নরীদের উমরা আদায়ের ধারা বিবরণী উমরার জরুরী কাজ চারটি: ১.ইহরাম, ২.তাওয়াফ, ৩.সায়ী, ৪.মাথা মুন্ডানো/চুলের আগা কাটা। উমরার প্রথম কাজ ইহরামঃ ইহরাম বাঁধার নিয়ম ও ধারাবাহিক কার্য বিবরনী * প্রথমত হাত-পায়ের নখ, চুল ইত্যাদি কাটা। * এরপর গোসল করা অথবা ওজু করা। * অতঃপর ইহরামের সময়ে যে পোশাকে থাকায় ভালো বোধ হয়, তা পরিধান করা। *পরে
নরীদের উমরা আদায়ের ধারা বিবরণী
উমরার জরুরী কাজ চারটি: ১.ইহরাম, ২.তাওয়াফ, ৩.সায়ী, ৪.মাথা মুন্ডানো/চুলের আগা কাটা।
উমরার প্রথম কাজ ইহরামঃ ইহরাম বাঁধার নিয়ম ও ধারাবাহিক কার্য বিবরনী
* প্রথমত হাত-পায়ের নখ, চুল ইত্যাদি কাটা।
* এরপর গোসল করা অথবা ওজু করা।
* অতঃপর ইহরামের সময়ে যে পোশাকে থাকায় ভালো বোধ হয়, তা পরিধান করা।
*পরে দুই রাকাত নফল নামায আদায় করা।
*নামায শেষে ইহরামের নিয়ত করা। অর্থাৎ মনে মনে এরূপ ধারণা করে যে, হে আল্লাহ্! আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য উমরা আদায়ের নিয়ত করছি। আপনি আমার জন্য তা আদায় করা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ হতে তা কবুল করুন। স¥রণীয় যে, নিয়তের সম্পর্ক অন্তরের সাথে, সুতরাং তা মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়।
* এরপর তালবিয়াহ্ পাঠ করা। এই তালবিয়াহ্ পাঠের মাধ্যমে ইহরাম সম্পন্ন হল।
* ইহরাম অবস্থায় অধিক পরিমাণে তালবিয়াহ্ পাঠ করা।(মহিলাগণ তালবিয়াহ্ অনুচ্চ স্বরে পাঠ করবেন)
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহঃ
যে কোন গুনাহের কাজ করা, ঝগড়া-বিবাদ করা, নখ ও চুল কাটা, পশম ছেড়া বা উপড়িয়ে ফেলা, মাথার উঁকুন মারা, আতর, সেন্ট, যে কোন সুগন্ধি বা সুগন্ধিযুক্ত সাবান-তৈল ব্যবহার করা।
উমরার দ্বিতীয় কাজ তাওয়াফঃ তাওয়াফ করার নিয়ম ও ধারাবাহিক কার্য বিবরণী
মসজিদে হারামে প্রবেশ করার পর তাওয়াফ শুরু করার আগে কা‘বা শরীফ প্রথম দৃষ্টিগোচর হওয়া মাত্রই দু‘আ করা। এক্ষেত্রে ৩ বার আল্লাহু আকবার, ৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ৩ বার লাইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে বুক পর্যন্ত হাত উঠিয়ে দুরূদ শরীফ পড়ে নিজের কাঙ্খিত দু‘আ করা (এ সময়ের দু‘আ কবুল হয়)।
* এরপর তাওয়াফ শুরু করার নির্ধারিত স্থানে পৌঁছা এবং তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেওয়া।
* তাওয়াফ শুরু করার স্থানে মসজিদে হারামের দেওয়ালে যে সবুজ বাতি লাগানো আছে, সেটাকে পিছনে রেখে কা‘বা শরীফের দিকে ফিরে দাঁড়ালেই হাজরে আসওয়াদের কোণ্ বরাবর দাঁড়ানো হয়। কা‘বা শরীফকে সামনে রেখে সেখানে দাঁড়ানোর পর বাম দিকে সামান্য পরিমাণ সরে এসে তাওয়াফের নিয়ত করা।
তাওয়াফের নিয়তঃ
“হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য উমরার তাওয়াফ আদায়ের নিয়ত করছি। আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং কবুল করুন।”
* নিয়ত করার পর ডান দিকে কিছুটা সরে গিয়ে সবুজ বাতিকে নিজের পিঠের পিছনে রেখে হাজরে আসওয়াদকে নিজের সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে নামাযের তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠানোর ন্যায় কাঁধ বরাবর হাত উঠিয়ে নিচের দু‘আ পাঠ করাঃ بسم الله الله اكبر لآاله الا الله و لله الحمد والصلاة والسلام على رسول الله
* এরপর সেখানে দাঁড়িয়েই হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করার ভঙ্গিতে হাত দ্বারা ইশারা করে উভয় হাতের তালুতে চুমু দেওয়া।
* এরপর ডানদিকে ঘুরে কা‘বা শরীফকে বামে রেখে নিজের ইচ্ছামত দু‘আ-দরূদ পাঠ করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকা এবং চলতে চলতে রুকনে ইয়ামানী পৌঁছার পর হতে হাজরে আসওয়াদের কোণ পর্যন্ত যাওয়ার সময়ে নিচের দু‘আ পাঠ করাঃ
رَبَّناَ آتِنَا فِي الدُّنْياَ حَسَنَةً وَّ فِيْ الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পৌঁছার মাধ্যমে তাওয়াফের প্রথম চক্কর পূর্ণ হল।
* হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পৌঁছার পর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদকে হাত দিয়ে ইশারা করার পর হাতের তালুতে চুমু দিয়ে (নিজের ইচ্ছামত দু‘আ-দরূদ পাঠ করতে করতে) সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকা এবং চলতে চলতে রুকনে ইয়ামানী পৌঁছার পর হতে হাজরে আসওয়াদের কোণ পর্যন্ত যাওয়ার সময়ে উপরে উল্লিখিত দু‘আ পাঠ করা। হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পৌঁছার মাধ্যমে তাওয়াফের দ্বিতীয় চক্কর পূর্ণ হল।
* একই নিয়মে অবশিষ্ট পাঁচটি চক্কর পূর্ণ করা। উল্লেখ্য যে, সপ্তম চক্কর শেষে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত পৌঁছার পর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদকে হাত দিয়ে ইশারা করার পর হাতের তালুতে চুমু দিয়ে তাওয়াফ শেষ করা।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
* হাজরে আসওয়াদ বরাবর যে নির্দিষ্ট স্থান থেকে তাওয়াফ শুরু করার কথা উল্লিখিত আছে, ঠিক সেখান থেকেই তাওয়াফ শুরু করা অপরিহার্য। যদি তাওয়াফ শুরু করার সময় ধাক্কা লেগে অথবা অসতর্কতার কারণে নির্দিষ্ট স্থান হতে সামনের দিকে ২/১ হাত সরে গিয়ে তাওয়াফ শুরু করা হয়, তাহলে পিছনে ফিরে এসে সেই নির্দিষ্ট স্থান হতে তাওয়াফ শুরু করা জরুরী।
* তাওয়াফের সময় উঁচু আওয়াজে দু‘আ করা, কোথাও থেমে দু‘আ করা বা হাত উঠিয়ে দু‘আ করা সঠিক নয়।
* মহিলাদের সর্বদা মাহরামের সাথে থেকে ও পুরুষদের ভিড় এড়িয়ে তাওয়াফ করা কর্তব্য।
তাওয়াফ শেষে নামায:
তাওয়াফ শেষে ২ রাকাত নামায (মাকামে ইবরাহীমের পরিবর্তে) মসজিদে হারামে মহিলাদের নামাযের নির্ধারিত স্থানে আদায় করবেন।
যমযমের পানি পানঃ
তাওয়াফের নামায শেষে যমযমের পানি পান করা। কা‘বা শরীফের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে যমযমের পানি পান করা উত্তম।
উমরার তৃতীয় কাজ সাফা-মারওয়ায় সায়ীঃ সায়ীর নিয়ম ও ধারাবাহিক কার্য বিবরণী
* সাফা পাহাড়ের উঁচু অংশে দাঁড়িয়ে সায়ীর নিয়ত করাঃ
সায়ীর নিয়ত “হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ীর নিয়ত করছি। আমার জন্য তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ হতে তা কবুল করে নিন।
* এরপর কা‘বা শরীফের দিকে ফিরে উভয় হাত দু‘আর জন্য উঠিয়ে ৩ বার আল্লাহু আকবার, ৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ৩ বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাাহু বলে দরূদ শরীফ পড়ে দু‘আ করা।
* এরপর সাফা থেকে নেমে বিভিন্ন দু‘আ-দরূদ পড়তে পড়তে মারওয়া পর্যন্ত যাওয়া
* সায়ীর সময় কেবল সবুজ বাতির স্থান অতিক্রম কালে নিচের দু‘আ পাঠ করা।
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَ اَنْتَ الْاَعَزُّ الْاَكْرَمُ
এছাড়া সায়ী করা অবস্থায় পাঠ করার জন্য বিশেষ কোন দু‘আ নেই।
*এভাবে সাফা হতে মারওয়া পর্যন্ত যাওয়ার দ্বারা সায়ীর এক চক্কর পূর্ণ হল।
* এরপর মারওয়া পাহাড়ে দাঁড়িয়েও সাফা পাহাড়ের দু‘আর ন্যায় দু‘আ করা। অর্থাৎ কা‘বা শরীফের দিকে ফিরে উভয় হাত দু‘আর জন্য উঠিয়ে ৩ বার আল্লাহু আকবার, ৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ৩ বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাাহু বলে দরূদ শরীফ পড়ে দু‘আ করা। এবং মারওয়া হতে সাফা পর্যন্ত যাওয়ার দ্বারা সায়ীর দ্বিতীয় চক্কর পূর্ণ হল। একই নিয়মে সায়ীর অবশিষ্ট চক্কর গুলো পূর্ণ করা।
উমরার চতুর্থ কাজ চুলের অগ্রভাগ কাটাঃ
* এরপর হোটেলে এসে সবগুলো চুল একত্রিত করে অগ্রভাগ হতে এক গিরা পরিমাণ কাটা। আলহামদুল্লিাহ্ এখন আর উমরার কোন কাজ অবশিষ্ট নেই।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে মকবূল উমরা নসীব করুন।
মতামত দিন
আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।