নাজাতের জন্য শিরকমুক্ত ঈমান ও বিদ‘আতমুক্ত আমল জরুরী

নাজাতের জন্য শিরকমুক্ত ঈমান ও বিদ‘আতমুক্ত আমল জরুরী
নাজাতের জন্য শিরকমুক্ত ঈমান ও বিদ‘আতমুক্ত আমল জরুরী-শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দা.বা

পরবর্তীকালে ইয়াহুদীদের ঐ আনন্দ প্রকাশের বিষয়টা কিছু ভণ্ড লোকের দ্বারা ইসলামের মধ্যে চলে আসল।

الحمد لله وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد فاعوذ بالله من الشيطان الرجيم: بسم الله الرحمن الرحيم: من عمل صالحا من ذكر أوأنثى وهو مؤمن فلنحيينه حياة طيبة ولنجزينهم أجرهم بأحسن ما كانوا يعملون. وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا عدوى ولا طيرة ولا صفر ولا هامة في الأسلام. أوكما قال رسول الله صلى الله عليه وسلم

আল্লাহ তা‘আলা দোজাহানের কামিয়াবীর জন্য মৌলিকভাবে আমাদেরকে দু’টি জিনিস দান করেছেন। ঈমান আর আমল। বাকি সব এরই ডালপালা ও ব্যাখ্যা। ঈমান অন্তরের বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর আমল বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে জড়িত। এ দু’টির মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল ঈমান। এর একটা কারণ হল, শুধু ঈমান দ্বারা এমন হাজারো লোক বেহেশতে যাবে, যাদের কোন নেক আমল নেই। অর্থাৎ, তারা নেক আমল করেনি বা করলেও কবুল হয়নি। তবে তাদের ঈমানটা সঠিক ছিল। এই লোকগুলো একসময় জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কোন ঈমানদার স্থায়ীভাবে জাহান্নামে থাকতে পারে না। মুমিন আর জাহান্নাম একসাথে হয় না; সাময়িক হতে পারে, স্থায়ী হতে পারে না। মোটকথা, শুধু ঈমানের বদৌলতে হাজারো-লাখো লোক জান্নাতে যাবে।

আরেকটা কারণ এই যে, যিনি আমল করছেন, তার অন্তরে যদি বিশুদ্ধ ঈমান না থাকে তাহলে তার কোন আমল আল্লাহর দরবারে নেক আমল হিসেবে গৃহীত হয় না। হ্যাঁ, আপনার আমার নজরে গৃহীত হতে পারে, কিন্তু যার কাছে ফিরে গিয়ে জবাবদিহি করতে হবে, তার কাছে গৃহীত হয় না। মোটকথা, ঈমান ছাড়া কোন নেক আমল নেই।

ফসলের ক্ষেতে লোকেরা বাঁশ-কাঠের একটা কাঠামোকে জামা-কাপড় পরিয়ে রাখে, যেটাকে কাকতাড়–য়া বলা হয়। উদ্দেশ্য, কোন পাখি, জন্তু-জানোয়ার যেন ক্ষেতে আসতে সাহস না পায়, ফসল নষ্ট না করে। তো ঐ কাকতাড়–য়াটা শিয়ালের দৃষ্টিতে মানুষ। শিয়াল ওটাকে দেখে মনে করে, বিরাট এক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু কোন মানুষ ওটাকে মানুষ মনে করে না।

