থটি প্রাধান্য পাবে। তবে সেক্ষেত্রে আভিধানিক অর্থটি উদ্দেশ্য হওয়ার ব্যাপারে বিশেষ কোন দলীল থাকলে আভিধানিক অর্থটি গ্রহণ করা হবে। কারণ কুরআন অবতরণ লুগাত বর্ণনান জন্য নয়; বরং শরীয়ত বর্ণনার জন্য। যেমন لاتصل على احد منهم مات এ আয়াতের মাঝে صلاة শব্দটি দু’টি অর্থে (তথা দু‘আ ও জানাযার নামায) ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। কিন্তু আয়াতের মাঝে صلاة শব্দটি দ্বারা জানাযার নামায উদ্দেশ্য। কারণ, সালাত এর আভিধানিক অর্থ হল দু‘আ, আর শরয়ী অর্থ হল জানাযার নামায। পক্ষান্তরে خذ من اموالهم…….وصل عليهم এ আয়াতের মাঝে ‘সালাত’ এর আভিধানিক অর্থ দু‘আ উদ্দেশ্য শরয়ী অর্থ নামায উদ্দেশ্য নয়। কারণ, আভিধানিক অর্থ গ্রহণ করতে দলীল রয়েছে। তাহলো রাসূল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র বাণী اللهم صلى على ال ابى اوفى (ফুসূলুন ফী উসূলিত তাফসীর:পৃ-৪২)

 

আরবী ভাষার মাধ্যমে কুরআনে কারীমের তাফসীরের ক্ষেত্রে সতর্কতা

১. কোন কোন গবেষক আবূ উবাইদা মা‘মার ইবনে মুছান্না, ফাররা, যাজ্জাজ প্রমুখ কে আভিধানিক অর্থ অনুসারে কুরআন কারীমের তাফসীরের ক্ষেত্রে ইমাম মনে করেন এবং তারা সাহাবী রা. ও তাবিয়ীদের আভিধানিক তাফসীরের প্রতি দৃষ্টি দেন না; বরং তাদের কৃত আভিধানিক তাফসীরকে তাফসীর বিল মা‘ছুর বলে ধারণা করেন। এ ভুলের কারণ হল মা‘ছুরের পরিভাষার উপর নির্ভর করা।

এ ক্ষেত্রে সঠিক বক্তব্য হল সাহাবায়ে কিরাম রা. ও তাবিয়ীগণই আভিধানিক অর্থানুসারে তাফসীরের ইমাম। কারণ, হযরত সাহাবায়ে কিরাম রা. হলেন প্রকৃত আরব। তাদের ভাষাতেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাবিয়ীগন তাদের থেকে এতদসংক্রান্ত ইলম অর্জণ করেছেন আর তাঁরা সর্ববিষয়ে অনুস্মরণীয়। সুতরাং তারাই ভাষা শাস্ত্রের ইমাম বা নীতি নির্ধারক পরিগণিত হবেন। এ কারণেই ভুল তখন হয় যখন সাহাবায়ে কিরাম রা. ও তাবিয়ীদের কৃত আভিধানিক তাফসীরকে তাফসীর বিল মা‘ছুর মনে করা হয় এবং সাহাবা রা. ও তাবিয়ীদের পরে যারা কুরআন কারীমের আভিধানিক অর্থানুসারে তাফসীর করেছেন তাদেরকে আভিধানিক অর্থানুসারে তাফসীরের ইমাম মনে করা হয়। উল্লিখিত বক্তব্য দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে, সাহাবা রা. ও তাবিয়ীদের কৃত আভিধানিক তাফসীর ব্যাতীত অন্য কারো কৃত আভিধানিক তাফসীর তাফসীরে লুগাবী তথা আভিধানিক তাফসীর হবে না বা অন্য কারো জন্য আভিধানিক অর্থানুসারে তাফসীর করার অবকাশ নেই।

২. আবূ উবাইদা মা‘মার ইবনে মুসান্না শুধু আরবী ভাষার উপর নির্ভর করে কুরআন কারীমের একটি তাফসীর গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেখানে তিনি কুরআন অবতরণ প্রেক্ষাপট ও তার পূর্বাপরের সাথে সম্পৃক্তির দিকে ভ্রুক্ষেপ করেননি। তিনি কুরআন কারীমকে শুধু ভাষার উচ্চমানের সাহিত্য গ্রন্থ সাব্যস্ত করেছেন। আবু উবাইদা যে পথ অবলম্বন করেছেন তা তাফসীরের ক্ষেত্রে ভুলে পতিত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। যেমনটি শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. উল্লেখ করেছেন। আবু উবাইদার তাফসীরকে তৎকালীন উলামায়ে কিরাম এবং তার পরবর্তীরা অস্বীকার করেছেন। এ ক্ষেত্রে আসমায়ী, আবু হাতেম আসসিজিস্তানী, ফাররা আবু উমার আল-জারমী, ত্ববারী প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
শুধু আভিধানিক অর্থের প্রতি লক্ষ্য করে আয়াত অবতরণের প্রেক্ষাপটের প্রতি লক্ষ্য না করে তাফসীর করার উদাহরণ।
وينزل عليكم من السماء…ويثبت به الاقدام .انفال-১১