ঠিক তেমনিভাবে অনেক কিছু আপনার আমার দৃষ্টিতে ভালো কাজ, নেক কাজ, কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে নেক কাজ নয়। কেননা আমলকারীর মধ্যে ঈমান নেই। এই যে খ্রিস্টানরা বিশ্ব জয় করার জন্য অকাতরে সেবামূলক কাজ করছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে হাসপাতাল বানিয়ে দিচ্ছে। মহল্লায় মহল্লায় স্কুল বানিয়ে দিচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে টয়লেট বানিয়ে দিচ্ছে। টিউবওয়েল গেড়ে দিচ্ছে। বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। দুনিয়ার যাকেই জিজ্ঞেস করা হবে, এগুলো ভাল আমল কিনা? সবাই বলবে, হ্যাঁ, ভাল আমল; তারা মানুষের খেদমত করছে, সেবা করছে। সবাই একথাই বলবে। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর দীন সম্পর্কে ইলম রাখে, কুরআন-সুন্নাহর রৌশনীতে যার অন্তর আলোকিত, সে বলবে, দেখতে তো নেক আমল; কিন্তু বাস্তবে এগুলোর একটাও নেক আমল নয়। কারণ, যারা এগুলো করছে তাদের ঈমান নেই, তারা কাফের। ইয়াহুদীরা কাফের। খ্রিস্টানরা কাফের। হিন্দুরা কাফের। বৌদ্ধরা কাফের। জৈনরা কাফের। শিখরা কাফের। আবার যারা নিজেদেরকে মুসলমান বলে পরিচয় দেয় এদের মধ্যেও বহু কাফের আছে। শিয়ারা কাফের। কাদিয়ানীরা কাফের। এদের কারো ঈমান নেই। কাজেই এরা আমাদের দৃষ্টিতে যত ভাল কাজই করুক, আল্লাহর খাতায় এগুলো ভালো কাজ গণ্য হবে না; এর কোন সওয়াব তারা পাবে না।

মোটকথা ঈমান ও আমলের মধ্যে ঈমান এজন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, ঈমান ছাড়া আমলের অস্তিত্বই হয় না। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এবং বহু হাদীসে এই শর্তটি উল্লেখ করা হয়েছে। আমি যে আয়াতটি পড়েছি, এখানেও আমলের জন্য ঈমানকে শর্ত করা হয়েছে।

من عمل صالحا من ذكر أوأنثى وهو مؤمن…

অর্থ : যে ব্যক্তিই মুমিন থাকা অবস্থায় নেক আমল করবে -সে পুরুষ হোক বা নারী- আমি অতিঅবশ্যই তাকে উত্তম জীবন যাপন করাব এবং তাদেরকে তাদের উৎকৃষ্ট আমল অনুযায়ী তাদের প্রতিদান অবশ্যই দান করব। (সূরা নাহল-৯৭)

এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে জানা গেল, কোন আমল নেক হওয়ার জন্য ঈমান থাকা অপরিহার্য শর্ত।

হ্যাঁ, আমল নেক হওয়ার আরো কিছু শর্ত আছে। যেমন আমলটি নবীজীর তরীকায় হতে হবে। নবীজীর তরীকায় না হলে ঈমানদারগণ করলেও সেটা নেক আমল হিসেবে গণ্য হবে না। এই যে কয়েক দিন পরেই মীলাদ-কিয়াম, উরস ও জশনে জুলূস শুরু হবে, দেখবেন, সেখানে আশেকে রাসূলদের ভীড় লেগে গেছে। অথচ রাসূলের তরীকার সঙ্গে, তার সুন্নাতে সঙ্গে এদের কোন সম্পর্ক নেই। মাজারে যত কিছু হচ্ছেÑ ফাতেহা হচ্ছে, মান্নত হচ্ছে, সেজদা হচ্ছে, গাড়ি থামিয়ে পয়সা দেয়া হচ্ছে, এর একটাও নেক আমল নয়। কারণ, এখানে সুন্নাত নেই, নবীর তরীকা নেই।

মূর্খ লোকেরা এগুলোকে খুব গুরুত্ব দেয়। রাজধানী ঢাকা থেকেও গাড়ি ভরে ভরে লোকজন ‘লেংটা’র দরবারে যাচ্ছে। তারা নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছে যে, একটা বয়স্ক লোক উলঙ্গ হয়ে আছে, ফরয তরক করে রেখেছে, ফলে সে চব্বিশ ঘন্টা গুনাহগার হচ্ছে, তার উপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হচ্ছে, তবু তাদের বুঝে আসছে না যে, এমন একটা অভিশপ্ত লোক কিভাবে পীর হয়?

সারকথা, কোন মুমিন-মুসলমানও যদি বাহ্যিকভাবে ভালো কাজ করে কিন্তু রাসূলের তরীকায় না করে তাহলে সেটাও নেক আমল হবে না; বিদ‘আত হবে।

আমল নেক হওয়ার জন্য তিন নম্বর শর্ত হল, আমলের মধ্যে ইখলাস থাকতে হবে। অর্থৎ আমলটি একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য হতে হবে, অন্য কোন উদ্দেশ্যে হতে পারবে না।

কিছু লোককে দেখা যায় খুব দীনী কাজ করে। এলাকার সব মসজিদ, মাদরাসায়, এতিমখানায় তার দান-অবদান আছে। নতুন কোন দীনী প্রতিষ্ঠান হলে, কোন দীনী প্রোগ্রাম হলে সে অবশ্যই উপস্থিত থাকে। এতে লোকজন তার ভক্ত হয়ে যায়। তাকে বিভিন্ন মাহফিলে সভাপতি বানিয়ে দেয়। কারণ, তাকে সভাপতি বানালে প্রতিষ্ঠানে অন্তত লাখখানেক টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু কিছুদিন পর সবাই বুঝতে পারে, তার এই দান-খয়রাত ছিল ইলেকশনে জয় লাভ করার কৌশল। জনগণ যেন একচেটিয়া তার পক্ষ নেয় এজন্য সে মসজিদ বানিয়েছে, মাদরাসা বানিয়েছে; তার উদ্দেশ্য আল্লাহকে রাজি-খুশি করা নয়। শরীয়তের পরিভাষায় এটাকে দান বলা হবে না, নেক আমল বলা হবে না। কারণ, এখানে ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাত পাওয়া যায়নি; বরং রিয়া বা লোক দেখানো পাওয়া গেছে। সুতরাং তার এতসব দান-অবদানও নেক আমল হল না। মোটকথা, আমলনামায় সওয়াব লেখা হবে এই তিনটি শর্ত পুরা হওয়ার পর।

আমি ছফর মাস সম্পর্কে একটি হাদীস পড়েছি। ছফর মাস সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা আইয়ামে জাহেলিয়্যাত থেকে চলে আসছে। সেগুলোর মূলোৎপাটন করার জন্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস বর্ণনা করে গেছেন, যাতে জাহেলিয়্যাতের ঐ আক্বীদা-বিশ্বাস মুসলমানদের মধ্যে না থাকে। কারণ, ঐ আক্বীদা-বিশ্বাস যদি আমাদের মধ্যে এখনো বহাল থাকে তাহলে আমাদের ঈমান আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। যার আক্বীদা-বিশ্বাসের মধ্যে জাহেলিয়্যাতের মিশ্রণ ঘটেছে, তার ঈমান কখনো কবুল হবে না; চাই সে যতই নামায পড়–ক, যতই রোযা রাখুক, যতই হজ্জ করুক এবং যতই দান-খয়রাত করুক। বিশুদ্ধ ঈমান ছাড়া এগুলো সব মূল্যহীন।

একটু আগেও বলা হয়েছে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন কাজ ভালো হওয়ার জন্য প্রথম শর্তই হলো, আমলকারীকে ঈমানওয়ালা হতে হবে। আবার শিরকযুক্ত ঈমানওয়ালা হলেও চলবে না, শিরকমুক্ত বিশুদ্ধ ঈমানওয়ালা হতে হবে। কারণ, শিরকযুক্ত ঈমানওয়ালা যদি কোন ভালো কাজ করে; নামায পড়ে, রোযা রাখে, হজ্জ করে, দান-খয়রাত করে তাহলে তার নামায, রোযা, হজ্জ, দান-খয়রাত কোনটিই ইবাদত বলে গণ্য হবে না।

যাই হোক, পঠিত হাদীসের বিষয়বস্তু ঈমানের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীসে বলেছেন, لاعدوى এর অর্থ হল, ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীতে কোন সংক্রামক রোগ নেই। অর্থাৎ, একজন মুমিন-মুসলমানের অন্তরে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল থাকতে হবে যে, দুনিয়াতে কোন ছোঁয়াচে রোগ নেই। যদিও এটা ডাক্তারদের মতের বিপরীত।