আবু উবাইদা এ আয়াতের তাফসীরে বলেন এতে يثبت به الاقدام রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে অর্থাৎ يثبت به الاقدام এর অর্থ হল আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধৈর্য দান করলেন ফলে তারা শত্রুর মুকাবিলায় দৃঢ়পদ রইল। অথচ এ আয়াতের প্রেক্ষাপট দ্বারা বুঝা যায় যে, يثبت به الاقدام রূপক অর্থে নয়; বরং প্রকৃত অর্থে বা নিজস্ব অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দৃঢ়পদ করলেন ফলে বালুতে তাদের পা গেড়ে যায়নি। এ তাফসীরই সাহাবা রা. ও তাবিয়ীদের থেকে বর্ণিত হয়েছে।

৩. সালাফ এর কুরআন অনুধাবন করা এমন দলীল যা দ্বারা কোন দাবীর পক্ষে যুক্তি পেশ করা যাবে। এবং সে দলীল বিদ্যমান থাকতে নিজের পক্ষ হতে কিছু উদ্ভাবন করা সঠিক হবেনা। এ কারণেই তাদের নিজেদের ভাষা বুঝার উপর ভিত্তি করে তাদের তাফসীর থেকে কোন তাফসীর বর্ণিত হওয়া এমন হুজ্জত যা দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে।

হযরত আবু হায়্যান রহ. নিজ কৃত তাফসীর “তাফসীরে বাহরুল মুহীতে”ولقد همت به الخ এ আয়াতের তাফসীরে দূর্লভ মতবিনিময় করেছেন। তিনি সালাফদের কৃত তাফসীর উল্লেখ করে বলেন: সালাফদের থেকে যে তাফসীর বর্ণিত হয়েছে আরবী ভাষা তার সহায়ক নয়। কারণ তাঁরা ‘لولا’ এর جواب উহ্য বলেছেন অথচ لولا এর جواب উহ্য হওয়ার উপর কোন দলীল নেই। কারণ সালাফরা لولا এর جواب ‘لَهَمَّ بِهَا ’ উহ্য নির্ধারণ করেননি। আরবী ভাষায় জুমলায়ে শর্তিয়া বাক্যের جواب পূর্বের বাক্য বা তার সমর্থ কোন বাক্যই উহ্য নির্ধারণ করা হয়। কারণ জুমলায়ে শর্তিয়ার পূর্বের বাক্য পরে جواب شرط এর জন্য দলীল। আর দলীল ব্যাতীত কোন বাক্যকে উহ্য সাব্যস্ত করা সঠিক নয়।

আবুহায়্যান রহ. এর উক্তি “উল্লিখিত আয়াতে সালাফ থেকে বর্ণিত তাফসীর এর ব্যাপারে আরবী ভাষা সহায়ক নয়” এটা একটি দুর্লভ উক্তি যাদের ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ আবু হায়্যান রহ. তাদের থেকে বেশি জানতেন না এবং কুরআন কারীমের অর্থ ও উদ্দেশ্য তাদের চেয়ে অধিক বুঝতেন না। (ফুসূলুন ফী উসূলিত তাফসীর:পৃ-৪৫)

৬. তাফসীরুল কুরআনের ষষ্ঠ উৎস:

তাফসীরুল কুরআনের ষষ্ঠ উৎস হল রা‘য়ুল মাহমুদ।

তাফসীরুল কুরআনের ষষ্ঠ উৎসের ব্যাপারে উলূমুল কুরআনের বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত হয়েছে। যেমন তাফসীরুল কুরআনের ষষ্ঠ উৎস হল রা‘য়ুল মাহমূদ, আকলে সালীম, ইস্তিন্বাত, ইজতিহাদ ইত্যাদী। আসলে এগুলোর মাঝে পারস্পরিক কোন বৈপরিত নেই; বরং প্রত্যেকটি অপরটির সমর্থ শব্দ। তবে যেহেতু রা‘য়ুল মাহমুদ এ পরিভাষাটি অধিকাংশ কিতাবে ব্যবহৃত হয়েছে, এ কারণে আমাদের সামনের আলোচনায় ‘রা‘য়ুল মাহমূদ’ এ পরিভাষাটিই ব্যবহৃত হবে।