এখন আমরা ডাক্তারদের থিওরি মানব না রাসূলের কথা মানব? ডাক্তাররা তো ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের লেখা বই পড়ে পড়ে ডাক্তার হয়েছে। সুতরাং তারা সেখানে যা পেয়েছে তা-ই বলছে। তাদের বিদ্যার দৌড় ঐসব বই পর্যন্তই। বুখারী শরীফের হাদীসে কী আছে তা তো তারা জানে না। এভাবে তাদের নিজেদের ঈমানও খারাপ হয়ে গেল। আর তাদের মাধ্যমে হাজারো লোকের ঈমান নষ্ট হয়ে গেল। হ্যাঁ, ডাক্তাররা এই যুক্তি দেয় যে, তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছে যে, সর্দি-জ্বর বা এ জাতীয় রোগীর হাঁচি-কাশি থেকে নির্গত জীবাণু অন্যের নাকে-মুখে প্রবেশ করলে তারও হাঁচি-কাশি হয়। তো এ রকম যুক্তি ও অভিজ্ঞতার কথা তো সাহাবায়ে কেরামও নবীজীর কাছে পেশ করেছিলেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রথমে একটা উটের পাঁচড়া হয়। অতঃপর ওটার সাথে যে উটটা থাকে, দেখা যায় সেটারও পাঁচড়া হয়। ছোঁয়াচ বা সংক্রমণ না থাকলে এই দ্বিতীয় উটটা কিভাবে পাঁচড়ায় আক্রান্ত হল? নবীজী পাল্টা প্রশ্ন করলেন, বলো তো, প্রথম উটটা কিভাবে পাঁচড়ায় আক্রান্ত হল? ওর পাশে তো আরেকটা পাঁচড়া-আক্রান্ত উট নেই! সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ওটা আল্লাহর হুকুমে হয়েছে। নবীজী বললেন, ঐ দ্বিতীয়টায়ও আল্লাহর হুকুমে হয়েছে।

এটা তো আমাদেরও দেখা যে, পরিবারের কেউ জলবসন্তে আক্রান্ত হয়েছে। একজন তার খুব সেবাযত্ন করছে। ফোস্কার সব রস-কষ সেবকের হাতে-গায়ে লাগছে। আর আরেকটা লোক এই রোগীর ধারে-কাছেও আসে না, বসন্তে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দূরে দূরে থাকে। দেখা গেছে, এই দূরে দূরে থাকা লোকটা বসন্তে আক্রান্ত হয়ে মরেই গেছে। পক্ষান্তরে যার শরীরে বসন্তের রস-কষ পর্যন্ত লাগল, তার কিচ্ছুটি হয়নি। এবার বলুন, কোথায় ছোঁয়াচে রোগ? ডাক্তাররা বললেই হবে? ডাক্তারদের থেকে বড় ডাক্তার কে? আল্লাহ। আর মানুষের মধ্যে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বড় ডাক্তার। তাঁর থেকে বড় ডাক্তার নেই। হাদীসের প্রত্যেকটা কিতাবে ‘কিতাবুত ত্বিব’ আছে, চিকিৎসা অধ্যায় আছে।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন, খাওয়ার আগে উভয় হাত ধোও। ডাক্তাররাও তো একথা বলে। প্রয়োজনে বাম হাতও তো ব্যবহার করতে হয়, এজন্য এটাও ধুতে বলেছেন। এটাও ডাক্তাররা মানে। আরও বলেছেন, পেটকে তিন ভাগ করে খাও; এক ভাগে খানা, এক ভাগে পানি আর এক ভাগ শ্বাস নেয়ার জন্য খালি রাখো। এই তরীকায় কিছুদিন খেয়ে দেখেন, ইনশাআল্লাহ কোন রোগ-বালাই হবে না। এগুলোও ডাক্তারী কথা।

তাছাড়া তিনি বিভিন্ন রোগের জন্য শিঙ্গা লাগাতে বলেছেন। নবীজীর প্রধান চিকিৎসা ছিল শিঙ্গা লাগানো। এটা নিয়ে মুসলমান ডাক্তাররা মাথা ঘামায় না। তারা খ্রিস্টান ডাক্তারদের চিকিৎসা নিয়েই পড়ে আছে। (অবশ্য এখন ঢাকা শহরেও কিছু কিছু জায়গায় হিজামা/শিঙ্গা [কাপিং] পদ্ধতিতে চিকিৎসা চলছে।) নবীজী কালোজিরা সম্পর্কে বহু কথা বলে গেছেন। এটা ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

মোটকথা, মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় ডাক্তার নবীজী এ কথা বলে গেছেন যে, কোন ছোঁয়াচে রোগ নেই। এর উল্টো বিশ্বাস করলে আমাদের ঈমানের উপর আঘাত আসবে। এটা এই হাদীসের প্রথম কথা।

দুই নম্বর কথা হল : ولا طيرة ইসলামে কোন অশুভ লক্ষণ নেই। উদাহরণত আপনি সফরে রওনা হয়েছেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ামাত্র একটা কানা লোকের সঙ্গে দেখা হল। আপনি মনে করলেন, আমার সফরটাই নষ্ট হয়ে গেল; উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। কেন? কারণ, কানা লোকের সাথে দেখা হয়েছে। আরে! কানা লোক তার কাজে যাচ্ছে, আপনিও আপনার কাজে চলে যান। কানার সঙ্গে আপনার কী সম্পর্ক?

অনুরূপভাবে ঘরের উপরে একটা পেঁচা এসে বসল। ব্যস, ঘাবড়ে গেলেন যে, বাড়িতে মনে হয় কেউ মারা যাবে। আচ্ছা, ঘরের চালে পেঁচা বসার সঙ্গে মানুষ মারা যাওয়ার কী সম্পর্ক?

এগুলো সব জাহেলিয়্যাত। এগুলো হিন্দুদের মধ্যে আছে। কিন্তু ইলম না থাকার দরুন ঐ হিন্দুয়ানী জিনিসগুলো আমাদের মধ্যে চলে এসেছে। আমরা এগুলো বিশ্বাস করব না। এগুলো ঈমানবিরোধী বিশ্বাস। ইসলামে কোন অশুভ লক্ষণ নেই। যা কিছু হবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে হবে। ভালো হলেও আল্লাহর পক্ষ থেকে, মন্দ হলেও আল্লাহর পক্ষ থেকে।

মুমিনের কোন কিছু মন্দ নেই। তাকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে যত খারাপ হালতেই দেখা যাক, অন্য দৃষ্টিতে এই হালত তার জন্য নেয়ামত ও রহমত। কাউকে দেখা গেল, আগুনে পুড়ে মরে গেছে। কিন্তু আল্লাহর দরবারে সে শহীদ হয়ে গেছে। অথবা কারো ছেলে মারা গেছে, আত্মীয়-স্বজন মারা গেছে। তো যাক, হতে পারে ঐ ছেলে তাকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

মোটকথা, বাহ্যিক দৃষ্টিতে যত খারাপই দেখা যাক, একটা লোক ঈমান আনার পরে তার কোন খারাবি নেই। বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখা সকল খারাবিও তার জন্য মঙ্গলজনক।

ইমাম বুখারী রহ. বুখারী শরীফে একটি শিরোনাম লিখেছেন যে, ‘কোন মুমিনের জন্য কি এ কথা বলা জায়েয আছে যে, ‘আমি একজন দুর্ভাগা লোক, হায় আমার দুর্ভাগ্য।’ এই শিরোনামের অধীনে ইমাম বুখারী রহ. হাদীস বর্ণনা করে প্রমাণ করেছেন যে, একজন মুমিনের জন্য এ কথা বলা জায়েয নেই। কারণ, সে যখন ঈমান এনেছে, ঈমান আনার সাথে সাথেই সে দুর্ভাগাদের কাতার থেকে বের হয়ে গেছে। এখন সে ভাগ্যবান এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।

সারকথা, ইসলামী আক্বীদা-বিশ্বাস হল, ইসলামে কোন অশুভ নেই। অমুক দিন, অমুক মাস শুভ আর অমুক দিন, অমুক মাস অশুভ কিংবা অমুক দিন যাত্রা নাস্তি, অমুক দিন যাত্রা শুভÑইসলামে এসব নেই।

হ্যাঁ, শুভ লক্ষণ আছে। কথার কথা, আপনি বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। পথে একজন আল্লাহওয়ালার সঙ্গে দেখা হল। আপনি মনে করলেন, বের হয়ে যখন আল্লাহওয়ালার সঙ্গে কথা হল, তো আশা করা যায় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে হয়তো কামিয়াব করবেন। এমন সুধারণা নিষেধ নয়। কারণ, কোন কিছুকে শুভ মনে করলে আল্লাহর রহমতের প্রতি আশা করা হয়।

হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় সন্ধিবিষয়ক কথাবার্তা বলার জন্য মক্কা থেকে পরপর কয়েকজন নেতা এসেছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেও সন্ধি হয়নি; কথা বনেনি। এরপর চতুর্থ নম্বরে যে নেতাটি আসল, তার নাম ছিল সুহাইল। সুহাইল মানে সহজ। তো এই নেতাকে দূর থেকে দেখেই আল্লাহর রাসূল মন্তব্য করেছেন, সুহাইল যখন আসছে, আশা করা যায় ব্যাপারটা সহজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ, তার আগমন থেকে নবীজী একটা শুভলক্ষণ নিলেন যে, এর নামই যখন ‘সহজ’, আশা করা যায়, ব্যাপারটাও সহজ হবে। ঘটলও তা-ই। সে আসার পর তার সঙ্গে কথার মিল হল। ব্যস, চুক্তিনামাও স্বাক্ষরিত হয়ে গেল। তাহলে দেখা গেল, নেকফালি বা শুভলক্ষণ নেয়া নিষেধ নয়। কারণ, এর মাধ্যমে আল্লাহর রহমতের প্রতি আশা করা হয়। পক্ষান্তরে কোন জিনিস থেকে কুলক্ষণ নেয়া যাবে না। তাহলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

হাদীসে বর্ণিত তৃতীয় শব্দ হল, ولا صفر অর্থাৎ ইসলামে ‘ছফর’ নেই। এই ছফর মানে ছফর মাস। এটা সীন হরফ দিয়ে না, ছদ হরফ দিয়ে।

যাই হোক, ইসলামে ছফর নেই একথার মানে কী? জাহেলিয়্যাতের যামানায় ছফর মাসকে অশুভ মনে করা হত। সে সময় লোকের ধারণা ছিল, এ মাসে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে আযাব-গযব নাযিল হয় এবং এ মাসে কোন খায়র ও বরকত হয় না। এজন্য এ মাসে তারা বাড়ি-ঘর নির্মাণ শুরু করত না, বিবাহ-শাদী করত না, ব্যবসা শুরু করত না। অনুরূপ অনেক কাজ থেকে তারা এ মাসে বিরত থাকত।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটিমাত্র শব্দ দিয়ে জাহেলিয়্যাতের সমস্ত গলদ প্রথা রহিত করে দিলেন যে, ইসলামে ছফর মাস নেই, ছফর মাসে কোন খারাবি নেই। অর্থাৎ, তারা যে ছফর মাসকে খারাপ মনে করছে, এটা ভিত্তিহীন। ছফর মাস আল্লাহর কাছে অশুভ নয়। অন্যান্য মাসের মত ছফরও একটি মাস মাত্র, এতে অশুভ কিছু নেই।

তো ঐ জাহেলিয়্যাতের আক্বীদা-বিশ্বাস আজও পর্যন্ত আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে। অনেকে এ মাসে, অনেকে আবার মুহাররম মাসে বিবাহ-শাদী করতে রাজি হয় না। বলে, এ মাসে কৃত বিবাহ টিকবে না। কেউ আবার ব্যবসা শুরু করতে চায় না। বলে, এ মাসে শুরু করা ব্যবসায় লাভ হবে না। এটা জাহেলিয়্যাত। এই বিশ্বাস ঈমানের মধ্যে মারাত্মক ত্রুটি সৃষ্টি করে।

ইসলামের দুশমনরা তো ছফর মাসের বিরুদ্ধে জাল হাদীস পর্যন্ত তৈরী করেছে। من أخبرني بخروج صفر بشرته بالجنة এটা জাল হাদীস। নবীজী নাকি বলেছেন, যে কেউ আমাকে ছফর মাস চলে যাওয়ার সংবাদ দিবে, আমি তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দিব। (নাঊযুবিল্লাহ)

সমস্ত বড় বড় আলেমÑ মোল্লা আলী ক্বারী রহ., আল্লামা আজলূনী রহ.-সহ হাদীসশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ বড় বড় ইমামগণ এই হাদীসকে ভিত্তিহীন, জাল ও বানোয়াট বলেছেন।

মোটকথা, ছফর মাসে এ জাতীয় কোন খারাবী নেই। সুতরাং এ মাসে সমস্ত ভালো কাজ করা যাবে। যারা খারাবী আছে মনে করবে, তাদের ঈমান বরবাদ হয়ে যাবে।

এ মাসে আরেকটা খারাপ প্রথা আছে- আখেরী চাহার শোম্বা- এটাও ঈমান বিধ্বংসী। আখেরী চাহার শোম্বা মানে ছফর মাসের শেষ বুধবার। কোন কোন দেশে এই তারিখে সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়। আমাদের বাংলাদেশেও এই তারিখে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