তাফসীর বিররায় তথা চিন্তা শক্তির প্রয়োগে তাফসীরের প্রকার: মুফাসসিরীনে কিরাম কখনো সর্বাত্নক চেষ্টা ব্যায় করে তাফসীর করেন সাথে সাথে তার মাঝে তাফসীরুল কুরআনের প্রয়োজনীয় শর্তাবলী বিদ্যমান থাকে তখন তার তাফসীর হয় প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য। কখনো মুফাসসিরীনে কিরাম প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে তাফসীর করেন এবং তার মাঝে তাফসীর বিররায় বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী বিদ্যমান থাকে না। তখন তার তাফসীর হয় নিন্দিত ও অগ্রহণযোগ্য। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, তাফসীর বিররায় দুই প্রকার।

(ক) আততাফসীর বিররা‘ইল মাহমূদ তথা সুষ্ঠু চিন্তা-ফিকির দ্বারা কুরআন কারীমের প্রশংসনীয় তাফসীর।
(খ) আততাফসীর বিররা‘ইল মাযমূম তথা ত্রুটিপূর্ণ চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে কুরআন কারীমের নিন্দনীয় তাফসীর।

আততাফসীর বিররা‘ইল মাহমূদ এর পরিচয়:

তাফসীর বিররা‘ইল মাহমূদ বলা হয় যার মাঝে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিদ্যমান থাকবে। (ক) কুরআন সুন্নাহর আলোকে হওয়া। (খ) প্রয়োজনীয় শর্তাবলী বিদ্যমান থাকা। (গ) কুরআন কারীমের অর্থ ও মর্ম উদঘাটনে সর্বাত্নক চেষ্টা প্রয়োগ করা।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইবনে আব্বাস রা. কে যে দু‘আ করেছেনاللهم فقهه فى الدين وعلمه التأويل এর মাঝে تأويل শব্দটি দ্বারা হয়তো তাফসীর বিররা‘ইল মাহমূদ উদ্দেশ্য।

আততাফসীর বিররা‘ইল মাহমূদ এর হুকুম:

তাফসীর বিররা‘ইল মাহমূদ এর অনুমতি রয়েছে এমন সকল ব্যক্তির জন্য যার মাঝে রা‘য়ের মাধ্যমে কুরআন কারীমের তাফসীর বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী বিদ্যমান থাকবে।

রা‘য়ের মাধ্যমে কুরআন কারীমের তাফসীর বিশুদ্ধ হওয়ার স্বপক্ষে দলীল
১. আল্লাহ তা‘আলার ইরশাদ:افلايتدبرون القران ام على قلوب اقفالها
كتاب انزلناه اليك مبارك ليدبروا ايته وليتذكر اولوا الالباب
এ জাতীয় আরো অন্যান্য আয়াত যেগুলো তাদাব্বুর ফীল কুরআনের প্রতি উৎসাহিত করে এবং কুরআনী আয়াত অনুধাবনে বিবেক কাজে লাগাতে উদ্বুদ্ধ করে।

২. হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু‘আ اللهم فقهه فى الدين وعلمه التأويل এ দু‘আর মাঝে হযরত ইবনে আব্বাস রা. এর জন্য তাবীল শিক্ষার দু‘আ করেছেন, ফলে ইবনে আব্বাস রা. সকলের মাঝে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও মর্যাদাবান হয়ে গেছেন। সুতরাং তাফসীর যদি তাফসীর বিল মা‘ছুরের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলে হযরত ইবনে আব্বাস রা. অন্যদের মাঝে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হতেন না। যেহেতু হযরত ইবনে আব্বাস রা. অন্য সকল থেকে রাসূলের দু‘আর কারণে মর্যাদাপূর্ণ. তাই বুঝা গেল রা‘য়ের মাধ্যমে কুরআন কারীমের তাফসীর বৈধ।

৩. সাহাবায়ে কিরাম রা. এর কুরআন কারীমের তাফসীরে মতভিন্নতা প্রকাশ পাওয়া। এর দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে তাঁরাও তাফসীরের ক্ষেত্রে ইজতিহাদ করেছেন। সুতরাং বুঝাগেল সুষ্ঠ বিবেকের বিশুদ্ধ চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে কুরআন কারীমের তাফসীর জায়েয।

আততাফসীর বিররা‘ইল মাযমূম এর পরিচয়:

আততাফসীর বিররা‘ইল মাযমূম বলা হয় কুরআন কারীমের কৃত এমন তাফসীরকে যার মাঝে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিদ্যমান থাকে। যেমন: (ক) রা‘য়ের মাধ্যমে কৃত তাফসীরটি প্রবৃত্তির অনুস্মরণে হওয়া। (খ) রা‘য়ের মাধ্যমে তাফসীর বিশুদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয় শর্তাবলী না পাওয়া যাওয়া। (গ) মুফাসসিরের আক্বীদা ত্রুটিযুক্ত হওয়া। (ঘ) মুফাসসির বাতিল ফিরক্বার সমর্থক হওয়া।