এটা ইসলামে নিষেধ। আখেরী চাহার শোম্বার কাহিনী হল, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তন করে ছফর মাসের শেষ বুধবারে অসুস্থ হলেন। অসুস্থতার খবর পেয়ে ইয়াহুদীরা খুব খুশি হল। তারা ধারণা করল, এইবার বোধহয় বিপদটা কেটে যাবে (নাঊযুবিল্লাহ)। তারা রাসূলুল্লাহকে বিপদ মনে করত।

পরবর্তীকালে ইয়াহুদীদের ঐ আনন্দ প্রকাশের বিষয়টা কিছু ভণ্ড লোকের দ্বারা ইসলামের মধ্যে চলে আসল। তখন এর ব্যাখ্যা এভাবে দেয়া হল যে, এ তারিখে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুটা সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পরে তিনি গোসল করেছিলেন। এজন্য এই তারিখে খুশি পালন করতে হবে। অর্থাৎ ইসলামে এনে এটাকে উল্টোভাবে প্রচার করা হল।

ফলাফল কী হল? যেটা ছিল মুসলমানদের দুঃখের দিন, সেটাকে বানিয়ে দেয়া হল ফুর্তির দিন। এই দিন মুসলমানরা আলোকসজ্জা শুরু করল। মিষ্টি বিতরণ শুরু করল। আরো কতো কি! এমনকি এ দিনের আমল হিসেবে একটা বানোয়াটি নামাযও শুরু করল যে, এই দিন চাশতের সময় কেউ যদি নির্দিষ্ট সূরা দিয়ে চার রাক‘আত নামায পড়ে, তার জন্য এই এই সুসংবাদ আছে! নাউযুবিল্লাহ। বলুন তো, কোন আমলের ফযীলত বয়ান করতে হলে সেটা হাদীসে থাকতে হয় না? অবশ্যই থাকতে হয়। কিন্তু উক্ত নামায ও তার ফযীলত কোনটিই হাদীসে নেই। যা আছে সব জাল ও বানোয়াট বর্ণনা। তো আখেরী চাহার শোম্বা ছিল মুসলমানদের দুঃখের দিন। কারণ, এদিন নবীজী অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সাহাবায়ে কেরাম নবীজীকে যে পরিমাণ মহব্বত করতেন, অনুমান করা যায় এতে তারা পেরেশান হয়েছেন, কান্নাকাটি করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমরা সেই দিনটিকে বানিয়েছি আনন্দের দিন! কেউ খিচুড়ি রান্না করে বিতরণ করছে, কেউ মিষ্টি বিতরণ করছে, কেউ টাকা-পয়সা বিতরণ করছে। যার যা ইচ্ছা করছে। মোটকথা, দুঃখের দিনকে খুশির দিন বানানো হয়েছে। আবার ঘটা করে ছুটি পালন করা হচ্ছে। এটা কত বড় জাহেলিয়্যাত, কত বড় মূর্খতা! এদিনে ছুটি পালন করার কী আছে? এটা তো চরম দুঃখের দিন। নবীজী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এই দিনে এবং সেই অসুস্থতা থেকে আর সুস্থতা লাভ করেননি। হ্যাঁ, ইন্তিকালের আগে সোমবারে সামান্য সুস্থ হয়েছিলেন। এরপর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তো পুরো বিষয়টাকে উল্টে দেয়া হয়েছে। এর ভিত্তি জাহেলিয়্যাতের উপর, গলদ আক্বীদার উপর। রাসূলের মুসীবতের দিনকে ঈদের দিন বানানো হয়েছে, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?

রাসূলের মুসীবতে আনন্দিত হওয়া তো ইয়াহুদীদের কাজ। তবে আজকে আর ইয়াহুদী লাগছে না; এখন এটা আমরাই করে দিচ্ছি। এখন আর মুহাররমের মিছিল বের করতে শিয়া লাগছে না। এখন আর পূজা করতে হিন্দু লাগছে না। মুসলমানরাই গিয়ে পূজাটা পালন করে দিচ্ছে। সব ধর্মের দায়িত্ব এখন মুসলমানরা কাঁধে নিয়েছে। খ্রিস্টানদের বড়দিনও মুসলমানরা পালন করে দিচ্ছে। হিন্দুদের পহেলা বৈশাখও পালন করে দিচ্ছে। থার্টিফাস্ট নাইট! এটাও খ্রিস্টানদের তরীকা এবং এটাও মুসলমানরা করে দিচ্ছে।