আততাফসীর বিররা‘ইল মাযমূম এর হুকুম:

আততাফসীর বিররা‘ইল মাযমূম তথা ত্রুটিপূর্ণ চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে কুরআন কারীমের নিন্দনীয় তাফসীর এর হুকুম হলো, এ প্রকারের তাফসীর করা হারাম তথা নিষিদ্ধ বা না জায়েয।

তাফসীর বিররা‘ইল মাযমূম নিষিদ্ধ হওয়ার স্বপক্ষে দলীল
১. আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:
ولا تقف ما ليس لك به علم ان السمع والبصر والفؤاد كل اولئك كان عنه مسئولا “যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ের অনুস্মরন করিওনা। নিশ্চয় শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টি শক্তি ও বিবেক এর প্রত্যেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সূরা বনী ইসরাঈল: ) আর শুধু চিন্তা শক্তি ব্যয় করে কুরআন কারীমের তাফসীর করা আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য উদঘাটনে না জেনে কথা বলার নামান্তর সুতরাং তাফসীর বিররা‘ইল মাযমূম জায়েয নেই।

এব্যপারে আরো ইরশাদ হয়েছে:
قل انما حرم ربى الفواحش …. وان تشركوا بالله مالم ينزل به سلطانا وان تقولوا على الله مالاتعلمون
২. সুন্নাহ যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন:
من قال فى القران بغيرعلم فليتبوأ مقعده من النار (رواه الامام احمد فى مسنده ج١ﺻ٢٣٣) وحديث من قال فى القران برأيه فاصاب فقد أخطأ (رواه الترمذى وابوداؤد)
“যে ব্যাক্তি কুরআনের কোন বিষয়ে না জেনে কিছু বলবে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” (মুসনাদে আহমাদ:খ-১, পৃ-২৩৩) অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যাক্তি শুধু নিজ রা‘য়ের মাধ্যমে কুরআন কারীমের কোন তাফসীর করে সে সঠিক করলেও সে ভুল করল।” (তিরমিযী: আবু দাউদ: )

৩. সাহাবায়ে কিরাম রা. এর উক্তিসমূহ যেমন হযরত ইবনে তাইমিয়া রহ. কোন আলেম থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, হযরত সাহাবায়ে কিরাম রা. ও তাদের পরবর্তীরাও ইলম ব্যাতীত কুরআন কারীমের তাফসীর করার ব্যাপারে কঠোরতা করেছেন। যেমন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. বলেন:
اىُّ ارض تقلنى واىُّ ارسماءٍ تظلنى اذا قلت فى كتاب الله مالم اعلم وفى رواية اذا قلت فى القران برأى او بما لا اعلم
“যদি আমি আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের কোন বিষয়ে না জেনে কিছু বলি তাহলে যমীনের কোন অংশ আমাকে স্থান দিবে? এবং কোন অংশ আমাকে ছায়া দিবে? অন্য রিওয়ায়াতে আছে যদি আমি আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের কোন বিষয়ে না জেনে কিছু বলি বা আমার নিজ থেকে কিছূ বলি তাহলে…..?
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. মিম্বারে বসে وفاكهة وابا আয়াতটি তিলাওয়াত করে বললেন: فاكهة কী তাতো বুঝলাম কিন্তুابًّا দ্বারা কোন জিনিস উদ্দেশ্য তা বুঝলাম না। অতপর ابُّا এর উদ্দেশ্যের ব্যাপারে নিজেই কিছূ একটা স্থির করলেন। পরে নিজেকে সম্বোধন করে বললেন হে উমর! এটাতো কৃত্রিমতা অতর্থাৎ কোন জিনিস না জেনে জানার ভান করা।

৪. তাবিয়ীদের (রহ.) উক্তিসমূহ। যেমন ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ, ইবনুল মুসায়্যিব থেকে বর্ণনা করেন, যে তিনি কুরআন কারীমের অজানা বিষয়ে কোন কথা বলতেন না। শুধু জানা বিষয়েই কথা বলতেন। মাসরুক্ব রহ. বলেন: তোমরা কুরআন পাকের তাফসীরের ব্যাপারে সতর্ক থাক। কারণ কুরআন হল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে রিওয়ায়াত।

চলমান পোষ্ট

মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।

সর্বশেষ পোস্ট

শীর্ষ লেখক

সর্বাধিক মন্তব্য

বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভিডিও

ক্যাটাগরি