মুসলমানরা ইসলাম ছাড়া আর যা যা ছিল, সবগুলো পালনের দায়িত্ব নিয়েছে। শুধু ইসলামেরই দায়িত্ব নেয়নি। যত ঈমান বিধ্বংসী কাজ ছিল, সবগুলোর দায়িত্ব আমরা বুঝে নিয়েছি। যে মুসলমান ইসলামের দায়িত্ব নেয়নি, ইসলাম শিখেওনি, কুরআন পড়তে জানে না, কুরআনের অর্থ বোঝে না, কুরআন শেখার পথেই সে হাঁটেনি, পক্ষান্তরে যত নাজায়েয কাজ, বিধর্মীদের কাজ সব দায়িত্ব সহকারে পালন করছে এমন মুসলমানের উপর গযব পড়বে না, তো রহমত নাযিল হবে?

শুধু তা-ই নয়, মুসলমান নিজেই আজ ইসলাম নিয়ে উপহাস করছে, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছে। বলা হচ্ছে, ইসলাম মানেই জঙ্গিবাদ, মুসলমান মানেই সন্ত্রাস, মাদরাসা মানেই জঙ্গিবাদের আখড়া। কাফেররা তো বলেই, মুসলমানরাও এখন এ ধরণের জঘন্য কথা উচ্চারণ করছে। এখন এই মুসলমানের উপরে আল্লাহর আযাব-গযব নাযিল হওয়াটা তো খুবই স্বাভাবিক। এরা যে এখনো আল্লাহর যমীনে টিকে আছে, এটাই তো আল্লাহর খাস মেহেরবানী।

এই হাদীসে আরেকটি কথা আছে- ولا هامة । এই هامة শব্দের কয়েকটি ব্যাখ্যা আছে। একটি ব্যাখা হল, জাহেলীযুগে মানুষের বিশ্বাস ছিল, সন্তান প্রসবকালীন যেসব মহিলা ইন্তেকাল করে তারা পাখি হয়ে যায়। পাখি হয়ে বিভিন্ন ভীতিকর আওয়াজ করতে থাকে। এটা জাহেলিয়্যাতের একটা বিশ্বাস। আরেকটি ব্যাখ্যা হল, অনেকে মনে করে, তাদের যে সমস্ত আত্মীয়-স্বজন মরে গেছে, তাদের রূহ মাঝে-মধ্যে তাদের বাড়িতে আসে এবং তাদের জন্য কি কি করা হচ্ছে, না হচ্ছে এগুলো প্রত্যক্ষ করে। কাজেই ঐ রূহ তাদের ঘরে আসছে মনে করে তারা রাতের বেলা বাইরে পানি ফেলে না। ঘর ঝাড়–ও দেয় না। কারণ এই পানি নাকি ঐ মুর্দার গায়ে লাগবে! এটাও একদম গলদ কথা। কেননা কারো রূহ ইল্লিয়্যীনে বা সিজ্জীনে চলে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসার কোন অনুমতি নেই। তো ‘হামা নেই’ বলে উক্ত জাহেলী বিশ্বাসকে খণ্ডন করা হয়েছে যে, ইসলামে এমন কোন বিশ্বাসের অস্তিত্ব নেই। বরং এরকম মনে করা কুফরী কাজ, শিরকী কাজ।

সারকথা হলো, এই হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি কুফরী-শিরকী আক্বীদা তুলে ধরেছেন। ঈমানকে বিশুদ্ধ রাখতে হলে এগুলো বিশ্বাস করা যাবে না।

আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার তাওফীক দান করুন।

পরিমার্জন : মাওলানা সা’দ আরাফাত, শিক্ষক, জামি‘আ ইসলামিয়া চরওয়াশপুর, হাজারীবাগ, ঢাকা।

অনুলিখন : মাওলানা আব্দুল্লাহ ইউসুফ

চলমান পোষ্ট

মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না. প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলো * দ্বারা চিহ্নিত করা আছে।

সর্বশেষ পোস্ট

শীর্ষ লেখক

সর্বাধিক মন্তব্য

বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভিডিও

ক্যাটাগরি